15/10/2025
আমার নিজ গ্রামের, পাশের বাড়ির ভাইরাল রিপন ভিডিওর অজানা গল্প।
☞ নেত্রকোনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বিশিউড়া গ্রামের রিপন মিয়া। প্রথমে যাকে রিপন ভিডিও নামেই চিনতো। রিপনের বাড়ির আমার বাড়ির পাশেই। আজকের এই রিপন মিয়া আমার চাচাতো ভাই মাসুদ এর হাত ধরেই, প্রথমে রিপন ভিডিও নামে সারা বাংলাদেশে পরিচিতি পায়। রিপন ছিল অশিক্ষিত যখন লাইভে আসতো মাসুদ কমেন্ট পড়ে দিতো কথার মাধ্যমে সে কমেন্টের রিপ্লে দিত। ওর যতগুলো ভাইরাল ছন্দ সবগুলো মাসুদ নিজেই তাকে বানিয়ে দিতো। যেমন বন্ধু তুমি একা হলে আমায় দিও ডাক, আম চুক্কা জাম চুক্কা, হাই ফ্রেন্ড আই এম রিপন ভিডিও, রিপন ভিডিও থেকে আজ সে রিপন মিয়া নামে বেশ পরিচিত।
শুরুতে রিপন ভিডিও নামে মাসুদ তার একটি ফেইসবুক পেইজ খুলেছিল। এক সময় সেই পেইজে ২০ লক্ষ পরিবারের সদস্যে পরিণত হয়। যেটা মনিটাইজেশন পাওয়ার আগেই মাসুদের ফেইসবুক আইডি সহ ডিজেবল হয়ে যায়। সেই আইডি আর উদ্ধার হয়নি। মাসুদ নতুন করে আইডি খুলে একটি ফেইসবুক আইডি ব্যবহার করছে। রিপন পড়াশোনা করেনি। অনেক সহজ সরল ছিল। যে যাই বলতো সেটার পিছনেই চলে যেত। আইডি ডিজেবল হওয়ার পর মাসুদ আর সময় দেয়নি তাকে।
অনেক আগে থেকে ছোট ছোট ভিডিও তৈরির কাজ শুরু করলেও সম্প্রতি তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। বিজ্ঞাপন, সিনেমার প্রচারণাসহ বিভিন্ন কাজেও যুক্ত হতে দেখা গেছে রিপন মিয়াকে। তার এখন বেশ কয়েকটি পেইজ রয়েছে। যেগুলোতে ভিডিও আপলোড করলে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হচ্ছে। পেইজ দিয়ে টাকাও ইনকাম হচ্ছে বেশ ভাল। যেটা দিয়ে চাইলেই জীবনের চাকা ঘুরাতে পারতো রিপন মিয়ার।
কিন্ত হতাশার বিষয় পেইজগুলোর কোনটাই তার নিয়ন্ত্রণে নেই।রিপন সহজ সরল ও অশিক্ষিত। তার সরলতাকে কাজে লাগিয়ে তার পেইজের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অন্য কয়েকজন লোক। রিপন মিয়া স্বীকার করেছে পেইজ অন্য কেউ চালায় কিন্ত কে চালায় এটা সে স্পষ্ট করেনি। পেইজের ইনকাম যাই হোক তাকে প্রতি মাসে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তাকে দিয়ে ভিডিও করাচ্ছে। যেহেতু রিপন অশিক্ষিত সে যাই পাই তা নিয়ে সে সন্তুষ্টি থাকে।
রিপনের পেইজের যে পরিমাণ ইনকাম এই টাকা যদি রিপন মিয়া পেত তাহলে তার আর মিস্ত্রির কাজ করা লাগতোনা। এখনো সে অন্যের বাড়িতে মিস্ত্রির কাজ করে। তাকে দিয়ে অনেকেই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। কিন্ত রিপন মিয়া ও তার পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি। তার মা-বাবা এখনো মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করে খায়।
রিপন মিয়াকে নিয়ে ইদানীং নিউজ হয়েছে তার মা বাবাকে সে দেখাশোনা করেনা। রিপনের অর্থনৈতিক অবস্তাই খুব খারাপ এই অবস্থায় হয়তো তার মা বাবাকে দেখাশোনা করতে পারেনা। এটা তার তার মা বাবা সঠিক কথাই বলেছে। দূর থেকে যারা মনে করেন রিপনের ইনকাম অনেক বিষয়টা আসলে এমন নয়। তার সকল পেইজের ইনকামের নামে মাত্র একটা ইনকাম সে পায়। যেই মুহুর্ত থেকে পেইজগুলো দিয়ে ইনকাম শুরু হয়েছে সব টাকা যদি রিপনে পেত তাহলে তার বাড়ি গাড়ির কিছুই অভাব হতনা। নিউজে দেখলাম রিপন বলছে সে বিয়া করেনি। এটা সে মিথ্যা কথা বলেছে। রিপনের বউ বাচ্চা সহ তার আলাদা সংসার রয়েছে।
গত কয়েকদিন আগে কয়েকজন টিভি সাংবাদিক অনুমতি ছাড়া পরিবারের সদস্যদের ভিডিও ধারণ করায় তিনি মর্মাহত হয়েছে। এটা নিয়ে যে সে ফেইসবুক স্টেটাস দিয়েছে এটা তার হাতের লিখা স্টেটাস না। তার পেইজ যারা চালায় এই লিখাটা মূলতো তারাই লিখেছে। কারণ সে লিখতে পারেনা। এত সুন্দর ভাষা ব্যবহার করে এই লিখাটা লিখার সক্ষমতা তার নেই।
যারা রিপনের পেইজগুলো চালাচ্ছে তারা রিপনকে মিডিয়ার আড়ালে রেখে তাদের ইনকামের পথ পরিস্কার রাখতে চায়। মিডিয়ার যদি জেনে যায় রিপন তার ফেইসবুক নিজে চালায়না, ফেইসবুকের ইনকাম সবটুকু সে পায়না তবে তাদের ইনকামের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তারা চায় রিপনের পেইজ অন্য কেউ চালায় এটা তার ফ্যান ফলোয়াররা না জানুক। তারা রিপনকেও এমনভাবে ব্রেইন ওয়াশ করেছে যে এই বিষয়ে রিপনও কারো কাছেই মুখ খুলতে চায়না। আমার মনে হয়েছে রিপন তাদের কাছে জিম্মি অবস্থায় আছে।
রিপনের যে কোন বিষয়ে লক্ষ্য করেছি দেশের বড় বড় কন্টেইন ক্রিয়েটররা সজাগ দৃষ্টি রাখেন। রিপন ইস্যুতে বেশ সরব থাকেন। আশা করি রিপনের পেইজ থেকে প্রাপ্য ইনকামটা রিপন যাতে পায় সেই ব্যবস্থা করবেন। রিপনের অভাবগ্রস্থ মা বাবা যাতে রিপনের ইনকামের টাকা দিয়ে অভাব মোচন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দিবেন,যাতে ওর মা-বাবা ও স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে।
©️copy post