
08/03/2025
*হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনী*
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইসলামের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা শহরের 'আবু তালিব' পরিবারের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা, 'আব্দুল্লাহ' ছিলেন মক্কার এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, এবং তাঁর মা, 'আমিনা' ছিলেন মক্কার এক সৎ ও পরম শুভাকাঙ্ক্ষী নারী।
◆◆◆শিশু অবস্থায় পিতৃ-মাতৃহীন◆◆◆
হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মের পর অল্প বয়সেই পিতাহীন হন। তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ’র মৃত্যুর পর, তাঁর মা আমিনা তাঁকে লালন-পালন করেন। ৬ বছর বয়সে তিনি তাঁর মাকেও হারান। এরপর তাঁর দাদা 'আবু মুতালিব' তাঁকে লালন-পালন করেন। কিছুদিন পর দাদাও মৃত্যুবরণ করলে, তাঁর চাচা 'আবু তালিব' তাঁকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালন করেন।
◆◆◆যুবক বয়সে◆◆◆
হযরত মুহাম্মদ (সা.) তরুণ বয়সে খুবই বিশ্বস্ত, সত্যবাদী ও পরিশ্রমী ছিলেন। তিনি "আল-আমিন" (বিশ্বস্ত) উপাধি অর্জন করেন তাঁর চরিত্রের জন্য। একবার তিনি মক্কা শহরের একজন ধনী মহিলা, খাদীজা (রা.)-এর ব্যবসার জন্য সঙ্গী হিসেবে কাজ করেন। খাদীজা (রা.) তাঁর সততা ও দক্ষতা দেখে তাঁকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করেন। তাঁরা একসাথে সুখী জীবন কাটান এবং তাদের চারটি কন্যা ও দুইটি পুত্র সন্তান হয়।
◆◆◆নবুওতের আগমন◆◆◆
৪০ বছর বয়সে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর জীবন ও সৃষ্টির গভীরতা সম্পর্কে চিন্তা করতে থাকেন। তিনি মক্কার 'গার হেরা' (হেরা গুহা) তে দীর্ঘ সময় একাকী থাকতেন। ৬১০ খ্রিস্টাব্দে, এই গুহায় তিনি প্রথম বার্তা পান আল্লাহর কাছ থেকে, যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর কাছে এসে বলে, *"ইকরা" (পড়ো),* এই আয়াতটি দিয়ে ইসলামের সূচনা হয়। এটি ছিল প্রথম ওহি (প্রকাশিত নির্দেশ)।
◆◆◆প্রথম দ্বীনের প্রচার◆◆◆
মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে শুরু করেন। তিনি এক ঈশ্বর (আল্লাহ) এর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর বার্তা ছিল মানবজাতির প্রতি শান্তি, সদ্ব্যবহার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং আল্লাহর একত্বের প্রতি বিশ্বাস। প্রথম দিকে, তাঁর অনুসারী ছিলেন শুধুমাত্র কয়েকজন তাঁর পরিবারের সদস্য এবং বন্ধু, তবে ধীরে ধীরে মক্কার মধ্যে এটি বিস্তার লাভ করে।
◆◆◆প্রতিরোধ ও তীব্র প্রতিরোধ◆◆◆
হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন ইসলাম প্রচার শুরু করেন, তখন মক্কার প্রচলিত পূজাপ্রথা ও সামাজিক অবস্থার সঙ্গে তাঁর বার্তা সাংঘর্ষিক ছিল। মক্কার নেতারা, যাঁরা মক্কার অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতা শাসন করতেন, তাঁরা ইসলামকে হুমকি মনে করলেন এবং কঠোর প্রতিরোধ শুরু করলেন। তাঁরা মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর অনুসারীদের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতে শুরু করেন। কিন্তু, তিনি তাঁর সঠিক পথ থেকে সরে যাননি।
◆◆◆মদিনায় হিজরত◆◆◆
হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর অনুসারীরা যখন মক্কাতে অত্যাচারের শিকার হতে থাকেন, তখন আল্লাহর নির্দেশে তিনি মদিনায় (যা তখন 'যাথরিব' নামে পরিচিত ছিল) হিজরত করেন। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় যাত্রার পর, মদিনা মুসলিমদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। এখানে, তিনি একটি শক্তিশালী মুসলিম সমাজ গঠন করতে সক্ষম হন।
◆◆◆ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও যুদ্ধ◆◆◆
মদিনায় হিজরতের পর, মুহাম্মদ (সা.) ইসলাম প্রচার এবং মুসলিমদের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দেন। ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথে তাঁকে বিভিন্ন যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়, যেমন *বদর, উহুদ এবং খন্দক* যুদ্ধ। এগুলিতে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে তিনি সাহসিকতা এবং নেতৃত্ব দেখান, কিন্তু কিছু যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী হলেও কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল।
◆◆◆হজ্ব পালন◆◆◆
১০ হিজরি সনে (৬৩২ খ্রিস্টাব্দ), তিনি শেষবারের মতো মক্কাতে হজ্ব পালন করেন। তাঁর এই হজ্বে তিনি মুসলমানদের জন্য একটি ঐতিহাসিক বক্তৃতা দেন, যাকে *"হুজ্জাতুল বিদা"* বা বিদায়ী ভাষণ বলা হয়। এতে তিনি ইসলামের মূল নীতিগুলি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং মানুষের মধ্যে সমতা, ন্যায়, এবং সহানুভূতির কথা বলেন।
◆◆◆নবীজির মৃত্যু◆◆◆
হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে, ৬৩ বছর বয়সে, মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর, ইসলামের বার্তা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং এটি দ্রুত বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মে পরিণত হয়।
◆◆◆হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা ও অবদান◆◆◆
হযরত মুহাম্মদ (সা.) শুধুমাত্র ধর্মীয় নেতা ছিলেন না, তিনি সামাজিক, রাজনৈতিক, এবং নৈতিক জীবনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর জীবন ও শিক্ষা মানবতার জন্য এক অনুপ্রেরণা। তিনি সকল মানুষের জন্য ন্যায়ের, সহানুভূতির, এবং মানবাধিকার রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর শিক্ষা ছিল শান্তি, সমতা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা।
◆◆◆উপসংহার◆◆◆
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন থেকে আমাদের জন্য অনেক মূল্যবান শিক্ষা রয়েছে। তিনি এক পৃথিবীজুড়ে শান্তির, ন্যায়ের, এবং মানবতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত। তাঁর জীবন ছিল একটি পরিপূর্ণ উদাহরণ, যা মানুষের জন্য সবদিক থেকেই পথপ্রদর্শক।