14/06/2025
শয়তানের ধোঁকায় পর্দাহীন কাপল ব্লগ – ইসলামের দৃষ্টিকোণ। লেখাটি পড়ে নিজের ভুল বুঝুন ফিরে আসুন।
"আল্লাহ তা‘আলার নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।"
পর্দা: ইসলামের মর্যাদার প্রতীক
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন:
“আর মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের আভরণ প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর: ৩১)
পর্দা শুধু কাপড়ের আবরণ নয়, এটি মুসলিম নারীর মর্যাদা, পবিত্রতা ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রতীক। এটি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য দৃষ্টি সংযম ও সমাজে পবিত্রতা রক্ষার মাধ্যম। কিন্তু আজকের দিনে আমরা দেখছি, শয়তানের ধোঁকায় অনেক দম্পতি তথাকথিত “কাপল ব্লগ” নামে সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনকে প্রকাশ্যে তুলে ধরছে। এমনকি কেউ কেউ স্ত্রীকে পরপুরুষের সামনে উপস্থাপন করে অর্থ উপার্জন করছে! এটা কি লজ্জা ও ঈমানের পরিপন্থী নয়?
শয়তানের ধোঁকা: কাপল ব্লগের আড়ালে
আল্লামা ইবনুল জাওযী (রহ.) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘তালবীসে ইবলীস’ (নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা)-এ উল্লেখ করেন, শয়তান মানুষকে ভালো কাজের ছদ্মবেশে পথভ্রষ্ট করে। আজকের এই কাপল ব্লগগুলো শয়তানের সেই কৌশলেরই একটি উদাহরণ। শয়তান স্বামী-স্ত্রীকে “আধুনিকতা”, “স্বাধীনতা” বা “অর্থ উপার্জন” নামক মোহে ফাঁদে ফেলে। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের ইজ্জত, পর্দা ও ঈমানের প্রতি আঘাত হানছে।
বুজুর্গানে দ্বীন বলেন, “যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর সম্মান রক্ষা করতে ব্যর্থ, তার ঈমান দুর্বল।” একজন মুসলিম পুরুষের দায়িত্ব হলো তার স্ত্রীর ইজ্জত ও পর্দার হিফাযত করা, তাকে পরপুরুষের দৃষ্টির হাতিয়ার বানানো নয়। যে স্বামী তার স্ত্রীকে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ্যে উপস্থাপন করে অর্থের লোভে, সে কি ভুলে যায় যে আল্লাহ তা‘আলা সবকিছু দেখছেন? কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা পরাক্রমশালী, অতি জ্ঞানী।” (সূরা বাকারা: ২৬০)
মুসলিম নারীর দায়িত্ব:-
একজন মুসলিম নারী হিসেবে পর্দা পালন ফরজ। সূরা আহযাবে আল্লাহ বলেন:
“তোমরা তোমাদের স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে এবং তারা উত্যক্ত হবে না।” (সূরা আহযাব: ৫৯)
যে মুসলিম নারী স্বামীর প্ররোচনায় বা অর্থের লোভে পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে, সে নিজের ঈমান ও আখিরাতের ক্ষতি করছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, “সাধারণত যা প্রকাশ পায়” অর্থ বাইরের পোশাক, কিন্তু মুখমণ্ডলসহ পূর্ণ দেহ গায়রে মাহরামের সামনে আবৃত রাখা অপরিহার্য।
আধুনিকতার নামে শয়তানের ফাঁদ
শায়খ আলী তানতাভী (রহ.) বলেন, “আধুনিকতার নামে নারীর ইজ্জতকে উন্মুক্ত করা সমাজের পতনের কারণ।” আজ ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটকে অনেক দম্পতি তাদের ব্যক্তিগত মুহূর্ত প্রকাশ করে অর্থ উপার্জন করছে। এর মাধ্যমে তারা শুধু নিজেদের সম্মানই নষ্ট করছে না, বরং সমাজে অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের পথ সুগম করছে।
একজন স্বামী যখন তার স্ত্রীকে পরপুরুষের কাছে “ভিউ” বা “লাইক” এর জন্য উপস্থাপন করে, তখন সে কি ভাবে না যে এটি তার স্ত্রীর পবিত্রতার প্রতি আঘাত? এবং একজন নারী যখন এতে সম্মতি দেয়, তখন সে কি ভুলে যায় যে তার ইজ্জত লক্ষ কোটি টাকার চেয়েও মূল্যবান?
প্রিয় ভাই ও বোন আল্লাহর পথে ফিরে আসুন
হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি লজ্জা ত্যাগ করে, তার ঈমান নষ্ট হয়।” আমাদের সকলের উচিত আল্লাহর বিধান মেনে চলা এবং শয়তানের ধোঁকা থেকে নিজেদের রক্ষা করা। যারা এই পথে পড়েছেন, তাদের প্রতি আহ্বান—আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাওবা করুন।
কুরআনে বলা হয়েছে:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
(সূরা আহযাব: ৫৯)
আমাদের করণীয়
১. পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে নিজে জানুন এবং পরিবারকে শিক্ষা দিন।
২. সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীল কন্টেন্ট থেকে দূরে থাকুন।
৩. অর্থের লোভে ঈমান বিক্রি করবেন না।
৪. বুজুর্গদের মালফূজাত ও কুরআন-হাদিস পড়ে নিজেকে সংশোধন করুন।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে শয়তানের ধোঁকা থেকে হিফাযত করুন এবং পর্দার মাধ্যমে আমাদের ইজ্জত ও ঈমান রক্ষার তাওফিক দান করুন।