17/10/2023
গল্পটা শুরু করার আগে একটা প্রশ্ন করতে চাই, আচ্ছা,
যেই ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না
সেই ভালোবাসা কি ভালোবাসা হয় না??
বড় বোনের বিয়ে, এই বিয়ের ব্যস্ততা নিয়েই সারারাত ঘুম হয়নি রিশার। সকালে উঠে চোখের নিচে dark circle দেখেই মনটা খারাপ হয়ে যায় ওর। একটাই তো বোন, তার একটাই বিয়ে, কোথায় রিশা একটু ভালো করে সাজবে তা না, দেখতে পুরো পেত্নির মতো লাগছে। তারপরও নিজেকে সুন্দর দেখাতে একটু বেশিই সাজে রিশা। রিশার সাজ শেষ হওয়ার আগেই এসে বকাবকি শুরু করে দেয় তার মা।
— ওইদিকে তো বরপক্ষের সবাই চলে এসেছে আর তোর এখনো সাজগোজ শেষ হয়নি?? বলি, তুই কি সারাদিন আয়নার সামনেই বসে থাকবি নাকি?? তাড়াতাড়ি ওঠ, অনেক কাজ পড়ে আছে।
— ধুর, তুমি একটু ঠিক মতো সাজতেও দিচ্ছ না।
—অনেক সেজেছিস, অনেক সুন্দর লাগছে, এবার ওঠ।
ওইদিকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও নিজের খালাতো ভাইয়ের বিয়েটা attend করতে হচ্ছে আবিরকে।জোর করে নিয়ে আাসায় এমনিতেই ভীষণ বিরক্ত ছিল আবির, তার উপর আাবার মধ্যবিত্ত style এর decoration। আসলে আবির একজন উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে।এমন সাদামাটা পরিবেশ তার খুব একটা পছন্দ হয় না। তার উপর খুব ছোটোখাটো করেই অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।
ভিতরে ধুকেই আবির চুপচাপ একটা চেয়ারে বসে থাকে। সে এটাই ঠিক করে নিয়েছিল যে, সে
পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানটাই এই চেয়ারে বসে পার করে দেবে।নিজের মোবাইলটা নিয়েই ব্যস্ত ছিল আবির। হঠাৎ একটা তীক্ষ্ণ গলার আওয়াজে চোখ তুলে তাকাতে বাধ্য হয় আবির। একটা ১৯ -২০ বছরের মেয়ে চিৎকার করে যাচ্ছে ‘বর এসেছে, বর এসেছে, গেট ধর তোরা'
আবির বর পক্ষ হলেও, সে তার বাবা মায়ের সাথে অনেক আগেই চলে এসেছে এখানে। এখন গলার শব্দটা শুনেই হুঁশ ফেরে আবিরের।মেয়েটাকে দেখে কেমন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যায় আবির, কেমন বড় বড় দুটো মায়াভরা চোখ, কেমন মিষ্টি হাসি, নিষ্পাপ বাচ্চা বাচ্চা চেহারা। মেয়েটার মুখের দিকেই হা করে তাকিয়ে থাকে আবির, আশে পাশে আর কোনকিছুই নজরে পড়ে না তার। কানে শুধু বাজতে থাকে একটাই শব্দ, "বর এসেছে, বর এসেছে", ব্যস, সমস্ত বিয়েটা আবিরের মাথায় শুধু এই কথাটাই ঘুরতে থাকে। তারপর কখন যে বর এসে পড়ে আর কখন হাসি আনন্দ, খাওয়া দাওয়ার মাঝে দিয়ে দিনটা পার হয়ে যায় টের পায় না সে।
*********************
ভাইয়ের বিয়ের সপ্তাহটা পার হতেই সোজা খালার বাসার দিকে পা বাড়ায় আবির।এই এক সপৃতাহ যে তার কত কষ্টে কেটেছে এটা শুধুমাত্র সেই বলতে পারে, শুধু অপেক্ষা করেছে সটিক সময়ের। সাধারণত খালার বাড়িতে যায় না আবির, তাই হঠাৎ তাকে দরজায় দেকে কিছুটা অবাক হয় খালা।
—কিরে আবির, তুই হঠাৎ এই সময়ে???
—এমনি, এইদিকে একটা কাজে যাচ্ছিলাম, ভাবলাম দেখা করে যাই (মিথ্যা বলল সে)
—আচ্ছা, আয় ভিতরে, কেমন আছে সবাই?? তোর মা ভালো আছে তো?? আপা তো কখনোই এদিকে আসে না, ছেলের বিয়ে বলে তাও দেখা পেলাম।(আবিরের family তার খালার family অপেক্ষা বেশি বড়লোক, তার কখনোই কোন মধ্যেবিত্ত পরিবারে যাতায়াত করেন না।আবিরই কিছুটা যোগাযোগ রাখে)
— না, আসলে কাজকর্মে তেমন সময় পান না, তাই আাসা হয় না।খালা ভাইয়া কোথায়, বাসায় নেই?? বের হয়েছে নাকি ভাবির সাথে??
— না না, রুমেই আছে, যা কথা বল গিয়ে, তোর ভাবি তোর জন্য চা নিয়ে আসবে।
—আচ্ছা, আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলে আসি।
আর সময় নষ্ট না করে আবির সোজা চলে যায় আর ভাইয়ের রুমে।
— কেমন আছ ভাইয়া??
—এই তো ভালো, তা তুই হঠাৎ??? সবকিছু ঠিক আছে তো???
—এইতো সব ঠিক আছে। আসলে ভাইয়া আমার একটা হেল্প লাগবে??
—হ্যাঁ বল, কি লাগবে তোর?
— ভাইয়া, মানে আসলে, আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে...
—আরে কি মানে মানে করছিস, কি লাগবে তোর??
—ভাইয়া, ( রিশার ছবি দেখিয়ে) এই মেয়েটা কে বল তো, ওর ব্যাপারে কিচু জানো, কোথায় থাকে, কি নাম, কিছু??
— ও তো আমার নিজের সালি, তোর ভাবির বোন, রিশা।কেন বল তো, তোর ওকে কি দরকার??
— আসলে, মানে ভাইয়া.....
—তুই কি ওর প্রেমে পড়ে গেছিস???
প্রশ্নটা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় আবির।কোন কথা না বে শুধু মাথা নেড়ে সায় দেয় সে।
— সে কথাই বল। অবশ্য তুই ওকে বিয়ে করতে চাইলে কোন আপত্তি নেই আমার, তবে তোর ভাবিকে কিন্তু বলা যাবে না আমার কথা, যা হবে ভবিষ্যতে সব তোর দোষ।আমার ঘরে আগুন লাগাবি না।
— না ভাইয়া, ভাবি কিচ্ছু জানবে না, সত্যি।
ওকে।
************************************
ভার্সিটির ক্লাস শেষ করেই রিশার ফুচকা খাওয়ার অভ্যাস।ক্লাস আছে মানে ফুচকা তার লাগবেই, না খেয়ে কিছুতেই বাসায় যাবে না রিশা। আজকে বন্ধুদের সাথে ফুচকা খেতে গেলে রিশার best friend নিহা notice করে একটা ছেলে দূরে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে রিশার দিকে।
—এই রিশা দেখ, ওই ছেলেটা তখন থেকে তাকিয়ে আছে তোর দিকে। তুই চিনিস নাকি ওকে??
—ওইটা?? না তো, চিনি না। যদিও দেখেছি বলে মনে হচ্ছে তবুও চিনি না।
— রিশা ছেলেটা তো এদিকেই আসছে, মনে হয় কথা বলতে চায়।
— আসুক না, আসলেই কি..
মনে অনেক বেশি সাহস নিয়ে এগিয়ে যায় আবির। জীবনে প্রথমবার কোন মেয়ের প্রতি এতো বেশি দুর্বল হয়েছে সে, কোনভাবেই মন থেকে সরাতে পারছে না মেয়েটাকে।
— হ্যালো...( নেকটা জোর করে গলা দিয়ে আওয়াজ বের করে আবির)
—জ্বি বলুন..
—আপনার সাথে দু মিনিট কথা বলতে পারি???just দুমিনিট, বেশি সময় নেব না।
— কি বলবেন, বলুন।
— আসলে, কথাটা একটু ব্যাক্তিগত।(আবির আর যাই হোক, এতগুলো মেয়ের সামনে অপমানিত হতে রাজি না)
—ওকে, আসুন এদিকে। (আবিরের কথাটা বুঝতে পারে রিশা)
—আসলে, আমি ইশান আহমেদ এর খালতো ভাই, ইশান আপনার দুলা ভাই। ওর বিয়েতেই দেখেছিলাম আপনাকে।
— ওহ, সরি আপনাকে চিনতে পারি নি আমি। আসলে সবার চেহারা ঠিক মনে নেই আমার। তা আপনি হঠাৎ আমার ভার্সিটিতে???
— আসলে, আমি জানি না আপনি কিভাবে নেবেন কথাটা, but, আমি মানে, আসলে...
—বলুন।
—আমি প্রথম দেখাতেই আপনার প্রমে পড়ে গেছি( এক নিশ্বাসে কথাটা বলে আবির)
কিছুক্ষণের জন্য পুরো থ হয়ে যায় রিশা। এরকম কোনকিছুর আশা করেনি সে। কিছু সময়ের জন্য নিরবতা ছেয়ে থাকে দুজনের মাঝে।
—আ, মানে, আপনার নামটা যেন কি??
— আবির।
— হ্যাঁ, আবির। দেখুন আবির, আমি আপনাকে আসলে চিনি না আর এসব relation নিয়ে কোনদিন ভাবিনি আমি। আমার মনে হয় আপনার অন্য কাউকে choose করা উচিত, আমি...
—রিশা, আমি বুঝতে পারছি আপনি এসবের জন্য রেডি না, কিন্তু একটু বুঝার চেষ্টা করুন, আমি সত্যিই আপনাকে নিয়ে serious, আমি জোর করছি না আপনাকে। relation যে করতেই হবে এমন তো নয়, আমরা তো বন্ধুও হতে পারি, একে ওপরকে চিনার চেষটা করতে পারি। এরপর যদি আপনার মনে হয় যে আমি আপনার যোগ্য নই, I promise আমি চলে যাব আপনার জীবন থেকে, আর কখনো বিরক্ত করবো না।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে রিশা। তারপর হঠাৎ কিচু না বলেই সোজা বাসার দিকে দৌড়তে থাকে সে।আবির পিছন থেকে অনেকবার ডাকতে থাকে, তবে সাড়া দেয় না রিশা। নিজের বন্ধুদের কাছেও ফিরে যায় না সে।
চলবে।
#পূর্ণতা