01/29/2025
উচ্চশিক্ষার আলাপ-সালাপ-১
প্রায় প্রতিদিনই আমি আমার পুরোনো ছাত্র, জুনিয়রদের কাছ থেকে অনেক ইমেইল, টেক্সট পাই যারা উচ্চশিক্ষার জন্য গাইডেন্স চায়। এই টপিক নিয়ে অনলাইনে এত এত রিসোর্স রয়েছে, তারপরও মানুষ কেন অন্য মানুষের অভিজ্ঞতা এবং মতামত চায়, এটা আগে বুঝতাম না যতক্ষণ না নিজে এই জার্নি শুরু করেছিলাম। আমি নিশ্চিত, প্রতিটা উচ্চশিক্ষায় যাওয়া ছাত্রের জার্নি আলাদা এবং কঠিন। সবার অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম ভিন্ন। কারোটা দিয়ে কারোটা ছোট করা যাবে না। কেউ হয়তো ১০০০ ইমেইল লিখেও মনমতো উত্তর পায় না, আবার কেউ একটা ইমেইলেই বাজিমাত করে ফেলে। আমি আমার পাওয়া ইমেইল, টেক্সটগুলোতে যেটা সবচেয়ে বেশি খেয়াল করি, সেটা হলো—আমি জানি কিনা কার কাছে ফান্ড আছে আর যেন আমি বলে দিই কোন ইউনিভার্সিটি বা প্রোগ্রামে অ্যাপ্লাই করলে ভালো হবে। এটা আমার কাছে খুবই অযৌক্তিক প্রশ্ন মনে হয়।
প্রথমত, কোন প্রফেসরের কাছে ফান্ড আছে সেটা কোনো ছাত্রের জানা সম্ভব না (ভিন্ন কোনো কেস থাকতে পারে, আমি সাধারণভাবে বললাম)। দ্বিতীয়ত, আমি কীভাবে বলে দেব কোন ইউনিভার্সিটি বা প্রোগ্রাম ভালো হবে? আমি তো সবজান্তা শমসের না যে সবার সব খবর জানব। যেকোনো সাবজেক্টের জন্য আলাদা রিকোয়ারমেন্ট থাকে। তার চেয়েও বড় কথা, সব প্রফেসর সবকিছু নিয়ে রিসার্চ করেন না। তার চেয়েও বড় কথা, কোন দেশ বা কোন ইউনিভার্সিটি কার জন্য ভালো হবে, এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পছন্দ। আমার বলা ভালো বা খারাপ হিসেবে গণ্য হবে না।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে প্রথম ধাপ হলো নিজের ইন্টারেস্টের সাথে মিল রেখে উপযুক্ত ইউনিভার্সিটি এবং দেশ খুঁজে বের করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের অনেকেই এই প্রথম ধাপে কোনো চেষ্টা করতে চাই না। আমরা চাই যেন সবকিছু রেডিমেড খাবারের মতো তৈরি করে দেওয়া হয়। কেউ যদি সাজেস্ট করেও দেয় যে অমুক ইউনিভার্সিটি বা অমুক প্রফেসর ভালো বা খারাপ, সেটা নিজে যাচাই না করে সামনে এগোনো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কোনো প্রফেসর ইমেইল পেলেই না দেখে বা ইন্টারভিউ না নিয়ে কোনো ছাত্রকে ফান্ড দেন না।
১. সবার আগে যা করা জরুরি, সেটা হলো নিজের ইন্টারেস্ট ঠিক করা-
আমি কি আসলেই রিসার্চে আগ্রহী, নাকি শুধু দেশ ছাড়ার জন্য উচ্চশিক্ষায় যেতে চাই? (রূঢ় শোনালেও এটা বাস্তব কথা)। যদি রিসার্চের প্রতি আগ্রহ না থাকে, তাহলে নন-রিসার্চ বেসড মাস্টার্স করে সরাসরি চাকরি খোঁজা অনেক ভালো অপশন। সবাই রিসার্চ করছে, আমিও করব—পারি বা না পারি—এই ভুল ধারণার পেছনে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই।
তাই প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমি কি রিসার্চ বেসড ডিগ্রি করব, নাকি অন্য কোনো পথে এগোব।
২. যদি রিসার্চ বেসড ডিগ্রি করতে চাই, তাহলে কী টপিক বা সাবজেক্টে করতে চাই?
এর জন্য অবশ্যই রিসার্চ আর্টিকেল পড়া জরুরি। নিজের ইন্টারেস্টের টপিকগুলো নিয়ে কোন কোন ইউনিভার্সিটি এবং প্রফেসর কাজ করছেন, তা খুঁজে বের করা এবং তাদের রিলেটেড রিসার্চ পেপারগুলো পড়ার চেষ্টা করা প্রয়োজন।
এই ক্ষেত্রে গুগল স্কলার, Scholarly, এবং ChatGPT খুবই ভালো টুলস। এগুলোর মাধ্যমে আপনি সহজে রিসার্চ পেপার খুঁজে বের করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারবেন। আপনার ইন্টারেস্ট এবং টপিকের উপর ভিত্তি করে পড়াশোনা করলেই বুঝতে পারবেন যে আপনি সত্যিই ওই বিষয়ে কাজ করতে চান কিনা।
৩. যে ইউনিভার্সিটিতে যেতে চাই, সেই দেশ এবং নির্দিষ্ট জায়গা কেমন তা খুঁজে বের করে বিস্তারিত জানা।
সেই জায়গায় আপনি থাকতে পারবেন কিনা, চাকরির সুযোগ কেমন, কমিউনিটি কেমন, স্বাস্থ্যসেবা, বাসাভাড়া—এসবই আপনার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে। কেউ যদি বলে, “ওই ইউনিভার্সিটি ভালো,” তাই আপনি চোখ বন্ধ করে সেখানে অ্যাপ্লাই করবেন—এটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনি যেখানে যাবেন, সেখানে নিজের জীবনের মান কেমন হবে, তা আগে যাচাই করে নেওয়া জরুরি। কারণ, শুধু ইউনিভার্সিটির নাম দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনোভাবে বাস্তবসম্মত নয়।
পরবর্তী পোস্টে একটি একটি করে ধাপগুলো দেওয়ার চেষ্টা করব।