21/10/2024
ফ্যাসিস্ট, দুর্নীতিবাজ ও গণহত্যায় জড়িতদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা এবং সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচনব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে গোলটেবিল বৈঠক
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর
২১ অক্টোবর’২৪, সোমবার, সকাল ১০টা
শহীদ ডা: শামসুল আলম খান মিলন সভাকক্ষ, বিএমএ ভবন, সেগুবাগিচা, ঢাকা।
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসুলিহিল কারীম, আম্মাবাদ- হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে একটি সফল ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসকের পতন পরবর্তী দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি ও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম বিষয়ে আলোচনা এবং বিশেষকরে ফ্যাসিস্ট, দুর্নীতিবাজ ও গণহত্যায় জড়িতদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা এবং সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচনব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে আয়োজিত আজকের গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত সম্মানিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিধ, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সম্মানিত নেতৃবৃন্দ!
শুরুতেই জুলাই বিপ্লব এবং ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে যেসব ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, আহত হয়েছেন, প্রিয়জন হারিয়েছেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা ও সহমর্মিতা জানাচ্ছি। জাতির এই গৌরবমণ্ডিত আন্দোলনে যারা যেভাবেই অংশ নিয়েছেন তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। শোকাহত পরিবার পরিজনের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গত ৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব নোভেল জয়ী ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ধারাবাহিক ভূমিকা পালনকারী এবং ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশ ও জনগণের কল্যাণে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি এবং অর্থনীতি পুনর্গঠনে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা করে যেতে চাই।
সে ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দেশের শান্তিকামী জনগণ এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
সম্মানিত নেতৃবৃন্দ!
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস গত ১৮ আগস্ট বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, পাঁচটি খাতে সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবেন।
পরবর্তীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুই দফায় মোট ১০ টি প্রতিষ্ঠান সংস্কারের জন্য ১০টি কমিশন গঠন করে। আমরাও মনে করি, এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। কারণ, বিগত সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব প্রতিষ্ঠানগুলো কতদিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করবে, তা নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন।
অতএব, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের সংস্কার কার্যক্রমের ধরণ ও প্রক্রিয়া কি হবে এবং কতদিনের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে, তা অতিদ্রুত প্রকাশ করবে এবং জাতীয় নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।
সম্মানিত নেতৃবৃন্দ!
আপনারা জানেন পতিত ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ৩টি ভুয়া জাতীয় নির্বাচন করেছে। এসব একতরফা, ভুয়া, পাতানো ও ডামী নির্বাচনের মাধ্যমে তারা তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করেছে। যারা তাদের এসব অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচনে সহযোগিতা করে আওয়ামী লীগকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছে, তারাও সমান অপরাধী।
অতএব, ৩টি অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনাকারী ৩টি নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা তাদের অবৈধ কাজের কুশিলব ছিল, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ অবৈধ নির্বাচনের সাহস না করে।
সম্মানিত নেতৃবৃন্দ!
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বর ও নৃশংস আওয়ামী দুঃশাসন উৎখাতের সংগ্রামের সূচনা করেছে আমাদের গর্ব শিক্ষার্থী সমাজ। তাদের অসীম সাহস, অকাতরে জীবনদান, সীমাহীন ত্যাগ ও বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব জাতিকে এক দানবীয় শক্তির কবল থেকে মুক্ত করেছে। আমাদের অকুতোভয় দামাল সন্তানেরা শুধু ক্ষমতার হাতবদলের জন্য এতো জীবন দেয়নি, এতো রক্ত ঝরায়নি। আমরা তাদের চোখের আকুতি, মুখের ভাষা এবং দেয়ালের গ্রাফিতি দেখে বুঝতে পারছি তারা আমাদের অতীত রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চায়। তারা একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক শান্তির সমাজ এবং কল্যাণরাষ্ট্র চায়।
আমাদের সন্তানদের স্বপ্নের সেই সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মানে আমরা সকল রাজনৈতিক শক্তি যদি আন্তরিক না হই তাহলে তারা আমাদের ক্ষমা করবে না। অতএব, আমাদের এখন মৌলিক কিছু বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে স্বপ্নের নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রয়োজনে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে এ মুহুর্তে মৌলিকভাবে দু’টি বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠতে পারে।
০১। পতিত ফ্যাসিস্ট, গণহত্যাকারী, লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।
০২। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও যথাযথ প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
এ ক্ষেত্রে ইসলমী আন্দোলন বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থার দাবী জানিয়ে আসছে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও আমরা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব তথা (PR) পদ্ধতির নির্বাচন বিষয়ে জোড়ালো দাবী জানিয়ে ছিলাম। তখন যদি এ পদ্ধতি চালু করা হতো তাহলে হয়তো আওয়ামী লীগের মতো একটি দল এভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী হওয়ার সুযোগ পেত না।
আশার বিষয় হলো, এখন বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এবং সিভিল সোসাইটির বেশির ভাগই সাংখ্যানুপাতিক তথা (PR) পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবী জানাচ্ছে।
আমরা যদি প্রত্যেকটি ভোটের যথাযথ মূল্যায়ণ করতে চাই, সম্মানিত প্রত্যেক ভোটারের প্রতিনিধি যদি আমরা জাতীয় সংসদে দেখতে চাই আর জাতীয় সংসদকে যদি আমরা সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক ও কার্যকর করতে চাই তাহলে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি নির্বাচন পদ্ধতিই আমাদের জন্য একটি উত্তম পদ্ধতি হতে পারে।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্যমত গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যাপক জনমত তৈরী প্রয়োজন।
এ অনুষ্ঠানও জাতীয় ঐক্যমত তৈরীর একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস।
আশা করি আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত রাজনৈতিক নেতৃতৃন্দ এবং বিশিষ্ট নাগরিকগণ এ বিষয়ে তাদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরবেন।
সবাইকে মুক্ত আলোচনার আহবান জানিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।
মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম
আমীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ