
01/03/2025
সিয়াম কী ও কেন?
সিয়াম বা রোজা ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম। সিয়ামকে আমাদের দেশে রোজা বলা হয়ে থাকে ৷
রোজা ফারসি শব্দ, অর্থ উপবাস থাকা। সাওম বা সিয়াম শব্দের অর্থ বিরত থাকা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, পাপাচার ও কামাচার থেকে বিরত থাকাকে সাওম, সিয়াম বা রোজা বলে।
পবিত্র কুরআন ও হাদিসে সিয়ামের ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত উম্মতের উপর সিয়াম ফরজ করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ﴾ [البقرة: ١٨٣]
অর্থাৎ- “হে মু’মিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হলো, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা মোত্তাকি হতে পারো।” (সূরা আল বাকারাহ ২: আয়াত ১৮৩)
অন্য আয়াতে এরশাদ করেছেন-
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
অর্থাৎ- সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এই মাস পাবে, সে যেন এই মাসে রোজা রাখে। (সূরা আল বাকারাহ ২: আয়াত ১৮৫)
যদি সিয়াম এত গুরুত্বপূর্ণ না হতো, তাহলে আল্লাহ তা বান্দাদের উপর ফরজ করতেন না। হযরত রাসুল (সা.) বলেন: “যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের আশায় সিয়াম পালন করবে, তার পূর্ববর্তী পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন (মহান আল্লাহ বলেন), “রোজা আমার জন্য এবং আমি এর প্রতিদান।” (বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৪) অন্য ইবাদতের সাথে সিয়ামের পার্থক্য হলো- প্রত্যেক ইবাদতের পুরস্কার রয়েছে এবং তা আমলকারী ব্যক্তির আমলনামায় দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু সিয়াম এমন একটি ইবাদত, যার প্রতিদান আল্লাহ নিজেই। গুনাহগার ব্যক্তির জন্য সিয়াম গুনাহ মাফ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মোক্ষম সুযোগ । এ প্রসঙ্গে হযরত রাসুল (সা.) বলেন:
الصِّيَامُ جُنَّةٌ فَإِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ صَائِمًا فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَجْهَلْ فَإِنْ امْرُؤٌ قَاتَلَهُ أَوْ شَاتَمَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي صَائِمٌ إِنِّي صَائِمٌ
“রোজা (একটি) ঢাল, কাজেই তোমাদের যে কেউ রোজাদার হও, সে বাজে কথা বলবে না এবং বর্বরতার কাজ করবে না। যদি কোনো ব্যক্তি তাকে গালি দেয় অথবা কাটাকাটি, মারামারি করতে আসে, তবে সে যেন বলে, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার।” (বুখারী শরীফ)
ঢালসরূপ রোজার কারণে মানুষ জাহান্নামের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে পারে। প্রকৃতপক্ষে রোজা পালন করলে মানুষ নফসের কুচরিত্র, কামনা-বাসনা থেকে মুক্ত থাকতে পারে, ফলে ঐ ব্যক্তির চারিত্রিক উৎকর্ষতা সাধিত হয়। তখন আল্লাহ ঐ বান্দার উপর খুশি হন এবং জাহান্নামের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করেন এবং পাশাপাশি তাকে আনন্দিত করেন। হযরত রাসুল (সা.) বলেন:
“রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে- একটি যখন সে ইফতার করে এবং অপরটি যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
সিয়াম শুধুমাত্র খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করার নাম নয়; এটি আত্মশুদ্ধির একটি মাধ্যম। এটি আমাদের অন্তরকে শুদ্ধ করে, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য শেখায় এবং তাকওয়া অর্জনে সাহায্য করে। তাই আসুন, আমরা সিয়ামের প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করি এবং যথাযথভাবে পালন করি।