03/08/2025
রাশেদ ছিল গ্রামের একদম সাধারণ ছেলে। বয়স মাত্র ২৪, মেধাবী হলেও পরিবারের অভাবের কারণে কলেজ ছেড়ে মাছের বাজারে কাজ করত।
একদিন এক লোক গ্রামের দোকানে এসে বলল,
“ভাই, সৌদিতে একটা দারুন কোম্পানি। ভালো বেতন, থাকা-খাওয়া ফ্রি। এখন ভিসা লাগলে শুধু ৪ লাখে কাজ হয়ে যাবে।”
রাশেদের চোখে তখন শুধু টাকা। মনে মনে ভাবে, “ছয় মাসেই তুলে ফেলব। দুই বছরে জমিয়ে ব্যবসা দিব।”
বাবা-মাকে বুঝিয়ে চাষের জমিটা বন্ধক রাখল। সুদের ওপর ধার করল, কেউ আবার গরু বিক্রি করে দিল ছেলের ভিসার জন্য।
একটা ভিসা, একটা স্বপ্ন।
---
সৌদিতে পৌঁছানোর পর...
এয়ারপোর্ট থেকে তাদের নিয়ে গেল একটা ক্যাম্পে। সেখানে ২০ জন এক রুমে, ঘুমানোর মাদুর ছেঁড়া, খাবার পচা, কাজ নেই।
বুঝতে পারল—সব ভুয়া। কোম্পানি নেই, নিয়োগকর্তা নেই, কফিল বলছে:
“তোমার কাজ খুঁজে নাও, আমি কিছু জানি না। আর স্পন্সর বদলাতে চাইলে আরো ৭০০০ রিয়াল দাও।”
রাশেদ মাথা ঠুকে চুপ করে থাকল। কয়েক মাস পর একটা নির্মাণ কাজ পেয়ে গেল। সকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা—৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কাজ। ১২০০ রিয়াল বেতন, তাও ৩ মাসে একবার দেয়।
একদিন ফোনে মা বলে,
“তোর শোধকৃত কিস্তি আর হয়নি... সুদের টাকা বেড়ে যাচ্ছে রে বাবা!”
রাশেদের বুক কেঁপে উঠে। মনে পড়ে, যে লোকটা ভিসা করে দিয়েছিল, সে এখন আর ফোন ধরে না।
---
বছর দুয়েক পর…
রাশেদ দেশে ফিরে এল।
পকেটে ৩ হাজার টাকা, শরীরে ঘাম আর মুখে তীব্র ক্লান্তি। গ্রামে সবাই চুপচাপ। কেউ বলে না কিছু, শুধু ভাবে—"সৌদিতে গেল আর কিছু আনল না!"
রাশেদ জানে—সৌদি যাওয়া তার ভুল ছিল না, ভুল ছিল না জেদ।
ভুল ছিল “সত্যতা যাচাই না করে, ভিসাকে ভাগ্য ভেবে কোটি টাকার স্বপ্ন দেখা।”
---
শেষ কথা:
> “ভিসা এক জিনিস, বাস্তবতা আরেক।"
সৌদি বা অন্য যেকোনো দেশে যাওয়ার আগে যাচাই করা উচিত কোম্পানির আসল অস্তিত্ব, কাজের ধরন, চুক্তিপত্র, কফিলের অবস্থা।
৪-৫ লাখ টাকা দিয়ে যদি প্রতারণার শিকার হতে হয়, তাহলে সেই টাকা দিয়ে দেশে ছোট ব্যবসা করাই অনেক নিরাপদ ও সম্মানজনক হতে পারে।”