Amitananda Bhikkhu

Amitananda Bhikkhu "Hatred does not cease by hatred, but only by love; this is the eternal rule." - The Buddha

ফ্রান্স বিশ্বশান্তি ধ্যান কেন্দ্রে সকলকে স্বাগতম 🙏 🇫🇷 🇧🇩
22/08/2025

ফ্রান্স বিশ্বশান্তি ধ্যান কেন্দ্রে সকলকে স্বাগতম 🙏 🇫🇷 🇧🇩

আজ পবিত্র অমাবস্যা তিথিশীল সুগন্ধের ন্যায় মনোহর সুগন্ধ আর নেই। ইহা বায়ুর অনুকূল এবং প্রতিকূল উভয়দিকে সমানভাবই প্রবাহিত হ...
22/08/2025

আজ পবিত্র অমাবস্যা তিথি

শীল সুগন্ধের ন্যায় মনোহর সুগন্ধ আর নেই। ইহা বায়ুর অনুকূল এবং প্রতিকূল উভয়দিকে সমানভাবই প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ, পুষ্প-সুগন্ধি দ্রব্য ইত্যাদির সুগন্ধ বায়ুর অনুকূলেই প্রবাহিত হয়, কিন্তু শীলবান ব্যক্তির কীর্তিগন্ধ সর্বদিকে প্রবাহিত হয়।

আজ শুক্রবার ত্রৈমাসিক বর্ষাবাসের সপ্তম উপোসথ পবিত্র অমাবস্যা তিথি
২৫৬৯ বুদ্ধাব্দের ২২শে আগস্ট ২০২৫ ইংরেজী খ্রিষ্টাব্দ
৭ই ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।

অমাবস্যা শুরু : আজ শুক্রবার ২২শে আগস্ট ২০২৫ দিবা ১২ টা ২৪ মিঃ হতে ৩২ সেকেণ্ড হতে
অমাবস্যা শেষ : আগামীকাল শনিবার ২৩শে আগস্ট ২০২৫ দিবা ১১ টা ৫২ মিঃ ৫৭ সেকেণ্ড পর্যন্ত

আসুন আজকের পবিত্র অমাবস্যা তিথিতে উপোসথ শীল গ্রহণ ও প্রতিপালন পূর্বক নিজেদের শীল পারমীতার পরিপূর্ণতা সাধনে সংকল্পবদ্ধ হই। এবং পরিবারের সকল সদস্যগণকে উপোসথ শীল গ্রহণ ও প্রতিপালনে উৎসাহিত করি। আর যাদের পুরো দিবস উপোসথ গ্রহণের সুযোগ নেই, তারা অর্ধ-উপোসথ হলেও উপোসথ গ্রহণের সংকল্পবদ্ধ হতে পারেন।

সাধু সাধু সাধু

21/08/2025

বার্মার অপরুপ সুন্দর বুদ্ধবিম্ব

21/08/2025

শ্রীলঙ্কার অপরূপ সুন্দর বুদ্ধবিম্ব

যথাপি রুচিরং পুপ্ফং‌ বন্নবন্তং অগন্ধকংএবং সুভাসিতা বাচা অফলা হোতি অকুব্বতো।অর্থাৎ, যেমন সুন্দর বর্ণসম্পন্ন পুষ্প গন্ধবিহ...
21/08/2025

যথাপি রুচিরং পুপ্ফং‌ বন্নবন্তং অগন্ধকং
এবং সুভাসিতা বাচা অফলা হোতি অকুব্বতো।

অর্থাৎ, যেমন সুন্দর বর্ণসম্পন্ন পুষ্প গন্ধবিহীন হলে নিরর্থক হয়, সেইরূপ সুভাষিত বাক্যও কাজে পরিণত না হলে নিষ্ফল হয়।

- ধর্মপদ ৫১ (পুষ্পবর্গ)

সকালে উঠিয়া আমি এ করি পণ,
বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘ শরণে থাকিব আজীবন।

সকালে উঠিয়া আমি এ করি পণ,
বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘ শরণে থাকিব আজীবন।

প্রত্যুষে ঘুম থেকে জেগে উঠার সময় আপনিও এভাবে প্রতিদিন বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ রত্নত্রয়ের শরণাপন্ন হোন। ত্রিশরণে শুরু করুন দিন। আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে যত রকমের রত্ন আছে, সেগুলো লৌকিক জগতের রত্ন। এগুলো ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘরত্ন হলো চিরস্থায়ী এবং পৃথিবীতে ত্রিরত্নই শ্রেষ্ঠ রত্ন। এ রত্নত্রের সমকক্ষ অন্য কোন রত্ন নেই। বৌদ্ধধর্ম মতে ত্রিরত্নের মর্যাদা সবকিছু ওপরে। তাই বৌদ্ধমাত্রই সর্বদা ত্রিরত্নের শরণাগমনে থাকা আবশ্যক।

আজ বৃহস্পতিবার।
২৫৬৯ বুদ্ধাব্দের ২১শে আগস্ট ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ;
৬ই ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুপ্রভাতে সকলের জন্য শুভেচ্ছা-শুভ কামনা।
ভালো কাটুক দিনমান, সারাবেলা। ভালো থাকুন সর্বদা।

চক্ষুপাল স্থবিরের উপাখ্যানমন পূর্বঙ্গম ধর্মচয়, মন শ্রেষ্ঠ মনোময়;দোষযুক্ত মনে যদি কোন একজন,বলে কোন কথা কিছু করে বা কর্ম;শ...
20/08/2025

চক্ষুপাল স্থবিরের উপাখ্যান

মন পূর্বঙ্গম ধর্মচয়, মন শ্রেষ্ঠ মনোময়;
দোষযুক্ত মনে যদি কোন একজন,
বলে কোন কথা কিছু করে বা কর্ম;
শকটের চক্র যথা বৃষ পদে ধায়,
দুঃখ তার অবিরাম পাছে পাছে যায়।

এই ধর্মোপদেশ কোথায় বলা হইয়াছিল? শ্রাবস্তীতে। কাহাকে উপলক্ষ করিয়া? চক্ষুপাল স্থবিরকে।

১. শ্রাবস্তীতে মহাসুবর্ণ নামে এক মহাধনী, মহাভোগী, ধনাঢ্য কুটুম্বিক ছিলেন। তিনি ছিলেন অপুত্রক। একদিন তিনি স্নানতীর্থে গমনপূর্বক স্নান করিয়া আসিবার সময় পথিমধ্যে শাখাসম্পন্ন এক বনস্পতি দেখিতে পাইলেন। ‘এই বৃক্ষটিকে হয়ত কোন শক্তিমান দেবতা আশ্রয় করিয়া থাকিবেন’ এই ভাবিয়া তিনি ইহার তলদেশ পরিষ্কার করাইলেন, চারিদিকে প্রাকার বেষ্টনী করাইয়া দিলেন, বালি বিকীর্ণ করাইলেন এবং ধ্বজাপতাকা উত্তোলন করাইলেন, বনস্পতিকে সমলঙ্কৃত করিয়া ‘পুত্র বা কন্যা লাভ করিলে আপনার মহাসৎকার করিব’ এইরূপ প্রার্থনা করিয়া প্রস্থান করিলেন।

২. অনন্তর তাঁহার ভার্যা অন্তঃসত্ত্বা হইলেন। ভার্যা গর্ভসঞ্চার হইয়াছে জানিয়া তাঁহাকে কহিলেন। তিনি তাঁহার গর্ভ পরিচর্যার ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। তিনি দশমাস পরে একটি পুত্র প্রসব করিলেন। শ্রেষ্ঠী আপনার প্রতিপালিত বনস্পতির প্রসাদে পুত্র লাভের দরুন তার নাম রাখিলেন ‘পালিত’। কিছুদিন পরে তিনি আর এক পুত্র লাভ করিলেন। তাহার ‘চুল্লপাল’ নাম রাখিয়া জ্যেষ্ঠের নাম পরিবর্তন করিয়া ‘মহাপাল’ রাখিলেন। তাহারা প্রাপ্তবয়স্ক হইলে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হইলেন।

৩. তখন শাস্তা ধর্মচক্র প্রবর্তনের পর ক্রমে নানাদেশ পর্যটন করিয়া শ্রাবস্তীতে আসিয়াছিলেন। মহাশ্রেষ্ঠী অনাথপিণ্ডিক কর্তৃক চুয়ান্ন কোটি মুদ্রা ব্যয়ে নির্মিত জেতবন মহাবিহারে জনগণকে স্বর্গমার্গে ও মোক্ষমার্গে প্রতিষ্ঠিত করিতে করিতে বাস করিতেছিলেন। তথাগত মাতৃপক্ষের অশীতি সহস্র ও পিতৃপক্ষের অশীতি সহস্র, এই দ্বি অশীতি সহস্র জ্ঞাতিকুল দ্বারা নির্মিত বিহারে মাত্র এক বর্ষা বাস করিয়াছিলেন।
অনাথপিণ্ডিক নির্মিত জেতবন বিহারে ঊনবিংশতি বর্ষা, বিশাখা কর্তৃক সপ্তবিংশতি কোটি মুদ্রা ব্যয়ে নির্মিত পূর্বারাম বিহারে ছয় বর্ষা, এই দুই কুলের গুণ মহত্ত্বের জন্য শ্রাবস্তীকে আশ্রয় করিয়া পঞ্চবিংশতি বর্ষাবাস করিয়াছিলেন। অনাথপিণ্ডিক ও মহাউপাসিকা বিশাখা নিত্য দিবসে দুইবার তথাগতের সেবা করিতে যাইতেন। ‘তরুণ শ্রামণেরগণ কিছু প্রাপ্তির আশায় আমাদের হাতের দিকে তাকাইবেন’ এই মনে করিয়া তাঁহারা যাইবার সময় কখনও রিক্ত হস্তে যাইতেন না। পূর্বাহ্নে যাইবার সময় অনেক খাদ্যদ্রব্য সঙ্গে লইয়া যাইতেন ও অপরাহ্নে পঞ্চবিধ ভৈষজ্য ও অষ্টবিধ পানীয় লইয়া যাইতেন। তাঁহাদের দুইজনের আবাসেও নিত্য দুই সহস্র ভিক্ষুর জন্য আসন প্রস্তুত থাকিত। অন্ন, পানীয় ও ভৈষজ্যের মধ্যে যিনি যাহা চাহিতেন তিনি তাহা যথেচ্ছা লাভ করিতেন। তাঁহাদের মধ্যে অনাথপিণ্ডিক একদিনও শাস্তাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন নাই। তিনি ভাবিতেন, ‘তথাগত বুদ্ধ সুকুমার ক্ষত্রিয় সুকুমার হন, ‘গৃহপতি আমার উপকারক’ ইহা মনে করিয়া আমাকে ধর্ম উপদেশ দিলে ক্লান্ত হইতে পারেন’ এই মনে করিয়া শাস্তার প্রতি স্নেহাধিক্যবশত তিনি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেন না। কিন্তু তিনি বসিবামাত্র ‘এই শ্রেষ্ঠী আমাকে অরক্ষণীয় স্থানে রক্ষা করিতেছে। আমি যে লক্ষাধিক চারি অসংখ্য কল্পকাল নিজের অলঙ্কৃত প্রতিমণ্ডিত শির ছেদন করিয়া, চক্ষুযুগল উৎপাটন করিয়া, হৃদয় মাংস ছিন্ন করিয়া ও প্রাণসম স্ত্রী-পুত্র পরিত্যাগ করিয়া পারমীসমূহ পূর্ণ করিয়াছি, তাহা পরকে ধর্মদেশনা করিবার জন্যই করিয়াছি। এই শ্রেষ্ঠী আমাকে অরক্ষণীয় স্থানে রক্ষা করিতেছে।’ শাস্তা ইহা চিন্তা করিয়া ধর্মোপদেশ দিতেন।

৪. সেই সময় শ্রাবস্তীতে সাতকোটি লোক বাস করিতেন। তাহাদের মধ্যে পাঁচকোটি শাস্তার ধর্মোপদেশ শুনিয়া আর্যশ্রাবক হইয়াছিলেন; দুই কোটি মাত্র পৃথকজন ছিল। আর্যশ্রাবকদের এই দুইটি কর্তব্য ছিল। ভোজনের পূর্বে আহার্যবস্তু দান দিতেন এবং আহারান্তে বস্ত্র, ভৈষজ্য ও পানীয়াদি সঙ্গে নিয়া, গন্ধদ্রব্য ও মালাদি হস্তে করিয়া ধর্মশ্রবণের জন্য বিহারে যাইতেন।

৫. একদিন মহাপাল দেখিলেন, বহু আর্যশ্রাবক গন্ধদ্রব্য ও পুষ্পমাল্য হস্তে বিহারে যাইতেছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘এতলোক কোথায় যাইতেছে?’ প্রত্যুত্তরে শুনিলেন, ‘ধর্মশ্রবণ করিতে যাইতেছেন।’ তাহা শুনিয়া ‘আমিও যাইব’ এইরূপ ইচ্ছা করিয়া বিহারে গিয়া শাস্তাকে বন্দনাপূর্বক সমাগত জনমণ্ডলীর একপ্রান্তে উপবেশন করিলেন।

৬. বুদ্ধগণ ধর্মদেশনা করিবার সময় শ্রোতার শরণ, শীল ও প্রব্রজ্যাদির উপনিশ্রয় (হেতু) অবলোকন করিয়াই তাহার অভিপ্রায় অনুসারে উপদেশ দিয়া থাকেন। তদ্ধেতু সেইদিন শাস্তা মহাপালের উপনিশ্রয় অবলোকন করিয়া ধর্মদেশনা করিতে করিতে আনুপূর্ব কথা কহিলেন; যথা : দানকথা, শীলকথা, স্বর্গকথা, কামগুণসমূহের দোষ, অপকারিতা ও ক্লেশ এবং নিষ্কামের উপকারিতার বিষয় বিবৃত করিলেন। তাহা শুনিয়া মহাপাল কুটুম্বিক ভাবিতে লাগিলেন, ‘পরলোক গমনকালে পুত্র-কন্যা কিংবা ভোগসম্পদ কিছুই সঙ্গে যায় না, শরীরও নিজের সঙ্গে যায় না, গৃহবাসে আমার কি হইবে? আমি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করিব।’ দেশনাবসানে তিনি শাস্তার সমীপে যাইয়া প্রব্রজ্যা যাচ্ঞা করিলেন। শাস্তা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘তোমার কি বিদায় নিয়া আসার মত কোন আত্মীয় নাই?’
‘ভন্তে! আমার কনিষ্ঠ ভাই আছে।’
‘তবে তাহার নিকট হইতে বিদায় নিয়া আস।’

৭. তিনি সাধুবাদের সহিত অনুমোদন করিয়া শাস্তাকে বন্দনাপূর্বক গৃহে গমন করিলেন এবং কনিষ্ঠকে ডাকাইয়া কহিলেন, ‘ভাই, এই কুলে স্থাবর জঙ্গম যাহা কিছু ধন আছে সেই সমস্তের ভার তোমার উপর, তুমি তাহা গ্রহণ কর।’
‘দাদা, আপনি কি?’
‘আমি শাস্তার নিকট প্রব্রজিত হইব।’
‘কি বলিতেছেন দাদা! মাতার মৃত্যুতে আপনাকে মাতার ন্যায়, পিতার মৃত্যুতে পিতার ন্যায় পাইয়াছি। আপনার গৃহে মহাবিভব বর্তমান। গৃহে বাস করিয়াও পুণ্য করা যায়, আপনি এইরূপ করিবেন না।’
‘ভাই, আমি শাস্তার ধর্মদেশনা শুনিয়াছি; তিনি সূক্ষ্মাণুসূক্ষ্মভাবে ত্রিলক্ষণ আরোপিত করিয়া আদি, মধ্য ও অবসানে কল্যাণময় ধর্ম ব্যাখ্যা করিয়াছেন। গৃহে থাকিয়া তাহা পালন করা যায় না; আমি প্রব্রজিত হইব, ভাই।’
‘দাদা, এখনও আপনি তরুণ, পরিণত বয়সে প্রব্রজিত হইবেন।’
‘বৎস, বৃদ্ধের আপন হস্তপদও অনধীন হয়, বশে থাকে না, জ্ঞাতিগণের আর কথাই বা কি! তাই আমি তোমার কথা রক্ষা করিব না, শ্রবণব্রত পরিপূর্ণ করিব।’
‘যাহার জরা জর্জরিত হস্তপদ অকর্মণ্য ও শক্তিহীন হয়, সে কি প্রকারে ধর্ম আচরণ করিবে?’
‘বৎস, নিশ্চয় আমি প্রব্রজিত হইব।’ কনিষ্ঠের রোদন সত্ত্বেও তিনি শাস্তার নিকট যাইয়া প্রব্রজ্যা যাচ্ঞা করিলেন এবং প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা লাভ করিয়া আচার্য ও উপাধ্যায়ের নিকট পাঁচ বৎসর বাস করিলেন। অনন্তর তিনি বর্ষাবাস শেষ করিয়া প্রবারণার পর শাস্তার নিকট গমন করিলেন এবং তাঁহাকে বন্দনা করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘ভন্তে, এই শাসনে কয়টি ধুর?’
‘গ্রন্থধুর ও বিদর্শনধুর দুইধুর ভিক্ষু।’
‘ভন্তে! গ্রন্থধুর ও বিদর্শনধুর কি?’
‘নিজের জ্ঞান অনুসারে এক বা দুই নিকায় বা সমগ্র ত্রিপিটক বুদ্ধবচন শিক্ষা করিয়া, তাহার ধারণ, কথন ও শিক্ষাদানের নাম গ্রন্থধুর। লঘুবৃত্তি সম্পন্ন হইয়া গ্রামের প্রান্তসীমাস্থ বিশ্রামস্থানে বাস করিয়া আপনার শরীরে ক্ষয়-ব্যয়ের ভাব অবলোকন করা এবং সতত ক্রিয়াবশে বা অদম্য উৎসাহে বিদর্শন বাড়াইয়া অর্হত্ত্ব লাভের নাম বিদর্শনধুর।’
‘ভন্তে, আমি অধিক বয়সে প্রব্রজ্যা নিয়াছি, গ্রন্থধুর পূর্ণ করিতে পারিব না, বিদর্শনধুরই পূর্ণ করিব; আমাকে ‘কর্মস্থান সম্বন্ধে বলুন।’

৮. অতঃপর ভগবান তাঁহাকে অর্হত্ত্ব কর্মস্থান পর্যন্ত বলিলেন। তিনি শাস্তাকে বন্দনা করিয়া তাঁহার সহগামী ভিক্ষু আছেন কি না অন্বেষণ করিলেন। ষাটজন ভিক্ষু তাঁহার সহগামী হইলেন, তিনি তাঁহাদের সহিত নিষ্ক্রমণ করিলেন। তাঁহারা ১২০ যোজন পথ অতিক্রমপূর্বক এক বৃহৎ প্রত্যন্ত গ্রামে উপনীত হইয়া তথায় ভিক্ষার জন্য প্রবেশ করিলেন। লোকেরা নিয়মপরায়ণ ভিক্ষুদিগকে দেখিয়া প্রসন্ন মনে আসন সজ্জিত করাইলেন এবং তাঁহাদিগকে বসাইয়া উপাদেয় আহার পরিবেশন করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘ভন্তে আর্যগণ! আপনারা কোথায় যাইতেছেন?’
‘সুবিধাজনক স্থানে, উপাসকগণ!’
এইরূপ বলিলে বুদ্ধিমানেরা বুঝিলেন যে ভিক্ষুরা বর্ষাবাসের উপযোগী বাসস্থানের অন্বেষণ করিতেছেন। তখন তাঁহারা বলিলেন, ‘ভন্তে আর্যগণ! আপনারা যদি এই তিন মাস এখানে বাস করেন, তবে আমরা শরণে প্রতিষ্ঠিত হইয়া শীল গ্রহণ করিব।’ ভিক্ষুরাও এই মনে করিয়া তাঁহাদের প্রস্তাবে সম্মত হইলেন যে ‘এই কুলসমূহের আশ্রয়ে থাকিয়া আমরা ভবদুঃখের অবসান করিব।’ লোকেরা তাঁহাদের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করিয়া বিহার সংস্কার করিয়া রাত্রি স্থান, দিবা স্থান সম্পাদন করিয়া দিলেন। তাঁহারা নিত্যই সেই গ্রামে পিণ্ডের জন্য প্রবেশ করিতেন। অনন্তর এক বৈদ্য আসিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, ‘ভন্তে, বহুজন একত্রে বাস করিতে গেলে অসুখাদি হইয়া থাকে, আপনাদের অসুখ হইলে আমাকে বলিবেন, আমি ঔষধ দিব।’ এই বলিয়া নিমন্ত্রণ করিলেন। স্থবির মহাপাল বর্ষাবাস আরম্ভ দিবসে সেই ভিক্ষুদিগকে আহ্বান করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘আবুস তোমরা এই তিন মাস কয় ‘ঈর্যাপথে’ অতিবাহিত করিবে?’
‘চারি ঈর্যাপথে, ভন্তে!’
‘আবুস, ইহা কি সমীচীন? অপ্রমত্ত হওয়া উচিত নহে কি? আমরা জীবন্ত বুদ্ধের নিকট কর্মস্থান নিয়া আসিয়াছি; বুদ্ধগণকে শঠতা দ্বারা আরাধনা করা যায় না, কল্যাণ অভিলাষ দ্বারাই তাঁহাদের আরাধনা করিতে হয়। প্রমত্তের পক্ষে চারি অপায় স্বীয় গৃহ সদৃশ হয়, তোমরা অপ্রমত্ত হও, আবুস।’
‘ভন্তে! আপনি?’
‘আমি তিন ঈর্যাপথে অতিবাহিত করিব, পৃষ্ঠ প্রসারিত করিব না আবুস।’
‘সাধু ভন্তে, অপ্রমত্ত হউন।’

৯. স্থবির নিদ্রা যাইতেন না, তাই প্রথম মাস অতিক্রান্ত হইলেই তাহার চক্ষুরোগ উৎপন্ন হইল। ছিন্নঘট হইতে জলধারার ন্যায় চক্ষুযুগল হইতে অশ্রুধারা বহিতে লাগিল। তিনি সারারাত্রি শ্রমণধর্ম অনুষ্ঠান করিয়া অরুণোদয়ের সময় কক্ষে প্রবেশপূর্বক উপবেশন করিলেন। ভিক্ষুগণ ভিক্ষায় বাহির হইবার সময় হইলে স্থবিরের নিকট গমন করিয়া কহিলেন, ‘ভন্তে, ভিক্ষার সময় হইয়াছে।’
‘তাহা হইলে আবুস, পাত্র চীবর গ্রহণ কর’ এই বলিয়া তিনি নিজের পাত্র চীবর গ্রহণ করিয়া বাহির হইলেন। ভিক্ষুগণ তাঁহার সজলধারচক্ষু দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘ভন্তে, এ কি?’
‘আবুস, আমার চক্ষু বায়ুবিদ্ধ হইয়াছে।’
‘ভন্তে, বৈদ্য আমাদের চিকিৎসার জন্য নিমন্ত্রণ করিয়াছিলেন নহে কি? তাঁহাকে আমরা বলিব।’
‘সাধু আবুস।’

১০. ভিক্ষুরা বৈদ্যকে কহিলেন। তিনি তৈলপাক করিয়া পাঠাইলেন। স্থবির উপবিষ্ট অবস্থায় নাসিকায় তৈল সিঞ্চন করিয়া গ্রামে প্রবেশ করিলেন। বৈদ্য তাঁহাকে দেখিতে পাইয়া কহিলেন, ‘ভন্তে, আর্যের চোখে নাকি বায়ুবিদ্ধ হইতেছে?’
‘হাঁ, উপাসক!’
‘ভন্তে, আমি ত তৈলপাক করিয়া পাঠাইয়াছি, উহা কি নাকে আসেচন করিয়াছেন?’
‘হাঁ উপাসক!’
‘এখন কেমন লাগিতেছে?’
‘এখনও বেদনা করিতেছে উপাসক!’

১১. বৈদ্য চিন্তা করিলেন, ‘আমি একবার প্রয়োগেই উপশম সক্ষম তৈল প্রেরণ করিয়াছি, রোগ উপশম না হইবার কারণ কি?’ চিন্তা করিয়া স্থবিরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘ভন্তে, তৈল বসিয়া আসেচন করিয়াছিলেন, না শুইয়া করিয়াছিলেন?’ স্থবির নীরব রহিলেন, পুনঃপুন জিজ্ঞাসা করিলেও কিছু কহিলেন না। চিকিৎসক মনে মনে স্থির করিলেন, ‘বিহারে গিয়া স্থবিরের বাসস্থান দেখিতে হইবে।’ প্রকাশ্যে কহিলেন, ‘তাহা হইলে ভন্তে, আপনি এখন যান।’ স্থবিরকে বিদায় দিয়া তিনি বিহারে গেলেন। সেইখানে স্থবিরের বাসস্থান পর্যবেক্ষণ করিতে লাগিলেন। তিনি তাঁহার চংক্রমণ স্থান ও উপবেশন স্থান মাত্র দেখিতে পাইলেন, শয়নস্থান দেখিলেন না। তিনি স্থবিরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘ভন্তে, আপনি কি বসিয়া তৈল আসেচন করিয়াছেন, না শুইয়া।’ স্থবির নীরব রহিলেন।
চিকিৎসক পুনঃপুন অনুরোধ করিয়া কহিলেন, ‘ভন্তে, আর এমন করিবেন না, শরীর রক্ষা করিলেই শ্রমণধর্ম পালন করিতে পারিবেন; শুইয়া তৈল আসেচন করিবেন।’

১২. ‘যাও আবুস, আমি পরামর্শ করিয়া ঠিক করিব।’ সেইখানে স্থবিরের জ্ঞাতি বা স্বলোহিত কেহই নাই, পরামর্শ করিবেন কাহার সঙ্গে? স্থবির অশুভ কায়ের সহিত মন্ত্রণা করিতে লাগিলেন, ‘আবুস পালিত, বল ত দেখি, তুমি কি চক্ষু চাও, না বুদ্ধশাসন চাও? আদি-অন্ত বিরহিত সংসারবর্তে কতকাল যে চক্ষুহীন ছিলে তাহার গণনা নাই। কত শত সহস্র বুদ্ধ অতীত হইয়াছেন, তাঁহাদের একজনের সঙ্গেও তোমার সাক্ষাৎ নাই, এখন এই বর্ষার মধ্যে তিন মাস শয়ন করিব না বলিয়া সঙ্কল্প করিয়াছ; কাজেই তোমার চক্ষু নষ্ট হউক বা বিদ্ধ হউক, বুদ্ধশাসনকেই ধরিয়া থাক, চক্ষুকে নয়।’ তিনি ভৌতিক দেহকে উপদেশ দানচ্ছলে এই সকল গাথা ভাষণ করিলেন :
মমত্ববোধক চক্ষুযুগল ক্ষয় হইতেছে; কর্ণদ্বয় ক্ষয় হইতেছে, সেইরূপে দেহ এবং দেহাশ্রিত এই সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষয় হইতেছে। হে পালিত! কি কারণে তুমি প্রমত্ত হইতেছ?
মমত্ববোধক চক্ষুযুগল জীর্ণ হইতেছে, কর্ণদ্বয় জীর্ণ হইতেছে, সেইরূপে কায় এবং কায়াশ্রিত এই সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জীর্ণ হইতেছে। হে পালিত! কি কারণে তুমি প্রমত্ত হইতেছ?
মমত্ববোধক চক্ষুযুগল নষ্ট হইতেছে, কর্ণদ্বয় নষ্ট হইতেছে, সেইরূপে রূপ এবং রূপাশ্রিত এই সমস্ত নষ্ট হইতেছে। হে পালিত! কি কারণে তুমি প্রমত্ত হইতেছ?

১৩. এইরূপে গাথাত্রয়ে নিজকে উপদেশ দিয়া উপবিষ্ট অবস্থায়ই নাসিকায় তৈল সিঞ্চন করিয়া ভিক্ষার জন্য গ্রামে প্রবেশ করিলেন। চিকিৎসক তাঁহাকে দেখিতে পাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘ভন্তে, নস্য কর্ম করিয়াছেন কি?’
‘হাঁ, উপাসক!’
‘এখন কেমন বোধ হইতেছে, ভন্তে?’
‘এখনও বেদনা করিতেছে উপাসক!’
‘শুইয়া করিয়াছেন, না বসিয়া করিয়াছেন?’

১৪. স্থবির নীরব রহিলেন। পুনঃপুন জিজ্ঞাসা করিলেও কিছু বলিলেন না। অনন্তর বৈদ্য তাঁহাকে কহিলেন, ‘ভন্তে, আপনি ভাল করিতেছেন না, অদ্য হইতে বলিবেন না যে, অমুক আমাকে তৈলপাক করিয়া দিয়াছিল; আমিও বলিব না যে, আমি আপনার জন্য তৈলপাক করিয়াছিলাম।’ তিনি বৈদ্য কর্তৃক পরিত্যক্ত হইয়া বিহারে গমনপূর্বক নিজকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, ‘শ্রমণ, বৈদ্যও তোমাকে ত্যাগ করিল, ‘ঈর্যাপথ’ ত্যাগ করিও না।’
হে পালিত! চিকিৎসায় তুমি বৈদ্য কর্তৃক বর্জিত হইয়াছ; নিশ্চিত মৃত্যুরাজের অধীন হইয়াছ, আর কেন প্রমত্ত হইতেছ?

১৫. এই গাথায় নিজকে উপদেশ দিয়া শ্রমণধর্ম আচরণ করিতে লাগিলেন। অনন্তর রাত্রির মধ্যম যাম অতিক্রান্ত হইলে পূর্বেও নয় পরেও নয় এক সঙ্গেই চক্ষু ও ক্লেশ (পাপ) দুই নষ্ট হইল। তিনি সূক্ষ্মবিদর্শক অর্হৎ হইয়া কক্ষে প্রবেশপূর্বক উপবেশন করিলেন। ভিক্ষার সময় উপস্থিত হইলে ভিক্ষুরা গিয়া তাঁহাকে কহিলেন, ‘ভন্তে, ভিক্ষাচর্যার সময় হইয়াছে।’
‘আবুস, সময় হইয়াছে?’
‘হাঁ ভন্তে।’
‘তবে তোমরা যাও।’
‘ভন্তে আপনি?’
‘আবুস, আমি চক্ষুহীন হইয়াছি।’

১৬. তাঁহারা তাঁহার চক্ষু দেখিয়া অশ্রুপূর্ণ নেত্রে কহিলেন, ‘ভন্তে, আপনি চিন্তা করিবেন না; আমরা আপনার সেবা করিব।’ তাঁহারা স্থবিরকে আশ্বস্ত করিয়া এবং যথাকর্তব্য তাঁহার সেবাশুশ্রূষা করিয়া গ্রামে প্রবেশ করিলেন। লোকেরা তাঁহাদের সঙ্গে স্থবিরকে দেখিতে না পাইয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘ভন্তে, আমাদের আর্য কোথায়?’ তাহারা তাঁহাদের মুখে সেই বৃত্তান্ত শ্রবণ করিয়া তাঁহার জন্য যাগু পাঠাইয়া দিল এবং নিজেরা তাহার জন্য আহার্য লইয়া বিহারে গমন করিল। বিহারে যাইয়া স্থবিরকে বন্দনা করত তাঁহার পাদমূলে পতিত হইয়া কাঁদিতে লাগিল। তাহারা বলিল, ‘ভন্তে, আপনি চিন্তা করিবেন না, আমরা আপনার তত্ত্বাবধান করিব।’ তাহারা তাঁহাকে এইরূপে সমাশ্বাসিত করিয়া চলিয়া গেল। সেই হইতে তাহারা নিয়মিতভাবে বিহারেই যাগু ও ভাত পাঠাইতে লাগিল। স্থবিরও অপর ষাটজন ভিক্ষুকে নিরন্তর উপদেশ দিতে লাগিলেন। তাঁহারা স্থবিরের উপদেশানুবর্তী হইয়া প্রবারণার সমীপবর্তী সময়ে সকলেই প্রতিসম্ভিদাসহ অর্হত্ত্ব প্রাপ্ত হইলেন। বর্ষাবাস শেষ হইলে তাঁহারা শাস্তাকে দর্শন করিতে ইচ্ছুক হইয়া স্থবিরকে কহিলেন, ‘ভন্তে, আমরা শাস্তাকে দর্শন করিতে ইচ্ছা করি।’ স্থবির তাহাদের কথা শ্রবণ করিয়া চিন্তা করিলেন, ‘আমি দুর্বল, পথিমধ্যে অমনুষ্য পরিগৃহীত বন আছে; আমি যদি ইহাদের সঙ্গে যাই, তবে সকলেরই কষ্ট হইবে, ভিক্ষাও পাইবে না, ইহাদিগকে পূর্বেই পাঠাইয়া দিব।’ অতঃপর তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, ‘আবুস, তোমরা পূর্বে যাও।’
‘আপনি ভন্তে?’
‘আমি দুর্বল, পথিমধ্যে অমনুষ্যাশ্রিত বন আছে, আমি তোমাদের সঙ্গে গমন করিলে সকলেই কষ্ট পাইবে, তোমরা পূর্বে যাও।’
‘ভন্তে, এইরূপ করিবেন না, আমরা আপনার সঙ্গেই যাইব।’
‘আবুস, তোমরা এমন রুচি করিও না, এমন হইলে আমার অসুবিধা হইবে। আমার ছোট ভাই তোমাদিগকে দেখিলে আমার কথা জিজ্ঞাসা করিবে, তাহাকে আমার চক্ষুহানির বিষয় বলিও। সে আমার নিকট কাহাকেও পাঠাইবে, আমি তাহার সহিত যাইব। তোমরা আমার আদেশে দশবল ও অশীতি মহাস্থবিরকে বন্দনা করিবে।’ এই বলিয়া তিনি তাঁহাদিগকে বিদায় দিলেন।

১৭. তাঁহাদের কোন ত্রুটি হইয়া থাকিলে স্থবিরকে ক্ষমা করিতে বলিয়া তাঁহারা গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করিলেন। মনুষ্যরা তাঁহাদিগকে উপবেশন করাইয়া ভিক্ষা দিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘ভন্তে, আপনারা যেন কোথাও যাইবেন এইরূপ দেখা যাইতেছে যে?’
‘হাঁ উপাসকগণ, আমরা শাস্তাকে দেখিতে ইচ্ছুক হইয়াছি।’
তাহারা ভিক্ষুদিগকে থাকিবার জন্য পুনঃপুন বলিয়াও যখন জানিল যে একান্তই তাঁহাদের যাওয়ার ইচ্ছা, তখন তাহারা কিছুদূর তাঁহাদের অনুগমন করিয়া ক্রন্দন করিয়া প্রত্যাবর্তন করিল। তাঁহারা ক্রমে ক্রমে পথ চলিয়া জেতবনে উপনীত হইলেন এবং শাস্তাকে ও মহাস্থবিরদিগকে স্থবিরের কথা নিবেদন করিয়া বন্দনা করিলেন। পরদিবস স্থবিরের কনিষ্ঠ ভ্রাতা যথায় বাস করিতেছে সেই পথ ধরিয়া ভিক্ষায় বহির্গত হইলেন। কুটুম্বিক ‘চুল্লপাল’ তাঁহাদিগকে চিনিতে পারিয়া তাঁহার গৃহে সম্মানের সহিত উপবেশন করাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘আমার ভ্রাতা স্থবির কোথায়?’ তাঁহারা তাহাকে সকল বৃত্তান্ত বলিলেন। তিনি তাঁহাদের পাদমূলে অবলুণ্ঠিত হইয়া রোদনপূর্বক জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘ভন্তে, এখন কি করা কর্তব্য?’
‘স্থবির এখান হইতে কাহারও গমন প্রত্যাশা করিতেছেন, কেহ গেলে তাহার সহিত আসিবেন।’
‘ভন্তে, এ আমার ভাগিনেয়, ইহার নাম পালিত; ইহাকে পাঠাইয়া দেন।’
‘এইরূপে পাঠাইতে পারিব না, পথে বাধা আছে; প্রব্রজিত করাইয়া পাঠাইতে হইবে।’
‘সেইরূপ করিয়া পাঠান, ভন্তে।’

১৮. অনন্তর ভিক্ষুগণ তাহাকে প্রব্রজিত করিয়া অর্দ্ধমাস যাবৎ চীবর পরিধানাদি শিক্ষা দিয়া পথের সন্ধান বলিয়া পাঠাইয়া দিলেন। সে অনুক্রমে সেই গ্রামে উপনীত হইয়া গ্রামদ্বারে এক বৃদ্ধকে দেখিতে পাইল এবং তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, ‘এই গ্রামকে আশ্রয় করিয়া কোন অরণ্য বিহার আছে কি?’
‘আছে ভন্তে।’
‘তথায় কে বাস করেন?’
‘পালিত স্থবির ভন্তে।’
‘আমাকে পথ দেখাইয়া দেন।’
‘ভন্তে আপনি কে?’
‘আমি স্থবিরের ভাগিনেয়।’

১৯. অতঃপর বৃদ্ধ তাহাকে লইয়া বিহারে গেলেন। শ্রামণের স্থবিরকে বন্দনা করিল এবং অর্দ্ধমাস যাবৎ ব্রত-প্রতিব্রত সম্পাদন করিয়া স্থবিরের সম্যকরূপে সেবা-শুশ্রূষা করিল। তৎপর বলিল, ‘ভন্তে, আমার মাতুল কুটুম্বিক আপনার আগমন প্রত্যাশা করেন, চলুন আমরা যাই।’
‘তাহা হইলে, আমার যষ্ঠির অগ্রভাগ ধারণ কর।’
সে যষ্ঠির অগ্রভাগ ধারণ করিয়া স্থবিরের সহিত গ্রামমধ্যে প্রবেশ করিল। লোকেরা তাঁহাদিগকে উপবেশন করাইয়া কহিল, ‘কি ভন্তে, আপনি যেন কোথায়ও যাইতেছেন বলিয়া বোধ হইতেছে?’
‘হাঁ উপাসক, শাস্তাকে বন্দনা করিতে যাইব।’

২০. তাহারা স্থবিরকে নানা প্রকারে সেখানে থাকিবার জন্য প্রার্থনা করিয়াও যখন তাঁহার সম্মতি পাইল না অগত্যা তাঁহাকে বিদায় দিল, কিন্তু অর্দ্ধপথ পর্যন্ত তাঁহার অনুগমন করিল। অতঃপর তাহারা রোদন করিতে করিতে প্রত্যাবর্তন করিল।
শ্রামণের স্থবিরের যষ্ঠিটি ধারণ করিয়া যাইতে যাইতে পথে বনমধ্যে কাষ্ঠনগরে উপনীত হইল। পূর্বে স্থবির এই গ্রামকে আশ্রয় করিয়া বাস করিয়াছিলেন। সেই গ্রাম হইতে বাহির হইয়া জনৈক স্ত্রীলোক অরণ্যে গান করিতে করিতে কাষ্ঠ আহরণ করিতেছিল। শ্রামণের গীতশব্দ শুনিয়া তাহার কণ্ঠস্বরে আকৃষ্ট হইল।

২১. স্ত্রী শব্দের ন্যায় পুরুষদের সমস্ত শরীর বিস্ফারিত হইয়া স্থিত থাকিতে পারে এমন অন্য কোন শব্দের সামর্থ নাই। তাই ভগবান বলিয়াছেন, ‘হে ভিক্ষুগণ, আমি অন্য এক শব্দও সম্যকরূপে দেখিতেছি না, যাহা এইরূপ ভাবে পুরুষের চিত্ত অধিকার করিয়া স্থিত থাকিতে পারে; যেমন এই স্ত্রীশব্দ।’ শ্রামণের সেই স্ত্রীশব্দে নিমিত্ত গ্রহণ করিয়া যষ্ঠির অগ্রভাগ ছাড়িয়া দিয়া কহিল, ‘ভন্তে, আপনি একটু দাঁড়ান, আমার কাজ আছে।’ এই বলিয়া সে স্ত্রী লোকটির নিকট গেল। স্ত্রীলোকটি তাহাকে দেখিয়া গান বন্ধ করিল। সে তাহার সহিত শীল বিপত্তি প্রাপ্ত হইল। তখন স্থবির চিন্তা করিলেন, ‘এই মাত্রই এক গীতশব্দ শুনিতেছিলাম; তাহাও স্ত্রীর গীতশব্দ। শ্রামণেরও বিলম্ব করিতেছে; বোধ হয় সে শীলভ্রষ্ট হইয়াছে।’ সেও আপন কাজ শেষ করিয়া আসিয়া কহিল, ‘ভন্তে, চলুন আমরা যাই।’ অতঃপর স্থবির তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘শ্রামণের, তুমি কি পাপ কাজ করিয়াছ?’ সে নীরব রহিল। পুনঃপুন জিজ্ঞাসা করিলেও কিছুই বলিল না। অতঃপর স্থবির তাহাকে কহিলেন, ‘সেইরূপ পাপী আমার যষ্ঠির অগ্রভাগ গ্রহণের কোন প্রয়োজন নাই।’ শ্রামণেরের সংবেগ উৎপন্ন হইল। সে চীবর খুলিয়া গৃহীর ন্যায় পরিধান করিয়া কহিল, ‘ভন্তে, পূর্বে আমি শ্রামণের ছিলাম, এখন গৃহী হইয়াছি। প্রব্রজ্যা গ্রহণের সময়ও আমি শ্রদ্ধায় প্রব্রজিত হই নাই, পথে বিপদের ভয়ে প্রব্রজ্যা নিয়াছি, আসুন আমরা যাই।’
‘আবুস, গৃহীপাপও পাপ, শ্রমণের পাপও পাপ। তুমি শ্রামণের অবস্থায় থাকিয়া মাত্র শীলও পূর্ণ করিতে পারিলে না, গৃহী হইয়া আর কি কল্যাণধর্ম আচরণ করিবে? তোমার ন্যায় পাপীর পক্ষে আমার যষ্ঠি গ্রহণের কোন প্রয়োজন নাই।’
‘ভন্তে, পথে অমনুষ্য উপদ্রব, আপনিও অন্ধ, কিরূপে এইস্থানে বাস করিবেন?’

২২. অতঃপর স্থবির তাহাকে কহিলেন, ‘আবুস, তুমি এইজন্য চিন্তা করিও না, আমি এইখানেই শুইয়া মরিলেও অথবা এদিক ওদিক গড়াইয়া পড়িলেও তথাপি তোমার সহিত যাওয়া হইবে না’ এই বলিয়া তিনি এই গাথাদ্বয় ভাষণ করিলেন :
‘হায়! আমি চক্ষুহীন, অরণ্যপথে আসিয়াছি,
শুইয়া থাকিব, তথাপি যাইব না, পাপীর সঙ্গে সাহচর্য হয় না।
হায়! আমি চক্ষুহীন, অরণ্য পথে আসিয়াছি,
মরিব, তথাপি যাইব না, অজ্ঞের সঙ্গে সাহচর্য হয় না।

২৩. তাহা শুনিয়া শ্রামণের জাতসংবেগ হইয়া ‘আমি ভারি, দুঃসাহসিক, অযোগ্য কাজ করিয়াছি’ এই বলিয়া বাহুতে চক্ষু আবৃত করিয়া ক্রন্দন করিতে করিতে প্রস্থান করত অরণ্যের দিকে ধাবিত হইল।
স্থবিরের শীলতেজে দেবরাজ ইন্দ্রের ষাট যোজন দীর্ঘ, পঞ্চাশ যোজন প্রস্থ, পঞ্চাশ যোজন ঘন, জয়সুমন পুষ্পবর্ণ, উপবেশন ও উত্থানকালে অবনয়ন ও উন্নয়ন স্বভাব পাণ্ডুকম্বল শিলাসন উষ্ণ হইয়া উঠিল। ইন্দ্ররাজ চিন্তিত হইলেন; ‘কেহ আমাকে স্থানচ্যুত করিতে চায় কি?’ তিনি দিব্য চক্ষুতে দেব-মনুষ্যলোক অবলোকন করিয়া স্থবিরকে দেখিতে পাইলেন। এই ঘটনা উপলক্ষে প্রাচীনেরা বলিয়াছেন :
‘সহস্র নেত্র দেবেন্দ্র দিব্যচক্ষু বিশোধন করিলেন,
পাপ নিন্দুক এই পাল স্বজীবিকা বিশোধিত করিলেন।’
সহস্র নেত্র দেবেন্দ্র দিব্যচক্ষু বিশোধন করিলেন।
ধর্ম গৌরবী এই পালঙ্কাসনে রত হইয়া উপবিষ্ট আছেন।

২৪. অতঃপর দেবেন্দ্র এই মনে করিলেন, ‘যদি আমি এইরূপ পাপনিন্দক ধর্মের প্রতি গৌরব ভাবযুক্ত আর্যের নিকট না যাই তাহা হইলে আমার মস্তক সপ্তধা বিদীর্ণ হইবে; তাঁহার নিকট যাইব।’ সেইজন্য বলা হইয়াছে :
‘দেবরাজ শ্রী দেবেন্দ্র সহস্র নেত্র,
ক্ষণকাল মধ্যেই আসিয়া চক্ষুপাল সমীপে উপনীত হইলেন।

২৫. দেবরাজ উপনীত হইয়াই স্থবিরের অদূরে পদ শব্দ করিলেন। স্থবির জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কে তুমি?’
‘ভন্তে, আমি পথিক।’
‘কোথায় যাইতেছ, উপাসক?’
‘শ্রাবস্তীতে, ভন্তে।’
‘যাও আবুস।’
‘ভন্তে আর্য, কোথায় যাইবেন?’
‘আমিও সেখানে যাইব।’
‘তাহা হইলে ভন্তে, এক সঙ্গেই যাইব।’
‘আমি দুর্বল, আমার সঙ্গে গেলে তোমার বিলম্ব হইবে।’
‘আমার তেমন জরুরি কিছু নাই, আর্যের সঙ্গে গেলে আমিও দশবিধ পুণ্যক্রিয়া বস্তুর একটি লাভ করিব, একত্রেই যাইব ভন্তে।

২৬. ‘ইনি একজন সৎপুরুষ হইবেন’ এইরূপ চিন্তা করিয়া স্থবির কহিলেন, ‘তাহা হইলে উপাসক, আমার যষ্ঠির অগ্রভাগ ধারণ কর।’ শক্র তথা করিলেন এবং পৃথিবী সংক্ষেপ করিতে করিতে সন্ধ্যার সময় জেতবনে গিয়া উপনীত হইলেন।
স্থবির শঙ্খ মৃদঙ্গাদির শব্দ শুনিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘এই শব্দ কোথায় হইতে আসিতেছে?’
‘শ্রাবস্তী হইতে ভন্তে।’
‘উপাসক, পূর্বে আমরা যখন গিয়াছিলাম, তখন ত অনেক সময় লাগিয়াছিল।’
‘ভন্তে, আমি সোজা পথ চিনি।’
তখন স্থবির বুঝিতে পারিলেন, ‘ইনি মনুষ্য নহেন, দেবতা হইবেন।’
‘দেবরাজ লক্ষ্মীশ্বর, সহস্রনেত্র দেবেন্দ্র,
সেই পথ সংক্ষেপ করিয়া সত্বর শ্রাবস্তীতে আগমন করিলেন।

২৭. কনিষ্ঠ কুটুম্বিক স্থবিরের নিমিত্ত পর্ণশালা নির্মাণ করিয়া রাখিয়াছিলেন। শক্র স্থবিরকে সেখানে নিয়া পর্য্যঙ্কে উপবেশন করাইলেন এবং প্রিয় সুহৃদের বেশে চুল্লপালের নিকট যাইয়া ‘বন্ধুপাল’ বলিয়া তাঁহাকে সম্বোধন করিলেন।
‘কি বন্ধু?’
‘স্থবির আসিয়াছেন, জান?’
‘না, জানি না, স্থবির আসিয়াছেন কি?’
‘হাঁ বন্ধু, আমি এখনই বিহারে যাইয়া স্থবিরকে তোমার নির্মিত পর্ণশালায় উপবিষ্ট অবস্থায় দেখিয়া আসিতেছি’ বলিয়া তিনি প্রস্থান করিলেন।

২৮. কুটুম্বিক বিহারে গেলেন। তথায় স্থবিরকে দেখিয়া তাঁহার পাদমূলে লুণ্ঠিত হইয়া কাঁদিতে কাঁদিতে কহিলেন, ‘ভন্তে, আমি ইহা দেখিয়া আপনাকে প্রব্রজিত হইতে বাধা দিয়াছিলাম।’ এইরূপ অনেক পরিতাপের পর দুইজন দাসপুত্রকে মুক্তি দিয়া স্থবিরের নিকট প্রব্রজিত করাইয়া কহিলেন, ‘গ্রাম হইতে যাগু-ভাতাদি আনিয়া স্থবিরের সেবা করিতে থাকুন।’ বলিয়া শ্রমণেরদ্বয়কে স্থবিরের সেবায় নিযুক্ত করিয়া দিলেন।

২৯. শ্রামণেরদ্বয় ব্রত-প্রতিব্রত করিয়া স্থবিরের সেবা করিতে লাগিলেন। অনন্তর একদিবস বিদেশবাসী ভিক্ষুগণ ‘শাস্তাকে দেখিব’ মনে করিয়া জেতবনে আসিয়াছিলেন। তাঁহারা শাস্তাকে বন্দনা করিয়া অশীতি মহাস্থবিরকে দর্শন করিলেন। অতঃপর তাঁহারা বিহারে বিচরণ করিতে করিতে চক্ষুপাল স্থবিরের বাসস্থানে সমীপবর্তী হইয়া ‘তাঁহাকেও দেখিব’ মনে করিয়া সন্ধ্যাকালে তদভিমুখী হইলেন। তখন আকাশেও মহামেঘোদয় হইল। তাঁহারা ভাবিলেন, ‘এখন সন্ধ্যাও হইয়াছে, মেঘও উঠিয়াছে, বরং প্রাতে গিয়াই দেখা করিব’ মনে করিয়া নিবৃত হইলেন। প্রথম যামে বৃষ্টি হইয়া মধ্যম যামে থামিয়া গেল। স্থবির আরদ্ধবীর্য চংক্রমণশীল মতোই শেষ যামে তিনি চংক্রমণ স্থানে অবতীর্ণ হইলেন। তখন নববৃষ্টি সিক্ত ভূমি হইতে বহু ইন্দ্রগোপ উঠিয়াছিল। স্থবিরের চংক্রমণ সময়ে ইহাদের অধিক সংখ্যক মরিয়াছিল। আবাসিকেরা স্থবিরের চংক্রমণ স্থান সকালে সম্মার্জন করে নাই। অপর ভিক্ষুরা ‘স্থবিরের বাবস্থান দেখিব’ বলিয়া তথায় আসিলেন এবং চংক্রমণ স্থানে মৃতপ্রাণী সমূহ দেখিতে পাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কে এখানে চংক্রমণ করে?’
‘ভন্তে, আমাদের উপাধ্যায়।’

৩০. ভিক্ষুরা অনুযোগের সুরে কহিলেন, ‘শ্রমণটির কর্ম দেখুন, যখন চক্ষু ছিল তখন কিছুই না করিয়া পড়িয়া ঘুমাইয়াছিল। এখন চক্ষুহারা হইয়া চংক্রমণ করিতে যাইয়া এতগুলি প্রাণীর জীবননাশ করিল। ভাল কাজ করিতে গিয়া মন্দ করিয়া বসিল।’
অতঃপর তাঁহারা যাইয়া তথাগতকে জানাইলেন, ‘ভন্তে, চক্ষুপাল স্থবির চংক্রমণ করিতে যাইয়া বহু প্রাণী বধ করিয়াছে।’
‘তোমরা কি মারিতে তাহাকে দেখিয়াছ?’
‘দেখি নাই ভন্তে।’
‘যেমন তোমরা তাহাকে দেখ নাই, তেমন সেও সেই প্রাণীসমূহ দেখিতে পায় নাই। ক্ষীণাসবদের বধচেতনা নাই, ভিক্ষুগণ।’
‘ভন্তে, অর্হত্ত্বের হেতু থাকা সত্ত্বেও তিনি অন্ধ হইলেন কেন?’
‘ভিক্ষুগণ, নিজের কৃত কর্মবশেই।’
‘ভন্তে, তিনি কি করিয়াছিলেন?’
‘তাহা হইলে ভিক্ষুগণ, শ্রবণ কর :

৩১. ‘অতীতকালে বারাণসীতে বারাণসী রাজা রাজত্ব করিতেন। তখন জনৈক বৈদ্য গ্রামণ্ডনিগমে বিচরণ করিয়া চিকিৎসা করিত। এক সময় কোন দুর্বলচক্ষু স্ত্রীলোককে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘তোমার অসুখ হইয়াছে কি?’
‘আমি চক্ষে দেখিতে পাই না?’
‘তোমাকে ঔষধ দিব?’
‘দেন মহাশয়।’
‘আমাকে কি দিবে?’
‘যদি আমার চক্ষু স্বাভাবিক করিতে পারেন, ছেলে-মেয়েদেরসহ আপনার দাসী হইব।’

৩২. সে ‘ভাল’ বলিয়া ঔষধ দিল। একমাত্রা ঔষধেই চক্ষু স্বাভাবিক হইল। সেই স্ত্রীলোক চিন্তা করিল, ‘ছেলে-মেয়েসহ এর দাসী হইব বলিয়াছিলাম, কিন্তু উনি আমার প্রতি সদ্ব্যবহার করিবেন না, তাঁহাকে বঞ্চনা করিব।’ বৈদ্য আসিয়া তাহার নিকট জিজ্ঞাসা করিল, ‘এখন কেমন ভদ্রে?’
প্রত্যুত্তরে কহিল, ‘পূর্বে আমার চক্ষু সামান্য বেদনা করিত, কিন্তু এখন অধিকতর বেদনা করিতেছে।’

৩৩. বৈদ্য চিন্তা করিল, ‘এই স্ত্রীলোকটি আমাকে বঞ্চনা করিয়া কিছুই না দিবার ইচ্ছা করিয়াছে। ইহার প্রদত্ত পারিশ্রমিকের আমার কোন প্রয়োজন নাই। এখনই ইহাকে অন্ধ করিব।’ সে গৃহে যাইয়া ভার্যাকে সেই কথা কহিল। গৃহিণী নীরব রহিল। বৈদ্য এক প্রকার ঔষধ মিশ্রিত করিয়া সেই স্ত্রীলোকের নিকট যাইয়া কহিল, ‘ভদ্রে, এই ঔষধের অঞ্জন দাও।’ এই বলিয়া অঞ্জন দেওয়াইল। অঞ্জন দেওয়াতে তাহার দুই চক্ষু দীপশিখার ন্যায় জ্বলিয়া গেল। চক্ষুপালই সেই বৈদ্য ছিল।
‘হে ভিক্ষুগণ, আমার পুত্রের তখনকার কৃতকর্ম পশ্চাৎ পশ্চাৎ অনুগমন করিয়া আসিয়াছে। ভারবাহী বলীবর্দের পাদ অনুগামী চক্রের ন্যায় পাপকর্ম অনুগমন করে।’

৩৪. ভগবান এই উপাখ্যান বলার পর পূর্বাপর বৃত্তান্ত সংযোগ করিয়া শিরোনামাঙ্কিত শাসনের (পত্রের) উপর রাজমুদ্রা চিহ্নিত করার ন্যায় ধর্মরাজ এই গাথা কহিলেন :
মন ধর্মসমূহের পূর্বগামী, মন ইহাদের প্রধান এবং ইহারা মনোময়। যদি কেহ দ্বেষযুক্ত মনে কোন কথা বলে কিংবা কাজ করে, তবে শকটবাহীর (বলদের) পদানুগামী চক্রের ন্যায় দুঃখ তাহার অনুসরণ করে।

৩৫. তথায় ‘মন’ বলিলে কামাবচর কুশলাদি ভেদে সমস্ত চতুর্ভৌমিক চিত্ত বুঝায়। কিন্তু এই পদে তখন সেই বৈদ্যের উৎপন্ন চিত্তভেদে নিয়ম্যমান, ব্যবস্থাপ্যমান ও পরিচ্ছেদ্যমান দৌর্মনস্য-সহগত প্রতিঘ-সম্প্রযুক্ত চিত্তই লক্ষিত হইতেছে।
‘পূর্বঙ্গম’―প্রথমগামী হইয়া সমাগত, অগ্রণী, পূর্বগামী।
‘ধর্মচয়’―গুণ, দেশনা, পরিয়ত্তি (পর্যাপ্তি) ও নিঃসত্ত্ব-নির্জীব ভেদে ধর্ম চতুর্বিধ। তন্মধ্যে :
‘ধর্ম ও অধর্ম উভয়ের বিপাক সমান নয়,
অধর্ম নিরয়ে নেয় আর ধর্ম সুগতি প্রাপ্ত করায়।’
এই গাথায় ধর্মশব্দ গুণ অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে।
‘হে ভিক্ষুগণ, তোমাদিগকে আদি কল্যাণ ধর্মদেশনা করিব’ ইত্যাদি এই বাক্যে ধর্মশব্দে দেশনা ধর্ম বুঝাইতেছে।
‘হে ভিক্ষুগণ, এই শাসনে কোন কোন কুলপুত্র সূত্র-গেয়্যাদি ধর্ম শিক্ষা করে’ এই বাক্যে ধর্ম শব্দ পর্যাপ্তি অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে।
‘সেই সময়ে ধর্ম হয়, স্কন্ধ হয়’ ইত্যাদি। এই বাক্যে ধর্ম শব্দ নিঃসত্ত্ব অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে। ইহাকে নির্জীব ধর্মও বলা হয়। তন্মধ্যে এই স্থানে নিঃসত্ত্ব-নির্জীব ধর্মই অভিপ্রেত। তাহা অর্থ ভেদে ‘বেদনা, সংজ্ঞা ও সংস্কার এই তিন অরূপ স্কন্ধকে বুঝাইতেছে।
মন ইহাদের মধ্যে পূর্বঙ্গম বলিয়া ‘মনপূর্বগামী’ বলা হইয়াছে। মন ধর্মসমূহের বা বেদনা, সংজ্ঞা ও সংস্কারের সমান বাস্তু ও সমানালম্বন হইয়া এবং অপূর্বাপরভাবে, একক

20/08/2025

থাইল্যান্ডের অপরূপ সুন্দর বুদ্ধবিম্ব

ন পরেসং বিলোমানি ন পরেসং কতাকতং,অত্তনো'ব অবেক্খে‌য়্য কতানি অকতানি।অর্থাৎ, পরের বিচ্যুতির প্রতি কিংবা পরের কৃত ও অকৃত কাজ...
20/08/2025

ন পরেসং বিলোমানি ন পরেসং কতাকতং,
অত্তনো'ব অবেক্খে‌য়্য কতানি অকতানি।

অর্থাৎ, পরের বিচ্যুতির প্রতি কিংবা পরের কৃত ও অকৃত কাজের প্রতি লক্ষ্য করবে না। নিজের কৃত ও অকৃত কাজের প্রতি কাজের প্রতি দৃষ্টি রাখবে।

- ধর্মপদ ৫০ (পুস্পবর্গ)

সকালে উঠিয়া আমি এ করি পণ,
বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘ শরণে থাকিব আজীবন।

প্রত্যুষে ঘুম থেকে জেগে উঠার সময় আপনিও এভাবে প্রতিদিন বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ রত্নত্রয়ের শরণাপন্ন হোন। ত্রিশরণে শুরু করুন দিন। আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে যত রকমের রত্ন আছে, সেগুলো লৌকিক জগতের রত্ন। এগুলো ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘরত্ন হলো চিরস্থায়ী এবং পৃথিবীতে ত্রিরত্নই শ্রেষ্ঠ রত্ন। এ রত্নত্রের সমকক্ষ অন্য কোন রত্ন নেই। বৌদ্ধধর্ম মতে ত্রিরত্নের মর্যাদা সবকিছু ওপরে। তাই বৌদ্ধমাত্রই সর্বদা ত্রিরত্নের শরণাগমনে থাকা আবশ্যক।

আজ বুধবার।
২৫৬৯ বুদ্ধাব্দের ২০ আগস্ট ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ;
৫ই ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুপ্রভাতে সকলের জন্য শুভেচ্ছা-শুভ কামনা।
ভালো কাটুক দিনমান, সারাবেলা। ভালো থাকুন সর্বদা।

18/08/2025

আজ ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থানরত বাবু বাপ্পা বড়ুয়ার মেয়ের জন্মদিন ও ওনার পরলোকগত মাতার উদ্দেশ্য পিণ্ডদানে পূন্যদান করলাম

17/08/2025

প্রবল বৃষ্টিতে পিণ্ডচারণ রত পূজনীয় ভিক্ষু

নির্বাণ সন্ধানী ছোট্ট শ্রমণগণ
16/08/2025

নির্বাণ সন্ধানী ছোট্ট শ্রমণগণ

ที่อยู่

France World Peace Buddhist Meditation Centre, 15 Avenue De La République
Ayutthaya
93120

เว็บไซต์

แจ้งเตือน

รับทราบข่าวสารและโปรโมชั่นของ Amitananda Bhikkhuผ่านทางอีเมล์ของคุณ เราจะเก็บข้อมูลของคุณเป็นความลับ คุณสามารถกดยกเลิกการติดตามได้ตลอดเวลา

ติดต่อ ธุรกิจของเรา

ส่งข้อความของคุณถึง Amitananda Bhikkhu:

แชร์

ประเภท