18/08/2024
গল্প এক শহীদের
পর্ব ১: শহীদ জাহিদুজ্জামান তানভীন
Student of IUT
হাসপাতাল থেকে যখন তানভীনের লাশ নিয়ে আমরা সামনে আগাইতে গেলাম তখন একযোগে আশেপাশের সব ছাত্ররা চিৎকার করতে শুরু করল, "শহিদ ভাইয়ের লাশ, শহিদ ভাইয়ের লাশ আসছে "। স্টিলে স্টিলে বাড়ি দিয়ে সবাইকে এলার্ট করল যাতে সামনে থেকে সবাই সরে যায়। " আল্লাহু আকবার" বলে ধ্বনিত হল চারপাশ। আশেপাশের কাউকে আমি চিনি না। কেউ আমাকে চেনে না। কিন্তু তারপরও সবাই তৎপর, যেন সবাই সবার ভাই সেখানে। চিনিওনা এমন ছেলেমেয়েরা এসে সাহস দিয়ে যাচ্ছে, সাহায্য করে যাচ্ছে। করিডর দিয়ে সামনে এগুতেই একটা চিৎকার শুনলাম, " একটা পুলিশ মরছেরে!"। বিশ্বাস করতে হয়ত কষ্ট হবে, গোটা হাস্পাতালের ভেতরে বাইরে সব মানুষ একসাথে বলে উঠল, " আলহামদুলিল্লাহ "। এরকম শিউরে ওঠা অনুভূতি কোনোদিন পাইনাই। কে মরেছে, কিভাবে মরেছে জানি না। কিন্তু মরেছে এটা শুনেই আলহামদুলিল্লাহ পড়ে উঠলাম। সেই প্রতিটা মানুষ যারা এতটাই অত্যাচারি যে এদের মরার খবর শুনলেই মানুষের মুখ থেকে আলহামদুলিল্লাহ বের হয়ে যায়, এদের জন্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে জাহান্নাম ওয়াজিব করা হয়েছে। নিষ্পাপ অসহায় মানুষদের উপর যারা গুলি চালায়, যারা এটা সহায়তা করে, যারা এটা সমর্থন করে, যারা এটা হওয়ার সময় মুখ বুজে সম্মতি দেয় সবার জন্য আল্লাহ যেন এই দুনিয়াতেই বিচার এর ব্যবস্থা করেন। কিয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করার ধৈর্য যে আমার হবে না। তানভীনের লাশ নিয়ে সামনের দিকে গেলাম। এম্বুলেন্স আসার অপেক্ষা করছিলাম। আমি একা ছিলাম ওর লাশের পাশে। মাথা থেকে তখনও যেন রক্ত পড়া থামে নাই। স্ট্রেচার থেকে গড়ায়ে মাটিতে রক্ত পড়ছে। টপ টপ টপ। আন্টি নিজের ওড়না দিয়ে বললেন তানভীনকে যেন ঢেকে দেই। এম্বুলেন্স আসে, ওকে তোলা হল। স্ট্রেচার থেকে লাশটি নিয়ে এম্বুলেন্স এর ভেতরে নিল। আন্টি তখন পাগলপ্রায়। আন্টি স্ট্রেচার থেকে রক্ত নিয়ে নিজে মেখে চিৎকার করছেন, " আমার ছেলে শহীদ। আমার ছেলে শহীদ হয়েছে!"
Video Courtesy: Pinaki Bhattacharya - পিনাকী ভট্টাচার্য