24/05/2025
Francebangla24.com
ফ্রান্স সরকার ২০২৪ সালের অভিবাসন আইনের আওতায় শ্রমিক সংকটে থাকা পেশার তালিকা চূড়ান্ত করেছে, যা অনুযায়ী নির্দিষ্ট খাতে কর্মরত অনিয়মিত অভিবাসীরা এক বছরের রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাষ্ট্রীয় জার্নালে প্রকাশিত এই তালিকায় হোটেল-রেস্তোরাঁ, কৃষি, গৃহকর্মী, ক্যাটারিংসহ ৪১টি পেশাকে ইল-দ্য-ফ্রঁন্স (প্যারিস অঞ্চল) সহ ১৩টি রিজিওনের জন্য আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তালিকায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেশা বাদ পড়ায় শ্রমিক সংগঠন ও ইউনিয়নগুলোর সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
নতুন তালিকায় প্যারিস অঞ্চলের জন্য শীর্ষে রয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ক্যাটারিং খাতের শেফ (বাবুর্চি), নার্স, নির্মাণ সুপারভাইজার, লজিস্টিক ম্যানেজার, ওয়েল্ডার, কাঠমিস্ত্রি, কৃষিশ্রমিক এবং গাড়ি মেকানিক। এছাড়া, প্রোভঁস-আল্পস-কোত দাজুর (৩৯টি পেশা) ও উবেরন-রোন-আল্পস (৩৭টি পেশা) অঞ্চলে কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রযুক্তি খাতের চাহিদা বেশি। জাতীয়ভাবে গৃহকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং আইটি প্রকৌশলীরাও তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
অনিয়মিত অভিবাসীদের বৈধতা পেতে ফ্রান্সে ন্যূনতম ৩ বছর বসবাস ও গত দুই বছরে তালিকাভুক্ত পেশায় ১২ মাসের কাজের রেকর্ড (পে-স্লিপ) জমা দিতে হবে। এছাড়া, ফরাসি সমাজের মূল্যবোধের সাথে একীভূত হওয়া ও কোনো অপরাধে জড়িত না থাকা বাধ্যতামূলক। আগের নিয়মের বিপরীতে এখন থেকে নিয়োগকর্তার সুপারিশ ছাড়াই অভিবাসীরা সরাসরি স্থানীয় প্রেফেকচুরে আবেদন করতে পারবেন। তবে “স্বয়ংক্রিয় বৈধতা” না দিয়ে প্রতিটি আবেদন কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিক ইউনিয়ন সিজিটি’র মতে, তালিকাটি শ্রমবাজারের প্রকৃত চাহিদাকে উপেক্ষা করেছে। প্যারিস অঞ্চলে নির্মাণ সহকারী, লজিস্টিক কর্মী বা রেস্তোরাঁ কর্মীরা বাদ পড়ায় প্রায় ৫০% অনিয়মিত অভিবাসী সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। অন্যদিকে, অভিবাসন-বিরোধী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ো জোর দিয়ে বলেছেন, “বৈধ বেকার বিদেশিদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।” তার এই বক্তব্যের বিপরীতে শ্রমমন্ত্রী আস্ত্রিদ পানোসিঅঁ-বুভে দাবি করেন, তালিকাটি “অর্থনৈতিক প্রয়োজন ও মানবিক বাস্তবতার সমন্বয়”।
তালিকায় হোটেল-রেস্তোরাঁ খাত যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য ইতিবাচক দেখা হচ্ছে। ফ্রঁন্স ত্রাবাইয়ের তথ্যমতে, ২০২৫ সাল নাগাদ শুধু এই খাতেই ৩.৩৬ লাখ পদ শূন্য থাকবে। তবে সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করেছেন, আবেদন প্রক্রিয়া জটিল হলে শোষণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
২০২৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর এই নিয়মে প্রতি বছর তালিকা হালনাগাদ করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার। তবে বৈধতার পথ সুগম হবে নাকি রুদ্ধ— তা এখন নির্ভর করবে প্রেফেকচুরগুলোর সদিচ্ছা ও রাজনৈতিক ইচ্ছার উপর।