27/06/2024
– “ যেদিন প্রতিষ্ঠিত ছেলেকে বিয়ে না করে বিয়ের সব সোনাদানা,টাকা পয়সা নিয়ে বেকার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম বাস্তবতা কতো কঠিন,মানুষ কতোটা খারাপ। ”
বাবা মায়ের পছন্দ করা সরকারি চাকরিজীবী ছেলেকে বিয়ে না করে যেদিন আমি আমার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে পালিয়ে যাই সেদিন আমার বাবা লজ্জায়,অপমানে স্ট্রোক করে। কিন্তু আমি সেটা জানতে পারি না। কারণ আমি তখন আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে নতুন জীবনে ব্যস্ত ছিলাম। আমি সেদিন বুঝতে পারিনি আমার বয়ফ্রেন্ড ভালোবাসার নামে আমাকে এভাবে ভোগ করবে।
দশদিন আমি আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ছিলাম। এই দশদিনে সে আমার জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছে। প্রথম দিন তাকে যখন বললাম,
– “ চলো আমরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করি। বিয়ের আগে এসব ঠিক না। আমি তো তোমারই,তাহলে এতো তাড়া কিসের তোমার? এমন নাতো আমাকে তোমার কাছ থেকে কেউ কেঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি কিন্তু বিলাসিতার জীবন ছেড়ে তোমার কাছে চলে এসেছি,আর তুমি বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবে না? ”
তখন আমার বয়ফ্রেন্ড হাসান কিছুটা অভিমান করে বলেছিলো,
– “ আগেও তুমি এমন কথা বলেছো। দুই বছরের রিলেশন ছিলো আমাদের অথচ এই দুই বছরে আমি একটাবারও তোমার নরম ঠোঁঠের স্পর্শ নিতে পারিনি। সবাই কতো আপডেট হয়েছে। এখনকার কার প্রেমিক প্রেমিকারা রিলেশন হতে না হতেই কতো কি করে আর আমাকে তুমি তোমার কাছেও ঘেষতে দিতে না। কিন্তু এখনতো আমরা দুজন বিয়ে করবো তাহলে কেনো আমাকে কাছে টানছো না। আসলে তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না। তাই এমন করছো। ভাবছো আমি তোমাকে ধোঁকা দিবো।ওকে সমস্যা নেই বিয়ের আগে আমি তোমাকে ছুঁয়েও দেখবো না। ”
আমি বললাম,
– “ বিশ্বাস না করলে সবকিছু ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসতাম না। তোমাকে বিশ্বাস করি বলেই নিজের বাবা মায়ের কথা না ভেবে তোমার সাথে এভাবে চলে এসেছি। ”
– “ তাহলে আমি যেটা চাইছি সেটা দিতে তুমি এতো বাহানা করছো কেনো? দুদিন পরে তো আমরা বিয়ে করবোই। আমার এই দেরিটা সহ্য হচ্ছে না। তোমাকে এতোটা একা পেয়েও একটু ভালোবাসতে পারছি না এটা ভাবতেই পারি না আমি। ”
– “ ভালোবাসার প্রমাণ দেওয়ার জন্য কিংবা আমি তোমাকে বিশ্বাস করি এসব প্রমাণ করার জন্য তোমার ইচ্ছেটা পূরণ করতে হবে তাই তো? ঠিক আছে তুমি যা চাও তাই করবো। তবে কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না। সব আপনকে পর করেছি তোমার জন্য। তুমি যদি আমাকে পর করে দাও তাহলে মৃত্যু ছাড়া কোনো পথ থাকবে না আমার। ”
'
'
হাসান আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আমার সবকিছুই নিয়ে সে আমাকে ছেড়ে চলে যায়। এই দশটা দিন আমি তাকে বিশ্বাস করে নিজের সবকিছু সপে দিয়েছিলাম কিন্তু সে আমার বিশ্বাসটাকে রক্ষা করেনি,আমাকে বিয়ে না করে আমাকে একা রেখে সেদিন চলে গিয়েছিলো।
আমি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় অনেক টাকা নিয়ে এসেছিলাম,বিয়ের গহনা গুলো আমার সাথেই ছিলো সবকিছুই হাসান নিয়ে গিয়েছে। সেদিন আমি বুঝতে পারি বাস্তবতা কতোটা নিষ্ঠুর। মানুষ যে এতোটা লোভী হতে পারো কখনো জানা ছিলো না আমার।
যে মেয়েটা নিজের ভবিষ্যৎ সুখের জীবন ছেড়ে শুধুমাত্র তাকে বিশ্বাস করে তাঁর কোনো চাকরি না থাকা সত্ত্বেও তাঁর কাছে চলে এসেছিলো সেই মেয়েটাকে কিভাবে পারলো এতো বড় ধোঁকা দিতে? মানুষদের দ্বারা সবকিছুই সম্ভব। কিছু মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য পৃৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম কাজটা করতেও কোনো দ্বিধাবোধ করবে না
'
'
আমি নিজেকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কারণ বেঁচে থাকার মতো কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই আমার। বাবা মায়ের কাছে যাওয়ার সাহস নেই,নিজেকে এতোটাই অপবিত্র করে ফেলেছি যে কোনো মানুষের সংস্পর্শ পাওয়ার অধিকার আমি রাখি না। মৃত্যুই আমার জন্য একমাত্র শান্তির পথ।
রেললাইন এর মাঝখানে আমি দাঁড়িয়ে আছি,গন্তব্য মৃত্যু। আর কিছুক্ষণ পরেই হয়তো এই পৃৃথিবী থেকে আরও একটি প্রাণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আমি অপেক্ষায় থাকি মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়ার জন্য কিন্তু আমি পারি না।ট্রেন আসার শব্দ শুনেই আমি ভয়ে নিচে চলে যাই। আমি মৃত্যুকে ভয় পাই। আমি বুঝলাম আ'ত্মহত্যা জিনিসটা এতো সহজ না,চাইলেও কেউ আ'ত্মহত্যা করতে পারে না। এটার জন্য প্রচণ্ড সাহস প্রয়োজন যেটা আমার নেই। কিন্তু আমাকে এই সাহসটা অর্জন করতে হবে। কারণ আমার বেঁচে থাকার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে।আমাকে মরতে হবে যেভাবেই হোক।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠে। আমি বুঝতে পারলাম না এই অসময়ে কে ফোন দিবে। এই নাম্বারটা তো কেউ জানে না। এমনকি বাবা মাও না। মৃত্যুর আগে কারো সাথে কথা বলা উচিত না,তাহলে এই পৃৃথিবীর মায়ায় পরে পিছিয়ে যেতে পারি আমি তাই ফোনটা ধরলাম না। কিন্তু যখন বারবার ফোনটা দিয়েই যাচ্ছে তখন বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করি।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ধমকের শব্দ শুনতে পাই,
– “ কিরে এতোক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছি ধরছিস না কেনো? তুই তো আমাকে কথাটা বলতে পারতি তোর বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে যাবি। তোর বাবা স্ট্রোক করেছে যেদিন তুই পালিয়ে যাস। তবে এখন সুস্থ্য আছেন। তোর নাম্বারে কতোবার আমি ফোন দিয়েছি তুই জানিস না। পরে মনে হলো এই নাম্বারটাতে ফোন দেই। আমাকে শুনতে পাচ্ছিস তো। আমি তোর ফুফাতো বোন বলছি,ফারজানা। ”
– “ আমি শেষ হয়ে গেছিরে। আমি আর বাঁচতে চাই না। ”
– “ কি বলছিস। কি হয়েছে তোর? তুই কোথায় বল প্লিজ। ”
– “ আমি ঢাকাতে আছি। ”
– “ কোথায় বল প্লিজ। ”
– “ তার আগে বল তুই বাবা মাকে আমার কথা জানাবি না। তারা এমনিতেই আমার জন্য অনেক কেঁদেছে। আমি চাই না আমার ধ্বংস হওয়ার কথা শুনে আবার তারা কাঁদুক। ”
– “ জানাবো না,তবুও তুই এমন করিস না বোন। তুই বল তুই কোথায়। তুই আমার কাছে থাকবি কেউ জানতে পারবে না। ”
আমি ফারজানার সাথে তাঁর বাসায় চলে যাই। আমি অনেকটা চিন্তামুক্ত হলাম যখন জানলাম ফারজানা আমার কথাটা কারো কাছে বলবে না,নিজের মাঝেই গোপন রাখবে। আমি আমার বোনকে সব খুলে বলি,সে আমার এভাবে ধ্বংস হওয়ার কথা শুনে চোখ ভিজিয়ে ফেলে। আমিও সেদিন আমার বোনকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করেছিলাম,মানুষ এমন করে কেনো? তাদের কাছে কি ভালোবাসাটা খেলা মনে হয়? মানুষকে খুব বেশি বিশ্বাস করতেই নেই,খুব বিশ্বাসি মানুষগুলোই আজ বা কাল খুব যত্ন করে কষ্টের সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়ে চলে যায়।
'
'
আমি ফারজানার সাথে দুইমাস থাকার পর হঠাৎ করেই একদিন সে বললো, তাকে বাসায় যেতে হবে, সাথে আমাকেও। আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। পরে যখন সে বললো, তাঁর ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে, কয়েকদিন পরেই বিয়ে তখন তাঁর বাসায় যাওয়ার কারণটা বুঝতে পারলাম।
তবে আমার তাঁর বাসায় একটুও যেতে ইচ্ছে করছিলো না,কারণ আমি চাই না আমাকে দেখে কেউ দুঃখ পাক। কেউ জানুক আমি ভালো থাকার জন্য আপন মানুষগুলোকে ছেড়ে যার হাত ধরে চলে গিয়েছিলাম সেই মানুষটার সাথে আমি সুখী হতে পারিনি। সেই মানুষটা আমাকে ভোগ করে চলে গিয়েছিলো বিপদের মুখে। আমি আমার কান্নাটা কাউকে দেখাতে চাই না। আমি অন্ধকারে একা একাই কেঁদে যেতে চাই আজীবন। এটাই আমার প্রাপ্য।আমি এমন মানুষদের কষ্ট দিয়েছি যারা আমাকে সবসময় ভালোবেসে আগলে রাখতো কিন্তু তাদের জন্য আমি আমার নোংরা ভালোবাসাটাকে বিসর্জন দিতে পারিনি।
আমি ফারজানার সাথে না গিয়ে পারলাম না। কারণ এই অপরিচিত ঢাকা শহরে কার কাছে কোথায় থাকবো আমি? এমনিতেই মেয়ে মানুষ,কেউ সুযোগ পেলে হয়তো কুকুরের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে তাই বাধ্য হয়ে আমি ফারজানার সাথে চলে গেলাম। আমি জানি না ভবিষ্যতে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে। তবে খুব খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আমি।
ফারজানাদের বাসায় গিয়ে এরকম একটা ধাক্কা খাবো কখনো বুঝতে পারিনি। আমার সামনে সেই বিশ্বাসঘাতক, নোংরা কুকুরটা দাঁড়িয়ে আছে যেই কুকুরটা দশটা দিন আমাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছিলো। আমার ইচ্ছে করছিলো এখনি ওর গলার টিপে ওকে খু'ন করে ফেলি। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য বাঁধার কারণে সেটা পারলাম না। এই বিশ্বাসঘাতক কুকুরটার বোনের সাথে ফারজানার ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।
চলবে....
--------------------------
গল্পঃ_ বিশ্বাস
পর্ব - [ ০১ ] সবাই ফলো দিয়ে পাশে থাকবেন
নেক্সট পার্টগুলো সবার আগে পেতে আমায় ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ🥰