25/06/2025
সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা—ভোলা সরকারি কলেজের ছাত্রী। ছাত্রদলের নেত্রী। সাধারণ ঘরের মেয়ে। আব্বা অটো চালান।
একজীবনের রক্ত-ঘাম দিয়ে মেয়েকে বড় করেছেন, মানুষের মতো মানুষ বানাতে চেয়েছেন। ইপ্সিতা শুধু মেয়ে ছিলেন না, ছিলেন এক বাবার শেষ ভরসা, একটি পরিবারের স্বপ্ন, এই রাষ্ট্রের এক অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি।
কিন্তু ১৭ই জুন, কর্ণফুলী-৪ লঞ্চে সেই মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। চিরকুট লিখে লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন—না কি ফেলে দেওয়া হয়েছে, সেটাও এখনো নিশ্চিত না।
লঞ্চের দুই স্টাফ গ্রেফতার হলেও, এর পেছনের দানবেরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
কিন্তু প্রশ্ন হলোঃ
এই মেয়েটা কে? সে কি একদিনে ভেসে আসা একটা নাম?
না, সে ছিল ছাত্রদলের আঞ্চলিক নেত্রী, বিএনপির রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত।
এইসব "রুট লেভেলের" কর্মীরাই তো মাঠে-ময়দানে গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছে। তাদের ঘাম, তাদের রক্তে, তাদের গলায় স্লোগানে দল বেঁচে থেকেছে,আন্দোলন জোরদার হয়েছে।
কিন্তু আজ?
আজ এই মেয়েটার জন্য ছাত্রদল, বিএনপি—কারো গর্জন নেই, নেই কোন কেন্দ্রীয় কর্মসূচি, নেই কোন সংগঠিত প্রতিবাদ, নেই কোন বিকট অবস্থান।
আমরা দেখি "তত্ত্ব", আমরা শুনি "রূপকথার বয়ান"—কিন্তু ইপ্সিতাদের জন্য বাস্তবে কিছুই ঘটে না।
আমরা কী জবাব দেবো ইপ্সিতার আব্বাকে?
যিনি কাঁদছেন, দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মেয়ের ছবি হাতে নিয়ে বলে যাচ্ছেন, “আমি অটো চালাই, আমি গরীব—আমি কি বিচার পাবো?”
আমরা কি তার চোখে তাকিয়ে বলবো,"না চাচা, আপনি গরীব মানুষ, আপনার মেয়ে সাধারণ কর্মী—তার জন্য আমরা ব্যস্ত হতে পারি না"?
এই কি আমাদের রাজনীতি? এই কি আমাদের মূল্যবোধ?
যারা রুট লেভেলের কর্মীর কান্না শুনে না, তাদের জন্য ক্ষমতা একদিন পাথরের মতো ভারী হবে।
ইপ্সিতা একার না। সে এই দেশের সব নিপীড়িত মেয়ের মুখ, সে সব বাবার চোখের পানি, সে আমাদের রাজনীতির আয়নাঃ যেখানে আজ গরীব, নারী, কর্মী; তিনটিই অদৃশ্য।
ইপ্সিতা হত্যার বিচার চাই না। শুধচাই জবাবদিহি, চাই রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ, আর চাই গরীবের চোখের পানিকে পুঁজি করে রাজনীতি না করার প্রতিশ্রুতি।