03/07/2025
দেশ ও জাতির শক্তি নারী
মানুষ এক পায়ে চলতে পারে না। স্বাভাবিকভাবে জীবন পরিচালনার জন্য তার দুটি পা-ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কারণে যদি মানুষের কোন এক পা বিকল হয়ে যায় বা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে তবে তার মধ্যে আর ভারসাম্য থাকে না। এ অবস্থায় সে হাঁটতে পারে না, চলতে পারে না ফলে তার জীবন স্থবির ও নিশ্চল হয়ে পড়ে। তেমনিভাবে সমাজ একটি দেহ এবং এর দুটি পা হচ্ছে নারী ও পুরুষ। পরিবার, সমাজ, জাতি নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গঠিত। সমাজের অর্ধেক অংশই নারী। কোন কারণে যদি সমাজের এই অর্ধেক অংশকে জাতীয় ও সামষ্টিক জীবনের সকল কার্যক্রম থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে জাতির মধ্যে আর ভারসাম্য থাকে না। সেই জাতি আর এগোতে পারে না।
কিন্তু বর্তমানে ধর্মের দোহাই দিয়ে সমাজের এই অর্ধেক অংশকে অবশ, অথর্ব করে রাখা হয়েছে। তাদের চিন্তা চেতনাকে সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। নারীকে করা হয়েছে ঘরমুখী। তাকে শেখানো হয়েছে তার কাজ কেবল ঘর নিয়ে, স্বামী-সংসার, সন্তান নিয়ে। এই গণ্ডিটুকুই তার জীবন, তার সমস্ত চিন্তা, তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সবকিছুই এই সংসার কেন্দ্রিক। এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ভুলখাতে প্রবাহিত করে নারীকে বিকৃত পর্দাপ্রথার বেড়াজালে আটকিয়ে সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব থেকে তাকে আলাদা করে দিয়েছে। ফলে অনিবার্যভাবেই জাতির জীবনীশক্তি লোপ পেয়েছে, জাতি হয়ে পড়েছে স্থবির, গতিহীন, নিশ্চল। নারী সমাজের চালিকাশক্তি, জীবনীশক্তি। সমাজের এই অর্ধেক অংশকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সামষ্টিক জীবন থেকে বাদ রেখে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে উন্নতি-অগ্রগতি সম্ভব না।
রসুলাল্লাহর সাহাবী উম্মে শেফা (রা.) ছিলেন বাজার ব্যবস্থাপক। তিনি কোমরে তলোয়ার নিয়ে বাজারে ঘুরে ঘুরে দেখতেন কেউ পণ্যে ভেজাল দেয় কিনা। হাসপাতালের সব কাজে মেয়েরা অংশ নিতেন। তারা আহতদেরকে চিকিৎসা করতেন, সেবা করতেন, শহীদদের দাফন করতেন। হাসপাতালের অধ্যক্ষও ছিলেন একজন মেয়ে রুফায়দাহ (রা.)। জুম্মার নামাজে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল। রাতের বেলার নামাজেও তারা মসজিদে যেতেন। এভাবে জীবনের প্রত্যেকটা কাজে মেয়েদের অংশগ্রহণ আল্লাহর রসুল নিশ্চিত করেছিলেন। নারী প্রগতির এক বিস্ময়কর অধ্যায় তিনি রচনা করেছিলেন। নারীরা সমাজের প্রতিটি কাজে পুরুষের পাশাপাশি অবদান রেখেছিল। এমনকি যুদ্ধের মতো বিপদসংকুল স্থানেও নারীরা যুদ্ধ করেছিল।
ওহুদের যুদ্ধে শত্রুরা যখন রসুলাল্লাহকে ঘিরে ফেলল তখন উম্মে আম্মারা (রা.) খোলা তরবারি হাতে ছুটে গেছেন রসুলাল্লাহকে রক্ষা করতে। সেদিন তাঁর অবদান সম্পর্কে বলতে গিয়ে রসুলাল্লাহ মন্তব্য করেন, ওহুদের দিন আমি ডানে বায়ে যেদিকেই তাকিয়েছি সেদিকেই উম্মে আম্মারাকে দেখেছি। এই যদি হয় প্রকৃত ইসলামের নারীদের রূপ তাহলে আমাদের আলেমশ্রেণী কোন দলিলের ভিত্তিতে ফতোয়া দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্মদাত্রী, জাতি তৈরির কারিগর নারীকে চার দেয়ালে বন্দি করে রেখেছে? আজ সময় এসেছে যাবতীয় কুসংস্কার, মিথ্যার বেড়াজাল ভেদ করে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও মানবতার কল্যাণে জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখার, নারীদের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দূর করার। আর একমাত্র প্রকৃত ইসলামই পারে নারীদের সেই হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিতে।