07/06/2025
কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য: দরিদ্রের মুখে হাসি ফুটানো
কোরবানির ঈদ, মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ উৎসব। এটি শুধুমাত্র পশু জবাইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আত্মত্যাগ, সাম্য, সহানুভূতি এবং দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানোর এক মহান উপলক্ষ। ইসলামের দৃষ্টিতে, কোরবানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো—ধনী ও সামর্থ্যবানরা যেন গরিব, দুস্থ, ও অভাবীদের সঙ্গে তাদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন। যে মানুষ বছরের অন্য সময়গুলোতে মাংসের স্বাদ পায় না, সে যেন অন্তত এই দিনটিতে তৃপ্তির সঙ্গে একবেলা খেতে পারে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—আজকের বাস্তবতায় আমরা কি এই উদ্দেশ্য সত্যিই পূরণ করতে পারছি?
বাস্তবতা:
আজকে আমাদের সমাজে কোরবানি অনেকাংশেই রূপ নিয়েছে একটি “প্রদর্শন” বা “প্রতিযোগিতা”-র উৎসবে। বড় গরু, দামী পশু, দামি কসাই, ভিডিও শেয়ারিং—এসব যেন মূল উদ্দেশ্যকে ছাপিয়ে গেছে। অনেক সময় দেখা যায়, কোরবানির গোশতের বড় অংশটাই আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, বা একাধিক পশু কোরবানি করা হলেও বিতরণের ক্ষেত্রে গরিবদের অংশটা সত্যিই অপ্রতুল।
পাশাপাশি, শহরাঞ্চলে অনেক গরিব পরিবারই রয়েছে, যারা কোরবানির ঈদেও এক বেলা মাংস পায় না। শুধু গ্রামে নয়, শহরের বস্তিগুলোতেও অনেক শিশু কোরবানির দিনেও খালি পেটে থাকে, কারণ তাদের বাড়িতে কোরবানির মাংস পৌঁছায় না।
ইসলামের দর্শন:
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:
“তাদের মাংস কিংবা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে।” (সূরা হজ: ৩৭)
এই আয়াতটি পরিষ্কারভাবে বলে দেয় যে, কোরবানির মূল উদ্দেশ্য মাংস নয়, বরং আল্লাহর জন্য ত্যাগ ও খাঁটি নিয়ত। এই তাকওয়ার ফলাফল হওয়া উচিত সমাজে ন্যায্যতা, সহানুভূতি ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠা।
আমাদের করণীয়:
১. কোরবানির পরিকল্পনায় সমাজের গরিবদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। আত্মীয় বা পরিচিতদের মধ্যে বিতরণ তো হবেই, কিন্তু দরিদ্রদের অংশ যেন কম না হয়—তা নিশ্চিত করতে হবে।
2. যেখানে প্রয়োজন, সেখানে পৌঁছাতে হবে। শুধু পাশের গরিব নয়—অনেক বস্তি, এতিমখানা, শ্রমিক এলাকা আছে যেখানে মানুষ কোরবানির স্বাদ পায় না। সেখানে গিয়ে বিতরণ করতে হবে।
3. অতিরিক্ত কোরবানির চেয়ে অর্থবোধক কোরবানি। একাধিক গরু না দিয়ে একটি দিয়ে যদি আরও বেশি মানুষকে উপকার করা যায়, তাহলে সেটাই কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ করবে।
4. সম্প্রদায়ভিত্তিক উদ্যোগ। একা একা না করে, এলাকার মানুষ মিলে যৌথভাবে কোরবানি দিলে তা আরও সংগঠিত ও সমন্বিতভাবে বিতরণ করা সম্ভব হয়।
⸻
কোরবানি একদিনের আনন্দ নয়, বরং এটি একটি বার্তা—সমাজের প্রতিটি সদস্যের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার প্রতীক। আসুন, আমরা যেন কোরবানিকে আবার তার মূল উদ্দেশ্যে ফিরিয়ে আনি। যাতে করে, শুধু পশু জবাই নয়, বরং মানুষকে ভালোবাসার, সহানুভূতির, এবং তাকওয়ার চর্চায় নিজেকে সম্পৃক্ত করি।
ঈদ হোক সকলের, ঈদ হোক অন্তরের।