29/09/2025
একজনের একটি মাত্র সন্তান সন্ন্যাসী হইয়া গিয়াছে। তিনি মায়ের নিকট আসিয়া নিজের মনের তাপ জানাইতে গিয়া অশ্রু বর্ষণ করিতেছেন।শ্রীশ্রীমারও চোখে জল। মা বলিতেছেন, "আহা! তাইতো, একটি মাত্র সন্তান, প্রাণের ধন-এমন করে সন্ন্যাসী হয়ে গেলে মা কি করে প্রাণ ধরে বলো দেখি?" আবার অপর একদিন একজন যখন তাঁহার দুইটি সন্তানই সন্ন্যাসী হইবার জন্য ব্রহ্মচর্য লইয়াছে ইহা জননীর কাছে জানাইয়া বলিতেছেন, "মা, সন্তানের কল্যাণ হয় সেইটি মায়ের কামনা। কী আছে সংসারে? ছেলে যদি পরম কল্যাণের পথে যায়, তার চেয়ে আনন্দের বিষয় কী আছে?" মা তখন সহর্ষে বলিতেছেন, "ঠিক বলেছ মা, পরম কল্যাণের পথে যদি ছেলে যায়, তার চেয়ে আর মা'র আনন্দ কী হতে পারে?" এই যে বিভিন্নস্থানে মায়ের বিভিন্নভাবের উক্তি-উভয়ই তাঁহার আন্তরিক, একটিতে তিনি সন্তানহারা মায়ের দুঃখের সম-অংশিনী, আবার অপরটিতে মা যে সন্তানের প্রকৃত কল্যাণের বিষয় বুঝিয়াছেন, ইহা দেখিয়া পরমানন্দিত।
(পদপ্রান্তে ৩/৫৯৬)
(তাঁহার (শ্রীমার) অসুস্থ অবস্থায় একদিন একজন গৈরিকবস্ত্র পরিহিতা মহিলা তাঁহার চরণ দর্শন করিতে আসিয়াছেন। তিনি মায়ের নিকট দীক্ষা লইবার জন্য অতিশয় ব্যাকুল হইয়া আসিয়াছেন। মা তখন খাটের উপর শুইয়াছিলেন। তিনি যেমন পদধূলি লইবার জন্য অগ্রসর হইয়াছেন, অমনি মা যেন সন্ত্রস্তা হইয়া বলিলেন, "কর কি? কর কি, পায়ে হাত দিও না, গৈরিকধারিণী সন্ন্যাসিনী তুমি, পায়ে হাত দিয়ে কেন আমাকে অপরাধী কর?” মেয়েটি নিতান্ত দুঃখিতা হইয়া উত্তর করিলেন, "অনেক আশা করে যে আপনার কাছে এসেছি, আপনি আমায় দীক্ষা দেবেন বলে।"
মা বলিলেন, "ব্যস্ত হলে কি কিছু হয় মা? সময় হলে নিজেই হবে। দীক্ষা কি তোমার হয়নি? গেরুয়া কে দিয়েছেন? যাঁর কাছে সাধন পেয়েছ, নিষ্ঠা করে তাঁকেই ধরে থাক, সময়ে হবে।")
মেয়েটি অবশেষে বলিলেন, "গেরুয়া কেউ দেন নি, আমি নিজেই ধারণ করেছি। আর যে সাধনপ্রণালী পেয়েছি তাতে মনে শান্তি পাচ্ছি না।"
মা তখন বলিলেন, "আজ আমি বড় অসুস্থ, তোমার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারলুম না বলে মনে দুঃখ করো না। কিন্তু মা, এটি মনে রেখো, গেরুয়া পরা খুব সহজ নয়। এই যে সব আশ্রমের ত্যাগী ছেলেরা ঠাকুরের জন্য সব ছেড়ে এসেছে, এরাই গেরুয়া পরার অধিকারী। গেরুয়া পরা কি যার তার কাজ? এই সব বলিয়া মিষ্টি কথায় তাঁহাকে বিদায় দিলেন।
কিন্তু মা তাঁহাকে পায়ের ধূলা লইতে দিলেন না।
(পদপ্রান্তে ৩/৫৯৭)
জয় মা জয় জয় মা ❤️❤️❤️🙏🙏🌹🌹
( )
#মা #সারদা #রামকৃষ্ণ