16/10/2025
আমাদের সময়ের বাবা-মায়েরা “প্যারেন্টিং” নিয়ে কোনও টেনশনই নিতেন না। তখন “জেন্টল প্যারেন্টিং” বলে কিছু ছিল না, আর বাচ্চাদের “প্রাইভেসি” আবার কি জিনিস ! আমাদের সময় প্যারেন্টিং মানে ছিল একটাই—একটু এদিক সেদিক হইলেই "খবর আছে"। আমাদের আম্মুদের কাছে ছিল এক বিশাল বেতের কালেকশন — রঙে, আকারে, সাইজে ভিন্ন ভিন্ন!এখনকার মা-বাবারা বাচ্চার সাথে মেমোরি কালেক্ট করেন —আমাদের মা-বাবারা করতেন বেত কালেক্ট! 😅 আর বেত না পেলে তো বিকল্পের অভাব ছিল না —হ্যাঙ্গার, জুতা, স্যান্ডেল, ডালঘুটনি, তরকারির চামচ, রুটি বানানোর বেলন, পাটখড়ি, বেতের কঞ্চি, শলার ঝাড়ু, এবং ঝাড়ুর হাতল দিয়ে তৈরি বিশেষ সংস্করণ। মোটকথা, রিসোর্সের কোন অভাব নাই।
এভাবেই আমরা বড় হয়েছি, বেতের আঘাত গুনে গুনে, আবার সেই আঘাতের মধ্যেই ভালোবাসা খুঁজে খুঁজে। সেই সময়ের বিনোদন মানে ছিল —টেলিভিশনে বিটিভিতে শুক্রবারের সিনেমা।আর পরীক্ষার সিজনে মায়ের সেই বিখ্যাত ডায়ালগ "আজ পেটে ভাত না থাকলে সিনেমা কি তোরে ভাত দিয়ে যাবে ??" সেই সিনেমা আবার ছিল পরবর্তী পুরো সপ্তাহের আলোচনার বিষয়। টক্সিক মানুষ আবার কি?? আমরা এসব বুঝতাম না। স্কুল ছিল আমাদের আসল দুনিয়া।বেঞ্চের নিচে লুকিয়ে চুইংগাম খেয়ে আরেকজনের সিটে সেটা আটকে দেয়া ছিল আমাদের প্রিয় কাজের একটা। ক্লাসে ফিসফিস করে বান্ধবীর খাতায় “আমার কলম দে” লিখে দেওয়া,আর টিফিন ঘণ্টা বাজলেই মাঠে দৌড়ে যাওয়া—আচার, আইসস্ক্রিম কিংবা ঝালমুড়ি খাওয়া। এই ছিল জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। আমরা তখন জানতাম না এই দিনগুলো একদিন হারিয়ে যাবে। মোবাইল, ইন্টারনেট, ইউটিউব—একসময় মানুষের শৈশব-কৈশোর কেড়ে নেবে। কিন্তু সেই হাসি, কিংবা বৃষ্টির দিন সেই বিকেলের বাতাসে ভেসে আসা আদা-লেবু চায়ের গন্ধ—সব যেন হারিয়ে গেছে।
আজ আমাদের হাতে আছে হাজার স্ক্রিন, সেই স্ক্রিনে মধুর কোন স্মৃতি নেই। আজকের মতো কোন অনলাইন অপশন ছিল না, কিন্তু সেই অল্পের মধ্যেই ছিল কত সুখ, কত রঙ, কত গল্প!