The Gate of News-খবর দ্বার

The Gate of News-খবর দ্বার Political review of Bangladesh about human rights & democracy

জনমনে বিভ্রান্তি: ১২০ টাকায় ব্রাজিলিয়ান গরুর মাংস কি সম্ভব?••••••••••••২০ আগস্ট ঢাকায় কৃষি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদ...
08/25/2025

জনমনে বিভ্রান্তি: ১২০ টাকায় ব্রাজিলিয়ান গরুর মাংস কি সম্ভব?
••••••••••••
২০ আগস্ট ঢাকায় কৃষি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাথে মতবিনিময় সভায় ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস পেরেজ দাবি করেন, বাংলাদেশ চাইলে মাত্র ১২০-১২৫ টাকা কেজি দরে আন্তর্জাতিক মানের হালাল গরুর মাংস আমদানি করতে পারবে। রাষ্ট্রদূত জানান, তার দেশ বহু দিন ধরে বাংলাদেশে সুলভ মূল্যে মাংস রপ্তানির প্রস্তাব দিয়ে আসছে, কিন্তু আগের সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্রুত হালাল সার্টিফিকেট প্রদান করা হলে ব্রাজিলের বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ ও উৎপাদন সহযোগিতায় আগ্রহী হবে এবং মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনেরও আগ্রহ আছে। এই সভায় তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে প্রাণীজ আমিষ ও দুধ উৎপাদন উন্নয়নেও ব্রাজিল অংশীদার হতে চায়।
তবে রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্য বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিভ্রান্তিকর। কারণ ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ বাজারে ২০২৫ সালে গরুর মাংসের খুচরা দাম প্রতি কেজি ২.০৫ থেকে ৩.১২ মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ২৩৫-৩৬০ টাকা। পাইকারি দরে প্রতি কেজি ১.৪৩-২.১৮ ডলার (১৬৫-২৫০ টাকা) এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চীনে ব্রাজিলের রপ্তানি মূল্য ৫.৫৫ ডলার (৬৩৮ টাকা), সৌদি আরবে ৫-৬ ডলার (৫৭৫-৬৯০ টাকা)। এমনকি এটি ব্রাজিলের জাতীয় গড় রপ্তানি দরের (৪-৬ ডলার) সঙ্গে তুলনা করলেও বাংলাদেশের জন্য ১ ডলারে গরুর মাংস পাওয়া দুরাশা ছাড়া কিছু নয়। আন্তর্জাতিক বাজার ও আমদানি ব্যয়, পরিবহন, ট্যাক্স, শুল্ক যুক্ত করলে মূল্যের বাস্তব পরিমাণ ৩৫০-৫০০ টাকার নিচে হয় না। এতে স্পষ্ট, রাষ্ট্রদূতের এই কথা সচেতনভাবে অতিমাত্রায় বাড়িয়ে বলা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি এক ধরনের ‘তামাশা’ ছাড়া আর কিছু নয়, যা বিভ্রান্তি ছাড়া বাস্তবায়নযোগ্য নয়।
তিনি আরও অগ্রসর কৃষি ও শিল্পখাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, ব্রাজিলের বিভিন্ন কোম্পানি বাংলাদেশে মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনের ব্যাপারে আগ্রহী এবং যৌথ উদ্যোগে উৎপাদন বাড়াতে চায়। প্রাণিসম্পদ উৎপাদন, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন দক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারেও তিনি অংশীদারত্বের প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তি স্থানান্তর ও জনবল প্রশিক্ষণ, কৃষিখাদ্যের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা, এবং ব্যবসা-বাণিজ্যিক বিনিয়োগ বাড়াতে ব্রাজিল-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয়েও আলোচনা করেন রাষ্ট্রদূত। এসব প্রস্তাবের লক্ষ্য, দুই দেশের মধ্যে কৃষি, খাদ্যগুদাম ও শিল্পখাতে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশের বাজার নতুন প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ করা।

08/24/2025

ঢাকায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার: ইতিহাসের সমাধান ছাড়া সম্পর্কের পূর্ণতা নয়—বাংলাদেশে
••••••••••••••••
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার সম্প্রতি দুই দিনের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসেছেন। ২৩ আগস্ট শনিবার দুপুরে বিশেষ ফ্লাইটে তাঁর ঢাকা আগমন ঘটে। তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ সফর দীর্ঘদিন¬ পর দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

*সরকার সঙ্গে বৈঠক*
ইসহাক দার সফরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, এবং বহুমুখী চুক্তি-সমঝোতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের গণহত্যা, অর্থনৈতিক দায় ও ‘stranded পাকিস্তানি’ ইস্যু পুনরায় জোরালোভাবে তোলা হয়। পাকিস্তানের মন্ত্রী দাবি করেন—১৯৭৪ ও ২০০০ সালে এসব সমস্যার সমাধান হয়েছে, তবে বাংলাদেশ সরকার সেই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে ইতিহাসের স্বীকৃতির ওপর জোর দিয়েছে।

*রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ*
সফরের বিশেষ মুহূর্তে ইসহাক দার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। এসব বৈঠক বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতা, নির্বাচনের পরে উদ্ভূত প্রেক্ষাপট ও দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক সমঝোতার গুরুত্বকে সামনে তুলে ধরে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন সামঞ্জস্য, দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার নিরাপত্তা ও ঐক্যের জন্য কৌশলগত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

*ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক*
দ্বিতীয় দিনে সকালের বৈঠকে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, ফরেন সার্ভিস একাডেমির সহযোগিতা, সরকারি সংবাদ সংস্থার মধ্যকার যোগাযোগ এবং স্ট্র্যাটেজিক থিংকট্যাংকগুলোর যৌথ সহযোগিতাসহ মোট ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করা হয়।
এই চুক্তিগুলো দুই দেশের মধ্যে তথ্য, বিষয়বস্তু ও দক্ষতা বিনিময়ে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। বিশেষত, ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত নানা ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত গড়ে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

*ইতিহাস ও কূটনৈতিক জটিলতা*
এ সফর ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আপসের এক বলিষ্ঠ সূচনা’ হলেও, ঐতিহাসিক অমীমাংসিত ইস্যু ও বিশ্বাসযোগ্যতা সংকটে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়, “ইতিহাসের স্বীকৃতি ও সমস্যার পূর্ণ সমাধান ছাড়া সম্পর্কের পূর্ণতা সম্ভব নয়।”

*শেষকথা*
ইসহাক দারের ঢাকা সফর রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্তরে ভবিষ্যতের দ্বিপক্ষীয় পথনির্দেশ নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতিহাস ও মানবাধিকার বিষয়ে জোরালো অবস্থান এবং পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বন্ধুত্বের বার্তা—এই দ্বন্দ্ব-সমন্বয় দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেয়ার দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।

মনজুর এহসান চৌধুরী
সাংবাদিক, কলামিস্ট
২৪.০৮.২০২৫

এই বছরেই চালু হচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সরাসরি বিমান যোগাযোগ••••••••••••••বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে চলতি বছরের শেষ নাগ...
08/24/2025

এই বছরেই চালু হচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সরাসরি বিমান যোগাযোগ
••••••••••••••
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে চলতি বছরের শেষ নাগাদ সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা সফরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের নেতৃত্বে দুই দেশের উর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছান। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনসংযোগ বৃদ্ধি, পর্যটন ও সফর সুবিধার্থে সরাসরি ঢাকা-করাচি, ঢাকা-লাহোর রুটে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পাকিস্তানের PIA ও Fly Jinnah-এর পক্ষ থেকে লাইসেন্স ও অনুমোদনের আবেদন করা হয়েছে। সার্বিক অনুমোদন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে অক্টোবরে প্রথম ফ্লাইট চালু হতে পারে বলে দু’দেশের কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন।
এই সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং পর্যটন ক্ষেত্রের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বর্তমানে Bangladesh-Pakistan ভ্রমণে সংযোগ ফ্লাইটে সময় ও ভোগান্তি বেড়ে যায়; সরাসরি ফ্লাইট চালুর ফলে দুই দেশের মানুষের যোগাযোগ, ব্যবসা ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উভয় দেশের সরকার জানিয়েছে, এ যোগাযোগ ব্যবস্থা শুধু বাণিজ্যে নয়, বন্ধুত্ব ও আঞ্চলিক সংহতি জোরদারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ প্ল্যান বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিমান কর্তৃপক্ষ ও এয়ারলাইন্সগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

08/22/2025

মেঘনা নদীর ঢেউয়ে হারিয়ে গেল আরেকটি সত্য—বিভুরঞ্জনের বিদায়
•••••••••••••
মেঘনা নদী যেন সাক্ষী থাকল বাংলাদেশের সাংবাদিকতার আরেকটি কালো দিনের। ২২ আগস্ট, ২০২৫—সকাল হতে না হতেই মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার কলাগাছিয়ায় নদীর জলে ভেসে উঠল একটি নিথর দেহ। কেউ জানত না, এই দেহটিই সেই বিভুরঞ্জন সরকারের—যিনি কর্মজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সত্য লিখে নিজের অস্তিত্বকে উৎসর্গ করেছিলেন।

নিখোঁজ থেকে নদীর জলে
•••••••
২১ আগস্ট সকাল দশটায় ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় বিদায় জানিয়ে তিনি অফিসের পথে পা বাড়ান। পরিবারের কাছে শেষ কথা ছিল, ‘আজ একটু দেরি হতে পারে।’ এরপরই তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। পরিবার ও সহকর্মীদের উদ্বেগ বাড়তে থাকে, নিখোঁজ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে সাংবাদিক সমাজে। রমনা থানায় করা হয় সাধারণ ডায়েরি।

নদীর জলে পাওয়া
••••••••••
পরের দিন, বিকেলে—মেঘনা নদীর ঢেউয়ে ভাসছিল একটি অজ্ঞাত দেহ। নৌ পুলিশ উদ্ধার করে। জেনারেল হাসপাতাল মর্গে তখন পরিবারের বুক ফাটা কান্না, ছেলের আকাশভাঙা শোক। মুখাবয়ব, হাতের আংটি, শার্ট—সব মিলিয়ে নিশ্চিত হল বিভুরঞ্জনের ‘শেষ ঠিকানা’।

বিভুরঞ্জনের কলম: মৃত্যুর আগের শেষ বার্তা
•••••••••
মৃত্যুর ঠিক আগের দিন বিডিনিউজে পাঠানো চিঠিতে বিভুরঞ্জনের আক্ষেপ—“এটা জীবনের শেষ লেখা হিসেবে ছাপতে পারেন।” দীর্ঘ জীবনের সাংবাদিকতার কষ্টগাঁথা ফুটে উঠেছে ওই চিঠিতে। তিনি লিখেছেন—
“এই দীর্ঘ সময় আমি লিখেছি সত্যের পক্ষে, মানুষের পক্ষে, দেশের পক্ষে। কিন্তু আজ, যখন নিজের জীবনকে দেখি, অনুভব করি—সত্য লিখে বাঁচা সহজ নয়।”
তাঁর কলম থেমে গেছে, কিন্তু সত্যের লড়াই শেষ হয়নি।

সত্য লেখার ঝুঁকি
•••••••••
বিভুরঞ্জন সরকার ছিলেন আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক ও খ্যাতিমান কলাম লেখক। তিনি কখনো আপোষ করেননি—হুমকি উপেক্ষা করে, রাতের অন্ধকারে শহর ঘুরে খুঁজে এনেছেন সত্যের গল্প।
পেশার ঝুঁকির কথাও লিখতেন তিনি—
“সত্য কোনো অবিচারের সামনে মাথা নত করে না, কিন্তু তার বিনিময়ে সাংবাদিককে অনেক বড় মূল্য দিতে হয়।”

পুলিশি তদন্ত ও সাংবাদিক সমাজের প্রতিবাদ
••••••••
মৃত্যুর কারণ তদন্তাধীন—হত্যা, আত্মহত্যা না দুর্ঘটনা, সে বিষয় এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সাংবাদিক সমাজে গর্জে উঠেছে শোক, অনেকে বলছেন—‘সত্য লিখে দেশবদল করি, কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যেন আমরা প্রতিদিন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াই’।

সাংবাদিকতার প্রতীক বিভুরঞ্জন—আমাদের দায়
•••••••••••
মেঘনার জলে হারানো বিভুরঞ্জন শুধু একজন মানুষ নন, সত্যবাদের প্রতীক। তাঁর বিদায় সাংবাদিক সমাজ, পাঠক এবং গণতন্ত্রের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আজ সবাই ভেবে দেখছে—এই দেশে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ সত্য বলা!
বিভুরঞ্জনের চিঠির শেষ বাক্য মনে করিয়ে দেয়—
“সত্য লিখলে বেঁচে থাকা যায় না—এটাই আজ প্রমাণিত।”
বাংলাদেশে সত্যের লড়াই চলুক বিভুরঞ্জনের স্মৃতিকে শক্তি করে।
তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সাংবাদিকতা জগতের পক্ষ থেকে নত শিরে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মেঘনার ঢেউয়ে হারিয়ে যাওয়া বিভুরঞ্জন সরকার আমাদের কাছে আজীবন অনুপ্রেরণার মশাল।

মনজুর এহসান চৌধুরী
সাংবাদিক, কলামিস্ট
২২.০৮.২০২৫

08/22/2025

ভিসা বাতিলের ঝুঁকিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫ মিলিয়ন ভিসাধারী: আতংকে ছাত্র, কর্মী, পর্যটক সবাই
•••••••••••••••••••••••
যুক্তরাষ্ট্রে ভিসাধারীদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন আইনি ও প্রশাসনিক অভিযান শুরু হয়েছে। বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন ২১ আগস্ট, ২০২৫-এ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও যখন সকল বিদেশি ট্রাক ড্রাইভারদের জন্য ভিসা প্রদান সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেন, তখন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ভিসাধারি এবং আবেদনকারীর তথ্য পুনরায় যাচাই (vetting) করছে—ছাত্র, কর্মী, পর্যটক—সরাসরি কঠোর যাচাই ও ডিপোর্টেশনের আওতায় পড়েছেন।

*কাদের টার্গেট করা হচ্ছে?*
প্রথমেই ছাত্র (F-1/J-1), এইচ-১বি প্রযুক্তি কর্মী, এবং পর্যটক/বিজনেস ভিসাধারীরা টার্গেট।
ছাত্রভিসার ক্ষেত্রে, ৬,০০০ ভিসা ইতিমধ্যেই বাতিল হয়েছে—অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক প্রতিবাদ ও সোশ্যাল মিডিয়া অভিযুক্ত পোস্টের জন্য।
এইচ-১বি কর্মীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে কাজ, জাতীয় নিরাপত্তার বাহিরে কর্মসংস্থান, এবং সামাজিক যোগাযোগ রেকর্ডের কারণে বাতিলের হার বেড়েছে।
পর্যটক ও ব্যবসায়িক ভিসাধারীদের মধ্যে বেআইনি অবস্থান বা অপরাধপ্রবণতা থাকলে ‘summary removal’-এর ঝুঁকি বেশি।
সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইএর নিয়ম ও মাপকাঠি
যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা আবেদনকালে এখন বাধ্যতামূলকভাবে সকল প্রধান সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট তথ্য জমা দিতে হয়।
AI ও অটোমেটেড টুলসের মাধ্যমে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, টিকটক ইত্যাদি সবকিছু স্ক্যান করা হচ্ছে।
উগ্রবাদী, সন্ত্রাস সমর্থক, সরকারবিরোধী, অথবা অপরাধ সংক্রান্ত পোস্ট পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ‘red flag’, দ্রুত আইনি পদক্ষেপ।

*ভিসা বাতিলের আইনি ও প্রশাসনিক ভিত্তি*
আইনগতভাবে ইমিগ্রেশন এবং ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট (INA) Section 212(a), 237(a), ও DHS ও State Department-এর প্রবিধানে এগুলো ভিসা বাতিলের জন‍্য মূল ভিত্তি।
ভুল-জাল ডকুমেন্ট, অপরাধ, overstay, সন্ত্রাস সংশ্লিষ্টতা, অথবা নিরাপত্তা হুমকি থাকলে, ডিপোর্টেশন করা হবে।

*ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া: কীভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে?*
‘Continuous Vetting’-এর মাধ্যমে সকল ভিসাধারীর রেকর্ড AI-ভিত্তিক অ্যালগরিদমে যাচাই করা চলছে। তথ্য-ভিত্তিতে যেসব ব্যক্তিকে ঝুঁকিপূর্ণ, তাদের কাছে ‘removal proceeding’ নোটিশ পাঠানো হবে, এরপর ইমিগ্রেশন কোর্টে মামলা, এবং অবৈধ বা অপরাধী হলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মাধ্যমে deportation—অর্থাৎ, নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।

*ছাত্রভিসা বাতিলের কারণ*
ছাত্রদের ক্ষেত্রে ক্লাসে না যাওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম লঙ্ঘন। অপরাধ, মাদক, মিথ্যা তথ্য। সোশ্যাল মিডিয়াতে উগ্র রাজনৈতিক বা সন্ত্রাস সংক্রান্ত পোস্ট করা।

*নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ দৃষ্টিকোণ*
সরকারি ব্যাখ্যা অনুযায়ী, জনগণ ও স্টেট সিকিউরিটি জোরদারের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যেই কোনো সন্দেহভাজন কার্যকলাপ, অপরাধ, সন্ত্রাস, অথবা সরকারবিরোধী তৎপরতায় অন্তর্ভুক্ত হলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, অভিবাসী সংগঠনগুলি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে—‘continuous vetting’ ও সোশ্যাল মিডিয়া চেক অভিবাসী অধিকার সংকুচিত করতে পারে।

*সার-সংক্ষেপ*
যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫ মিলিয়ন ভিসাধারীর ভাগ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে—আইন, নিরাপত্তা, এবং AI-ভিত্তিক যন্ত্র নিরীক্ষার মাধ্যমে। ছাত্র, কর্মী, পর্যটক—সবাই আলোচনার আওতায়।
ভিসা বাতিল ও দ্রুত deportation এখন বাস্তবতা, যার পেছনে আইনি এবং প্রশাসনিক শক্তি গতিশীলভাবে কাজে লাগছে।

মনজুর এহসান চৌধুরী
সাংবাদিক, কলামিস্ট
২১.০৮২০২৫

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক: বিশ্বশান্তির আলোচনায় আশার সঞ্চার••••••••••••••••••••••২০২৫ সালের ১৫ আগস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের আ...
08/16/2025

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক: বিশ্বশান্তির আলোচনায় আশার সঞ্চার
••••••••••••••••••••••
২০২৫ সালের ১৫ আগস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মুখোমুখি হন। ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তপ্ত পরিবেশ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, ও কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে এই বৈঠক রাজনৈতিক মহলে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর আবার দুই পরাশক্তির প্রধানরা সরাসরি বসতে পারেন, ২০২১ সালের বাইডেন-পুতিন বৈঠকের পর এটিই প্রথম সম্মেলন।

*আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়*
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয়ের মধ্যে ছিল ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা। উভয় দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও কূটনৈতিক প্রতিনিধি বৈঠকে অংশ নেন। আলোচনায় আন্তর্জাতিক মানবিক সংকট, খাদ্য-শক্তি নিরাপত্তা, এবং বৈশ্বিক বাজার স্থিতিশীলতা নিয়েও বক্তব্য ওঠে।

*নেতা দুজনের বক্তব্য*
বৈঠকের পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বৈঠককে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন—এই আলোচনা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে, ভবিষ্যতে শান্তির পথ তৈরি করতে সাহায্য করবে। ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, ভবিষ্যতে আরও উচ্চস্তরের সংলাপ হতে পারে, যা স্থায়ী সমঝোতা ও চুক্তির সুযোগ বাড়াবে।
পুতিন এই সম্মেলনকে ইতিবাচক বললেও, স্থায়ী শান্তির জন্য ‘মূল কারণগুলো’—বিশেষ করে নিষেধাজ্ঞা, নিরাপত্তা ও কৌশলগত দ্বন্দ্ব—সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুপ্ত এবং স্পষ্ট সংকটগুলোর সমাধান জরুরি।” পুতিন সরাসরি যুদ্ধবিরতি বা চুক্তি না করে ভবিষ্যৎ আলোচনায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেন।

*বিশ্ববাসীর জন্য আশাবাদ*
বৈঠকের সফল সংগঠনে বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বড় আশ্বাস—আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ, শান্তি প্রতিষ্ঠা, এবং স্থিতিশীল ব্যবস্থা গড়ে তোলার সম্ভাবনা খুলে গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘায়ণ ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব অর্থনীতি ও নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছিল। এখন দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সরাসরি সংলাপে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে—পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, মানবিক সংকট প্রশমনে নতুন উদ্যোগ, এবং দীর্ঘদিনের বৈরিতার অবসান।
বৈঠকে মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্কের বরফ কিছুটা গলেছে—যা আর্থিক বাজার, খাদ্য, জ্বালানি ও নিরাপত্তা খাতে ইঙ্গিত দিয়েছে ইতিবাচক পরিবর্তনের। এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটির নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক পরিবেশে শক্তিশালী বার্তা পৌঁছেছে—সংকট যতই কঠিন হোক, আন্তর্জাতিক সংলাপ ও আলোচনায় ভবিষ্যতের শান্তি গড়ে উঠতে পারে।

*চূড়ান্ত চুক্তির অনুপস্থিতি*
অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ এই সম্মেলনে বিশ্ববাসী প্রত্যাশা করেছিল বড় কোনো শান্তি চুক্তি, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা, কিংবা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অঙ্গীকার। তবে শেষ পর্যন্ত প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত যৌথ বিবৃতিতে এসবের কোনো স্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। ট্রাম্প ও পুতিন ভবিষ্যতে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। পরবর্তী বৈঠক মস্কোয় হতে পারে—এমন ইঙ্গিতটিও এসেছে সম্মেলনের পর।

*শেষ কথা*
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের মধ্য দিয়ে পৃথিবী সত্যিকার অর্থেই নতুন আশার আলো দেখেছে। চূড়ান্ত ফলাফল না এলেও, পরাশক্তিদের কূটনৈতিক পদক্ষেপ, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং শান্তিপূর্ণ সমঝোতার আলোচনা বিশ্বশান্তির পথে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে। এখন বিশ্ব অপেক্ষায়—এই আলোচনার বাস্তব ফল কবে ও কিভাবে আসে।

মনজুর এহসান চৌধুরী
সাংবাদিক, কলামিস্ট
১৫.০৮.২০২৫

*বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছর: আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতি, লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও কালো টাকার চক্র*••••...
08/16/2025

*বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছর: আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতি, লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও কালো টাকার চক্র*
••••••••••••••••••••••
২০২৫ সালের আগষ্টে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছর পার হয়েছে। গণ-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে ক্ষমতার রূপান্তর, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা—এই অঙ্গীকারের শেষপ্রান্তে এসে জনমনে যে ভয়, হতাশা ও ক্ষোভ জমেছে, তার মূল কারণ আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি, অপরাধ, লুটপাট, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, পরিবেশ বিপর্যয়, দুর্নীতি ও বিপুল কালো টাকা।

*আইনশৃঙ্খলার বিপর্যয়: অপরাধের গতি বাড়ছে*
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি স্পষ্টভাবে গণমাধ্যমের শিরোনামে। খুন, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি—প্রতিটি অপরাধের সংখ্যা গত এক দশকের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকায় হত্যাকাণ্ড তিনগুণ, দেশে ১০ মাসে মামলা ১,৪৪,৯৫৫, ছয় মাসে নারী নির্যাতন ১২,৭২৬, ধর্ষণ ৪,১০৫—সাম্প্রতিক পুলিশের তথ্যেই এত বিপর্যয়ের নিশ্চিত ইঙ্গিত। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা, প্রকাশ্যে অপহরণ-হত্যা, মব ভায়োলেন্স, রাজনৈতিক সংঘাত—সবাইকে আতঙ্কের মধ্যে রেখেছে।

*লুটপাট, দখল ও চাঁদাবাজি রাজনীতির ছত্রছায়ায়*
টিআইবি, গণমাধ্যম আর নাগরিক নেতাদের ভাষ্য; দেশের প্রতিটি স্তরে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির দাপট। পরিবহন, বাজার, কাঁচামালের ব্যবসা কিংবা সরকারি প্রকল্প থেকে রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট চক্র প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলছে। ব্যবসায়ী লালচাঁদের খুন, সিন্ডিকেটের হাতে ব্যবসায়ী-ঠিকাদার হেনস্তা, অপহরণ, জমি-ভাগাভাগি—পরিচিত অপরাধ চক্র প্রশাসনের চোখের সামনে সংঘটিত হচ্ছে। প্রতিরোধহীন, বিচারহীন সংস্কৃতিতে চাঁদাবাজি উৎসবের রূপ পেয়েছে।

*চাঁদাবাজি, দুর্নীতি—কে দায়ী?*
সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো, প্রশাসন—সবাই এখনো পুরোনো বিপথে চলেছে।উপদেষ্টার এপিএস-এর-টাকা, দলের নেতাকর্মীদের সরাসরি চাঁদা, প্রশাসন-ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট—পত্রিকার শিরোনামে। প্রশাসন, রাজনৈতিক দুর্নীতিবাজ, ব্যবসায়ী—সবাই কালো টাকার সুবিধা নেওয়ার চক্রে; চাঁদাবাজি-লুটপাট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি এক বছর ধরে চলছে।

*পরিবেশ ও সম্পদ হরণ—বাঁধভাঙা চুরি আর জবরদখল*
পরিবেশগত বিপর্যয়ের রিপোর্টে উঠে এসেছে, নদীর বালি, সাদা পাথর, বন, জলাধার—সবকিছুই রাজনৈতিক দলের নেতাদের মাধ‍্যমে প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতায় দিনের আলোয় চুরি হচ্ছে। পরিবেশ আইন অকার্যকর; শিল্প-কারখানার বর্জ্যের ‘নোংরা’ দৌরাত্ম্য প্রকৃতিকে বিষিয়ে তুলছে। বন উজাড়, প্রকৃতির মৃত্যু, খাল-বিল দখলে পরিবেশ সংকট চরমে। প্রশাসনিক দুর্বলতা, ক্ষমতার অপব্যবহার—কোথাও দৃশ‍্যত শাস্তি নেই বলে চুরি অব্যাহত।

*দুর্নীতির বেড়াজাল ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়*
অর্থনৈতিক সামষ্টিক চিত্রে উন্নয়নের আলোকরশ্মি থাকলেও, সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে কালো টাকার মহামারী ও অর্থ পাচার। সরকারি হিসাবে $২৩,৪০০ কোটি ডলার পাচার ২০০৯-২০২৩; বছরে প্রায় ১,৮০,০০০ কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার সুবিধা রেখে বাজেটে কালো টাকা সাদা করার আইন রেখে দিয়েছে। ফলে অবৈধ টাকা ব্যাংকে ঢুকতে পারে, উৎস জানা হয় না। দেশে জালিয়াতি, ঘুষ, সিন্ডিকেট, অবৈধ ব্যবসা, ফ্ল্যাট-ভবন খাতে বিশাল পুঁজি খাটানো—সবই ‘কালো টাকা’র অসৎ প্রবাহ সোচ্চারে চলছে।

*সরকারের ব্যর্থতা—নোট বাতিল না করে কালো টাকার পুঁজি*
সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত, ৫০০ ও ১,০০০ টাকার পুরাতন নোট বাতিল হয়নি। নতুন নোট ছাপা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই। রাজনৈতিক কর্মকাঠামো, নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ও প্রশাসনিক দুর্বলতায় এই কালো টাকা বাঁধাহীনভাবে পাচার হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্যেও ব্যবহার হচ্ছে—চাঁদাবাজি, দখল, কমিশন, ঘুষ—সব সমস্যার মূলও এখানেই. নাগরিক তো বলেই উঠছেন—“সরকার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে চাঁদাবাজির, দুর্নীতির, টাকার অবৈধ ব্যবহারের”।

*অর্থ পাচারের উন্মুক্ত রুট—ডলার, ইউরো, পাউন্ড বাইরে*
বিষয়টি আরও ভয়াবহ—ডলার, পাউন্ড, ইউরো হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হুন্ডি, অনলাইন ট্রান্সফার, বিদেশি বিনিয়োগে দেশ ছাড়ছে। দেশের রিজার্ভ কমছে, বিনিয়োগ সূচকে নেতিবাচক পরিবর্তন, কর্মসংস্থানে নতুন ক্রান্তিকাল। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও মূলধন পাচার দিয়ে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের হুমকি সমাজে কঠিন হয়ে উঠেছে।

*প্রতিরোধ নেই—আইন, প্রশাসন, নীতিকাঠামোর দুর্বলতা*
সরকারি উদ্যোগ, আইন, দুদক, বিআইএফইউ—সব প্রতিষ্ঠানের নজরদারি থাকলেও, কার্যকর পদক্ষেপ নেই; বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ, বড় নোট বাতিল না করা, সম্পদের সত্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক নয়—সবই দুর্নীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। উপদেষ্টা ও সচিবদের সম্পদের বিবরণ দেবার কথা থাকলেও বাস্তবায়ন হয়নি। রাজনৈতিক ক্যাডার, দলীয় পৃষ্ঠপোষকতা—সবাই দুর্নীতিকে নির্মূলের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

*রাজনৈতিক অস্থিরতা—নির্বাচন অনিশ্চয়তার চাপে*
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অশান্তি ও অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে। রাজনৈতিক উপদেষ্টা, নির্বাচন কমিশন, প্রধান রাজনৈতিক দল ও বিরোধী নেতৃত্ব—সবার ভেতরেই গভীর বিভক্তি, আস্থার সংকট। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে মতদ্বন্দ্ব, আন্দোলন, বিক্ষোভ, অস্থিরতা—সব মিলিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখন দূরবর্তী।

*সার্বিক সংকট—যে প্রশ্নের উত্তর নেই*
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতি, চাঁদাবাজি-দখলবাজি, সচল দুর্নীতি, পরিবেশ-সম্পদের চুরি, কালো টাকা ও পাচার—এসব কিছুর মিলিত ধাক্কায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভয়ঙ্কর সংকটে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক স্বস্তি, পরিবেশ সুরক্ষা—সবই প্রায় ‘রানিং ক্রাইসিস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ, জবাবদিহি, সংস্কার, আইনের শাসন, দুর্নীতির কঠোর দমন ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ছাড়া উন্নতির কোনো গ্যারান্টি নেই।

*বাংলাদেশ কোন দিকে যাচ্ছে?*
এক বছরের সমষ্টিগত সংবাদ-প্রতিবেদন বিশ্লেষণে স্পষ্ট—আইনশৃঙ্খলার বিপর্যয়, লুটপাট, দখল, চাঁদাবাজি, পরিবেশ ও সম্পদ লুণ্ঠন, দুর্নীতি এবং কালো টাকা; এগুলোই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের বৃহৎ সংকট।
সরকার, প্রশাসন ও রাজনৈতিক শক্তির ব্যর্থতায় দিন দিন সংকট আরও গভীর হচ্ছ।এক্ষেত্রে যদি দ্রুত, সিদ্ধান্তমূলক, স্বচ্ছ পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা শুধু সরকারিভাবে ঘোষিত লক্ষ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বাস্তবে দেশের জন-অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশ বিকল হবে। দীর্ঘদিন ধরে চলবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অপরাধ আর অর্থপাচারের যন্ত্রণায়।

*মনজুর এহসান চৌধুরী*
সাংবাদিক, কলামিস্ট
১৬.০৮.২০২৫

ট্রাম্পের আরো নতুন ২৫% ট্যারিফ নিষেধাজ্ঞা: ভারতের উপর বাণিজ্যিক চাপের নতুন অধ্যায়•••••••••••••••••••••••২০২৫ সালের ৬ আগস...
08/06/2025

ট্রাম্পের আরো নতুন ২৫% ট্যারিফ নিষেধাজ্ঞা: ভারতের উপর বাণিজ্যিক চাপের নতুন অধ্যায়
•••••••••••••••••••••••
২০২৫ সালের ৬ আগস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর নতুন করে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক আরোপের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর ফলে ভারতীয় পণ্য আমদানিতে মোট শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে, যা মার্কিন ইতিহাসে ভারতের উপর সর্বোচ্চ আরোপিত শুল্ক। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, ভারতের রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি অব্যাহত রাখাই এই কঠোর পদক্ষেপের মূল কারণ।

এই অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হবে ২০২৫ সালের ২৭ আগস্ট থেকে এবং প্রাথমিকভাবে তা টেক্সটাইল, গহনা, ওষুধ, কেমিক্যাল, যানবাহনের যন্ত্রাংশ ও চামড়াসহ সাধারণ ভোগ্যপণ্যে প্রযোজ্য হবে। কিছু কৌশলগত খাতে অস্থায়ী ছাড় থাকলেও মোট রপ্তানির একটি বড় অংশ এই শুল্কের আওতায় পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে গত কয়েক মাসের ৫ দফা আলোচনাও সফল হয়নি। মূল বিরোধের কারণ ছিল কৃষিপণ্য, ডেইরি ও স্ট্র্যাটেজিক ট্যারিফ নীতিমালা। একই সাথে, যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে আসছে যে ভারত রুশ জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা হওয়ায় এটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ভারত সরকারের কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। দেশটি একে ‘অন্যায্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে যে জ্বালানি নিরাপত্তা কোনো দেশের সার্বভৌম সিদ্ধান্তের অংশ—এখানে কোনো চাপের মুখে ভারত নীতিমালা বদলাবে না।

বিশ্বের অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্র বিশেষ করে রাশিয়া এই শুল্ক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে অবস্থান নিয়েছে। চীন ও ইউরোপের অনেক দেশ নিজেরাও রুশ তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে, অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর শুল্ক আনা হয়নি—এটি ভারত ইস্যুটিকে একটি ‘দ্বিমুখী আচরণ’ হিসেবে দেখছে।

এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ২০২৪ সালের মোট $৮৭ বিলিয়ন মার্কিন রপ্তানির অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের রুপি ও শেয়ারবাজারে ধাক্কা লেগেছে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের নিচে নেমে আসার পূর্বাভাস এসেছে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে।

08/05/2025

“বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ২০২৪: স্বৈরশাসকের পতন, গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম”
••••••••••••••••
বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট — জনপ্রিয় ছদ্মনাম ‘৩৬ জুলাই’ — একটি যুগান্তকারী দিন। উদীয়মান গণআন্দোলন, যাকে অনেকেই ‘জেনারেশন জি’র বা Gen Z’র বিপ্লব বলে অভিহিত করেছেন, এই দিনে স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় এবং তার মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সারা বাংলাদেশে সীমাহীন উল্লাস ও আশার সঞ্চার হয়। এই দিনটি হয়ে ওঠে আরেক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ—স্বৈরশাসকের পতন, গণতন্ত্রের নতুন প্রতিশ্রুতি ও সামগ্রিক জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। শহীদদের রক্ত আর অগণিত মানুষের আত্মত্যাগে বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘৩৬ জুলাই’ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি বিপ্লবের সন্ধিক্ষণ হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে প্রায় এক মাস ধরে চলে আসা কোটা সংস্কার আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে ছাত্ররা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুরসহ দেশের বড় বড় শহর, এমনকি গ্রামের পথে-ঘাটেও জড়ো হয়। সরকার কারফিউ, ইন্টারনেট বন্ধ, গুলি ও দমনপীড়ন সত্ত্বেও লোখ লাখ মানুষ ঢাকা অভিমুখে মিছিল-উল্লাসে এগিয়ে যায়। এই ঐতিহাসিক দিনে মানুষ মনে রাখে, যেভাবে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে বাঙালি রুখে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক তেমনি কোটা-সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া এ গণঅভ্যুত্থানটি স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা বা গণতন্ত্রের নবজাগরণের উপমা হয়ে ওঠে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র দিয়ে দেশত্যাগ করেন। টানা কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভ, সহিংসতা ও সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়নের ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, সেনা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের চাপে শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা সেনাবাহিনীর একটি C-130 পরিবহন বিমানে ঢাকার তেজগাঁও সামরিক ঘাঁটি থেকে দেশত্যাগ করেন।
তাদের গন্তব্য ছিল ভারত—বিশেষ করে দিল্লীর কাছে হিন্দন এয়ারফোর্স বেইজে তাদের বিমান অবতরণ করে, যেখানে ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও অন্যান্য কর্মকর্তা তাঁদের গ্রহণ করেন। দলটি এত দ্রুত দেশ ছাড়েন যে, নিজেদের প্রয়োজনীয় পোশাক বা কোনো জিনিসপত্র নেওয়ারও সময় পাননি। বিমানে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানাসহ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীও ছিলেন।
দেশত্যাগের মুহূর্তে গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে লাখো জনতা ছিল; পদত্যাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহড়ায় হাসিনার জীবন রক্ষার চেষ্টায় দেশ ছাড়ে।

গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত মুহূর্তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ পরিচালনার অস্থায়ী দায়িত্ব গ্রহণ করে। এদিন সন্ধ্যায় সেনাপ্রধান টেলিভিশন ভাষণে জাতির উদ্দেশে উদ্বৃত্ত আহ্বান জানান—সব ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে ও সবাইকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে দেশ গঠনে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন।
তিনি আশ্বাস দেন যে, সেনাবাহিনী একটি অন্তর্বর্তীকালীন, নিরপেক্ষ সরকার গঠনের মাধ্যমে দ্রুত জনগণের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে এবং নতুন নির্বাচনের পথে দেশকে পরিচালনা করবে। সেনাপ্রধান বিশেষভাবে তরুণ-ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক কর্মী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সহনশীলতা, সংযম ও গণতান্ত্রিক চেতনা বজায় রাখার প্রতি গুরুত্ব দেন।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর ঢাকা সেনানিবাসে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একটি জরুরি বৈঠকে বসেন। এই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা উপস্থিত হন—তাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, খেলাফত মজলিসের মাওলানা মামুনুল হক, এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। বিশিষ্ট নাগরিক প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজ থেকেও ড. আসিফ নজরুল, ড. সেলিমুল্লাহ খান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ওয়াহ্হাব মিয়া, এবং সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম এবং আবু বাকের মজুমদার উল্লেখযোগ্য।

শেখ হাসিনা দেশত্যাগের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ও জাতীয় সংসদ ভবনের গেট ভেঙে প্রবেশ করে। বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (SSF) মাত্র পাঁচ মিনিটে গণভবন ত্যাগ করে; তারা সব অস্ত্র, গোলাবারুদ ও নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি রেখে পালিয়ে যায়। এরপর জনতা গণভবনে ঢুকে, অনেকেই জীবনে প্রথমবার “ভেতরে” প্রবেশের অভিজ্ঞতা ও বিজয়ের উল্লাস ভাগাভাগি করে। একইসাথে জনতার একটি বড় অংশ সংসদ ভবনও দখলে নেয়—সেখানে কেউ পতাকা তোলে, কেউ ভেতরে মিছিল চালায়। গণভবন ও সংসদ ভবন তখন দেশজুড়ে মানুষের ক্ষমতার প্রতীকে পরিণত হয়।
মানুষ গণভবনে ঢুকে আসবাবপত্র, টেলিভিশন, ফ্রিজ, ক্লক, এয়ারকন্ডিশনার, গিটার, বিছানার চাদর-বালিশ, সোফা, এমনকি রান্নাঘরের খাবার-পানীয় ও ব্যক্তিগত পোশাকসহ প্রায় সবকিছু নিয়ে যায়।

সারা বাংলাদেশে ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভেঙে ফেলেন। ঢাকার বিজয় সরণি-তে অবস্থিত ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’-এর বড় সোনালী মূর্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শুরু করে রাজধানী ও জেলার বহু গুরুত্বপূর্ণ মোড়-চত্বরে, মিউজিয়াম ও বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত শুভ্র বা সোনালী বঙ্গবন্ধু মূর্তি, স্মারক এবং ভাস্কর্য ভাঙচুর, আগুন লাগানো ও অপমানের ঘটনা ঘটে।

রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রনেতাদের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে দাবি তোলা হয়—খালেদা জিয়া সহ আন্দোলন-সংক্রান্ত সকল রাজবন্দি, গ্রেফতারকৃত ছাত্রনেতা, কর্মী ও সাধারণ মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সেইদিন সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সংসদ ভেঙে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির নির্দেশ দেন। একই অফিসিয়াল ঘোষণায় আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হওয়া ও আটককৃত ছাত্র-জনতারও তাৎক্ষণিক মুক্তি ও দায়েরকৃত মামলা বাতিলের কথা বলা হয়। খবর অনুযায়ী, সরকারবিরোধী আন্দোলনে গত মাসজুড়ে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ গ্রেফতার হয়েছিলেন, যার মধ্যে ছাত্র-নেতা, বিরোধী দলের নেতা, সাংবাদিক, মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি এবং সাধারণ আন্দোলনকারিরা অন্তর্ভুক্ত।

গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-নেত্রীরা বিশেষ বার্তায় জাতির কাছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সকল ধর্ম-বর্ণের অধিকার রক্ষার আহ্বান জানান। তারা জনগণকে বলেন—কেউ যেন বিভাজন, গুজব বা সাম্প্রদায়িক উসকানিতে না জড়ায়, বরং সংহতি ও সহানুভূতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নতুন বাংলাদেশ গঠনে এগিয়ে আসে। আন্দোলনের সমর্থনের সরকার ছাড়া অন্য কারো নেতৃত্ব মেনে নেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
তারা একই সাথে ঘোষণা দেন, আগামীকাল ৬ আগস্ট ২০২৪ (জুলাই ঘোষণা—‘৩৬ জুলাইএর মেনিফেস্টো’) জাতির সামনে ছাত্র আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক রূপকল্প ও ভবিষ্যৎ-নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন সমাজের রূপরেখা প্রকাশ করবে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য সন্ধিক্ষণ। এই দিনটি শুধু একটি স্বৈরশাসক সরকারের পতনের দিক চিহ্নিত করেনি, বরং সাধারণ মানুষের অপ্রতিরোধ্য সাহস, ছাত্র-জনতার ঐক্য এবং বহু বছরের জমাট অন্যায়ের বিরুদ্ধে বৈপ্লবিক বিজয় এনে দেয়। ঢাকা শহর, সংসদ ভবন, গণভবন—সব জায়গা ছড়িয়ে পড়ে স্বস্তি, প্রতিবাদ আর বিজয়ের উল্লাস। আন্দোলন-নেতৃবৃন্দ, রাজবন্দিদের মুক্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি এবং স্বতঃস্ফূর্ত জনতার অংশগ্রহণ—সব মিলে ৫ আগস্ট হয়ে ওঠে নতুন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার সূচনাদিবস। এই দিনটি দেখিয়েছে, জনগণের শক্তিই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের চালিকাশক্তি।

08/05/2025

লেখাটা লিখতে গিযে আমি প্রচন্ড ইমোশনাল হয়ে যায়। সবাইকে পুরোটা পড়ার অনুরোধ রইল…

রক্ত-ঘামে লেখা জুলাই: বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ভাগ্যবদলের মহাকাব্য
•••••••••••••••••
নশ্বর রাত কেটে রাত, অশ্রুজল মিশে রক্ত-ঘামে। ঢাকা শহরের আশ-পাশ দিয়ে জ্বলছে আগুন, কাঁপছে জনপদ। অবিচার, অমানিশার রাত বিদীর্ণ করে ছাত্র-জনতার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হল এক প্রতিজ্ঞা—‘বিজয় না হলে রাজপথ ছাড়বো না!’ আহ্বান উঠল, স্রোতের মতো গোটা জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ল কোটা সংস্কারের দাবিতে, যার ভিতরে গেঁথে ছিল হাজারো ক্ষোভ আর প্রতিজ্ঞা। ২০২৪ সালের গনমুখর জুলাই—এটা কেবল একটি মাস ছিল না, ছিল আগুনঝরা ইতিহাসের প্রাণ। পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্রের গ্রাসে দেড় দশকের জঞ্জাল জমে ছিল জনপদের বাঁকে বাঁকে, তারপর এক ভয়ংকর সত্য চিৎকার করে ফেটে পড়ল—জেগে উঠলো ছাত্র-জনতা, এই প্রজন্মের অসম্পূর্ণ দাবিতে নানা পর্ব, নানা মোড়, নানা টার্নিং পয়েন্টে ঘনিয়ে উঠল ইতিহাসের সবচেয়ে নাটকীয় আন্দোলন।

পটভূমি
•••••••
নিঃশব্দে জমে থাকা অসন্তোষ থেকেই ২০১৮ সালে শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। প্রধানমন্ত্রীর অভিমানে সব কোটা বাতিলের ঘোষণায় আন্দোলন থেমে গেলেও, হৃদয়ে থেকে যায় অমীমাংসিত ক্ষোভ। ছয় বছর পর ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের কোটা পুনর্বহাল আদেশ সেই চাপা ক্ষোভে আগুন ধরায়।
এক ঘোষণাতেই আবার প্রাণ ফিরে পায় পুরোনো প্রতিবাদ—বয়স, স্বপ্ন ও প্রকৃত ন্যায়ের টানে রাজপথে নামে ছাত্র-জনতা।

সংকটে জন্ম, সাহসে ক্রোধ
••••••••••••••
বিতর্কিত কোটা পদ্ধতির ভারে দিন দিন নুয়ে পড়ছিল সরকারি চাকরির স্বপ্নভাগী দেশজুড়ে লাখো তরুণ-তরুণী। ২০২৪ সালের ৫ জুন আদালতের রায়ে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল—পুরোনো ক্ষতের উপরে যেন নতুন জ্বালা ছুঁয়ে দিল। বহুদিন ধরে জমে থাকা অসন্তোষ, হতাশা আর ক্ষোভ সেদিন নতুনভাবে আগুন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
১ জুলাই সেই ক্ষোভ আর চেপে রাখা গেল না। ঢাকার রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু—ঢাবি, জাবি, রাবি, সারা দেশের ক্যাম্পাস, কলেজ, মফস্বলের মাঠ পেরিয়ে একে একে ছড়িয়ে পড়ল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর জোয়ার। পরীক্ষাসহ শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বর্জন ঘোষিত হলো; শহরের মহাসড়কে জাগল মিছিলের ঢেউ, রাজু ভাস্কর্যের কেন্দ্রীয় চত্বরে জমল প্রত্যয়ের কালো-সাদা ব্যানার আর অভিমানী চোখের আলো।
এই আন্দোলনের ঢেউ কেবল ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ব্যাংক, অফিস, চায়ের টঙ, এমনকি গ্রামের অস্থির মাটিতেও প্রতিটি হৃদয়ে হৃদয়ে উচ্চারিত হতে লাগল একটাই শ্লোগান—‘সংস্কার চাই!’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদ-জানালা আর বাইরের সব দেয়াল ভেদ করে প্রতিবাদের বৃষ্টিধারা ঢুকে পড়ল প্রতিটি রক্তকণিকায়।
ক্রোধানল যত বেড়েছে, যত বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়েছে তরুণ প্রজন্ম, ততই সাধারণ মানুষের কণ্ঠে-কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে এক অমোঘ প্রত্যয়—‘আমার অধিকার, আমিই ছিনিয়ে নেবো!’ আন্দোলন এখন আর কারও সম্পত্তি নয়, এটা হয়ে ওঠে সারাদেশের ঘুম ভেঙে ওঠার গল্প।

আন্দোলনের শুরু, উত্তাল রাজপথ
••••••••••
দুই সপ্তাহেই গণাবেগের জোয়ার ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি শহর, গ্রাম, অলিতে-গলিতে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর চোখে এ ছিল কেবল ‘অশান্তি’। মাসের মাঝামাঝি এসে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়—সরকার রাজপথে নামিয়ে দেয় তাদের লাঠিয়াল বাহিনী; কারও হাতে রড, কারও হাতে বন্দুক, কেউ পুলিশ, কেউ ছাত্রলীগের চেনা চেহারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সেই কৃষ্ণপক্ষের রাত—বাংলার মাটিতে রক্ত রাঙিয়ে দেয় ইতিহাস। গর্জে ওঠে বুলেট, ভেঙে পড়ে কত স্বপ্ন, ঝাঁপিয়ে আসে শত তরুণ প্রাণ, বুকের ভেতর তবু দ্বিধা নেই।
এই উত্তাল সময়েই আসে সেই ঘাতক মুহূর্ত—১৪ জুলাই। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে উৎকণ্ঠা আর বিরক্তির সুরে শেখ হাসিনা বলে বসেন—“মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা (চাকরি) পাবে?”
এই অসহ্য কথাটি যেন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিস্ফোরক বারুদ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন রাতেই হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল থেকে বের হয়, গর্জে ওঠে রাজপথে, শ্লোগান তোলে—“চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার!” “আমি কে, তুমি কে—রাজাকার, রাজাকার! কে বলেছে? কে বলেছে—স্বৈরাচার, স্বৈরাচার!”
সেই বাঁধভাঙা কান্না, রুদ্রবাদ্য কণ্ঠ, আর চোখের দীপ্তিতে রাত হয়ে যায় অনমনীয় প্রতিজ্ঞার ভোর। অন্যদিকে সরকার কিছুতেই আর শান্ত হয় না—বারবার ঘোষণা আসে: ‘কারফিউ, অফিস-আদালত বন্ধ!’
ঢাকা শহর ডুবে যায় অন্ধকারে, সোশ্যাল মিডিয়ার সকল জানালা বন্ধ।
তবুও—আন্দোলন থামে না; নিভৃতে প্রজ্জ্বলিত বাতিঘরের মত, প্রতিবাদের সেই আলো অঞ্জনিতে তে জ্বলে থাকে।

রক্তপাত, নিষ্ঠুরতা আর অক্ষমতার আর্তনাদ
•••••••••••••••
এ যেন কোনো গল্প নয়, যেন মহাকাব্যের মর্মন্তুদ ট্র্যাজেডি! ১৬ জুলাই থেকে শুরু হয় পুলিশ-আওয়ামী লীগের তাণ্ডব, যার নির্মমতা ভাষায় প্রকাশের ঊর্ধ্বে। রাস্তায় পড়ে থাকে ছাত্রের নিথর দেহ, নারী আন্দোলনকারী গুম হয়ে যায়, শিশুরও রক্ষা নেই এই হিংস্রতার হাত থেকে। তিনবার ইন্টারনেট বন্ধ, চারবার কারফিউ, শহরজুড়ে আতঙ্কের ছায়া; তবুও মুক্তির অপেক্ষায় নামাজ শেষে বৃদ্ধ, কষ্টের ভারে নুয়ে পড়া রিকশাচালক, কিশোরী স্কুলছাত্রী সবাই মিছিলে মিশে হৃদয়ের স্পন্দন বাড়িয়ে তোলে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে জড়ো হয় হাজার ছাত্র, বুকের ভেতর জ্বলছে বিদ্রোহের আগুন। সেখানে অগ্রভাগে ছিল ২৩ বছরের নির্ভীক-নিষ্পাপ তরুণ আবু সাঈদ। সে দুই হাত ফাঁকা করে, বুক টান করে পুলিশের গুলিকে দৃপ্ত আলিঙ্গন করে নেয়—তার পতন বিদ্রোহকে নতুন সুর দেয়।
১৮ জুলাই, ঢাকার উত্তরায় চলমান আন্দোলনের উত্তাল দুপুরে, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত সহযোদ্ধাদের খুঁজে খুঁজে পানি দিচ্ছিলেন। “পানি লাগবে কারো? পানি, পানি?”—তার এই মানবিক ডাকে ছেদ পড়ে গুলির শব্দে; এক রাউন্ড গুলি যায় কপাল ছুঁয়ে, ডান কানের নিচ দিয়ে বিদীর্ণ হয়ে। সেই মুহূর্তে আন্দোলনের ব্যথা আর বেদনা রক্তাক্ত হয়ে ওঠে।
এরপর ১৯ জুলাই মধ্যরাতে দেশব্যাপী ঘোষণা আসে কারফিউ। দেশের বিভিন্ন জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। কিন্তু কারফিউ উপেক্ষা করে লাখো ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসে। আশঙ্কা আর প্রতিরোধের মাঝে ঘটে চলে ব্যাপক সংঘর্ষ, অসংখ্য মানুষ নিহত হন; কিছু রিপোর্টে উঠে আসে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর কাহিনি।
অন্যদিকে, সরকারি ভবন পোড়ে—কিন্তু তার চেয়েও বেশি পোড়ে প্রতিটি মানুষের বিপর্যস্ত বুক। ‘‘দোষী তোমরা, শাসকেরা!’’—এই চিৎকার ঘুরপাক খায় শহরজুড়ে। পরিবার হারায় সন্তান, প্রিয়বন্ধু; হাসপাতালে জোটে শুধু কান্না আর শোক। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে আসে—কমপক্ষে ১,৪০০ লাশ নিবন্ধন হয়েছে, অথচ আসল সংখ্যার শেষ নেই—এ যেন রক্তে লেখা এক অব্যাখ্যাত আন্দোলনের দামামা, যার জবাব সময়ই একদিন দেবে।

ব্ল্যাকআউট, গুম ও নাটকীয় প্রত্যাহার
•••••••••••••••••
এরপর শুরু হয় দেশের এক গভীর ব্ল্যাক আউট, রাত যেন আরও গাঢ় আর শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারীদের বাসা-বাড়ি থেকে রাতের আঁধারে তুলে নেয়া শুরু হয়; বন্ধুরা নিখোঁজের খোঁজে দিশেহারা, আতঙ্ক জড়িয়ে ধরে প্রতিটি পরিবার। সরকার তখন কৌশলে জামায়াত, শিবির, বিএনপির ওপর সন্ত্রাসী হামলার দায় চাপিয়েছে—প্রতিটি সংবাদ বিবৃতিতে ‘বিদ্বেষের রাজনীতির’ আলামত ছড়াতে থাকে তারা।
প্রতিদিন দুই বাঁধা জলপ্রপাত—একদিকে আতঙ্ক-ছাওয়া পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ মিলে ভয় ধরানোর দাপুটে শাসন; অন্যদিকে ছাত্র-জনতার দুঃসাহসী জোয়ার, কারফিউ-ভাঙা আলিঙ্গন, প্রত্যয়ের কালো সকালে সাদা চাদর হয়ে বেঁধে থাকা আলোক-বিন্দু।
তুমুল নাটক দেখা যায়—তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শীর্ষ ছয় সমন্বয়কদের। তাদের খোঁজ নেই, ফোন বন্ধ, পরিবার কাঁদে। পরে জানা যায়, ডিবি অফিসে অনির্বাচিত ‘হেফাজতে’ তারা। বিতর্ক হয়, কারণ ভাইরাল হলো—হারুনে ভাতের হোটেলে ডিবির অফিসারদের সাথে তাদের চুপচাপ বসে থাকা দৃশ্য।
তারপর শুরু “প্রত্যাহার নাটক”—প্রচণ্ড চাপে পড়ে ক্যামেরার সামনেই নাহিদ ইসলামকে দিয়ে মুখস্থ বিবৃতি পড়ে শোনানো হয়—‘‘আন্দোলন প্রত্যাহার করছি’’।
কিন্তু কেউ জানে, ওই মুখে মুখে কোনো সত্য নেই—চোখের ভাষা বলে দেয় নিশ্চিত বাঁধাহীন স্বাধীন স্পন্দন। এরই মাঝে হাইকোর্টে পুলিশের গুলি বন্ধের রীটও খারিজ হয়ে যায়—রাজপথ আরও অনিশ্চিত, আরও বিপদসংকুল।
দিনের পর দিন ডিবির হেফাজতে থেকে অবশেষে মুক্ত হন ষষ্ঠ সমন্বয়করা—তারা ফিরে এসে আন্দোলনে যুক্ত হন দ্বিগুণ কঠোরতায়, আরও দুঃসাহসে, আরও অবিচলতায়।
সরকারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। হাসিনা ডাকে তার পোষ্য সাংবাদিক এবং দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের। বৈঠকের আয়োজনে পরামর্শ নেওয়া হয়—কীভাবে সরকার পতনের সুনামিতে বাধা হবে।
এরা সবাই হাসিনার টেবিলে বসে সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেয়—কিছু ক্রুদ্ধ, কিছু নিরুপায়—তবুও প্রধানমন্ত্রী এমন রাজনৈতিক চাপ সামলানোর পথ খুঁজে বেড়ান। হুকুম দেন মরণঘাতি অস্ত্র ব্যবহারের, যাতে লাশের উন্মাদনায় তৃপ্ত হয় রক্ত পিপাসু স্বৈরাচার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব
••••••••••••••
আগস্ট এসে গেছে, অথচ জুলাইকে শেষ হতে না দিয়ে ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫ জুলাই—এক সিদ্ধান্তে ঘোষণা হলো। দেশের আকাশে, মানুষের মনে যেন অস্থিরতার নতুন স্রোত নামে গেল।
আগস্টেই রাজনৈতিক মানচিত্র নতুন মোড় নেয়; সরকার গম্ভীর উচ্চারণে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে। শহীদের স্মরণে দেশ জুড়ে পালিত হয় ‘Remembering Our Heroes’—সাদা বধ্যভূমিতে, পতাকা হাতে, কণ্ঠে শপথ নিয়ে তরুণ-তরুণীরা উচ্চারণ করে, ‘‘তাদের রক্ত বৃথা যেতে দেবে না প্রজন্ম।’’ পরীক্ষার্থীরা ঘোষণা দেয় কঠিন সিদ্ধান্ত—এইচএসসি পরীক্ষা বর্জন। সে সাথে সামাজিক গণমাধ্যমে লাল প্রোফাইল, শিল্পীর তুলিতে দেওয়াল গুলোতে প্রতিবাদের আঁকাবাঁকা রেখা, প্রবাসীর কণ্ঠেও জেগে ওঠে অদেখা বাংলাদেশের জন্য কান্না-মুঠো একাত্মতা।
রাজধানীর রাস্তায় পড়ে থাকে নতুন বিস্ফোরণ; সংঘর্ষে আহত, পুলিশের গুলিতে নিহত—থানায় বিক্ষোভকারীদের মারধর, প্রতিবাদে জ্বলে উঠে থানার দেয়াল, বাতাস ভারী হয়ে উঠে আগুনের ধোঁয়ায়। শহর যেন ফুসে ওঠে, কারো চোখে পানি, কারো মুখে রক্তের রেখা—সব মিলিয়ে জনতার ক্রোধ আর কষ্ট উচ্চারিত হয়, ‘‘তোমরা আর থামাতে পারবে না!’’
এর মধ্যে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ পৌঁছায় চূড়ান্ততম মাত্রায়; খোলা মাঠে, ফুটপাথে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘরে-বাইরে অজস্র তরুণ-তরুণী, পেশাজীবী, শ্রমিক—শাহবাগ থেকে শহীদ মিনার, মিছিল ছড়িয়ে যায় একাই। কেউ পিছু নেয় না; নারী-পুরুষ, ছাত্র-অভিভাবক, শ্রমিক-শিক্ষক—বিষাদের দিনে, প্রতিজ্ঞার রাতে সবাই একত্রে দাঁড়ায়।
ডাকে ওঠে একটাই ঘোষণা—সরকার পতনের এক দফা। পত্রিকার পাতায়, চায়ের টেবিলে, আদালতের বারান্দায় প্রতিটি মুখে মুখে উজ্জ্বল ঘোষণা—‘‘চলো, চলো, ঢাকা চলো!’’

চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ—বিপ্লবের আগুন
••••••••••••
৩৬ জুলাই ইতিহাসের এক অনন্য উদাহরণ, লাখো ছাত্র-জনতা রাজপথ দখলে নেয়! পতাকার সমুদ্র ফেটে উঠে, শহর জুড়ে গর্জে উঠে বাংলার শ্লোগান। পুলিশ-আর্মড ফোর্স একের পর এক ব্যারিকেড গড়ে তুলেও আত্মসমর্পণ করে, কারণ নবীন-প্রবীণের বলিষ্ঠ হাতে, চোখে শ্রাবণ অশ্রু আর অগ্নিশিখায় স্নান করা হৃদয়ে, রক্তের ঝড় কেউ তাদের থামাতে পারেনি।
গণভবন ও সংসদ চত্বর যেন কার্নিভালের মানুষের ঢলে মুখরিত—‘একদম শেষ! আর বাকি নেই কিছু!’ ঢাকা থেকে গ্রাম, শহর থেকে পাড়া—প্রত্যেক রাস্তায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধেয়ে যায় বিজয়উল্লাস। রাস্তায় রাস্তায় শুধু মানুষের ঢেউ, মাথা উঁচু করে ঘোষণা—জয় এসেছে, রাজপথ দখল হয়েছে, মুক্তির প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন।

ক্লাইম্যাক্সের মুহূর্ত—হাসিনার পলায়ন, বিজয়ের আর্তনাদ
•••••••••••••
প্রচণ্ড লজ্জায়, ভয়ে আপ্লুত হয়ে শেখ হাসিনা ও তার বোন রেহানা সামরিক প্রহরায় দুপুরে হেলিকপ্টারে উঠে পালিয়ে যান ভারতের দিকে। ঘোষণা ছড়িয়ে যায়—‘হাসিনা নেই, সরকার নেই’; নগর থেকে মফস্বল, চারদিক মুখর মানুষের উল্লাসে। বিকেল তিনটায় সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশনের পর্দায় জানিয়ে দেন—বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে, সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। দেশ ‘স্বৈরশাসন’ থেকে মুক্ত!
এই ঘোষণার পর পুরো দেশ বিজয়ের আনন্দে প্রবাহিত হয়, পটভূমি কাঁপিয়ে খেলে যায় বিজয়ের ঝড়।
লাখো শহীদের রক্তে রাজপথ ধুয়ে যায়, পতাকা উড়তে থাকে নতুন স্বাধীনতার প্রতীকে। মা সন্তান খুঁজে ফেরেন, বাবারা নিথর দেহ বুকে চেপে রাখেন—তবুও ওই কান্নায়ই উচ্চকিত হয় আশার নীরব গান।
সন্ধ্যা ঘরমাঝে মানুষের হাসি আর কান্নায় মিশে যায় বিজয়োল্লাসে—‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’।

মনজুর এহসান চৌধুরী
সাংবাদিক, কলামিস্ট
০৫.০৮.২০২৫

Address

2055 Ruesaint Mathieu
Montreal, QC
H3H2J2

Telephone

+15145706848

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when The Gate of News-খবর দ্বার posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to The Gate of News-খবর দ্বার:

Share