Sanjida Islam Suchana - সানজিদা ইসলাম সূচনা

Sanjida Islam Suchana -  সানজিদা ইসলাম সূচনা "কল্পনায় বিভোর হওয়া, এক কাল্পনিক সত্তা"

 #সহেনা_যাতনা_তোমার  #লেখনীতে_সানজিদা_ইসলাম_সূচনা  #পর্ব : ৩১ (ক)আজ শুক্রবার, বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় পৌষ মাসের পঁচিশ তারিখ। ...
21/09/2025

#সহেনা_যাতনা_তোমার
#লেখনীতে_সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
#পর্ব : ৩১ (ক)

আজ শুক্রবার, বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় পৌষ মাসের পঁচিশ তারিখ। সময়টা এখন সন্ধ্যা। শীতের প্রকোপ খুব বেশি। কনকনে ঠান্ডা বাতাসের দাপাদাপি চারদিকে। কুয়াশায় অন্ধকারে আচ্ছন্ন বাইরের পরিবেশ। তবুও এই শীতে গায়ে চাদর জড়িয়ে বাইরে ও চায়ের স্টলে মানুষের আড্ডা, হাসি আর ঠাট্টা বিদ্যমান। রোজকার হয়ে আসছে এমনটা। তিমিরে আচ্ছাদিত এহসান বাড়ির সকল দৃশ্যপট। শুধু মৃদু হলদেটে ড্রিম লাইটের কৃত্রিম আলোয় একটু দৃশ্য স্পষ্ট ইফতি এহসানের বেলকনিতে। সাথে দৃশ্যমান জলন্ত সিগারেট ও তার ধোঁয়ার কুন্ডলী। বিষন্ন মনে পাশের বারান্দায় তাকালো ইফতি। মাওয়াদের বাড়িটা আজ হৈচৈ আর আলোয় ভরপুর। ইফতি সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে। হাতের সিগারেটটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দিল তৎক্ষনাৎ। লাল অক্ষিপট ঝাপটিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে ক্রোধ নিয়ে কিছু একটা বিরবির করে বলে ওঠে সে। তন্মধ্যে দরজায় বিশাল শব্দের করাঘাত। ওপাশ থেকে চিৎকার করে ডাকছে ইরতিজা।

—’ দরজা টা একটু খোল ভাইয়া। বিষয়টা ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ না। মার কিন্তু শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ’

ইফতি কথাগুলো শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। প্রায় বিকেল থেকে একনাগাড়ে ডেকে যাচ্ছে ইরতিজা। দুপুরের দিকে দরজায় খিলি দিয়ে বসে ছিল সে। সুষমা বেগম আজকে জানিয়েছেন, মাওয়ার সাথে তার বিবাহ ধার্য করা হয়েছে। এবং আজকে রাতের বেলায় তাদের বিয়ে পড়ানোর কথা। বিমূঢ় প্রতিচ্ছবি ধারণ করে আজ প্রথম মায়ের দিকে তাকিয়ে হুংকার মেশানো গলায় কিছু কথা বলে ফেলেছে ইফতি। সে চায়না মাওয়া তার জীবনে আসুক। কিন্তু মায়ের সহমত পোষণ দেখে সে দরজায় খিলি দিয়ে বসে আছে। করবে না সে বিয়ে। কিন্তু ইরতিজার এতো ডাকাডাকি আর মায়ের কথা শুনে অবশেষে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো ইফতি এহসান। গোমড়া মুখে ইরতিজার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যায় মায়ের রুমের দিকে। সেখানে গিয়ে রাগ একটু চড়াও হলেও চুপসে গেল কিছুটা। টয়া সুষমা বেগমের শিয়রে বসে আছে। ইফতি মায়ের পাশে বসে।

—‘ বাংলা সিনেমার দৃশ্য বানিয়ে দিয়েছ রুমটাকে। এখন আবার বলো না, 'তুই বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা বাবা। না হলে আমার মরা মুখ দেখবি'। ’

এহেন কথায় অসুস্থ শরীর নিয়েও সুষমা বেগম হেসে উঠলো। সাথে ইরতিজা আর টয়াও। ইফতি বিরক্তিকর মুখের আদল নিয়ে 'চ' উচ্চারণ করে উঠলো। তাকে কেন সবাই সিরিয়াস নেয় না? সুষমা বেগম উঠে বসেন। আদুরে ভঙ্গিতে ছেলের মুখে হাত বুলিয়ে বলে উঠেন,

—‘ মেয়েটা সত্যিই অনুতপ্ত বাবা। ও তোকে খুব ভালো রাখবে। কিছু ভুল শুধরে এগিয়ে গেলেই তো ভালো হয়। আর কিছু ভুলকে মাফ করলেই সব সহজ হয়। ’

—‘ আন্টি ঠিক বলছে ইফতি। আমি ওর চোখে তোর জন্য ঠিক ভালবাসা দেখেছি। সে খুব অনুতপ্ত। যা তোর চোখে পড়ছে না। ’

সুষমা বেগমের কথা শেষ হতেই টয়া কথা গুলো বলে ইফতির উদ্দেশ্যে। ইফতি দুজনের কথার বিপরীতে কাঠকাঠ গলায় বলে ওঠে,

—‘ করতে পারব না আমি এই বিয়ে। মাওয়াকে দেখলেই আমায় সেই দুর্ধর্ষ স্মৃতি গুলো তাড়া করে বেড়ায়। যা আমি একা একা অন্তরে যাতনার পাহাড় বানিয়ে সহ্য করেছি। ’

সুষমা বেগম ছেলের পিঠে হাত বুলালেন। সে বুঝলো ছেলের কষ্ট। কিন্তু এটাও সত্য এখন সে সুখী হবে। মাওয়া বুঝতে পেরেছে নিজের ভুল। তিনি এও জানেন। ইফতির মনের কোথাও না কোথাও মাওয়ার অস্তিত্ব এখনো রয়েছে। সে পারবে অভিমান ভুলে সব মেনে নিতে। সুষমা বেগমের এখনো মনে পড়ে, সদ্য প্রেমে পড়া ইফতির মুখাবয়ব। মাওয়াকে ঘিরে তার সকল অনুভূতি। যে নিজের মনের সকল কথা মা-বাবা কে বলে বেড়াত। প্রেমে পড়া বারণ, এই কথাটা ছিল ইফতির অন্তস্থলে লেখা। যা চিড়ে বাধ্য হয়েছিল সে মাওয়া তে মন দিতে। একটা সময় সে মাওয়ার, তার প্রতি করা পাগলামিতে অভস্ত হয়ে পরে। মাওয়ার লাইফে জুড়ে থাকা সকল ছেলেদের তার বিষাক্ত লাগত। ইফতি সবসময় চাইতো। মাওয়ার চোখ দুটি যেন শুধু তাকে দেখেই চলে। অন্যসব কিছু বাদ। মেয়েটার স্বাধীন ভাবে চলাফেরা নিয়েও তার হয় যত অনীহা। এই ভেবে, মাওয়া যেন বদলে না যায়। অতিরিক্ত ওভার পজেসিভ হয়েছিল ইফতি এহসান। সুষমা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। অকপটে জানতে চাইলেন,

—‘ এখনো কি সেই অনুভূতি মন গহীনে লুকায়িত আছে? ’

ইফতি মাথা তুলে সুষমা বেগমের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছেন। উত্তর দিতে আগ্রহী নয় সে। যেন গত প্রশ্নের জবাব সুষমা বেগম থেকে শুনে নিতে চাইল। টয়া আর ইরতিজা নিরব দর্শক শুধু। তারা দেখতে থাকলো ইফতির অভিব্যক্তি।
ইফতি করুন হেসে মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

—‘ কি শুনতে চাও মা? আমি তাকে ভালোবাসি কি না? ’

সুষমা ছেলের কাতর গলা পরোক্ষ করলেন। কন্ঠ যেন ভেঙে আসছে। ইফতি উঠে দাঁড়ায়। সবাইকে পিছু দিয়ে সামনে তাকালো সে। হয়তো তার কাতর দৃষ্টি আর মলিন মুখ তাদের দেখাতে প্রস্তুত নয় সে। সাত বছর আগের ইফতিকে সে নিজের ভেতর ঢুকতে দেবেনা। নিজেকে সে গম্ভীর করে তুলেছে। যার খোলশ সে ভাঙতে দেবে না। নিস্তব্ধতা মুড়িয়ে ইফতি আবার বলে উঠলো,

—‘ হ্যাঁ ভালোবাসি আমি তাকে। খুব ভালোবাসি। যতোটা ভালোবাসলে কারো কাছে নিজের অস্তিত্ব বিলীন করা যায়। ’

ইফতির সহজ স্বীকারোক্তি। যা একটুখানি চমকে দিল তিন জোড়া নয়ন। আদেও সে সত্যিই ইফতি তো? যে বরাবরই নিজের অনুভূতি বোঝাতে ব্যর্থ? ইফতি আবার বলে,

—‘ কিন্তু সেই অস্তিত্ব বিলীন করা ভালোবাসা, আমার প্রখর ঘৃণার নিচে চাপা পড়ে নিজেই অস্তিত্ব হীন হয়ে আছে। ’

শেষে কথাগুলো কঠিন স্বরে হুংকার মেশানো গলায় বলে উঠলো ইফতি। বুক উঠানামা করছে তার দ্রুত গতিতে। নিজেকে ধাতস্থ করে ইফতি বলে,

—‘ আমাকে ভালোবাসার পথ দেখিয়ে সে নিজই পিছিয়ে গেছে। আমাকে সে ভালোবাসতে পারেনি। যেমনটা আমি নিজে তাকে ভালোবেসেছি। আমার অস্তিত্ব শুধু তার কথাই সর্বদা জানান দিত। আমার জীবনে তখন সবাইকে ছাড়িয়ে ভালোবাসার প্রথম মানুষটা হয়ছিল মাওয়া। যাকে একদিন আমি দেখতে না পেলে দমবন্ধর অনুভূতিতে জ্বলতে হতো। আমার প্রায়োরিটি লিস্টে যার নাম ছিল খোদাই করা। সেখানে আমি তার মনের মতোও হতে পারলাম না? তার প্রায়োরিটিতে আমি কেন থাকবো না? বন্ধু মহল, আড্ডাবাজি, সবকিছু ছিল তার আমার থেকেও উর্ধে। যা আমি মানতে পারিনি। তাই মাওয়াকে শুধু আমি আমার প্রতি ফোকাস করাতে চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সে উল্টো আমাকে ব্লাক লিস্টে রেখে দিল? আমার ফিলিংস তার কাছে অহেতুক ছিল? আদেও কি সে আমার ভালোবাসা বুঝেছিল? আমার চোখের ভাষা বুঝেছিল? সামন্য বিষয়ে সব ক্লোজ করে দিয়েছিল। হাত না লাগিয়েও শ্বাসরুদ্ধকর করে মেরে ফেলেছিল সে আমাকে। ’

ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে ইফতি মায়ের দিকে ফিরে। সুষমা সহ সবাই এখন একটু দুঃখী দেখালো। তারা উপলব্ধি করতে পারলো কষ্টটা তার কোথায়? ইফতির এই ওভার পজেসিভ কি তাহলে তাদের সম্পর্ক ভাঙনের মূল কেন্দ্র? তাই বলে ব্রেকআপ কেন? ব্রেকআপ বাদে অন্য কোনো ভাবে কি ইফতিকে বোঝাতে পারতো না মাওয়া? সবার ভাবনা থেকে হুঁশ আসে ইফতির শেষ কথায়।

—‘ আমি যাকে আমার জীবনে সবার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি ভেবেছিলাম, তার জীবনে আমি শুধু অহেতুক হয়েছিলাম। যার কাছে ছিল, আমার থেকেও বেশি ইমপোর্টেন্স নিজের ফ্রেন্ড সার্কেল আর স্বাধীনতা নামক উগ্র চলাচল। তারপরও এখন আমায় তাকে মানতে হবে। যার কাছে আমার কোনো রেসপেক্ট ছিলনা। ওয়েল, বিয়ে করবো আমি ওকে। তোমরা যেমনটা চাও তেমনটাই হবে। কিন্তু আমি যে তাকে আগের সম্পর্কের সম্মান করবো। সেই আশা তাকে রাখতে বলো না। আমি সাধারণ ভাবে সবটা ভুলে, সুন্দর মনের মানুষ নিয়ে বাকিটা জীবন সুন্দর সংসার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু? যাইহোক, তাহলে তোমাদের ইচ্ছায় সারাজীবন মাওয়ার সঙ্গে আমার জটিল সংসারই হোক। ’

কথাটা বলে ঝড়ের গতিতে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো ইফতি। তন্মধ্যে চোখের সামনে ভাসলো কান্নারত মুখশ্রী। ধক করে উঠলো বক্ষপিঞ্জরের হৃদপিণ্ড। কাজল কালো অশ্রুসিক্ত আঁখি জোড়া। ছলছল নয়নে অনুতপ্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইফতি দৃষ্টি নিগুঢ় করে। হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি পরেছে মাওয়া। চুল গুলো হাত খোপা করা। মেকআপ বিহীন সামান্য কাজল চোখে। এক অন্য রকম মাওয়া। যাকে দেখতে ইফতির কত আফসোস ছিল। সেই বেশে আচমকা চলে আসাতে ইফতি সামান্য টললেও নিজের গাম্ভীর্যের খোলশ ছাড়ল না। ভ্রু কুঁচকে নিরেট তাকিয়ে আছে। মুখে ফুটতে দিল না মুগ্ধতা। নিজের উপর সম্বিত ফিরিয়ে এনে চলে গেল সামনে থেকে। মাওয়া ভগ্ন হৃদয় নিয়ে তাকিয়ে দেখল ইফতির যাওয়ার পানে। নিজেকে আর কত ভাবে ধিক্কার, তিরস্কার করবে সে জানা নেই। একাকী তার অতীত নিয়ে ভাবলে নিজেকে মেরে ফেলতে মন চায় মাওয়ার। এমন ভাগ্য করে পাওয়া পুরুষকে পায়ে ঠেলে সড়িয়ে দিয়েছিল সে। কি করে পেরেছিল এমনটা? হতভাগি পদবি সে নিজেই লাগিয়ে নিল। যে চোখ দুটি তে সে সবসময় মায়া, ভালবাসা, কোমলতা খুঁজে পেত, সে চোখ দুটিতে আজ তার জন্য অসীম ঘৃণার বসবাস। ভাবতেই কেঁপে উঠলো মাওয়ার। এত কিছু সহ্য করার পরে কেন ইফতি তাকে বিশ্বাস করবে? সে হলে তো কখনো এমন কাউকে সুযোগ দিতো না দ্বিতীয় বার। তাহলে ইফতির দোষ কোথায়? মাওয়ার রিজেকশনের পরে ইফতি গলাকাটা মুরগির মতো ছটফট করে ছিল। কিন্তু কাউকে হয়তো তা বুঝাতে ও দেখাতে পারেনি সে। মাওয়া এই অসীম ঘৃণা ও কষ্ট পাওয়ার যোগ্য জেনেও, তা সহ্য করতে পারছে। তাহলে, ইফতি কোনো দোষ না করে কিভাবে এই যাতনা সহ্য করছে। তার দেওয়া যাতনা ইফতি এহসান কে খুব পুড়িয়েছে। যা ছিল সহ্য করার বাইরে। সুষমা বেগমের ধাক্কায় মাওয়া হুঁশে এলো। টলমল দৃষ্টি আর টলমলে পায়ের নড়বড়। ইরতিজা মাওয়া কে ধরে খাটের সাইডে বসালো। সুষমা মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো,

—‘ দেখলে তো ইফতি রাজি হয়েছে। চিন্তা করো না। বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। ’

মাওয়া কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো সুষমা বেগম আর টয়াকে। তাদের অবদান ভুলবার মতো নয়। একটা মেয়ের এমন কৃতকর্মের জন্য কোনো মা'ই তার সন্তানের আশেপাশে এমন মেয়েকে দ্বিতীয় বার ভিড়তে দেবে না। কিন্তু সুষমা বেগম যেন অন্যরকম। যে মেয়ে ছলনা করেছে তাকেই কেন সে তার ছেলের জীবনে সুযোগ দিচ্ছে?

—‘ কেনো এতো ভালোবাসেন আমাকে আন্টি? আমি কি এই ভালোবাসার যোগ্য? অন্য কেউ হলে তো তার ছেলের জীবনে সেকেন্ড চান্স কি, সেকেন্ড সময় আমার মুখও তার ছেলের সামনে আনতো না। আপনি কেন আমাকে সাপোর্ট করছেন। ’

সুষমা বেগম ম্লান হাসলেন। মাওয়ার চোখের পানি মুছে শান্ত গলায় বলে উঠলেন,

—‘ তোমাকে নিয়ে ইফতির মনের সকল অনুভূতি আমি জানতাম। ছেলেটা নিজের মনের সব কথা আমাকে বলতো। আমার ছেলেটা যে তোমাকে কতটা ভালোবাসতো তুমি সেটা নিজেও হয়তো কোনোদিন উপলব্ধি করোনি। ইফতির সাথে টয়ার বিয়েতে আমি খুশিই ছিলাম। তারপরও আমার মন খারাপ হতো ছেলের সদ্য প্রেমের পাগলামি অনুভূতি গুলো মনে করে। আমার সবসময় মনে হতো ইফতি এখনো তোমাকে ভালোবাসে। এবং আমার ধারণাটাও সত্যি হলো। ’

এর মধ্যে টয়াও মাওয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে মিষ্টি হেসে বলে উঠলো,

—‘ সত্যি বলতে তোমাকে আমার কোনো সময় পছন্দ ছিল না মাওয়া। তোমার চলাফেরা ভাবনাচিন্তা সব কিছুতেই। কিন্তু সবটা জানার পর ও তোমাকে দেখার পর এইবার মনে হচ্ছে তুমি সত্য। ইফতির সাথে আমার বিয়ে তার কথা মতো ঠিক হলেও সে উদাসীন হয়ে থাকতো সবসময়। আমি রিয়েলাইজ করলাম। ইফতির আমাদের সম্পর্কের থেকেও বেশি এক্টিভ ছিল, কিভাবে তোমাকে কষ্ট দেওয়া যায় সে ধান্দায়। ও তোমাকে এখনো ভালোবাসে ঠিক। কিন্তু এখনো তোমাকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। ’

মাওয়া চুপচাপ কথা গুলো শুনলো। ইফতির আজকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মাওয়া বুঝতে পারছে সবটা। ইফতি তাকে এখনো খুব ভালোবাসে। যা ঘৃণা এবং অভিমানের চাদরে ঢাকা পড়ে আছে। মাওয়া এটাও বুঝতে পারলো। ইফতি তাকে ভালোবাসে বলে যে ক্ষমা করে দেবে তেমনটা নয়। আত্মসম্মানীয় ব্যাক্তি ইফতি এহসান নিজের ভালোবাসাকে আটকে রেখে ঘৃণা, অভিমান, ইগোটাকে আর রাগ টাকে প্রাধান্য দিবে বেশি। সামনে এই বিয়ে সংসার হবে শুধু ঘৃণা, অসম্মানের। মাওয়া তা ভেবেও যেন শান্তি পেলো। সারাজীবন পায়ে পড়ে থাকবে সে ইফতির। এতেই শান্তি প্রবাহিত হয়ে যাবে তার মনে। না পাওয়ার চেয়ে তার অতি আপন ঘৃণার ব্যাক্তি হওয়াটাও সুখের মন হলো মাওয়ার। সে সহ্য করবে ইফতির দেওয়া সকল যাতনা। সহ্য করবে অবহেলা, আর যত অভিনয়ের অভিমান।

,

চলবে................

 #সহেনা_যাতনা_তোমার  #সানজিদা_ইসলাম_সূচনা #পর্ব: ৩০পিনপতন নীরবতাশ গ্রাস করেছে সময়টা। পরিস্থিতি যেন থমকে রয়েছে। কোথাও কোন...
20/09/2025

#সহেনা_যাতনা_তোমার
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
#পর্ব: ৩০

পিনপতন নীরবতাশ গ্রাস করেছে সময়টা। পরিস্থিতি যেন থমকে রয়েছে। কোথাও কোনো শব্দ নেই। নিশ্চুপ নিস্তব্ধ পরিবেশ। সবসময় পাখির কলকাকলীতে বিদ্যমান শান্তি নীড়ের বাইরের চারপাশটাও আজ শব্দের অভাব অনুভব করছে। যেমনটা ভেতরেও থমথমে গম্ভীর পরিবেশ বিরাজ করছে। বারো জন মানুষ তাকিয়ে আছে উমায়েরের দিকে। তাদের চোখে মুখে ভীড় করেছে হাজার প্রশ্ন আর কৌতূহল। কিন্তু সবসময়ের মতো ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বাবা চাচা ও মামাদের সামনে বসে আছে। এইযে এত বড়ো কান্ড কর্ম করেছে তাতে বিন্দু মাত্র মুখে লজ্জার রেশও নেই। দিব্যি বসে বসে অনানকে দেখে যাচ্ছে। বাড়ির সবাই রাগান্বিত মুখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ফাহাদ এই মূহুর্তে নিজেকে অনেক অসহায় মনে করলো। এই ছেলে তার কি করে হতে পারলো? ডিরেক্ট তুলে নিয়ে দুই দিন পরে পুলিশসহ নিজে গিয়ে ধরে নিয়ে এসেছে। কিন্তু চোখেমুখে ভয়ডর কিছুই নেই? হতাশ, শুধু হতাশ। ইশান রেগে বোম হয়ে আছে। ভিষন ভয়ংকর রাগ তার চোখে মুখে। শুধু মাত্র ফাহাদ আর জায়ানের জন্য কিছু বলতে পারছে না। নাহলে এই ছেলেকে থাপড়িয়ে গাল লাল করে ফেলতো। ইশান অধৈর্য নয়নে একবার ক্রন্দনরত মেয়েকে দেখলো। তিথি আর নিধির সাথে একদম জড়োসড়ো হয়ে মিশিয়ে বসে আছে। মুখটা একটুর জন্যেও উপরে তুললো না। সুন্দর মুখশ্রী ভয়ংকর লাল হয়ে আছে। মেয়ের জন্য ভিতর টা কেঁপে উঠলো ইশানের। সব দোষ এই ছেলের। উমায়ের তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আর বসে থাকা সদস্যদের দেখলো। এদের দেখলে যে কেউ বলবে, সবাই তিতা করলার জুস খেয়ে বসে আছে। সোহনা মির্জাকে একটু গম্ভীর দেখালেও নিপাকে খুব উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। সেই মনে হয় উমায়েরের প্রতি খুশি। নিজের দাদা দাদীর কথা মাথায় আনলো না উমায়ের। যে মুখের দশা করেছে। তার তাকাতেই ইচ্ছে করলো না। নাহিয়ান আর অনীশা। তাদের ভাবগতি, বোঝা গেলো না। নিধি ছেলের কর্মে রেগে থাকলেও মনে মনে দোয়া দুরুদ পাঠ করছে। যেন এযাবৎ ছেলের কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়। ইয়াসিরের বাড়ি থেকে পুলিশ কেস করেছে আরমান শেখ। বিষয় খুব জটিল পর্যায়ে। উমায়ের সর্বশেষে চোখ রাখে সামনে বসা চারজন গুরুগম্ভীর পুরুষদের উপর। সে তাকাতেই ফাহাদ গমগমে গলায় জিজ্ঞেস করে উঠলো,

—‘ কোনো হেয়ালিপনা নয়। যা জিজ্ঞেস করছি ফটাফট উত্তর দাও। অনানকে নিয়ে দুইদিন কোথায় ছিলে? ’

—‘ হেয়ালিপনা তো তোমারা করছো। নিজেরাই একেবারে পুলিশ নিয়ে ধরে আনলে। আর এখন বলছো কোথায় ছিলাম? বাংলা সিনেমার ডায়লগ না দিয়ে অন্য কিছু বলো। বিরক্তিকর! ’

ছেলের তেরছা কথায় রেগে গেলো ফাহাদ। চোখ গেলো দূরে বসা মিজানুল করিমের দিকে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব খুশি হয়েছে নাতির এহেন কথায়। বাঁকা হেসে ছেলেকে বুঝিয়ে দিলেন। এখন কেমন লাগে ছেলের তেরছা কথা শুনতে? ফাহাদ মাথা ঠান্ডা রেখে দৃষ্টি ঘোরাল। এখন সে ঝগড়ার মুডে নেই। জায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কি বলবে? কি আর বলার আছে? এখন মনে হচ্ছে আসলেই সে অতি আদরে বাঁদর বানিয়েছে।

—‘ কি চাইছো উমায়ের? পরশু যে কান্ড ঘটিয়েছো, তা নেহাৎ বাচ্চামো বলে পার পাওয়া যাবে না। এতো জটিল বিষয়টাকে তুমি সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছ না? আমাদের কি তোমার গরু মনে হয়? যে সবসময় ছাড় দেব? ’

উমায়ের ছোট আব্বুর কথায় মাথা নত করে নিল। নাহ, এবার সিরিয়াস হতে হবে। সে সবকিছু বলবে এখন। কিন্তু তার আগে ইশান ক্রোধিত গলায় বলে উঠলো,

—‘ তোমার ঘৃণিত কর্মকাণ্ড গুলো শুধু ভাগনে বলে লোক দেখানো মাফ করছি। ভেতর থেকে নয়। ’

এতোটুকু বলে আবার ফাহাদ এবং জায়ানের উদ্দেশ্যে বলে দিল,

—‘ উমায়েরকে সাবধান করে দেন ভাইয়া। দ্বিতীয়বার আমি আর ছাড়বো না। আমাদের আর কিছু শোনার নেই। উমায়ের কে বলুন চলে যেতে। সে যেন আর অনানের পিছনে পড়ে৷ না থাকে। ’

খুব অসন্তোষ হলো উমায়ের। ক্ষ্যাপা চোখে দেখলো তিথির সাথে লেপ্টে থাকা তার আদুরে মুখের বউটাকে। এই মেয়ে তো তার দিকে তাকাচ্ছেও না। নাহ্ আর চুপ থাকলে হবে না। উমায়ের গলায় গম্ভীর স্বর ঢেলে খিটমিট করে বলে ওঠে,

—‘ পিছনে পরবো না মানে? আমি তো ইতিমধ্যে উনার সাথে জুড়ে গিয়েছি। অনান আমার বিবাহিত স্ত্রী। আমরা বিয়ে করে নিয়েছি। ’

এমন কথায় বিস্ফোরণ ঘটে বিশাল বড়ো হলরুমে। সবাই সবার মুখে বিস্ময় নিয়ে চোখাচোখি করলো। বিয়ে হয়ে গেছে? অনান মায়ের সাথে আরও মিশে গেল। চোখ দুটিও বন্ধ অবস্থায়। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার। কারণ, সবার দৃষ্টি এখন অনানের দিকে। উমায়েরের কথার সত্যতা যাচাই করতে অনানের কান্নারত মলিন মুখটাই প্রথম প্রমাণ বহন করছে। নিস্তব্ধ সবাই কি বলবে আর? নাভান হতাশ হয়ে ভাগনের মুখখানা দেখলো। শেষ পর্যন্ত তার কথাই ঠিক রয়েছে। সবার মুখ অবকলন করে উমায়ের নড়েচড়ে উঠলো। এটা যে হতে পারে, তাদের মনে হয় জানায় ছিলো না। তিথি আর নিধি বড়সড় চোখ করে দেখলো অনান আর উমায়ের কে। নাহিয়ান ও অনীশাকে চিমটি কেটে কিছু বলছে। সোহানা মির্জা থমকে রইলেন কেবল। মিনারা বেগম আর মিজানুল করিম দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। নিপা যেন খুশি হলো। ফাহাদ আর জায়ানের অবস্থা আগের মতো। তারা জানতো এমন কিছুই হবে। ইশানের শরীরে যেন কেউ লবন ছিটা দিয়েছে। সে গর্জে উঠলো,

—‘ মানি না আমরা এই বিয়ে। তোমার বাচ্চামো আর সহ্য করার মতো নয়। জোর করে তুলে নিয়ে, জোর করে কবুল বলিয়ে ফেলেছো? ভাইয়া এবার অন্তত তোমারা চুপ থেকো না। ’

হতাশ দৃষ্টিতে তাকানো ছাড়া কারো আর কিছু বলার রইল না। ফাহাদ আর জায়ানের দৃষ্টি ছেলের কারণে একদম নত হয়ে গেছে। উমায়ের যে এই পর্যন্ত করতে পারবে, তার ভোলা ভালা মাসুম মুখ দেখলে লোকের তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। মিজানুল করিম এযাত্রা ফাহাদের সঙ্গে তেতে উঠলেন,

—‘ তোমার থেকেই এই শিক্ষা নিয়েছে তোমার ছেলে। তুমি যেমন তুলে নিয়ে বিয়ে করেছো? সেও করেছে। বাপের ধারা অব্যাহত রেখেছে। বুঝলে? ’

ফাহাদ নাকমুখ কোঁচকালো। সারাবছর ছোটদের সামনে এই কথা বকতে বকতে তার মানসম্মান নেহাৎ কম কমায়নি মিজানুল করিম। সেও এবার দমলো না। একই সুরে সুর মিলালো,

—‘ তাহলে বোধহয় আমিও আমার বাপের ধারা অব্যাহত রেখেছি বুঝলে? তুমিও কি মা কে তুলে নিয়ে বিয়ে করেছিলে? ’

ফাহাদের কথায় কেশে উঠলো মিজানুল করিম আর মিনারা বেগম। দুই ছেলে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি একটা মুসিবত? পরিস্থিতি শান্ত করতে নাভান তড়িৎ গতিতে প্রসঙ্গ বদলিয়ে বলে,

—’ উমায়ের তোমাকে কিছু কথা বলবো আমি। আশা করি কোনো ভনিতা করবে না। ’

উমায়ের নড়েচড়ে বসলো মামার কথায়। সবাই নজর দেয় তাদের দিকে। নাভান কিছুটা সময় নিয়ে ধীরেধীরে বলতে শুরু করলো,

—‘ তোমার বয়সটা নিতান্তই আবেগের। অনানের প্রতি তোমার অনুভূতি কি আবেগ না ভালোবাসার? সেটা নিয়ে আপাতত প্রশ্ন তুলবো না। প্রশ্ন এখন দ্বায়িত্ব নিয়ে। যেহেতু, তোমারা একটা সম্পর্কে জড়িয়ে গেছো। তুমি কি অনানের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত? ’

নাভানের কথা শেষ হতে দেরি। কিন্তু উমায়েরের বলতে দেরি নয়। সে অতি তাড়াতাড়ি দ্রুত গতিতে বলে ওঠে,

—‘ আমি নেব অনানের দ্বায়িত্ব। সুখে দুঃখে সবসময় উনার পাশে থাকব। কখনো কষ্ট পেতে দেবনা। ’

উমায়েরের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি। সবাই শুনলো সেই দৃঢ় বিশ্বাস যোগ্য কথা খানা। কি আর বলার আছে এতে। বিয়ের খবর শুনে সব কেমন চুপসে রয়েছে। এই বিয়েতেই সব শেষ। সবার মন একটুখানি মানিয়ে নেওয়ার দিকে এগুলো। কিন্তু ইশান অগত্যা জানিয়ে দিল,

—‘ দ্বায়িত্ব বললেই হয় না উমায়ের। জানি তোমার সব আছে। কোনো কিছুর কমতি নেই। কিন্তু তুমি এখনো নিজের পায়ে দাঁড়াও নি। সেখানে কি করে অনানকে তোমার হাতে তুলে দেব? বুঝতে পারছো কি বলতে চাইছি? ’

সুক্ষ্ম খোঁচা টা কোনদিকে গিয়ে লেগেছে তা ঠাওর করতে পারলো সকলে। কারণ ইতিমধ্যে উমায়ের করিমের মুখ কালো হয়ে গিয়েছে। দৃষ্টি হয়েছে অতি নড়বড়ে। সে বেকার, বাবা চাচার থেকে বিলাসিতা ছাড়া নিজের ইনকাম কই? করিম ইন্ডাস্ট্রির সকল সম্পত্তির মালিক তো সে নিজেই? সারাজীবন বসে বসে খেলেও তো টাকার পাহাড় ফুরিয়ে যাবার কথা নয়। তবুও ইশান তাকে কাবু করতে ইন্ডাইরেক্টলি বেকার বলেছে। যার বউ পালার মুরদ নাই। নাকের পাতা ফুলিয়ে বাবা আর ছোট আব্বুর দিকে তাকালো উমায়ের। জায়ানের কোনো হেলদোল দেখা দিল না। সে এই মুহূর্তে বসে বসে আরামে কফির কাপে ঠোঁট বসাচ্ছে। ফাহাদ হতাশ হয়ে ছেলেকে বলল,

—‘ নেতার পেছনে ঘুরে পাতিনেতা হলে তো লোকে ভাদাইম্মা বলেই আখ্যায়িত করবে। আমার অফিসের পিয়নের জব অফারের মেয়াদ কিন্তু এখনো আছে। চাইলে আজই জয়েন করতে পারো। বারো হাজার টাকা বেতন। ’

উমায়েরের ঝটপট উত্তর,

—‘ ওকে ডান, তাহলে আজই বেতন অগ্রীম দিয়ে দাও। চলুন অনান। দুহাজার টাকার বাসা ভাড়া। আর বাকি দশ হাজার দিয়ে দিব্যি সংসার চালাতে পারবো আমরা। ’

উমায়েরের এমন কথায় সবাই চোখ বড়সড় করে তাকালো। নাহ্, উমায়েরের ছটফটানি সহ্য হলোনা কারোর। তাকে বোঝাতে চাইল কি? আর সে বুঝলো কি? নিজেকে দমানোর বদলে এতো পুরো উদলে উঠছে। ইশান আপাদমস্তক দেখলো উমায়েরকে। এই ছেলের আদেও লজ্জা আছে বলতে মনে হয়না তার। সবার সামনে সংসার সংসার বকে যাচ্ছে। ইশান মুখ গম্ভীর করলো। সে উচ্চ স্বরে বলে উঠলো,

—‘ এই বেতনের উপর আমি আমার মেয়েকে দিচ্ছি না। পড়াশোনা শেষ করো। চাকরি নাও,ভালো টাকা ইনকাম করো তখন দেখা যাবে। এতে লাগুক বছর দুই, আমার কোনো সমস্যা নেই। ’

—‘ কিন্তু আমাদের সমস্যা আছে। ’

মিজানুল করিম ঘোর বিরোধিতা করে বলে উঠলো। সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকালো তার দিকে। মিজানুল করিম মিনারা বেগমের দিকে ইশারা করতেই তিনি ধীরে সুস্থে বলতে লাগলেন,

—‘ বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে এসব দন্ড বাঁধিয়ে লাভ কি? মেনে নাও সবাই সবটা। উমায়েরের মাস্টার্স কমপ্লিট হবার পর নিজের কোম্পানির ভার তুলে নেবে। তাই বলছি, মেনে নাও সবটা। বুঝলে? ’

—‘ তাহলে সেইদিন আসুক। তখনই আমি মেয়ে তুলে দেব। ’

বলে দ্রুত গতিতে জায়গা প্রস্থান করলো ইশান। উমায়ের অভিমানী চোখে দেখলো অনানকে। মেয়েটা এবারও নিশ্চুপ কেন? কি একটা লজিক দেখিয়ে চলে গেল ইশান? দু'বছর সে থাকবে কি করে? জায়ান কফির কাপ টা রেখে সে এবার উঠে দাঁড়ায়। উমায়েরের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে ওঠে,

—‘ ধৈর্য ধরো। সহ্য করো আর অপেক্ষা করো। অর্জন করতে নিজেকে গড়ে তুলো। তবেই সবটা ঠিক হবে। ’

উমায়ের দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ধৈর্য, আর কতো ধৈর্য ধরবে উমায়ের করিম? অনান, অনান নামটা মানেই ধৈর্য আর সহ্য। এছাড়া আর কিছুই নয়।

,

,

গোধূলির আকাশের শেষ বিকেল। শীতকালীন মাঘ মাস আজকাল আসবে বিধায় তন্মধ্যে ঠান্ডার হাওয়া ছেয়ে গেছে। দুরের বাড়িঘর গুলো যেন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। ঠান্ডা কলকলে বাতাস বিদ্যমান। শরীর হিম শীতল ধরিয়ে দেবার মতো অনুভূতি। চারপাশ কেমন অন্ধকারময় হয়ে আসছে। আজ কুয়াশা বেশি পড়বে কি? শরীরে একটা পাতলা শাল জড়িয়ে ছাঁদের কার্নিশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে অনান। বাতাসে চোখ, মুখ আর পাতলা ঠোঁট জোড়া শুষ্কতায় ঘিরে রয়েছে। অনান বারংবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে দিচ্ছে। তারপরও কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে একই অবস্থা স্থাপিত হচ্ছে। চাদরটা গায়ে ভালো করে টেনেটুনে আঁটসাঁট ভাবে শরীরে জড়িয়ে নিতে নিতেই অনুভব করলো, পিছন হতে কোমড় জড়িয়ে ধরা এক জোড়া বলিষ্ঠ হাতের। হাত জোড়ার মালিককে খুব করে চিনে অনান। তাই না হকচকিয়ে পেছনে গা এলিয়ে দেয় সে। তন্মধ্যে তার পিঠ ছোঁয় এক প্রশস্ত বুক। আর কাঁধে স্পর্শ করে সে মানুষটির থুতনি। দুজনেই একসাথে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তৎক্ষনাৎ নীরবতা ভেঙে অভিমান মিশ্রিত গমগমে গলার প্রতিধ্বনি বেজে উঠলো,

—‘ এত নিষ্ঠুরতম প্রেয়সী কেনো আপনি? ’

অপরপক্ষের কোনো দ্বিধা ছাড়াই প্রশ্ন এলো তৎক্ষনাৎ,

—‘ কষ্ট বরণ করেও কেন এই নিষ্ঠুর মানবী কে ভালোবাসাতে গেলে? ’

—’ তার চোখেতে আমি আমার সর্বনাশ দেখেছি। তাইতো, কষ্ট হবে জেনেও এই ভালোবাসার অমৃত সুধা গলাধঃকরণ করেছি। ’

প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতেই আবারও নিস্তব্ধতায় মুড়িয়ে গেল সময়। দুজনের চোখ নিমজ্জিত দূরে কুয়াশাজড়ানো আকাশ পানে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। পাখিরা নীড়ে ফেরার তাগিদে ছুটছে। কেউ দলবদ্ধ, বা কেউ একা একা ছুটেছে। নিশ্চুপ আকাশ ঘিরে এই ছুটে চলার দৃশ্য মন দিয়ে পর্যবেক্ষন করলো দুই নরনারী। নিষ্ঠুরতম সময়টা কেটে যায় অনেক্ক্ষণ। অনান পিছু ফিরে দু'হাত রাখে উমায়েরের বক্ষস্থলে। নিগুঢ় দৃষ্টিতে দেখতে থাকলো নিজের স্বামীকে।

—‘ আমাকে ছাড়া দু'টো বছর থাকতে পারবেন তো অনান? ’

উমায়েরের গলাটা একটু কেঁপে উঠলো। ছেলেটা যে এখন সর্বদা তাকে নিয়ে আতঙ্কে জর্জরিত থাকে। তাই এই কিছু দিনের দুরত্ব তার সহ্য সীমার বাইরে। অনান যদি হাড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে ফের? কিন্তু তার হৃদয় কি জানে? এখন থেকে এ আর সম্ভব নয়। অনান চাইলেও আর উমায়েরের বাহুডোর হতে মুক্তি পেতে চাইবে না।

—‘ দুটো বছর বলতে বলতে কেটে যাবে। ’

অনানের শান্ত কন্ঠস্বর। উমায়ের নাক ফুলিয়ে জিজ্ঞেস করে উঠলো,

—‘ দুই বছরে কত দিন, কত ঘন্টা, কত মিনিট, কত সেকেন্ড হয় জানেন? চব্বিশ ঘন্টার ভেতর আপনাকে না দেখতে পেলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এতোটা সময় দূরে থাকা আমার জন্য মৃত্যু বৈ কি, এর বেশি কিছু না। ’

—‘ সবুরে মেওয়াও ফলে। দু বছর সবুর করতে পারলে, হয়তো বাকি সময়টা সুন্দর যাবে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দেখা। যেন অন্য কেউ বলতে না পারে যে, উমায়ের করিমের ক্ষমতা শুধু বাবা চাচাদের টাকার উপর নির্ভরশীল। ’

হাতের ধীর আলিঙ্গন ঢিলে হলো মুহূর্তে। চারপাশ হতে ভেসে আসছে মাগরিবের আজানের ধ্বনি। সন্ধ্যারা চাপা আলোয় চারপাশ বিদ্যমান। উমায়ের অনানের মাথায় ওড়না দিয়ে দিল। গায়ের চাদরে আরও ভালো ভাবে জড়িয়ে দিল নমনীয় নাজুক শরীরটা কে। ফের অনানের দিকে ছোট ছোট চোখ করে উমায়ের সুধায়,

—‘ বুঝলাম, আপনিও কোনো বেকার স্বামীর হাত ধরতে চান না। তাইতো? ’

অনান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। এই ছেলে কেন সবসময় এক লাইন বেশি বোঝে? সহজ বিষয় জটিল করে তুলতে গুরু সে। অনানের নিষ্পলক দৃষ্টিতে উমায়ের ঘোর দৃষ্টি স্থাপন করে। আবছা আলোয় ঝলমল দৃষ্টি জোড়া নিজেদের মনের কথোপকথন শুনাতে ব্যক্ত। উমায়েরের চোখ জোড়ায় হার মেনে নেওয়ার প্রতিচ্ছবি স্বরূপ ফুটে উঠেছে হাহাকার বেদনা। অনান অক্ষিকোটরের অশ্রু দমিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। এতো ভালোবাসার যোগ্য কি সে? উঁহু, মোটেও না। সে যোগ্যই না তার ভালোবাসা পাবার। তবুও এই ছেলে তাকে কেন এতো ভালোবাসে? উমায়ের ম্লান হাসলো। চোখে চোখ রেখে আজকের বৈঠকের ইতি টানে।

❝ যদি ক্ষনিকের দূরত্বের জন্য, অদূরে ভবিতব্যে আপনার আমার মিলন হয় ধার্য। তাহলে, দূরত্বই শ্রেয়। ❞

,

,

চলবে............

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই। আশা করি ভালো আছেন। আর আমার প্রতি আপনাদের জমে আছে অনেক অভিযোগ। অভিযোগ থাকারই কথা। নয় তা...
20/09/2025

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই। আশা করি ভালো আছেন। আর আমার প্রতি আপনাদের জমে আছে অনেক অভিযোগ। অভিযোগ থাকারই কথা। নয় তারিখে আমার ফোনটা হাত থেকে পরে ডিসপ্লে একেবারে ভেঙে গিয়েছিল। তারপর, ভাবলাম নতুন ফোন নেব। কিন্তু এদিকে সমস্যা হলো আমি ফেসবুক পাসওয়ার্ড বেমালুম ভুলে গেছি।🙂🙂🙂 হাতে আমার দুটো ফোন ছিল। ওই ফোনে কিছুতেই ফেসবুক আইডি লগইন করতে পারছিলাম না। কোনো ভাবে কিছু আপডেট করতে পারছিলাম না আপনাদের। এদিকে এই ফোনটা ঠিক করার কোনো ইচ্ছে ছিল না আমার। কিন্তু ফেসবুক পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়ার কারণে ঠিক করলাম ফোনটা। কালকে নাগাদ হাতে এসেছে ফোন। গল্প লেখা আছে অন্য ফোনে একটু পরে পোস্ট করে দিব।

 #সহেনা_যাতনা_তোমার  #পর্ব : ২৯ #লেখনীতে_সানজিদা_ইসলাম_সূচনা ( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য। ) কুয়াশাময় ভোরের স্নিগ্ধ...
08/09/2025

#সহেনা_যাতনা_তোমার
#পর্ব : ২৯
#লেখনীতে_সানজিদা_ইসলাম_সূচনা

( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য। )

কুয়াশাময় ভোরের স্নিগ্ধ মধুময় প্রশান্তিতে ভাসিয়ে দেবার মতো একটি দিনের সূচনা। গাছে গাছে পাখিদের মিষ্টি সুরের কলরব। হালকা হিমেল হাওয়া। শিশির ভেজা ঘাস আর গাছপালা, শীতল উষ্ণ আর্দ্র তাপমাত্রা। শান্তিতে ছেয়ে আছে সুন্দর একটি ভোরের সকাল। ঘড়িতে তখন ছয়টা ত্রিশ মিনিট। ভোরের আলো ধরনীতে আছড়ে পড়েছে অনেক আগে। কিন্তু কুয়াশাময় আকাশ তার নিজরুপ পালটে এখনো আধারে তলিয়ে আছে। সে যেন উঠতে চায়ছে না ঘুম থেকে। জোর পূর্বক তুলে দেওয়া হচ্ছে। কম্ফোর্টার দিয়ে আপাদমস্তক শরীর ঢেকে ঘুমিয়ে আছে উমায়ের। গত কয়েকদিনের নির্ঘুম রাত কাটার সাক্ষী, দুটো নয়ন। সুযোগ পেয়েই শান্তির ঘুমে নিমজ্জিত হয়ে আছে। ডিভাইনের উপর জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে অনান। চোখে ঘুমের 'ঘ' ও নেই। কাল সে বেশ সময় নিয়ে ঘুমিয়েছে বিধায় এখন চোখে ঘুমের রেশ পর্যন্ত নেই। চুপচাপ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঘুমন্ত উমায়েরের পানে। নিষ্পাপ সুন্দর মুখশ্রী, কতটা শান্ত নিশ্চুপ হয়ে আছে। আর সজাগ থাকলে? কখনো অভিমানী, হয়তোবা ভীষণ রাগী, নয়তো অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলে। অনানের পরনে এখন টু পিস। গায়ে শীতের থেকে বাচার জন্য উমায়েরের লেদার জ্যাকেট পরে আছে। অনান উঠে আস্তে করে পায়ে হেঁটে এগিয়ে যায় উমায়েরের কাছে। বিছানার এক কোনে কম্ফোর্টার জড়িয়ে শুয়ে আছে সে। অনান পাশে বসে ঝুঁকে উমায়ের কে দেখতে থাকে। ধীরগতিতে শ্বাস প্রশ্বাস উঠা নামা করছে। এভাবেই তাকিয়ে থাকলো সে কিছুসময়। অজানা কারণ ছাড়াই তার এভাবে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। কেন? স্বামী বলে? স্বামী শব্দটা মস্তিষ্কে বারি খেতেই অনানের সর্ব অঙ্গে যেন তড়িৎ গতিতে কারেন্ট ছেয়ে গেলো।উমায়েরের দিকে আর একটু ঝুঁকে গেল সে। তন্মধ্যে অনানের নিঃশ্বাস ছড়িয়ে পরলো উমায়েরের মুখমন্ডল জুড়ে। এতে কিঞ্চিৎ পরিমাণের চোখের পাপড়ি নড়ে উঠলো উমায়েরের। অনান হকচকিয়ে উঠে যেতে নিলেই ফের পায়ে বেজে উমায়েরের উপর পড়লো। এতে চোখের ঘুম উবে গেছে উমায়েরের। অনান লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। উমায়ের প্রথমে হকচকিয়ে উঠে চোখ বড়সড় করে ঘটনা বোঝার চেষ্টা করলো। তন্মধ্যে তার ঠোঁটে খেলে গেল দুষ্টুমির হাসি। দু'হাতে জড়িয়ে ধরে সে অনানকে। অনানের তো মরিমরি অবস্থা। চোখ বন্ধ করে নেয় সে। উমায়ের তাকে গভীর আলিঙ্গন করে নিজের সাথে পেচিয়ে নিল। কায়দা করে পাশে শুইয়ে কম্ফোর্টার দিয়ে নিজের সাথে মুড়িয়ে নিল। অনান এযাবৎ হাসফাস করে উঠলো। নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছে তার। উমায়ের অনানের কোমড় জড়িয়ে নিজের শরীরের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে বক্ষস্থলে মাথা এলিয়ে, ফিসফিস করে শুধালো,

—‘ গুড মর্নিং ওয়াইফি! ’

অনান কেঁপে উঠলো এমন সম্মোধনে। নিজের বক্ষস্থলে উমায়ের গরম নিঃশ্বাসে তার কথা আটকে গেলো। তবুও খুব করে চেষ্টা করলো উমায়ের কে নড়াতে। কিন্তু খুব একটা সফল হলো না। অনানের নড়নচড়ন দেখে আরও গভীর ভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় উমায়ের।

—‘ এই পুরো সত্তাটাই আপনার অনান? এমন চুপিচুপি চোরের মতন দেখে লালা ফেলবেন? আর আমি সশরীরে এগুলোই বলবেন, নট ইন্ট্রেস্ট! আমি তো তোকে বমির মধ্যেও রাখি না। তাইতো?

এতো সুন্দর অনুভূতি সম্পূর্ণ মোমেন্টে এমন কথায়, লজ্জা উবে গিয়ে বিরক্তি জমে অনানের মুখমণ্ডল জুড়ে। আশ্চর্য,, লালা মানে কি? কি বিচ্ছিরি কথা বার্তা। সে কি লালা ফেলে না কি? তা-ও আবার উমায়ের কে দেখে? অনান ছটফটানি বাড়িয়ে দিল। উমায়ের মুখ তুলে তাকালো অনানের বিরক্তিতে বিদ্যমান মুখমণ্ডলের দিকে। ঘুম ঘুম চোখে ছোট ছোট করে অনানকে গভীর দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো উমায়ের। অনান মুহূর্তের মধ্যে আবারও লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেল। নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেল। উমায়ের উপরে উঠে অনানের মুখোমুখি হয়। ওষ্ঠ ছোঁয়ায় অনানের চোখের পাতায়। কেঁপে উঠলো মুহুর্তে একটি সত্তা। অনানের যেন দম বন্ধ হয়ে এলো এযাবৎ। উমায়ের অনানের দুচোখের পাতায় শুষ্ক চুমু খেয়ে মুখ ডোবায় ফের গলদেশে। ব্যাস,, গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করে উঠলো অনান। উমায়ের এবার বিরক্তিকর ভঙ্গিতে মুখ তুলে অনানের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করে,

—‘ কাল আমাদের ফার্স্ট নাইট ছিল, জানতেন তো ওয়াইফি? ’

এহেন প্রশ্নে থমকে উঠেও মুখ কাচুমাচু করে নিল অনান। যে ঢঙের বিয়ে, তারজন্য আবার কিসের বাসর? অনান ভাবে, উমায়ের তো ভাবনার চাইতেও ইঁচড়। এইটুকু ছেলে এতো বেফাঁস কথাবার্তা মুখ দিয়ে কেমনে বলে? উমায়ের হাসে একটু। অনান যে এতো লজ্জাবতী? সেটা অদেখায় ছিল হয়তো তার জন্য। লজ্জায় ভরা মুখটা দেখতে ভালোই লাগছে অনানের।

—‘ আমি নিচ থেকে আসার আগেই ঘুমিয়ে কপোকাত। আর আমি ভেবেছিলাম রাতটাকে খুব স্পেশাল করবো আপনার জন্য। আবার এখন এতো নড়াচড়া? ভবিষ্যতে তো আমার খুব লস হবে। কিন্তু আমি এসব সহ্য করবো না। বুঝলেন? ’

অনান তো পুরো থ। আশ্চর্য, এই ছেলে তো একদম ঠোঁট কাটা। বেফাঁসে খালি বলেই যাচ্ছে। অনান যে ক্ষণে ক্ষণে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেটা কি এই ছেলের নজরে ভিড়ছে না? কিন্তু অনানের এই করুনঘন মনের বর্ণনা উমায়েরের শ্রবণে পৌছায় না। সে এবার অনানের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে ওঠে,

—‘ আমি কিন্তু জেন্টেলম্যান নই অনান। আমাকে সামলানো একটু কষ্ট হবে আপনার। বয়সে বড়ো হলেও আপনাকে আমি ঠিক হার মানাবো। ’

নাহ,, আর মানা যাচ্ছে না। এইবার একদম বেশি বেশি। অনান এবার দু'হাতে সর্বশক্তি দিয়ে উমায়ের কে সড়িয়ে দিল। আর উমায়ের ধরার আগেই পালিয়ে গেল চড়ুইয়ের মতো ফুড়ুৎ করে। উমায়ের এযাত্রায় হেঁসে উঠলো বড়ো করে। কবে এমন ভাবে হেসেছে সে নিজেও জানেনা। নিজের প্রতি নিজেই অবাক। হঠাৎ করেই আজকের শীতের সকালটা খুব ভালো লাগলো উমায়েরের নিকট। কেমন একটা প্রশান্তি ভীড় করেছে তার চোখেমুখে। প্রাণ খুলে শ্বাস নিলো সে। আর মনে মনে বিরবির করে উঠলো, আজ থেকে যেন সব কিছুই স্নিগ্ধ মধুময় প্রশান্তিে ভরে উঠে।

,

,

সকালের নাস্তা শেষে অনান বাড়ির বাইরে এলো। এক প্রকার অতিষ্ঠ হয়েই এসেছে। খাবার টেবিলে উমায়েরের অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে চলে এসেছে। এই ছেলে তাকে একদিনে মোটা বানিয়ে ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে। বাঙলো বাড়ির চারদিকে সবুজে ঘেরা। বড়ো বড়ো ইউক্যালিপটাস ও আরো অন্য গাছপালা বিশাল আয়ত্ত নিয়ে দাড়িয়ে আছে। পাখিরদের মিষ্টি কলরব। কিচিরমিচির সুর গুলো অনানের মন ছুয়ে যাচ্ছে। একপাশে সরু কাঁচা রাস্তা। রাস্তাটা পুরো আধারে ঢাকা পড়ে আছে। অনান একটু ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সেদিকে। কিন্তু তার আগেই তার হাত চেপে ধরলো উমায়ের। অনান বিরক্তি নিয়ে পিছু ফিরে। জানতো এই ছেলের মুখের অবস্থা এখন কেমন হবে?

—’ সকালে আমাকে চোখ দিয়ে রেপ করে, এখন পালাতে চাইছেন? রেপিস্ট কোথাকার। ’

উমায়েরের সন্দেহ দৃষ্টি আর গম্ভীর কন্ঠের স্বর। চোখ দিয়ে রেপ? কি সব বিচ্ছিরি কথাবার্তা? অনান রেগে গিয়ে বলল,

—’ চোরের মন তো পুলিশ পুলিশ। তাই তোমার মাথায় এইসব ঘোরে, বেয়াদব ছেলে। ’

—‘ তারমানে আপনি পালাচ্ছিলেন না? ’

উমায়েরের এমন জিজ্ঞেসু কথায় আবার খেপে যায় অনান।

—‘ আশ্চর্য,, এখন পালিয়ে কি আর হবে? বোঝাও আমাকে তুমি? ফাজিল ছেলে। ’

উমায়ের বুঝলো সে অনানের রাগ বাড়িয়ে দিয়েছে। মেয়েটা আজকেই একটু স্বাভাবিক হয়েছিল। উমায়ের এবার মাথা নিচু করে মিনমিন গলায় বলে ওঠে,

—’ স্যরি জান! ’

অনান রাগান্বিত চোখে দেখলো। মুখে প্রত্যুত্তর করলো না। আচমকা উমায়ের ভ্রু কুঁচকালো। হঠাৎ খ্যাঁকখ্যাঁক করে বিরক্তিকর হাসির শব্দে, তেরছা চোখে দোতলার কর্নারের বারান্দায় তাকালো উমায়ের। সাথে অনানও। আয়াশ আর তন্ময়ের গা জ্বলানো হাসি দেখে বিরক্তিতে চ উচ্চারণ করে উঠলো উমায়ের। এই দুটো এখানে কেন? উমায়ের চোখের ইশারায় দুটোকে সরতে বলল। কিন্তু তারা সে কথা শুনলে তো? অনান জোর পূর্বক উমায়ের থেকে হাত ছুটিয়ে বাড়ির ভেতর গেলো। যেতে যেতে শুনতে পেল তন্ময়ের কথা।

—’ রেপিস্ট কেন বলছিস ভাই? উনার তো সম্পূর্ণ অধিকার আছে তোকে দেখতে দেখতে গিলে ফেলার মতন। বাই দ্যা ওয়ে, তুই কি কিছুই করতে পারিসনি? আহারে, মেয়টা না আবার তোকে গে ভেবে বসে। ’

এরইমধ্যে আয়াশ ও বলে ফেললো,

—‘ বউয়ের বদলে নিজেই সম্ভ্রম হারিয়ে বসে আছিস। খুবই লজ্জা জনক বিষয়। কলিকাতা হারবাল খাও বন্ধু। ’

এমন নির্লজ্জ বেহায়া মার্কা কথা শুনে অনানের কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। এরা যে এতোটা নির্লজ্জ, তা বাইরে থেকে বোঝা যায়না। সে হনহনিয়ে রুমের দিকে চলে গলো। উমায়ের এতোক্ষণ ভস্ম করা দৃষ্টি দিয়ে দুটো কে দেখছিল। এদের মুখের ভাষা তো নয়, যেন রকেটের তীব্র গতি। উমায়ের যেন সেই কথাটা বলে ফেঁসে গেল। বন্ধুদের হাসির আওয়াজ তার কাছে ট্রাক্টর মেশিনের বিরক্তিকর আওয়াজের মতো লাগছে।

—‘ এবার অন্তত একটু চুপ থাক। নাহলে উপরে এসে দুটোকেই নিচে ফেলে দেব। ’

উমায়ের করিমের তীব্র রাগ সম্পর্কে অবগত সকলেই। আর তারা উমায়েরের ক্লোজ ফ্রেন্ড হওয়া সত্যে এই বিষয়ে ভালোই উপনীত হয়েছে। তাই দুজন হাসি থামলো। কিন্তু ফুসুরফাসুর কমলো না। উমায়ের চোখমুখ রাঙিয়ে ভেতরের দিকে আসতে গেলেই আবার শুনতে পেলো তাদের কথা।

—’ জানিস আয়াশ, আমি ভাবছি একজন সিনিয়র আপুকে বিয়ে করবো। সে যখন তখন আমাকে চর থাপ্পড় মারবে আর বেয়াদব, অসভ্য ডাকবে। আর আমি আদুরে ভঙ্গিতে লেজ গুটিয়ে তার সামনে বসে বলব, মিউ মিউ মিউ। ’

বলে তন্ময় আগের থেকে আরও জোরে হেসে উঠলো। উমায়ের হতাশ দৃষ্টিতে বন্ধুদের দিকে ফের তাকালো। দুজনে হাই ফাইভ করে আবারও বুলিং শুরু করে। আয়াশ এবার মুখে হতাশার রঙ ধরে ঢঙ করে বলে ওঠে,

—‘ এত বছর শুনলাম স্বামী বাসর রাতে বিড়াল মারে। কিন্তু এখন তো হলো উল্টো। বিয়ের পর পর তো আমাদের উমায়ের বিড়াল হয়ে ঘুরছে। ওকে দেখলেই এখন বলতে ইচ্ছে করবে,

“ বিলাই মিয়াউ মিয়াউ,
মাছের কাঁটা খাও
বিলাইয়ের বাসর গেল ফাও
বউ আসছে লাঠি নিয়া,
ও বিলাই
পালাও পালাও। ”

এমন ছন্দের পতন ঘটাতে রাগান্বিত হয়ে তন্ময় আর আয়াশের খোঁজে চললো উমায়ের। আজ এ দুটো কে তন্দুরি বানাবে। সে মোটেই বিড়াল নয়। মোটেই নয়।

,

,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। )

 #সহেনা_যাতনা_তোমার  #লেখনীতে_সানজিদা_ইসলাম_সূচনা  #পর্ব : ২৮তিন কবুল, ব্যাস! তারপর হয়ে গেলো অনান উমায়েরের অর্ধাঙ্গিনী। ...
04/09/2025

#সহেনা_যাতনা_তোমার
#লেখনীতে_সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
#পর্ব : ২৮

তিন কবুল, ব্যাস! তারপর হয়ে গেলো অনান উমায়েরের অর্ধাঙ্গিনী। সে এখন উমায়েরের অর্ধাঙ্গিনী। সম্পর্কের নতুন পরিচয়। বিষয়টা মাথাতে ঢুকতেই, অনানের ভেতরে হিমালয়ের ঠান্ডা হিমেল হাওয়া এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে বারবার। মস্তিষ্ক একটা কথাই তার ভেতর অবধি নাড়িয়ে দিচ্ছে, সে এখন বিবাহিত। তার স্বামী উমায়ের করিম। এক মুহূর্তে পরিবারের ভয় অনানের মাথা চাপছে না। স্তব্ধ হয়ে বসে থেকে এতোক্ষণ সবকিছু ভেবে পাশে বসা উমায়ের কে দেখলো অনান। খুবই গুরুগম্ভীর পুরুষ হয়ে সমস্ত রিচুয়াল ফলো করছে সে। যেন কোনোকিছুই হয়নি। সব স্বাভাবিক আছে। কে বলবে? এই ছেলে একটা মেয়েকে বিয়ের পীড়ি থেকে তুলে এনে, ইমোশন কাজে লাগিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে? সে যেন নিতান্তই একটা ভালো ভদ্র ছেলে। অনান মাঝে মধ্যে ভাবে, কি করে সে পাগল হলো এই পাগলের জন্য? যাকে দেখলে নিজের চোখদুটো কেও ভিষণ বিষাক্ত মনে হত নিজের কাছে। তাকে কি করে এতো ভালবেসে ফেললো সে? ভেবে নিজের মস্তিষ্ককে পীড়া দেওয়া ছাড়া আর কোনো করতে পারেনা অনান। কারণ, সঠিক উত্তর সে খুঁজে পায়না। উমায়ের নিজের সমস্ত কাজ শেষ করে বিদায় জানালো রেজিস্ট্রার ও কাজি কে। ড্রাইভার দিয়ে অন্য রাস্তা ধরে চলে যাবেন তারা। এতরাতে জঙ্গলের রাস্তা সেভ মনে হলোনা উমায়েরের নিকট। ঘড়ির কাটা রাত এগারো টা। কেয়ারটেকার খলিল মিয়া ও তার স্ত্রী রাজিয়া। তারা রাতের ডিনার করার জন্য তাগিদ দিলো সবাইকে। বলতে দেরি, তন্ময় আর আয়াশের বসতে দেরি নেই। একপর্যায়ে খাবারের উপর হামলে পড়ে তারা দুজন। সকালের ব্রেকফাস্ট ছাড়া এপর্যন্ত পেটে আর কিছু পড়েনি। প্রচুর খিদে পেয়েছে আজ। উমায়ের তাদের দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অনান এখনো চুপচাপ স্থির হয়ে বসা। উমায়ের এখন খাবারের জন্য বলল না। এমনিতেই বেচারি খুব শকে আছে। উমায়েরেরও পরিবারের কথা মনে হচ্ছে। কি করছে তার আব্বু আর ছোট আব্বু। নিশ্চয়ই হন্য হয়ে ঘুরছে তাকে ধরার জন্য। উমায়ের আনমনে হাসলো। তাকে খুঁজে বের করা জায়ানের বা হাতের খেল। তাই উমায়ের ভাবলো, পরশুদিন সে অনানকে নিয়ে ফিরে যাবে। পরে যা হবে দেখা যাবে। পেট পুজো করে তন্ময় আর আয়াশ এসে সোফায় নিজেদের জায়গা দখল করে নিল। অনান আলতো পায়ে হেঁটে সেই রুমটায় এগিয়ে গেল। উমায়ের দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার পিছু যেতে নিলেই, আচমকা তন্ময় আর আয়াশ তাকে ঘিরে ধরে। ভ্রু কুঁচকে তাদের অবকলন করল উমায়ের। তাদের মুখের মিচকে হাসি দেখে, উমায়েরের ভ্রূদ্বয় কুঁচকানোর বদলে বিরক্তিতে পরিনত হয়ে যায়। আয়াশ শয়তানি হেঁসে বলল,

—‘ দোস্ত, আজকে তোর ভার্জিনিটি হারানোর দিন। প্লিজ সকালে বুক ফুলিয়ে রুম হতে বের হোস। নাহলে লজ্জায় আমাদের মাথা কাটা যাবে। ’

বিরক্তিকর মুখের আদল নিয়ে উমায়ের 'চ' শব্দ উচ্চারণ করে উঠলো। আশ্চর্য,, তাদের কেনো মাথা কাটা যাবে? এটা কেমন কথা? উমায়ের বুঝলো এখানে থাকলে তার বিপদ। মানে মানে কেটে পড়াই ভালো মনে করলো উমায়ের। কিন্তু তার দুই বন্ধু তা হতে দিলে তো? তন্ময় তৎক্ষনাৎ বগলদাবা করে জিজ্ঞেস করে উঠলো,

—‘ তা এমন বিশেষ রাত্রে কীরকম বোধ করছেন উমায়ের করিম? তার উপর আবার সিনিয়র আপু্। ’

উমায়ের এযাবৎ চটে গেল। কিন্তু তা দেখাতে পারলোনা বন্ধুদের। তারা কি জানে না? কি সাধের বিয়ে উমায়ের করিম করেছে? নাহ,,বুঝে ঠিকই। সব জেনে-বুঝে মজা নেবে আর কি। উমায়ের চোখ রাঙিয়ে কিছু বলতে উদ্যোত হবে তার আগে ভেসে এলো আয়াশের সতর্ক বানী,

—’ প্লিজ ভাই মানছি অনান তোর থেকে বড়ো। তারপরও একটু জেন্টাল হয়ে থাকিস। বাচ্চাসহ করিম ভিলায় ফিরলে, মেনে নয় ত্যাজ্য পুত্র করবে তোকে। আর বেচারা চাচ্চু আমার, দাদা দাদী হীন বড় হবে। ’

দুটোকে সড়িয়ে জোর করে উঠে দাঁড়ায়। তারপর দুটোর পিঠে কয়েকবার হাত চালান করে ভিষণ ক্রোধ নিয়ে বলে ওঠে,

—‘ শালা, আমি এদিকে টেনশনে শেষ। আর তোরা আছিস আমার ভবিষ্যত বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে? এক্ষুনি রুমে গিয়ে শুয়ে পর। নাহলে লাথি মেরে বাঙলো থেকে বের করে দিব। ’

উমায়েরের মার খেয়ে বাঁকা হয়ে গেছে তন্ময় আর আয়াশ। আশ্চর্য, ভালো সাজেশনই তো দিল তারা। কিন্তু এই ছেলে এতো রেগে গেলো কেনো? উমায়ের দুটোকে আপাদমস্তক দেখে উপরের দিকে অগ্রসর হলো। আর রাজিয়া কে বলে গেল, খাবার রুমে দিয়ে আসতে। উমায়েরের দিকে তাকিয়ে তন্ময় বিরবির করে বলে উঠলো,

—‘ তোকে অভিশাপ দিচ্ছি। আজ থেকে দশ মাস দশদিন পরে। তোর বাচ্চা পৃথিবীতে এসে তোর পিঠে কিল বসাবে। আর বলবে, চাচ্চুদের সেদিন কেনো মেরেছিলে বাবা? আর তোর কাছে এর কোনো উত্তর হবে না। ’

উমায়ের এই বিশাল বড়ো অভিশাপ না শুনলেও পাশে থাকা আয়াশ শুনে হতভম্ব হয়ে আছে। এটা কি ধরনের অভিশাপ? আদেও এ-র কোনো ভিত্তি আছে? মুখের রঙ বদলে সহসাই সে জানতে চাইল,

—‘ তোর মাথায় আসলেই গোবর ঠাসা, ইডিয়ট একটা। এটা কি ধরনের কথা? ’

তন্ময় এবার লেগে বসে আয়াশের সাথে। দুজনেই সোফায় মারপিট করতে করতে ক্লান্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েছে। তবুও তাদের থামা থামি নেই। যেন ক্লাস টু এর দুই স্টুডেন্ট। কেয়ারটেকার খলিল মিয়া ও তার স্ত্রী রাজিয়া অবাক নয়নে তাদের মারপিট দেখতে লাগলো।

শীত হলেও আজ আকাশ টা একদম সচ্ছ। রুপোলী থালার মতন বিশাল চাঁদ। নিজের জোছনা আলোয় মাতিয়ে রেখেছে সবটা। কুয়াশা মাত্রারূপে বেড়ে গিয়েও এখন ঠান্ডা বাতাস বিনে চারপাশে আর কিছু অনুভব করা যাচ্ছে না। বাঙলোর সামনে শিশির ভেজা দূর্বাঘাসে চাঁদের আলোয় ঝলমল করে উঠছে। পুরো এরিয়া দিনের আলোর মতোই যেন খুব আলোকময় হয়ে আছে। তীব্র ঠান্ডা বাতাসে চারপাশ শীতলতা বিরাজ করছে। গভীর অরণ্যে ঘেরা জনমানবহীন দুস্তর অন্ধকারময় জঙ্গলের মধ্যে অবস্থানরত বাঙলোটিকে, অন্ধকারময় আকাশের এক শুভ্ররাঙা চাঁদের আলোর মতন লাগছে। গভীর অরণ্যে ঘেরা এই বাড়িটি উমায়ের ও তার বন্ধুরা কিনেছে। গতবছর ছোট চাচ্চু জায়ান করিমের থেকে হেল্প নিয়ে উমায়ের সহ তার তিন বন্ধু শহরের জ্যামজট হট্টগোলে লাইফ থেকে বেড়িয়ে রিফ্রেশমেন্ট হওয়ার জন্য, এই বাঙলোটি নিয়েছে। এটা জঙ্গলের মাঝখানে বললেও ভুল হবে। কারণ বাঙলো থেকে দেড় কিলোমিটার পথ দূরে ছোট্ট একটা গ্রাম অবস্থিত। ঘনবসতি না হওয়ায় একেক টা বাড়ির অবস্থান অন্য বাড়ি হতে বেশ দুরত্বে। উমায়েররা বাঙলোটি কে তদারকি করার জন্য সেই গ্রামের একটা পরিবার কে এখানে রেখেছে। খলিল মিয়া ও তার স্ত্রী রাজিয়া। পনের বছরের বিবাহিত জীবনে তারা এখনও নিসন্তান। তারা দিনের বেশিরভাগ সময় এখানেই থাকে।
ঘড়ির কাটা জানান দেয় এখন সময় রাত বারোটা বেজেছে। অনান দাঁড়িয়ে আছে সেই রুমের বারান্দায়। এমন জনমানবহীন শুনশান জঙ্গল সামনে বিদ্যমান হওয়াতেও অনান নির্ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেলকনিতে। তার জীবনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে পারলো না তার সামনে। কারণ, প্রকৃতির হঠাৎ এমন রুপ দেখে সে হতবিহ্বল। আশ্চর্য,, চাঁদ আছে, জোছনার আলোয় আলোকিত চারপাশ। সাথে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। কিন্তু এখন শীতকাল চলমান। প্রকৃতির হঠাৎ এমন ঢং অনানের বোধগম্য হলো না। শুধু চঞ্চল দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো প্রকৃতির এই লীলা। ধীর পায়ে ঘরে ঢোকে উমায়ের। শূন্য রুমে চোখ বুলিয়ে নজর দেয় বেলকনিতে। আবছা ছায়া অবকলন করে এগিয়ে গেল সেদিকে। দরজায় গা এলিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো তার লাস্যময়ী রমনীকে। অনান খেয়াল করলো না তাকে। তার চোখ দুটি শান্ত নদীর মতো স্থির হয়ে আছে বাইরে। উমায়েরও স্থির দৃষ্টি স্থাপন করলো প্রেয়সীর পানে। সময় গড়িয়ে আছড়ে পড়লো বারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট। রাজিয়া খাবার দিয়ে গেছে অনেক্ক্ষণ সময় হবে। উমায়ের এবার নীরবতা ভেঙে গম্ভীর গলায় পেছন হতে বলে উঠলো,

—‘ ঠান্ডা, জ্বর বাঁধিয়ে আমাকে বিপদে ফেলতে চান আপনি? সেই সুযোগ হবেনা। ভেতরে এসে খেয়ে নিন জলদি। ’

পুরুষালী গম্ভীর গলা কানে ভাসতেই চট জলদি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে ফিরে তাকায় অনান। উমায়ের একই ভঙ্গিতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা অত্যন্ত গম্ভীর প্রকৃতির। যেখানে অনান এই মুহূর্তে মায়া খুঁজে পেল না। মাথা নামিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে উমায়ের কে ডিঙিয়ে ভেতরে যায় অনান। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখতে পায়, উমায়ের ইতিমধ্যে বসে গেছে। আশ্চর্য ছেলে তো? ডিরেক্ট খেতে বসে গেছে? অভিমানী মন নিয়ে পাশে বসে অনান। সকাল হতে কিচ্ছু খাওয়া নেই তার। সারাদিনের অভুক্ত সে, খাবার হাতে পেয়ে আর অন্যদিকে মনোযোগ দিতে পারলো না। গপাগপ খেয়ে উঠে গেল তাড়াতাড়ি। পাশে বসা উমায়ের অবশ্য লক্ষ্য করেছে। অনানের সামান্য লজ্জা লাগলেও তা এড়িয়ে গেল সম্পূর্ণ।

রাত বাজে এক'টা পঞ্চাশ, উমায়ের এঁটো প্লেট নিয়ে নিচে গেছে মিনিট পাঁচ হবে। সারাদিনের ক্লান্তিতে অনান বিছানায় শুতেই চোখ লেগে আসছিল প্রায়। হঠাৎ তার নজর পড়ে বিছানার কোনে রাখা উমায়েরের হাত ফোনের দিকে। বাড়ির সবাই কেমন আছে? আর বাবা-মা? ভেতরটা কে দমাতে না পেরে তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নেয় অনান। কিন্তু তার হাতে সেটা কয়েক ন্যানো সেকেন্ড পর্যন্তও স্থায়ী হলো না। চিলের বেগে কঠিন থাবায় তার হাত থেকে ছো মেরে নিয়ে নেয় উমায়ের। রক্ত চোখে তাকিয়ে ভ্রু নাচায় সে তৎক্ষনাৎ। অনান ভয় পেয়ে গেল উমায়েরের এমন চাহনি দেখে। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকলো শুধু উমায়েরের পানে।

—’ রাতের মধ্যেই আমাকে জেলে পাঠাতে চান মিসেস উমায়ের? স্বামীর প্রতি কি একটুও মন গলেনি আপনার? ’

ভিষণ রাগ আর ক্রোধ নিয়ে জিজ্ঞেস করে উমায়ের। অনান তার সেই রাগান্বিত অভিব্যক্তি দেখে ভয় পেলেও, তার ভিতর ছেয়ে যায় একটা সম্মোধনে। মিসেস উমায়ের? উমায়ের অর্ধাঙ্গিনী সে? তাদের সম্পর্ক টা আর আগের ন্যায় নেই। পবিত্র বন্ধনে বাঁধা আজ দুজন। অনান চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চোখ খোলার আগে সে উপলব্ধি করে। মুখের উপর কারো তপ্ত নিঃশ্বাস। অনান আস্তে করে চোখ খোলে। দেখতে পায় উমায়ের তার অতি নিকটে। একজনের নিঃশ্বাস আরেকজনের উপর আঁচড়ে পরছে। অনান ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে যাবার আগেই, উমায়ের তার নিজের ওষ্ঠদ্বয় জোড়া মিলিয়ে দেয় অনানের তরে। আচমকা এহেন স্পর্শে মিহিয়ে গেলো অনান। সে নিশ্চুপ ফিল করতে থাকে স্বামীর স্পর্শ গুলো। তন্মধ্যে সরে আসে উমায়ের। হিসহিসিয়ে বলে ওঠে,

—’ খুব জালাব মিসেস উমায়ের। আমার এতোদিনের কষ্টের উসুল তুলবো এবার থেকে। ’

,

,

চলবে...................

,

( দিয়ে দিলাম তাহাদের বিবাহ। এখন নিজেদের অনুভূতি জানাতে বড় বড় কমেন্ট করে ফেলুন। ) 🫡🫡

Address

West Bangla

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Sanjida Islam Suchana - সানজিদা ইসলাম সূচনা posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share