10/07/2025
একসময় জাতীয় পর্যায়ে স্টেডিয়াম কাঁপানো দুই জমজ বোন Anuching Mogini আর Anai Mogini যেন আজ বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে। তারা ছিলেন দেশের নারী ফুটবলের প্রথম সারির তারকা, দেশের পতাকা বুকে নিয়ে মাঠে লড়েছেন, জয় এনে দিয়েছেন—তবুও আজ তারা কোথায়? কেউ কি খোঁজ নেয়? বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) কি জানে, কী অবস্থা এখন তাদের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ আর ক্যারিয়ারের?
তাদের সময়েও দেশের জয়ের গান গাওয়া হতো, তারা যখন মাঠে থাকতেন তখনও হাজারো সমর্থক গর্জে উঠত। অথচ সময়ের স্রোতে আজ তারা বিস্মৃত। নতুন নাম এসেছে—
Mitul Marma , Rupna Chakma , Monika Chakma , Sukanta Tripura , Ritu Porna Chakma , বিটশেক চাকমা। আজ তারাই গর্বের প্রতীক, জয় এনে দিচ্ছে দেশের ফুটবলে। কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎও কি সেই পুরনো গল্পের মতো হারিয়ে যাবে? কোনো গ্যারান্টি কি আছে?
এই দেশেই, এই সমাজেই এক সময় বলা হয়েছিল—"উপজাতি", "চুংচাং", "চীনা", "বিচ্ছিন্নতাবাদী"। বিশেষ করে পাহাড়ে আদিবাসী-বাঙালি দাঙ্গার সময় আদিবাসী ফুটবলারদের জাতিগত পরিচয় নিয়েই করা হয়েছিল বিদ্বেষমূলক মন্তব্য। যারা দেশের হয়ে খেলেছেন, তাদেরই দেশ থেকে আলাদা করে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। যারা দেশের গর্ব, তাদেরই দেশের শত্রু বানানো হয়েছে।
আর যখন কোচ পিটার বাটলারের সময় কিছু আদিবাসী খেলোয়াড় তাদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, তখন তাদের বিরুদ্ধে চলেছিল সামাজিক মাধ্যমে বিষোদগার। কেউ বলেছে, এরা অবাধ্য, আবার কেউ সরাসরি হুমকি দিয়েছে ধর্ষণের মতো বর্বর কথা বলে। যেন খেলোয়াড় না, যেন মানুষই না—শুধু জাতিগত পরিচয়ের কারণে তারা লক্ষ্যবস্তু।
এই ঘটনাগুলো কেবল ফুটবলের বা খেলাধুলার বিষয় না, বরং আমাদের সামগ্রিক রাষ্ট্রচিন্তা, সমাজের মূল্যবোধ আর জাতিগত বৈষম্যের নগ্ন বাস্তবতা। আদিবাসী খেলোয়াড়েরা যখন দেশের পতাকা হাতে জিতে আসে, তখন তারা “আমাদের” হয়; আর একটু বিতর্ক, একটু ব্যর্থতা ঘটলেই তারা হয়ে ওঠে “ওরা”।
এটা শুধু আনুচিং-আনাইয়ের গল্প নয়, বরং প্রতিটি পাহাড়ি, আদিবাসী খেলোয়াড়ের জন্য এক সতর্ক বার্তা। রাষ্ট্র যদি আজ না জাগে, সমাজ যদি না বোঝে, তাহলে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে আরও অনেক সম্ভাবনা, আরও অনেক গর্ব। সম্মান আর সহমর্মিতা ছাড়া কোনো জয়ই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব এখন আমাদের সবার।
Copyright By Valentina Tripura