22/07/2025
‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ১৩০- ছুয়ানচুত্য: বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক ছংওয়েনমেন বাজার
এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে-
১। পর্যটকটানছেবেইজিংয়েরঐতিহাসিকছংওয়েনমেনবাজার
২। ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ভাসমান পেয়ারা বাজার থেকে
৩। হাংচৌ জেলার শিচেন: চীনের প্রাচীন নৌকাবহুল গ্রাম
এবার বিস্তারিত
১।পর্যটকটানছেবেইজিংয়েরঐতিহাসিকছংওয়েনমেনবাজার
১৫ বছর পরে আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে বেইজিংয়ের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান ছংওয়েনমেন বাজার, যেখানে ঐতিহ্যের সাথে মিশেছে আধুনিকতা। নতুন সাজে শুরু হয়েছে রাতের বাজার, যা স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করছে। চলুন, দেখে নিই বাজারের ভেতরের পরিবেশ, স্টলগুলোর বৈচিত্র্য আর সেই পুরনো আসল স্বাদের খোঁজ।"
বেইজিংয়ের প্রাণকেন্দ্রে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একটি বাজার ছিল, যা শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়, বরং ছিল মানুষের আবেগ, স্মৃতি আর সংস্কৃতির অংশ। এখন, সেই ঐতিহাসিক ছংওয়েনমেন মার্কেট নতুন রূপে ফিরে এসেছে, আগের স্বাদ আর পরিচিত পরিবেশ নিয়ে।
ছংওয়েনমেন বাজার,বেইজিংয়ের অন্যতম প্রাচীন বাজার। ১৫ বছর পর আবার ফিরে এসেছে তার মূল অবস্থানে, আরও প্রাণবন্ত এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপে।বাজারে যোগ হয়েছে নতুন আকর্ষণ, রাতের বাজার। স্থানীয়রা যেমন ফিরে এসেছে পুরোনো স্বাদ খুঁজতে, তেমনি পর্যটকরাও মুগ্ধ ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশ্রণে।
ভিনটেজ লাইটবক্স, ঐতিহ্যবাহী সাইনেজ আর নস্টালজিক স্লোগান যেন দর্শকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় অতীতে। সংস্কারের পর জনপ্রিয় স্টলগুলো আবার খুলেছে। জায়গা বড় হয়েছে, তবে পরিবর্তন হয়নি আসল স্বাদের — যা যুগ যুগ ধরে মানুষের পছন্দের কেন্দ্রবিন্দু।
নতুন মুখও যুক্ত হয়েছে বাজারে। লিউ ফুকুই যিনি এক সময়ে ছিলেন কনটেন্ট নির্মাতা, এখন নিজেই চালাচ্ছেন ছোট একটি দোকান।
লিউ ফুকুই বলেন, আমি আগে ভিডিও বানাতাম অন্যের দোকান নিয়ে। এখন নিজের দোকান চালাই, আর প্রচার করি উইচ্যাট,খুয়াইসৌ আর তৌইনে। আমার এক ভিডিও একদিনে ৬০০ ফলোয়ার এনেছিল!
লিউ বলেন, নতুন মিডিয়ার দর্শক শুধু তরুণ নয় — এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত। ছংওয়েনমেন মার্কেট এখন কেবল কেনাকাটার জায়গা নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক সামাজিক, সাংস্কৃতিক মিলনমেলা।
আধুনিক শহরের কোলাহলে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনে, নতুন প্রাণ পাচ্ছে বেইজিংয়ের এই ঐতিহাসিক বাজার। পরিচিত স্বাদ, নতুন পরিবেশ — পুরোনো ভালোবাসার আধুনিক রূপই যেন চংওয়েনমেন মার্কেট।
পেঅফ-তামান্নাজেনিফার
সম্পাদনা- আফরিনমিম
২।ঘুরেআসুনবাংলাদেশেরভাসমানপেয়ারাবাজারথেকে
কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই। অবারিত সবুজের মধ্যে একটুখানি প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে মানুষ বের হয় তার চেনা গণ্ডি ছেড়ে। ভ্রমণপিপাসু মানুষ প্রতিনিয়ত খুঁজে ফেরে নতুন নতুন জায়গা। তাই আপনি ও ঘুরে আসতে পারেন এমন একটি জায়গা থেকে।প্রকৃতির নিবিড় ঘনিষ্ঠতা, জলে নৌকায় ঘুরে আসতে পারেন ব্যাংকক বা কলকাতার মতো বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ভাসমান পেয়ারা বাজার থেকে।
২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ভাসমান পেয়ারা বাজারটি গড়ে উঠেছে। ঝালকাঠি ও পিরোজপুর সীমারেখায় অবস্থিত ছোট্ট গ্রামের নাম ভিমরুলি।
ভাসমান পেয়ারার বাজারটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার অন্তর্গত স্বরূপকাঠির কীর্তিপাশা খালের উপর অবস্থিত। সাধারণত পেয়ারার মৌসুম শুরু হয় জুলাই মাসে, চলে টানা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই পাইকারি বাজারের দেখা পেতে হলে সেখানে যেতে হবে জুলাইয়ের শেষ দিকের সময়টাতে।
জুলাই মাস থেকে পিরোজপুর, বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলার পেয়ারা চাষিরা শত শত ছোট-বড় নৌকা নিয়ে হাজির হয় ভাসমান বাজারে। বাগানের সেরা পেয়ারাগুলো দিয়ে ভর্তি থাকে প্রতিটি নৌকা।
পেয়ারা বাজার ভ্রমণের শুরুটা করা যেতে পারে সেখানকার পাশের বাগানগুলো থেকে, যেখানে পর্যটকদের জন্য রাখা হয়েছে আপ্যায়ন ব্যবস্থা।
ভিমরুলিতে পৌঁছানোর পর ভাসমান বাজারের দৃশ্যটিই সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে। আঁকাবাঁকা নদী, পেয়ারা ভর্তি নৌকা, খালের দু'ধারের সবুজাভ পরিবেশ সবকিছু একত্রে স্বর্গীয় অনুভূতি দেয়। বছরের আর্দ্র সময়টাতেও চিত্রটি ব্যতিক্রম নয়।
দুপুরে খাওয়ার জন্য বাজারের পাশে আছে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। আর বাজারের কাছে বিশ্রামের জন্য পিরোজপুরে রয়েছে বোর্ডিং হাউজ। তবে চাইলে বরিশালে হোটেলে থেকে পরে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা যাবে।
বিগত কয়েক বছরে স্বরূপকাঠির ভিমরুলি গ্রামে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েই চলেছে। যারা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে থাকা অসাধারণ স্থানগুলো ঘুরে দেখতে চায় তাদের জন্য এই ভাসমান বাজার একটি আদর্শ জায়গা। আপনিও যদি কোনো অনিন্দ্য সুন্দর স্থানের দেখা পেতে চান তাহলে ঘুরে আসতে পারেন ভিমরুলি ভাসমান বাজার!
লঞ্চ যাত্রার জন্য, ঢাকা সদরঘাট থেকে রাত ৮টার সুরভী-৯ লঞ্চে গেলে বিকাল ৩ টার মধ্যেই পৌঁছানো যাবে বরিশালে।
আর বাস যাত্রার জন্য, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড অথবা অনলাইন থেকে টিকেট সংগ্রহ করে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, এমাদ পরিবহন বাসে যাওয়া যাবে পিরোজপুরে।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা –আল-আমিনআজাদ
৩। হাংচৌ জেলার শিচেন: চীনের প্রাচীন নৌকাবহুল গ্রাম
চীনের চ্যচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ শহরের কাছে অবস্থিত শিচেন গ্রাম। যা “চীনের ভেনিস” নামে সুপরিচিত। হাজার বছরের পুরনো এই গ্রামটি তার ঐতিহাসিক জলমহল, প্রাচীন সেতু ও নৌকাবাহুল পরিবেশের জন্য বিখ্যাত।
শিচেন গ্রাম চীনের জলগ্রাম সংস্কৃতির এক অন্যতম জীবন্ত নিদর্শন।গ্রামের প্রতিটি রাস্তাই ছোট ছোট খাল দিয়ে বিভক্ত, যা নৌকা চলাচলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এখানকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে এই জলপথ ব্যবহার করে তাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করে আসছেন।
শিচেন গ্রামের বিশেষ আকর্ষণ তার প্রাচীন পাথরের সেতুগুলো, যেগুলো ৮০০ বছরের বেশি পুরনো। এই সেতুগুলোতে হাঁটতে হাঁটতে প্রাচীন চীনের স্থাপত্য ও সংস্কৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। এ ছাড়া এই গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ঐতিহাসিক মন্দির, বাগান এবং পুরনো কাঠের বাড়ি।
শিচেন গ্রামের মানুষ তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে গভীরভাবে রক্ষা করে চলেছে। বিশেষ করে চীনের নববর্ষ এবং বিভিন্ন স্থানীয় উৎসবে নৌকায় সাজানো নানা রকম প্রদর্শনী হয়, যা পর্যটকদের জন্য এক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য উপস্থাপন করে।
শিচেন গ্রাম আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে দূরে এক শান্তিপূর্ণ অভিজ্ঞতা দিতে চায়। এখানকার প্রকৃতি, ঐতিহাসিক সৌন্দর্য এবং গ্রামীণ জীবনযাপন এক সঙ্গে মিশে চীনের প্রাচীন ঐতিহ্যের অনন্য প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা –আল-আমিনআজাদ
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী