01/07/2025
বাংলাদেশে যদি সংসদ নির্বাচনে পি.আর. (PR) বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (Proportional Representation) চালু করা হয়, তাহলে এর কিছু সুফল এবং কূফল (দুর্বলতা) থাকবে। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
🟢 সুফলসমূহ (Advantages of PR System):
১. ন্যায়সঙ্গত ও সুষম প্রতিনিধিত্ব:
• PR পদ্ধতিতে যেহেতু আসন বরাদ্দ হয় প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে, তাই বড় দলের পাশাপাশি ছোট দলগুলোরও সংসদে প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার সুযোগ থাকে।
• এতে ভোটের অপচয় কমে এবং জনগণের মতামতের অধিকতর প্রতিফলন ঘটে।
২. সংখ্যালঘু ও ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব:
• সংখ্যালঘু, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সহজ হয়।
• ছোট দলগুলোর কণ্ঠও সংসদে শোনা যায়, যা গণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করে।
৩. ভোটের গড় মূল্য বৃদ্ধি পায়:
• যেহেতু PR পদ্ধতিতে প্রায় সব ভোট গণনায় আসে, তাই একজন ভোটারের ভোট নষ্ট হয় না, বরং তা দলের মোট ভোটে যোগ হয়।
• এতে ভোটাররা ভোট দেয়ার প্রতি আগ্রহী হয়।
৪. রাজনৈতিক মেরুকরণ কমে:
• বড় দলগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য হ্রাস পায়।
• কোয়ালিশন বা জোট সরকার গঠিত হয়, যা নানা মত ও মতাদর্শের ভারসাম্য আনে।
৫. গণতন্ত্রের গভীরতা বাড়ে:
• সরকারের নীতিনির্ধারণে নানা শ্রেণির ও মতের মানুষের অংশগ্রহণ ঘটে, ফলে সিদ্ধান্ত আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়।
⸻
🔴 কূফলসমূহ (Disadvantages of PR System):
১. জটিল ও ধীর নির্বাচন প্রক্রিয়া:
• PR পদ্ধতি গণনা ও আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে জটিল। গণনা করতে সময় লাগে এবং অনেক সময় ভোটাররা বুঝতে পারেন না তারা কাকে ভোট দিচ্ছেন।
২. দুর্বল জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা:
• PR ব্যবস্থায় অনেক ছোট দল সংসদে ঢোকে, ফলে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কঠিন হয়।
• এটি জোট সরকারের দিকে নিয়ে যায়, যেগুলো প্রায়ই অস্থিতিশীল হয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরতা দেখা দেয়।
৩. স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব দুর্বল:
• একটি নির্দিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য নির্বাচনের সুযোগ না থাকায়, সেই এলাকার মানুষ সরাসরি তাদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারে না।
• এতে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক দুর্বল হয়।
৪. চরমপন্থী দলের উত্থান:
• ছোট ছোট চরমপন্থী দলগুলোও সহজে সংসদে প্রবেশ করতে পারে, যা জাতীয় নিরাপত্তা বা স্থিতিশীল রাজনীতির জন্য হুমকি হতে পারে।
৫. রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভরতা বাড়ে:
• PR পদ্ধতিতে দল-ভিত্তিক তালিকা হয়। এতে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি বা যোগ্যতা না দেখে দলীয় আনুগত্য বেশি গুরুত্ব পায়।
✍️ উপসংহার:
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে PR পদ্ধতি চালু করা হলে রাজনৈতিক বহুত্ববাদ ও প্রতিনিধিত্বের পরিধি বাড়বে, তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, জোট সরকারের জটিলতা ও স্থানিক প্রতিনিধিত্বের ঘাটতি সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে একটি মিশ্র পদ্ধতি (Mixed System)—যেখানে কিছু আসন সরাসরি ভোটে এবং কিছু PR পদ্ধতিতে নির্ধারিত হয়—বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।