19/08/2024
রাখীবন্ধন ও মুসলিম সমাজ-
👇👇👇👇👇👇👇👇👇
রাখি বন্ধন একটি হিন্দু ধর্মীয় আচার প্রক্রিয়া তথা হিন্দু ধর্মীয় সাংস্কৃতিক উৎসব। মূলত রাখি বন্ধন ধর্মীয় আচার প্রক্রিয়া শুরু হয় মহাভারত থেকে। মহাভারতের এক যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ তার হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং সেখান থেকে রক্তক্ষরণ করলে পঞ্চ পান্ডবের স্ত্রী দ্রৌপদী তা দেখে তার শাড়ির আঁচল থেকে এক টুকরো অংশ কেটে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। সেই বিষয়টাকে কেন্দ্র করে হিন্দু শাস্ত্র মতে, হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে শ্রাবণ মাসের শুক্লা পক্ষের পূর্ণিমার তিথিতে বোনেরা নতুন পোশাক পরিহিতা হয়ে সিঁদুর, চন্দনের এবং চালের মিশ্রিত তিলক ভাইয়ের কপালে কেটে ,ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতী করে ভাইয়ের হাতে রাখি পরিয়ে দেয়। ভাই বোনের মঙ্গল কামনায় এই অনুষ্ঠান ধর্মীয় শাস্ত্র মতে সূচিত হয়ে থাকে। যার মাধ্যমে ভাই ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে বোনকে পরবর্তী সময়ের জন্য রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি নেন।
প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, পরবর্তীতে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের গতি আনতে এবং বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,জাতি বর্ণ নির্বিশেষে রাখি বন্ধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে শক্তিশালী করার জন্য এই রাখি বন্ধন তৎকালীন সময়ের জন্য বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের অন্যতম প্রক্রিয়া হিসেবে পালিত হয়েছিল ।
কিন্তু আজকের দিনে যে রাখি বন্ধন হয়ে থাকে তা মূলত শ্রাবণের শুক্লাপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে হিন্দু সংস্কৃতির কৃষ্টি কালচারের পরম্পরা হিসেবে এই উৎসব পালিত হয়ে থাকে।
তাই এ বিষয়ে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে বর্তমান রাখি বন্ধন উৎসব একটি সম্পূর্ণরূপে হিন্দু সাংস্কৃতির ধর্মীয় অনুষ্ঠান তথা উৎসব। তাই আজকের দিনে কোন ভাবে বলার প্রশ্ন নেই যে, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে সামনে রেখে আজকের এই রাখি বন্ধন অনুষ্ঠান।
আজকের রাখি বন্ধনের প্রেক্ষাপটে যে সকল মুসলিম সমাজের মানুষজন অজ্ঞানে বা সজ্ঞানে রাখি বন্ধন নিজেদের মধ্যে পালন করে থাকে ।সে বিষয়ে খোলা চোখে দু একটি কয়েকটি কথা একান্ত বলার প্রয়োজন মনে করছি ।আর তা হল , আল কুরআনুল কারীম অনুসারে প্রত্যেকটি মুসলিম নরনারী দ্বীনি ভাই বোন। সেই হিসেবে একে অপরের রক্ষা করা বিপদে পাশে দাঁড়ানো একটা দ্বীনি দায়িত্ব। এ বিষয়ে কোরআনুল কারীম ও হাদিসের তথা সুন্নার আলোকে অনেক কিছুই বর্তমান উল্লেখ্য যে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তথা ইবাদত। যখন কোন মুসলিমের হাত থেকে কথা থেকে অন্য কেউ যদি নিরাপদ না থাকে সে মুসলিম হতে পারে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর সুন্নাহ অনুযায়ী প্রতিটি ভাই তার বোনের ঢাল স্বরূপ। বোন নিরাপত্তার দায়িত্ব ভাইয়ের ওপর বর্তায়। এমনকি বোন যদি অশালীন পোশাক পরে তার দায়িত্বও ভাইয়ের এবং অশালীন পোশাক তথা শরীয়ত সম্মত পোশাক পরিধান না করে, আর সেই পোশাক পরিধানের কারণে ভাইকে বিশেষ বিচারের দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। বোন যখন কোন কাজে বাইরে বের হবে তার রাহবার হিসেবে ভাইকে তার সাথে থাকতে হবে। পিতার বর্তমানে অথবা অবর্তমানে ভাই তার বোনকে সম্পূর্ণরূপে দেখভাল করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পিতার সম্পত্তির বোনের ভাগের দ্বিগুন ভাইকে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন বা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং ইসলামিক দৃষ্টিতে ভাই বোনের সম্পর্ক এক অটুট আতিঁক বন্ধনের সম্পর্ক। যে সম্পর্ক জন্মের পর থেকে শুরু হয় আর মৃত্যুর পরেও সেই সম্পর্কের আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে তার বৃত্তসম্পন্ন করে। বোনের প্রতি ভাই তার দায়িত্ব পালন করেছে কিনা এ বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে ভাইকে তার কৈফিয়ত দিতে হবে। উল্লেখ্য যে ,প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির তার দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহপাকের জিজ্ঞাসিত হবেন।তাই ইসলামিক কৃষ্টি কালচার অনুযায়ী ভাই বোনের সম্পর্কের মধ্যে ভাইফোঁটা ,রাখি বন্ধন এর মত কোন লোকপ্রিয় অনুষ্ঠান সর্বস্ব কোন কালচার বা প্রথা নেই। অপরদিকে যে ব্যক্তি যে মুসলিম নারী পুরুষ বা মুসলিম সমাজে মানুষজন যে অন্য ধর্মের ,অন্য কোন অমুসলিম ব্যক্তির ধর্মীয় বা ব্যক্তির অনুষ্ঠান ,কালচার বা চিন্তা ভাবনার অনুসারী হবে বা পালন করবে তাকে সেই ধর্মের অনুসারী বা সেই ব্যক্তির সাথী হিসাবে সেই বিশেষ তথা শেষ ও চূড়ান্ত বিচারের দিনে মহান বিচারক আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিচারের সামনে হাজির হতে হবে। সুতরাং সেই অর্থে মুসলিমদের রাখি বন্ধন অনুষ্ঠান পালন করা একটি শিরক বা গৃহীত অপরাধ। হে রাব্বুল আলামিন, হে মহান স্রষ্টা, অত্র বিষয়ে সবাইকে বোঝার ও মেনে চলার করার মত জ্ঞান ও বিবেক দান করুন আমীন।