25/06/2025
ইতিহাসের পাতায় দাঁইহাটের চট্টোরাজপাড়ায় শাস্ত্রজ্ঞ নন্দকিশোর বিদ্যালঙ্কার এঁর জগন্নাথ মন্দির।🌼
"বারো ঘাট তেরো হাট তিন চন্ডী তিনেশ্বর। ইহা যে জানে তার ইন্দ্রানী তে ঘর।" আবুল ফজলের আইনি -ই -আকবরী গ্রন্থে যে ইন্দ্রানী পরগনার উল্লেখ পাওয়া যায় তা গড়ে উঠেছিল প্রাচীন দণ্ডভুক্তির অন্তর্গত দাঁইহাট কে ঘিরেই। এই ইন্দ্রানী ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী। তিন শতবর্ষ পূর্বে কাশীরাম দাস মহাশয় তাঁর আদি ও স্বর্গারোহণ পর্বে লিখে গেছেন "ইন্দ্রানী নামেতে দেশ পূর্বাপর স্থিতি। দ্বাদশ তীর্থেতে বৈসে ভাগীরথী।।" কিন্তু এখন সেই তীর্থের ঘাট অত্যন্ত বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে। ভাগীরথী সরে গেছে দেড় মাইল দূরে। প্রাচীন এই ইন্দ্রানীর ইন্দ্রেশ্বর শিবের মন্দির কে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সঙ্গে তুলনা করা হতো। পাথর নির্মিত সেই মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আছে। এই ইন্দ্রানী শিক্ষা দীক্ষা, ধর্ম কর্মে অনেক এগিয়ে ছিল। এখানকারই ভূমিপুত্র শাস্ত্রজ্ঞ নন্দকিশোর বিদ্যালঙ্কার বেনারস থেকে তন্ত্র শাস্ত্রে পাঠ গ্রহণের পর নিজের বসত ভিটেয় বসে মাতৃকা শক্তির আরাধনা করেন। পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে সিদ্ধিলাভ এরপর স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে নিজ বাসভবন লাগোয়া একখণ্ড জমির উপর এক দেবভূমি গড়ে তোলেন। যেখানে একই আঙিনায় বিশালাক্ষীর শিখর মন্দির, রামচন্দ্রের জন্য দালান মন্দির,গোপীনাথ জিউর জন্য অন্য মন্দির, প্রভু জগন্নাথ দেবের জন্য চোখ জুড়ানো জোড় বাংলা মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। চৈতন্য উত্তরকালে এতদঞ্চলে ধর্ম আন্দোলনে তান্ত্রিক সমাজ ও শাক্ত ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের অনেক ক্ষেত্রেই মতানৈক্য দেখা গিয়েছিল। এই দুই বিপরীত ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরোধ কখনো চরমে উঠত। দাঁইহাট এর এই সুপন্ডিত অনুধাবন করেছিলেন এ শুধু নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব লড়াইয়ের জন্য লড়াই। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শাক্ত ও বৈষ্ণবের মিলনক্ষেত্র আনুমানিক 1738 খ্রিস্টাব্দে । আনুমানিক 1741 খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান রাজ ত্রিলোক চাঁদ মহতাব এই পুণ্য ভূমির চারধাম দর্শনে মুগ্ধ হয়ে দেবদেবীর উদ্দেশ্যে যেমন ভূ সম্পত্তি দান করেছিলেন তেমনি আলীবর্দী খাঁ চারধাম এর সুরক্ষা ব্যবস্থা করেছিলেন। যদিও বর্তমানে জগন্নাথ দেবের প্রাচীন জোড়বাংলা মন্দিরটি অত্যন্ত ভগ্ন হওয়ায় ২০২১ খ্রিস্টাব্দে (গত বছর) নব আঙ্গিকে পাঁচ চূড়া বিশিষ্ট মন্দির নির্মিত হয়েছে। এখানকার জগন্নাথের গঠন শৈলী পুরীর জগন্নাথের মতো নয়, চট্টগ্রাম ঘরানার। রথযাত্রা তিথিতে জগন্নাথ দেবের বিশেষ পূজা অর্চনা, আরতি ও ভোগ নিবেদন করা হয়। যদিও এখানকার প্রভুর রথ হয় না। আজ রথযাত্রার পুণ্য তিথিতে অর্থাৎ নব আঙ্গিকে মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রথম বর্ষ পূর্তিতে আমাদের প্রার্থনা এই দিব্য ত্রয়ী সহ দেবভূমির সকল দেব- দেবীর আশীর্বাদ, দয়া, দাক্ষিণ্য ও কৃপা আমাদের উপর বর্ষিত হোক।জগন্নাথের প্রনাম মন্ত্র -"নীলাচল নিবাসায় নিত্যায় পরমাত্মনে। বলভদ্র -সুভদ্রাভ্যাং জগন্নাথায় তে নমঃ।।" দিব্যত্রয়ীর চরণে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে আভূমি লুণ্ঠিত প্রণাম নিবেদন করি।
প্রাণের শহর দাঁইহাট-Dainhat #প্রাণেরশহরদাঁইহাট