07/07/2025
কুতুবদিয়া দ্বীপে টেকসই উন্নয়ন ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা
আমি কুতুবদিয়াকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগত উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করেছি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য আমি আমার চিন্তাভাবনা, কর্মপরিধি এবং বর্তমান পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ শুরু করেছি, যাতে কুতুবদিয়া দ্বীপের জন্য একটি টেকসই মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা যায় এবং দ্বীপের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণ করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্মভিটে ও মাতৃভূমি সুরক্ষিত রাখা যায়।
আমার প্রস্তাবিত টেকসই মাস্টার প্ল্যান সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে কুতুবদিয়ার মানুষজনের জীবন-জীবিকা উন্নয়ন এবং দ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান দেশের মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নিচের প্রত্যেক্টি প্রকল্পের অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা ও জিবন যাত্রার মান এবং মানবিকতার সব প্যারামিটার বিবেচনা করে দ্বীপের উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। আশা করি কুতুবদিয়া দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দাদের এসব প্রকল্পগুলি আলোর মূখ দেখলে,মহেশখালীর মত এই অঞ্ছল ও হবে আগামী নতুন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গেম-চেঞ্জার ডেসটিনেশন।
কুতুবদিয়া কে নিয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলির রুপরেখাঃ
১. ‘সি-ট্রাক কাম রো-রো ফেরি অথবা ‘কোস্টাল ফেরি সার্ভিস’ প্রকল্প –মগনামা থেকে কুতবদিয়া দ্বীপের নিরাপদ সমুদ্র পারাপারঃ
কুতুবদিয়ার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগের প্রথম সারির অগ্রাধিকার ছিল আঞ্চলিক নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ‘সি-ট্রাক কাম রো-রো ফেরি সার্ভিস’ অথবা ‘কোস্টাল ফেরি সার্ভিস’ চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমি কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে এই প্রকল্প বাংলাদেশ শিপিং মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কার্যক্রম হিসেবে চলমান রয়েছে। ইনশাআল্লাহ, অচিরেই এর সুফল কুতুবদিয়া দ্বীপবাসী প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।
এছাড়াও কুতুবদিয়া দ্বীপকে নিয়ে আমার আরও কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে, যা আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাস্তবায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমি পেশাগতভাবে একজন প্রকৌশলী (Engineer) এবং সশস্ত্র বাহিনীর ইনলিস্টেড সাপ্লায়ার (DGDP ও MES অনুমোদিত)। পাশাপাশি BPDB, শিপিং মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক টেন্ডারভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ যুক্ত আছি। এই অভিজ্ঞতার ফলে আমার সাথে দেশের এবং
বিদেশের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী ও পেশাগত সহযোগী তৈরি হয়েছে, যারা আমার অনুরোধে উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতা করতে সদা প্রস্তুত।
আমি এই সকল ব্যক্তিগত ও পেশাগত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কুতুবদিয়ার মানুষের জন্য বাস্তবভিত্তিক উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ করছি এবং ভবিষ্যতেও দ্বীপের বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের পক্ষে একইভাবে কাজ করে যেতে চাই, একইভাবে যেমনটি আমি ফেরি প্রকল্পের জন্য কাজ করেছি।
২. কুতুবদিয়া কৈয়ারবিল ইউনিয়ন: জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় সুপার ডাইক নির্মাণের প্রয়োজনীয়তাঃ
কৈয়ারবিল ইউনিয়ন একসময় কুতুবদিয়া দ্বীপের কেন্দ্রস্থল (ভূ-মরা) হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবতা এখন ভিন্ন। পূর্ব-পশ্চিম দিক থেকে সমুদ্রের করাল গ্রাসে এই ইউনিয়ন ১৯৯১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় অর্ধেক অংশ হারিয়ে ফেলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সমুদ্রের ঢেউ এবং জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ও তীব্রতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে উপকূলীয় ভাঙন ব্যাপক হারে বেড়েছে এবং কৈয়ারবিলসহ পুরো কুতুবদিয়া দ্বীপ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে দ্বীপের মাঝখান থেকে শুরু করে ‘সুপার ডাইক’ বাঁধের পাইলট প্রকল্প হিসেবে একটি কেন্দ্রীয় হাব এলাকা নির্ধারণপূর্বক, পরবর্তী ধাপে পুরো কুতুবদিয়া দ্বীপের চারদিকে টেকসই উপকূলীয় প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ৩৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড অথবা ৩৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা যেতে পারে। প্রকল্পের টেকনিক্যাল পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (BWDB)-এর সম্পৃক্ততা অপরিহার্য।
প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য DPM (Direct Procurement Method) টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে, যাতে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়।
‘কুতুবদিয়া রক্ষা বাঁধ’ বা পতেঙ্গা সুপার ডাইক প্রকল্পের আদলে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দ্বীপের যোগাযোগ ব্যবস্থা, জানমালের সুরক্ষা, এবং আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি, এই প্রকল্প কুতুবদিয়াকে ভবিষ্যতে একটি নতুন পর্যটন গন্তব্য (Tourist Spot) হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করার সম্ভাবনা তৈরি করবে।
৩. কুতবদিয়া বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমে নতুন উদীয়মান দ্বীপে বন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট হাব ও ইকো-ট্যুরিজম জোন স্থাপনের উদ্যোগঃ
বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে সম্প্রতি যে নতুন ভূখণ্ড (উদীয়মান দ্বীপ) জেগে উঠছে, সেটিকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। মূলত চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয়ের নতুন উৎস হিসেবে এখানে একটি ‘ডিউটি ফ্রি জোন ফর মাদার ভেসেল ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড’ এবং একটি ‘ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র’ স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছি।
এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক Foreign Direct Investment (FDI) আকর্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এরই অংশ হিসেবে আমি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথভাবে কাজ করছি এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (BIDA) চেয়ারম্যানকেও এই উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত করেছি।
বর্তমানে প্রকল্পটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়াধীন (Ongoing Process) এবং নীতিগত পর্যায়ে বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইনশাআল্লাহ, ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে এটি বাংলাদেশের জিও-পলিটিক্যাল এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের এক অনন্য সম্ভাবনাময় স্বর্ণখণ্ডে পরিণত হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
৪. খুদিয়ারটেক, কুতুবদিয়া - আরপিজিসিএল এর দ্বিতীয় এসপিএম এবং এলএনজি টার্মিনাল সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য উপযুক্ত ভূমি অধিগ্রহণ এলাকাঃ
বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও সরবরাহ সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে Rupantarita Prakritik Gas Company Limited (RPGCL) তাদের দ্বিতীয় Single Point Mooring (SPM) System এবং নতুন LNG (Liquefied Natural Gas) Import Terminal Expansion Project বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের জন্য কৌশলগতভাবে উপযুক্ত এবং টেকনিক্যাল দিক থেকে নিরাপদ জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে কুতুবদিয়া দ্বীপের খুদিয়ারটেক এলাকাকে একটি সম্ভাব্য স্থান হিসেবে নির্ধারণের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কারণ ভৌগোলিক অবস্থান, সমুদ্রগামী জাহাজের নাব্যতা, গভীর পানির প্রবাহ এবং টেকসই ভূমি প্রাপ্যতার দিক থেকে এই এলাকা প্রকল্পের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প সম্ভাবনা ও আরপিজিসিএল-এর এলএনজি খাতের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য খুদিয়ারটেকের এই ভূমি অধিগ্রহণ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহ চেইনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে প্রাথমিক পর্যায়ের ফিজিবিলিটি এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
৫. কুতুবদিয়া দ্বীপের নৌসীমানা ব্যবহারজনিত চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয়ের ন্যায্য হিস্যা ও স্থানীয় উন্নয়ন দাবির প্রেক্ষাপটঃ
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। এই বন্দরে বর্তমানে মাদার ভেসেলসমূহ সরাসরি টার্মিনালে বার্থ করতে পারে না। ফলে এসব জাহাজ দীর্ঘ সময় ধরে কুতুবদিয়া দ্বীপের পশ্চিম উপকূলবর্তী সমুদ্র এলাকায় নোঙর করে থাকে। মাসের পর মাস এসব ভেসেল নোঙরে অবস্থান করলেও প্রতিদিন প্রতিটি জাহাজ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় লক্ষ লক্ষ টাকা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং কাস্টমস শাখা রাজস্ব হিসেবে আদায় করে থাকে।
অথচ এই রাজস্ব আয় কুতুবদিয়া দ্বীপের জলসীমা ব্যবহার করে অর্জিত হলেও, দ্বীপবাসী এই রাজস্ব আয়ের কোন অংশ পায় না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় যেভাবে কর আদায়ের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে, ঠিক তেমনি ‘বার্থিং চার্জ শেয়ার’ বা উন্নয়ন ফান্ড হিসেবে কুতুবদিয়া দ্বীপের অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে উদ্বুদ্ধ করা উচিত যেন তারা দ্বীপের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও, মাদার ভেসেল বার্থিং কার্যক্রমের কারণে স্থানীয় জেলেদের জীবিকা ও পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে, ‘Compensation Package’ এবং ‘CSR (Corporate Social Responsibility) Projects’ বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। এই প্রকল্পগুলো বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে হতে পারে।
দ্বীপের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি ও পরিবেশ সুরক্ষার মতো খাতে এই তহবিল ব্যবহার করলে দ্বীপবাসীর জীবনমানের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
৬. মহেশখালী-কুতুবদিয়া সংসদীয় আসন (কক্সসবাজার-০২) এর আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও ভবিষ্যত সম্ভাবনাঃ
বাংলাদেশে যেকোনো সরকার ক্ষমতায় আসুক না কেন, মহেশখালী-কুতুবদিয়া সংসদীয় আসন (কক্সবাজার-০২) দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মহেশখালীতে ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ হয়েছে, যেখানে অনেক বড় বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানি কাজ করছে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর দ্রুত উন্নয়নশীল এবং এর আশেপাশের এলাকা হিসেবে কুতুবদিয়া দ্বীপও একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ কেন্দ্র হতে পারে।
তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের ক্ষেত্রে কুতুবদিয়াকে উপেক্ষা করা হয়েছে। আমেরিকার এক্সিলারেট এনার্জি এবং বাংলাদেশের সামিট গ্রুপের দুটি এলএনজি টার্মিনাল মহেশখালীতে স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে কুতুবদিয়া আদর্শ অবস্থানে থাকার পরও এই সুযোগ পায়নি। মহেশখালী ও কুতুবদিয়া একই সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় উভয় এলাকায় সমান গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু কুতুবদিয়া অনেকটা অবহেলিত থেকেছে।
ভৌগোলিক দিক থেকে কুতুবদিয়া চট্টগ্রাম বন্দরের খুব কাছাকাছি, তাই এলএনজি টার্মিনালসহ বড় ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য এটি আদর্শ স্থান।
অতএব, ভবিষ্যতে কুতুবদিয়াকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পিত বিনিয়োগ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে দ্বীপটির অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থান উন্নত হয়।
বাংলাদেশের যে-ই আগামীতে সরকার গঠন করুক না কেন, মহেশখালী-কুতুবদিয়া সংসদীয় আসন (কক্সবাজার-০২) দেশের অর্থনৈতিক গেম চেঞ্জার অঞ্চলের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হবে। এই আসনের ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং নৌ-বাণিজ্যিক কৌশলগত গুরুত্ব একে জাতীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
মহেশখালীতে ইতোমধ্যে অভূতপূর্ব পরিমাণে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক ইপিসি (Engineering, Procurement and Construction) কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে:Penta-Ocean Construction Co., Ltd. (Japan), TOA Corporation (Japan), POSCO International Corporation (South Korea), Samsung C&T Corporation (South Korea), China National Technical Import and Export Corporation (CNTIC - China), Excelerate Energy L.P. (USA), Summit Power International (Bangladesh / Singapore / USA).
এইসব কোম্পানির প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে মহেশখালীতে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি টার্মিনাল, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এবং বিশ্বমানের ট্রান্সশিপমেন্ট ও কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
তুলনামূলকভাবে, কুতুবদিয়া দ্বীপের সাগরঘেঁষা ইউনিয়ন এবং স্থানীয় ওয়ার্ডগুলো এখনো বড় আকারের বিনিয়োগের বাইরে রয়েছে। অথচ ভৌগোলিক এবং ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে কুতুবদিয়া এলএনজি টার্মিনাল, পেট্রোকেমিক্যাল হাব এবং ট্রান্সশিপমেন্ট জোনের জন্য আদর্শ স্থান। এর কাছাকাছি অবস্থিত চট্টগ্রাম বন্দর, মাতারবাড়ি বন্দর এবং বঙ্গোপসাগরের নৌপথ একে একটি কৌশলগত অবস্থানে নিয়ে গেছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য এই অম্লান সম্ভাবনা ও অবহেলায়, বিগত সময়ে কুতুবদিয়াকে অবহেলা করা হয়েছে। Reliance Industries Limited (India), Mex Gas International (Mexico) এবং Excelerate Energy (USA) পূর্বে কুতুবদিয়াকে সম্ভাব্য এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জায়গা হিসেবে বিবেচনা করেছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে প্রকল্পগুলো মহেশখালীতে স্থানান্তরিত হয়, যার ফলে প্রকল্প ব্যয় এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে দূরত্ব উভয়ই বেড়ে গেছে।
যেহেতু মহেশখালী এবং কুতুবদিয়া একই সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কুতুবদিয়াকে সমান গুরুত্ব দেয়া উচিত।
তাই কুতুবদিয়া দ্বীপকে একটি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোর্ট সাপোর্ট ফ্যাসিলিটি এবং জলবায়ু প্রতিরোধী দ্বীপ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মাস্টারপ্ল্যানভিত্তিক উন্নয়ন জরুরি এবং এলাকার জনগণের কর্মসংস্থান, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তার জন্য নতুন করে বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ (FDI) আকর্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভবিষ্যৎ গন্তব্য হিসেবে কুতুবদিয়া দ্বীপকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া সময়ের দাবি।
৭. কুতুবদিয়া-মহেশখালী এলাকার জেলেদের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সাবমেরিন বেইজ সংলগ্ন নেভাল নিরাপত্তা সেল গঠন প্রস্তাবনাঃ
মগনামায় স্থাপিত চীনা G2G (Government to Government) সাবমেরিন বেইজের প্রেক্ষাপটে, কুতুবদিয়া দ্বীপের প্রধান জীবিকা হিসেবে মাছ শিকারী বা স্থানীয় জেলেদের গভীর সমুদ্রে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাই অত্যন্ত জরুরি।
এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশ নেভীর তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ নিরাপত্তা সেল গঠন করা প্রয়োজন, যা নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড এবং বাংলাদেশ নেভীর যৌথ সমন্বয়ে পরিচালিত হবে। এর মাধ্যমে কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর স্থানীয় জেলেদের জীবিকা সুরক্ষিত থাকবে এবং জলদস্যুতা, পাচার ও অন্যান্য অবৈধ কার্যক্রম থেকে রক্ষা পাবে।
এই নেভাল নিরাপত্তা সেল স্থানীয় জেলেদের জন্য স্থায়ী এবং কার্যকর সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করবে, যাতে তারা নির্ভয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে পারেন এবং তাদের পেশাগত জীবন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বজায় থাকে।
৮. কুতুবদিয়া দ্বীপের গুরুত্বহীনতায় এলএনজি ও বিপিসি পাইপলাইনের পথনির্ধারণের প্রভাবঃ
কুতুবদিয়ার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিয়ে বাংলাদেশের এলএনজি (Liquefied Natural Gas) পাইপলাইন এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (BPC) এর পাইপলাইন গড়ে উঠেছে, যা চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে শেষ হয়। তবে দুঃখজনকভাবে কুতুবদিয়া দ্বীপকে এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো থেকে বাইরের করায় দ্বীপের ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত ইচ্ছাকৃতভাবে নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যা কুতুবদিয়া দ্বীপের মতো দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনেনি। এর ফলে দ্বীপবাসীর দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও সংযুক্তি ব্যাহত হয়েছে এবং অঞ্চলের সম্ভাবনাগুলো পর্যাপ্ত মাত্রায় কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। কুতুবদিয়ার সমুদ্রবন্দর ও এলএনজি টার্মিনালের নিকটবর্তী অবস্থান পেট্রোবাংলার জন্য আদর্শ লজিস্টিক স্টোরেজ হাব গড়ার সুযোগ দেয়। এতে সরবরাহ চেইন দ্রুততর ও খরচ কমবে, এনার্জি নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে এবং স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশে এনার্জি খাতের স্থিতিশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে কুতুবদিয়া দ্বীপের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
৯. মহেশখালিতে চলমান প্রকল্পে স্থানীয় সংসদীয় আসনের জনগোষ্ঠীকে চাকুরীতে অগ্রাধিকার ও বঙ্গোপসাগর এবং কুতুবদিয়ায় নতুন গ্যাস খননের প্রকল্পে স্থানীয় জনবল নিয়োগের প্রস্তাবনাঃ
মহেশখালীতে বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্পে স্থানীয় সংসদীয় আসনের জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন ও পরিপত্র জারি করা প্রয়োজন। এই নীতিমালার মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগের পাশাপাশি ডমেস্টিক প্রিফারেন্স সুবিধা অত্র আসনের স্থানীয় নাগরিকরা ভোগ করতে পারবে। এর ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং অঞ্চলটির টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।
অপরদিকে, পেট্রোবাংলার বাপেক্স কর্তৃক প্রণীত গ্যাস কুণ্ড খননের মাস্টার পরিকল্পিত ম্যাপে, বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া দ্বীপের পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস ও তেল খনিজ অনুসন্ধানের প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই প্রকল্পে কুতুবদিয়ার স্থানীয় জনবলকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকুরীতে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যাতে স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় এবং প্রকল্পের সুষ্ঠু ও টেকসই বাস্তবায়ন নিশ্চিত হয়।
১০. কুতুবদিয়া তে অফশোর/ অনশোর পেট্রোকেমিক্যাল এরিয়া স্থাপনা ও এলএনজি টার্মিনাল বিনিয়োগ পুনর্বিবেচনাঃ
বিগত কয়েক বছর আগে ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (Reliance Industries Limited) এবং বেক্সিকো লিমিটেড (Bexico Limited) কোম্পানি কুতুবদিয়া এলাকায় এলএনজি (Liquefied Natural Gas) টার্মিনাল স্থাপনের প্রাথমিক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। তবে অদৃশ্য কারণে প্রকল্পটি মহেশখালীতে স্থানান্তরিত হয়, যার ফলে নির্মাণ ও পরিচালনার খরচ বৃদ্ধি পায় এবং মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব প্রকল্পের কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি করে। এছাড়াও, আমেরিকার এক্সেলারেট এনার্জি (Accelerate Energy) কোম্পানি এবং চীনের জিটুজি (China State Shipbuilding Corporation’s G-to-G project) এ ক্ষেত্রেও আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। এই কারণে কুতুবদিয়ায় পুনরায় এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের সম্ভাবনা পুনর্বিবেচনা এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
অন্যদিকে, আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের খুদিয়ারটেক এবং কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পশ্চিম অংশ ও বাতিঘর সংলগ্ন এলাকায় জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে একটি পেট্রোকেমিক্যাল এরিয়া স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় আগ্রহ সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এখানে ইউনাইটেড এনার্জি রিসোর্স লিমিটেড (United Energy Resources Limited - ERL) এর ইউনিট-২, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (Bangladesh Petroleum Corporation - BPC) এর পাইপলাইন মেইন্টেন্যান্স হাব এবং ড্রেজার পাইপ নির্মাণ কেন্দ্র (SDE Dredger Pipe Fabrication Unit) স্থাপনের জন্য উপযুক্ত স্থান বিবেচিত হওয়ায়, এই সুযোগগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরে আনা হবে।
১১. কুতুবদিয়া দ্বীপে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাবনাঃ
বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের বরফ গলছে এবং গলিত বরফের পানি সমুদ্রে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রের স্তর উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তুলনামূলক বড় বড় সমুদ্রের ঢেউ, যা আমরা জলোচ্ছ্বাস (Storm Surge) হিসেবে চিহ্নিত করি, সৃষ্টি হচ্ছে। এই জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় এলাকায় প্রবল আছড়ে পড়ে দ্বীপসমূহকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে। কুতুবদিয়া দ্বীপ এই জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাবের শিকার হওয়ায় দেশের অন্যতম বৃহত্তম ভুক্তভোগী।
সুতরাং, জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড (Loss and Damage Fund) থেকে প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলগুলোর যথাযথ ও স্বচ্ছ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কঠোর তদারকি প্রয়োজন।
অতিরিক্তভাবে, কুতুবদিয়া উপজেলা প্রশাসনের আওতায় আধুনিক দ্বীপ গবেষণাগার ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা উচিত, যেখানে দ্বীপের সংস্কৃতি, ইতিহাস, দুর্যোগের ইতিহাস এবং দ্বীপ রক্ষার কার্যক্রম সংরক্ষিত ও প্রচারিত হবে। এই গবেষণাগার দ্বীপের টেকসই সংরক্ষণ এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কুতুবদিয়াকে ভবিষ্যতে সুরক্ষিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
১২. কুতুবদিয়া দ্বীপের সাস্টেইনেবল বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ ও সফল বাস্তবায়নঃ
কুতুবদিয়া ও পার্শ্ববর্তী দ্বীপসমূহে সাস্টেইনেবল বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমি দীর্ঘদিন ধরে, বিশেষ করে ২০১৮ সাল থেকে মনপুরা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ ও কুতুবদিয়ায় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, টেন্ডার ও দরপত্র প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলাম।
অতীতের কুতুবদিয়াতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (BPDB) ২টি পাইলট প্রকল্প হিসেবে এক মেগাওয়াট+ ক্ষমতার বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি যে সুপারভিশন ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি হলে প্রকল্প ব্যর্থ হতে পারে। তৎকালীন ঠিকাদার প্যান এশিয়া লিমিটেড গ্রীণ হাউজিং এনার্জি লিঃ যাদের কোন সফল প্রজেক্ট এক্সিকিউশন ছিলোনা অতীত অভিজ্ঞতা হিসেবে! কিন্তু এদের প্রকল্প ব্যররথতার দায়ভার দ্বীপের জঙ্গন এতদিন বহন করেই চলেছিলো! সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল এ বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য আমি তৎকালীন BPDB-এর মেম্বার (ডিস্ট্রিবিউশন) এর কাছে ইঞ্জিনিয়ার ফারুক ভাইয়ের পক্ষে সুপারিশ করেছিলাম, যিনি তখন কাপতাইয়ের ৭.২ মেগাওয়াট এর একটি প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করেছিলেন।
ফলস্বরূপ, ফারুক ভাইয়ের নেতৃত্বে কুতুবদিয়া সহ উক্ত প্রকল্পের দ্বীপগুলোর দ্রুত বিদ্যুতায়ন সম্ভব হয়েছে, যা দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সফল প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ প্রকৌশলীর পছন্দ এবং সুপারিশ একটি বড় বিষয়।
আগামীতে কুতুবদিয়ায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পেও আমি ফারুক ভাইয়ের মত কর্মট এবং মেধাবী পিডি নির্বাচনে পানি উন্নয়ন বোর্ড কে কারিগরি দিক থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করবো, যাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সাথে যৌথভাবে সুপারভিশন নিশ্চিত করা যায়।
আমার প্রথম পরিচয় হলো কুতুবদিয়া দ্বীপের একজন অধিবাসী হিসেবে, যা আমার জন্মভূমি এবং প্রাণের আদি ঠিকানা। তবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই চরাঞ্চল অচিরেই হারিয়ে যেতে পারে। তাই আমার কাছে এই প্রথম পরিচয় এবং ঐতিহ্য ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমি সারাবছর ঢাকায় বসবাস করি, মন সবসময় ফিরে ফিরে আসে এই প্রিয় উপকূলের চরাঞ্চলে।
আমি একজন প্রকৌশলী এবং স্থানীয় কুতুবদিয়া দ্বীপের অধিবাসী হিসেবে আমার জন্মভূমির উন্নয়নে অবদান রাখতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি বিশ্বাস করি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কুতুবদিয়া দ্বীপের টেকসই উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
আমাদের এই ছোট্ট কুতুবদিয়া দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ ও উপকূলীয় অঞ্চল। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থা, সমুদ্র সৈকত এবং জীববৈচিত্র্য দেশের পরিবেশ ও অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই দ্বীপ বেশি দিন নেই দক্ষিণ এশিয়ার পাওয়ার হাবে পরিনত হবে একদিন এর ভূ-গৌলিক অবস্থানের কারনে। কিন্তু বর্তমানে কুতুবদিয়ার উপকূলীয় এলাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, জলোচ্ছ্বাস এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ।
এলাকার বাসিন্দারা প্রধানত মাছ ধরা, নৌযান চলাচল এবং পর্যটনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্বীপের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যা স্থানীয় জনগণের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে।
অতএব, কুতুবদিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
উক্ত প্রজেক্ট পরিকল্পাগুলিতে আমি আমার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলি কে দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা অব্যহত রেখেছি।
আপনাদের প্রত্যেকের চেষ্টায় একদিন আমরা কুতুবদিয়াবাসী সফল হবো, ইনশাআল্লাহ্।
পরিকল্পায়ঃ
আতিকুল ইসলাম কাইফ
International Tender Specialist | FDI Facilitator
CEO, Zedsen EPC
Tender Specialist, Karnaphuli Group
Estate & Federal Acquisition Expert, InteleCOM LLC, USA | www intelecomfederal com
👍🇧🇩