12/05/2025
জামায়াত কেন ক্ষমা চাইবে?
যে অপরাধী, সে-ই ক্ষমা চাইবে। জামায়াত যদি ক্ষমা চাইতে চায়, তাহলে আগে তাদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ স্বীকার করতে হবে। আর যদি স্বীকার করে, তাহলে জাতি ক্ষমা করবে কি না বা বিচার হবে কি না, সেটা পরের প্রশ্ন।
আসুন দেখি, জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া আদৌ প্রয়োজন কিনা।
১ম:
জামায়াতের নেতাদের দাবি, তারা শুধু চেয়েছিলেন যেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে না যায়। তখন প্রায় অধিকাংশ মানুষ এবং অনেক রাজনৈতিক দল পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান ভাঙার পক্ষে ছিলেন না। তবে জামায়াতের নেতাদের দ্বারা কোনো ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়নি—তাদের এই বক্তব্যের বাস্তবতার মিলও রয়েছে। গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখিয়ে বিচার করতে পারেনি।
২য়:
জামায়াতের দাবি, তারা ইচ্ছে করলেও যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়নি, কারণ এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল ভারত। একটি ইসলামিক সংগঠন হিসেবে তাদের সেই সময় সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি মওলানা ভাসানীকেও যুদ্ধে অংশ নিতে ভারতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল।
৩য়:
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জামায়াত স্বাধীনতাকে মেনে নিয়েছে এবং সব জাতীয় দিবস পালন করছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধাও পরবর্তীতে জামায়াতের নেতৃত্বে এসেছেন। বর্তমানে জামায়াতের অধিকাংশ নেতাই ১৯৭১ সালের পরে জন্মগ্রহণ করেছেন। তারা স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে ও লালন করেন।
জামায়াতের বক্তব্য অনুযায়ী, তারা যদি কোনো অপরাধই না করে থাকে, তাহলে কেন ক্ষমা চাইবে?
আসুন দেখি, কেন তথাকথিত সুশীল সমাজ জামায়াতকে ক্ষমা চাইতে বলে। এই সুশীলদের অনেকেই একসময় জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পক্ষে ছিলেন, এখন সুশীল সাজছেন। জামায়াতকে কোণঠাসা করার আর কোনো উপায় না থাকায় তারা এখন স্বাধীনতা বিরোধিতার প্রশ্ন তুলে। আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছর ধরে আদর্শের জায়গা থেকে না লড়ে, চেতনার দোহাই দিয়ে নানা অপকর্ম করেছে। নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের শক্তি দাবি করে বিদেশে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছে। অথচ যাদের দেশদ্রোহী বলা হয়, তাদের দুইজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও এক টাকার দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি।
আসলে বিষয়টা হলো—যারা চেতনা বিক্রি করতে চায়, তারা বড় ধরনের অন্যায়কে ঢাকতে এসব করে। কারণ, বাংলাদেশে সংগঠিতভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে জামায়াতে ইসলামী।
একটি বিপ্লবে জামায়াত প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছে, যেখানে এই বিপ্লবের মূলমন্ত্র ছিল ইসলামবিদ্বেষী সরকারের পতন। ইসলামী আদর্শ লালনের কারণেই অকাতরে জীবন দিয়েছেন জুলাইয়ের শহীদরা—কোনো বাম আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নয়। জামায়াত দল হিসেবে দেশের জন্য যা করেছে, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, অন্য কোনো দল তা করতে পারেনি। হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, ব্যাংক—কোনো দল এত কিছু গড়ে তুলতে পারেনি।
— মোস্তাফিজুর রহমান