15/06/2025
ড. মুহাম্মদ ইউনুস: অর্থনীতির মানবিক বিপ্লবের স্থপতি
ভূমিকা
ড. মুহাম্মদ ইউনুস — শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই এক গৌরবের নাম। অর্থনীতির প্রচলিত ধ্যানধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি নতুন আর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির যে পথ তিনি দেখিয়েছেন, তা শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, সামাজিকভাবেও প্রগতির একটি অন্যতম প্রতীক। এই আর্টিকেলে আমরা তাঁর জীবন, কর্ম, দর্শন এবং অবদান বিশদভাবে বিশ্লেষণ করব।
---
শৈশব ও শিক্ষা
ড. ইউনুস জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪০ সালের ২৮ জুন, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায়। তাঁর পিতা হাজী দুলু মিয়া ছিলেন একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং মা ছিলেন একজন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই ড. ইউনুস পড়াশোনায় আগ্রহী ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেন।
পরে, ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। একাডেমিক জীবনের এই সাফল্য তাঁকে ভবিষ্যতের বিশাল পথচলার ভিত্তি গড়ে দেয়।
---
কর্মজীবনের শুরু ও দর্শনের জন্ম
দেশে ফিরে এসে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৪ সালে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষ কীভাবে ছোট ছোট প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে চরম দুর্দশায় পড়ে যাচ্ছে, তা তিনি কাছ থেকে অবলোকন করেন।
একবার একটি গ্রামের দরিদ্র নারীদের তালিকা তৈরি করে দেখেন, তারা মাত্র ৮৫৬ টাকার জন্য নিদারুণ অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তখন তাঁর মনে হলো, প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা দরিদ্র মানুষের কোনো উপকারে আসছে না। তারা জামানত দিতে পারে না, ব্যাংকের কাগজপত্র বোঝে না, অথচ তারা পরিশ্রমী, সৎ এবং ঋণ ফেরত দিতে আন্তরিক।
---
গ্রামীণ ব্যাংকের সৃষ্টি
এই উপলব্ধি থেকেই ড. ইউনুস 'ক্ষুদ্রঋণ' ধারণার জন্ম দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৪২ জন দরিদ্র মানুষকে নিজের অর্থে ঋণ দেন—যাদের অধিকাংশই ছিলেন মহিলা। এই ঋণের প্রতিদান ছিল অভূতপূর্ব। সকলেই সময়মতো ঋণ পরিশোধ করে।
এই সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে ১৯৮৩ সালে তিনি সরকারীভাবে প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংক। এটি বিশ্বের প্রথম মাইক্রোক্রেডিট ভিত্তিক ব্যাংক যা সম্পূর্ণভাবে গরীব মানুষের জন্য তৈরি।
---
ক্ষুদ্রঋণ ও নারীর ক্ষমতায়ন
গ্রামীণ ব্যাংকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল—এর অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা ছিলেন নারী। ইউনুস বিশ্বাস করতেন, নারী ক্ষমতায়িত হলে পরিবার ও সমাজ উভয়ই উন্নত হয়। তাঁর পরিকল্পনায় দেখা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রায় ৯৭% ঋণগ্রহীতা নারী।
নারীরা এই ঋণের মাধ্যমে গৃহস্থালী পণ্য তৈরি, পশুপালন, ছোট দোকান চালানোসহ নানা ব্যবসা শুরু করেন। তাদের নিজস্ব আয় তৈরির মাধ্যমে তারা পারিবারিক ও সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণেও অংশ নিতে শুরু করেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নের পথে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
---
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও নোবেল জয়
২০০৬ সালে ড. ইউনুস এবং গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বলা হয়:
> "তাঁর ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম গরীব মানুষদের—বিশেষ করে নারীদের—অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষমতায়িত করেছে।"
এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত। তাঁর চিন্তাধারা এখন বিশ্বের ১০০ টিরও বেশি দেশে অনুকরণীয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
---
সামাজিক ব্যবসা (Social Business) এর ধারণা
ড. ইউনুসের আরেকটি মৌলিক অবদান হলো সামাজিক ব্যবসা বা "Social Business" ধারণা। তিনি বলেন, প্রচলিত ব্যবসা যেখানে মুনাফাকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে দেখে, সেখানে সামাজিক ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য থাকে সামাজিক সমস্যা সমাধান করা।
এই মডেলের মাধ্যমে এমন প্রতিষ্ঠান গড়া হয়, যা লাভ তো