11/07/2025
বাংলাদেশের স্টক মার্কেট (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ - DSE এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ - CSE) বর্তমানে একটি মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ইতিবাচক লক্ষণ দেখা গেলেও, বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান।
বর্তমান পরিস্থিতি এবং কিছু ইতিবাচক দিক
সূচকগুলির উত্থান: সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক DSEX এবং অন্যান্য সূচক (যেমন DSES, DS30) কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, বিশেষ করে কিছু আন্ডারভ্যালুড এবং প্রতিশ্রুতিশীল স্টকের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: মুদ্রাস্ফীতি ধীরে ধীরে কমে আসছে এবং রেমিটেন্স প্রবাহ স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সরকারি সিকিউরিটিজের ফলনও কমছে, যা স্টক মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য আরও আকর্ষণীয় সুযোগ তৈরি করছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্কার: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC) বাজারের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে নতুন অ্যাসেট ক্লাস ও ডেরিভেটিভস চালু, আইপিও (IPO) তালিকাভুক্তির নিয়ম সরলীকরণ এবং কর্পোরেট ডিসক্লোজার উন্নত করা অন্তর্ভুক্ত।
প্রযুক্তির ব্যবহার: ই-ট্রেডিং এবং মোবাইল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা সহজে শেয়ার কেনা-বেচা করতে পারছেন, যা বাজারের অভিগম্যতা বাড়াচ্ছে। ডেটা অ্যানালাইসিস এবং লাইভ প্রাইস দেখার সুবিধা বিনিয়োগকারীদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করছে।
চ্যালেঞ্জ এবং উদ্বেগের বিষয়
বিনিয়োগকারীদের আস্থা: যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা আস্থা ফিরেছে, গত কয়েক বছরে শেয়ার বাজারের অস্থিরতা, বিশেষ করে ২০০৯ সালের পর থেকে বারবার উত্থান-পতন এবং কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের সতর্কতা তৈরি করেছে। অনেক কোম্পানি এখনো শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হচ্ছে না।
আইপিও (IPO) শূন্যতা: গত এক বছরে মূল বাজার বা এসএমই বাজারে কোনো নতুন আইপিও তালিকাভুক্ত হয়নি, যা বিনিয়োগকারীদের মুনাফা অর্জনের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে।
উচ্চ সুদের হার: উচ্চ সুদের হার এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি থাকা এখনও বাজারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
তথ্য এবং স্বচ্ছতার অভাব: বাজারের অস্বচ্ছতা, তথ্যের অভাব এবং বাজার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে দুর্বলতা বিনিয়োগকারীদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন করে তোলে। গুজবের প্রভাবও বাজারে বেশ লক্ষ্যণীয়।
আন্তর্জাতিক প্রভাব: যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের মতো বৈশ্বিক বিষয়গুলো বাংলাদেশের বাজারের ধারণাকে প্রভাবিত করতে পারে।
ভবিষ্যৎ ধারণা
সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশের স্টক মার্কেট সংস্কার এবং আধুনিকীকরণের দিকে ধীরগতিতে এগোচ্ছে। সরকারের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ এবং পুঁজিবাজার সংস্কারের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সাহায্য করছে। যদি বর্তমান ইতিবাচক প্রবণতা বজায় থাকে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো স্থিতিশীল থাকে, তবে অদূর ভবিষ্যতে শেয়ার বাজারের ঊর্ধ্বমুখী গতি বজায় থাকতে পারে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কতা এবং সঠিক জ্ঞান নিয়ে বিনিয়োগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ এবং পোর্টফোলিও বহুমুখীকরণের (Diversification) উপর জোর দেওয়া উচিত।