29/09/2025
Life is not a bed of roses - এই কথাটার মর্মার্থ নরেন্দ্র মোদীর মত খুব কম লোকই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আজ যারা মোদীর ‘সহি হিন্দুত্ব’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা একটু অতীতে ফিরে যান আর মনে করুন যে গোধরা উত্তর পর্বে প্রশাসনিকভাবে নিরপেক্ষ থেকে রাজ্যের সুনাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার পরেও, Vibrant Gujarat নামক প্রকল্পের মাধ্যমে নিজের রাজ্যকে দেশের সর্বোত্তম শিল্পবান্ধব রাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার করার এক দশক পরেও তাঁকে দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে উপযুক্ত মর্যাদা দেয়া হয়নি কারণ দলের নিয়ন্ত্রক ছিলেন জিন্নাহ প্রেমী আদবানী, যিনি নিজে দেশভাগের শিকার হয়েও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনকে নিজের জীবনের কালো দিন বলেছিলেন, এবং তাঁর স্তাবক নীতিন গডকরি, রাজনাথ সিং, অরুণ জেটলী ও সুষমা স্বরাজরা। যদিও মহাকালের এমনই লীলা যে এই ঘটনার এক বছরের মধ্যেই জনমতের চাপে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরতে বাধ্য হয় বিজেপি কিন্তু সেই প্রসঙ্গে পরে আসবো।
ভিরাট হিন্দুত্ববাদীরা নিজেদের মস্তিষ্কে একটু ছাপ দিয়ে মনে করুন যে সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ২০০৯ সালে মোদীকে দলের মুখ না করে করা হয়েছিল আদবানীকে। কোন আদবানী যাকে কিছুদিন আগেই জিন্নাহ স্তুতির জন্যে দলের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। ভাবুন, দল চালাতে অযোগ্য একজনকে দেশ চালানোর জন্যে নির্বাচিত করেছিল দল কিন্তু মোদীকে সুযোগ দেয়নি। অবশ্য তার ফলও হাতেনাতে পেয়েছিল বিজেপি। UPA 1 চরম দুর্নীতিগ্রস্থ হওয়া সত্ত্বেও আদবানীর মত লোককে মেনে নেয়নি দেশবাসী। ফলে সেই বাজপেয়ীর সময় থেকে আদবানী Prime Minister in Waiting রয়ে গেলেন, প্রধানমন্ত্রী আর হওয়া হলনা।
জিন্নাহ স্তুতি হোক বা রাম মন্দির ইস্যু নিয়ে নীরব থাকা, এই সবেরই কারণ ছিল একটি- বিজেপি কে হিন্দুত্ববাদী দল থেকে সেকুলার দলের (প্রচলিত অর্থে) রূপ দেয়া। ১৯৮৪ সালে রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়ার পর ১৯৮৯, ১৯৯১, ১৯৯৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০৪ - পরপর ছয়টি সাধারণ নির্বাচনে কোন দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ না করতে পারায় আদবানীর নেতৃত্বে তৎকালীন হাইকম্যান্ডের মনে হয়েছিল যে শরীক সরকারই একমাত্র বিকল্প। আদবানী নিজেও বলেছিলেন যে “It’s an era of coalition. Days of rule by one party is over.” তাই তাদের মরিয়া চেষ্টা ছিল দলকে সেই সেকুলার বানানোর আর তাই আদবানী ইন আর মোদী আউট যাতে মমতা, নীতীশ বা চন্দ্রবাবুদের মত ‘সেকুলারদের’ সাথে জোট বাঁধার রাস্তা খোলা থাকে।
কিন্তু মহাকালের হিসাব বদলায় কার সাধ্য! এই ঘটনার মাত্র এক বছরের মধ্যেই UPA 2 এর অপশাসনে দেশ জুড়ে এমন মোদী হাওয়া উঠলো যে সেটাতে ভেসে গেল তৎকালীন শীর্ষনেতৃত্বের যাবতীয় পরিকল্পনা। তারাও বুঝলেন যে এবার যদি মোদীকে মুখ না করা হয় আর সেই সুযোগে UPA 3 বাস্তবায়িত হয় তাহলে সবকিছু হাতের বাইরে চলে যাবে। এই চিন্তায় সায় দিলেন শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর বা বাবা রামদেবের মত ধর্মগুরুগণ এবং প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হলেন নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদী। পরবর্তীতে তারই নেতৃত্বে ৩০ বছর বাদে ফের ক্ষমতায় ফিরলো একক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার এবং তারই হাত ধরে অস্থায়ী তাবু থেকে সুরম্য মন্দিরে ফিরলেন রামলালা।
মোদীকে বা তাঁর হিন্দুত্বকে বিচার করার আগে মনে রাখবেন যে তাঁকে ঘরে ও বাইরে কতগুলো শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। রামমন্দির নির্মাণ হোক বা ৩৭০ ধারা বিলোপ, ওয়াকফ আইন সংশোধন হোক বা দেশকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিতে পরিণত করা- সব কাজই তিনি করছেন নিপুণ দক্ষতায়। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি যে এই নিউজ ক্লিপটা আমাকে পাঠিয়েছিলেন তপন ঘোষ। ক্লিপের উপরে তারই হাতের লেখা। তপন দা প্রায়শই বলতেন যে “হিন্দুদের সাথে জেহাদিদের মধ্যেকার লাইনটা মোদী জি টেনে দেবেন, তারপর বাকি দায়িত্ব সমাজের।” তাই মোদীর হিন্দুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন যে আপনার সমাজ সেই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছে তো? যদি উত্তর না হয় তাহলে আগে সমাজ তৈরী করুন।
Maitra