
09/04/2024
সকালে ঘুম থেকে উঠেই বউ বললো- ওগো আমার না এবার ঈদে পদ্মজা শাড়ি লাগবে।
হতভম্ব হলাম! অনেক শাড়ির নাম শুনেছি তবে এই প্রথম পদ্মজা নামে কোনো শাড়ির নাম শুনলাম। না শুনে না বুঝে হ্যাঁ জবাব দিলাম।
"আচ্ছা আনবোনি কিনে।
এই বলে ফ্রেস হয়ে অফিসে গেলাম। বউ আমার একটু পরপর ফোন দিয়ে বলছে-
"ওগো শুনছো। পদ্মজা শাড়িটা আজকেই আনবা, সবার আগে আমায় পদ্মজা শাড়ি পড়ে ফেইসবুকে পোষ্ট দিতে হবে।
বউ আমার একটু অভিমানি তাই কিছু না বলে হ্যাঁ জবাব দিলাম।
সন্ধার দিকে মার্কেটে গিয়ে পদ্মজা শাড়ির কথা বলায় সব দোকানদার বললো-
"ধুর মিয়া পাগল নাকি, পদ্দজা,পদদজা'পদ্মজা নামের কোনো শাড়ি মারি নাই। হুদায় আইছে সময় নষ্ট করার জন্য। ক্লান্ত স্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলাম। না জানি বউ আজকে কি করে। রুমে ঢুকতেই বউ দৌড়ে এসে নাচতে নাচতে বললো-
"কিগো পদ্মজা শাড়ি আনছো?
মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বললাম-
"আ'আসলে হইছে কি জানো, অনেক দোকানে খুজেঁছি পদ্মজা নামে কোনো শাড়ি পাইনি।
আমার কথাশুনে বউতো রেগে আগুন। অভিমানি ন্যাকা মার্কা মেয়ে বিয়া কইরা জন্মের ভুল করছি। কান্না করতে করতে বিছানায় গিয়ে একটা বালিশ আমার দিকে ছুড়ে মেরে শুয়ে কান্না করছে আর বলছে-
"আমি জিবনে কি চাইছি?কিছুই চাইনি, আজকে প্রথম একটা শাড়ি চাইলাম। আপনি শাড়িটা আনলেন না,আমি বুঝেছি কেউ আমায় ভালোবাসেনা। যারা আমায় ভালোবাসে না,তাদের সাথে কথা নেই!বেড শেয়ার করাও নেই। কে কোথায় ঘুমাবে আমার দেখার বিষয় নেই।
হায়রে কপাল, শা*লিরে অনেক বুঝাইতে লাগলাম কিছুই শুনছেও না আবার বুঝতেছেও না। কি আর করার ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরের দিন সকাল হলো, বউ কান্না করেই যাচ্ছে। আমি কোনো কথা না বলে ফ্রিজ থেকে নাস্তা বের করে খেয়ে অফিসে গেলাম। কোনো কাজে মন বসতেছে না। তা দেখে আমার কলিগ বলে উঠলো-
"কি নাঈম ভাই এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো?
"না ভাই তেমন কিছুনা।
আমার কথায় তিনি আমার কাছে এসে বললো-
"ভাবির সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি?
মাথা নেরে হ্যাঁ জবাব দিয়ে বললাম-
"হুম । বিশ্বাস করেন ভাই কোথাকার কোন পদ্মজা শাড়ির জন্য সারারাত আমার সাথে কথা বলে নাই। এমনকি সকালে নাস্তাও দেইনি। কান্নাকাটি করছে ওই শাড়ির জন্য। মার্কেটে গিয়ে পদ্মজা শাড়ির নাম বলতেই দোকানদার পাগল বলে তারিয়ে দিচ্ছে।
আমার কথা শুনে কলিগ বলে উঠলো-
"ওহ এই ব্যাপার! আপনার ভাবিও এই পদ্মজা শাড়ির বায়না ধরেছে । তবে এই নামের শাড়ি বলতে কিছুই নেই। ফেইসবুকের কিছু ফালতু পাঠক/পাঠিকাদের জন্য এই দশা।
হতাশ হয়ে বললা-
"এখন কি করবো ভাই। কোথায় পাবো এই পদ্দজা শাড়ি।
"পদ্দজা নয় পদ্মজা শাড়ি হবে।
"একটা হইলেই হলো। আচ্ছা এখন কই পাবো ভাই?
আমার কথায় মুসকি হেসে ওনি বললেন-
"আরে ভাই চিন্তা কিসের। বুদ্ধি থাকলে শশুর বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করার লাগবে না। অফিস শেষে আমার সাথে দেখা কইরেন।
সন্ধার দিকে অফিস শেষে আমার কলিগ আমায় ফুটপাতের একটা দোকানে নিয়ে গেলো। আমি বললাম-
"এখানে কেনো নিয়ে আসলেন ভাই?
"পদ্মজা শাড়িতো সুধু এখানেই পাওয়া যায়।
এই বলে ওনি ২০০ টাকা দিয়ে দুটো বিধবা মার্কা সাদা শাড়ি কিনে বললেন।
"মিয়া এটাই হলো পদ্মজা শাড়ি। চলেন এখন সামনের দোকানে গিয়ে শাড়ির মাঝে লিখে দেই পদ্মজা।
আমি ওনার দিকে তাকিয়েই আছি আর ভাবছি আরে বাছ,সত্যিই তো বুদ্ধি থাকলে শশুর বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করতে হবে না । যাইহোক ১২০ টাকা দিয়ে শাড়ির মাঝে সুন্দর করে পদ্মজা লিখে বাইরে বের হলাম। আমার কলিগ একটা শাড়ি গুছিয়ে আমার হাতে দিয়ে বললো-
" শুনেন ভাই। এই শাড়ি আপনার বউকে পড়িয়ে ফেইসবুকে আপলোড দিয়ে বলবেন এবং আপনি আরো দুইটা ফেইক একাউন্ট খুলে মুখ ঢেকে আপনার বউয়ের পিক আপলোড করবেন।
খুশিতে ওনাকে জরিয়ে ধরে বললাম। ধন্যবাদ ভাই। ওনি মুসকি হেসে বললেন-
"এখানেই শেষ না ব্রো। আরো আছে। এখন থেকে আমরা দুজনে পদ্মজা শাড়ি বিক্রির অনলাইন শপ খুলবো এবং এই বিধবামার্কা শাড়িতে পদ্মজা পেইনটিং করে সেল দিবো। প্রতি পিস ৫২০০ টাকা।
কথাটা শুনে অবাক হয়ে বললাম-
"আপনার বুদ্ধির অভাব নেই ভাই।
"আরে বাদ দেন। এখন বাসায় গিয়ে বউয়ের রাগ ভাঙ্গান।
এই বলে উনি নিজের পথ মাপলেন। আমিও বাসায় গিয়ে দেখি বউ এখনো বিছানায় শুয়ে কান্না করছে। মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে নরম গলায় বললাম-
"ওগো। শুনছো বউ!তোমার পদ্মজা শাড়ি আনছি।
কথাটা শুনেই পেতনিদের মতো বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে আমার হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে বলতে লাগলো-
"ওগো আমি জানি তুমি আমায় অনেক ভালোবাসো। আমার বিশ্বাস তুমি আমার জন্য পদ্মজা শাড়ি আনবে।
এই বলে বউ আমার খুশিতে নাচতে নাচতে শাড়িটা পড়লো। দেখতে হরিদাস মার্কা ছকিনাদের মতো লাগছে। তবুও মুখে হাসি নিয়ে বললাম- বাহ্ মনে হচ্ছে যেনো পদ্মজা বইয়ের পদ্মজা আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। চমৎকার দেখাচ্ছে গো বউ।
কথাটা শুনে বউ কয়েকটা পিক তুলে ফেইসবুকে আপলোড দিতেই;মিনিটে 1M রিয়েক্ট পড়লো। অন্যদিকে আমিও ফেইক একাউন্ট খুলে সুন্দর রিভিউ লিখে পিক আপলোড দিলাম। মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে গেলো ননমার্কা বিধবা শাড়িটি।
কলিগ মিলে অনলাইন শপের পেইজ খুলেছি।সমস্ত ননমার্কা মূর্খরা এসে মেসেজ দিচ্ছে- ভাই শাড়িটা অনেক সুন্দর। আমার লাগবে?বাহ্ চমৎকার শাড়ি।
১৫ দিনের মাথায় বিধবামার্কা ননমার্কা শাড়ি বিক্রি করে মুই নয়ন আলী নাঈম হয়া গেলুম বিশিষ্ট ধনি মার্কা লোক। লাগবে নাকি এইরকম শাড়ি। এই পদ্মজা শাড়ি 😁😁
এরকম বুদ্ধি থাকলে বউকে কন্ট্রোলে রাখা যায় মিয়া।
#পদ্মজা_শাড়ি
লেখা- ী_নাঈম
যারা আইডি ফলো না করে গল্প পরছেন নীল লেখায় চাপ দিয়ে আইডি ফলো করেন 👉👉 Md Sohag