11/03/2025
সবাইকে বিরক্ত করে তাদের প্রাক্তন। আর আমাকে বিরক্ত করে আমার প্রাক্তনের বউ। দিন নাই, রাত নাই প্রতিটি মূহুর্তে টেক্সটের বন্যা ভাসিয়ে দেয়। তাদের কাপল পিক, একসাথে ঘুরাঘুরি, হাঁটা, চা খাওয়া এমনকি একজন-আরেকজনের দিকে তাকিয়ে যে হিহি করে হাসে, ওটাও আমাকে টেক্সট করে পাঠায়। আমি শুধু দেখি। কোনো রিপ্লাই দেই না। প্রতি লাইনে আবার বলে, "সত্যি বলতে আমি তাকে পেয়ে অনেক খুশী। জিতে গেছি। কিন্তু, আপনি ঠকে গেলেন। আপনার নিশ্চয়ই আফসোস হয় তাই না? ইশশ!"
বিরক্ত হয়ে ব্লক করে দিলাম। ব্লক করেও শান্তি নেই। নতুন নতুন আইডি খুলে প্রতি মূহুর্তে বিবাহিত জীবনের আপডেট দেয়। আমি ব্লক করতে করতে ক্লান্ত। কিন্তু, আইডি ক্রিয়েট করতে সে ক্লান্ত হয় না। বাধ্য হয়ে প্রাক্তনকে ফোন দিলাম। ফোন ধরতেই ধমকে উঠলাম, কী বেটা ছা'গল! কোত্থেকে তোমার মতো এক ছা'গলী ধরে এনেছো? তোমরা নিজেদের মতো ভালো থাকো না! আমাকে কেন জ্বালাচ্ছো?
অপরপাশ থেকে নারী কন্ঠ ভেসে উঠল, "কে আপনি? নূন্যতম কমনসেন্স নাই। একজন বিবাহিত পুরুষকে ফোন দিয়ে যা তা বলছেন। বুঝি তো! হিংসে হচ্ছে খুব। রাখেন ফোন। বিরক্ত করবেন না।"
উত্তর শুনে আমি তাজ্জব বনে গেলাম। এ কেমন পা'গলের পাল্লায় পড়লাম বাবা!
একসময়ে সব রকমের আইডি ডিলিট করে দিলাম। কয়েকদিন ভালো কাটল। তারপর দেখি কোত্থেকে একদল মানুষ আমাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করা শুরু করেছে। আমি না-কি তাদের ফ্যামেলির মেয়ের সংসার ভাঙ্গতে এসেছি। রাগে-দুঃখে সিমটাও অফ করে দিলাম। এর ঠিক তিনদিন পর বাসায় একটি পার্সেল হাজির। খুলে দেখি একটি চিঠি। তাতে লিখা আছে, "আপনার জন্য ভদ্র ও শান্তশিষ্ট একজন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। শীঘ্রই আপনি ফোন অন করে নিম্নে দেওয়া নাম্বারে ফোন করুন। মানুষটির কিছু হলে আপনি দায়ী থাকবেন।"
পড়লাম বিপাকে। কল করতেই ওপাশ থেকে প্রাক্তনের কন্ঠ ভেসে উঠল। অস্থিরকন্ঠে বলতে লাগল,
"অনেক বড় দূর্ঘটনা ঘটে গেছে। তোমাকে কোনোভাবে কল-টেক্সট করতে না পেরে আমার বউ খাওয়া-ঘুম ছেড়ে অসুস্থ হয়ে এখন হাসপাতালে। তুমি প্লিজ ফোন অফ করো না।"
কথাটা শুনে ধমকে উঠলাম, "মশকরা পেয়েছো? জ্বালিয়ে মা'রছে তোমার বউ। আমি তার কী ক্ষতি করেছি ভাই? ওর আচরণে মনে হচ্ছে আমিই যেন ওর প্রাক্তন। প্রেমও করছি তার সাথে। সিরিয়াসলি? মাথায় প্রবলেম আছে?"
প্রাক্তন অনুনয় ভঙ্গিতে জবাব দিলো,
"আসলে ও তোমাকে নিয়ে মেন্টালি প্রেশারে আছে। ও তোমার সাথে এমন করে পৈশাচিক আনন্দ পায়। এটা ওর মেন্টালি প্রবলেম। এ দেশে এর চিকিৎসা নেই। আমি শীঘ্রই তাকে ডক্টর দেখানোর জন্য বিদেশে নিয়ে যাব। কিন্তু, এখন একটু দয়া করো। ও যে কোনো সময় যা খুশী করে ফেলতে পারে। নিজের ক্ষতিও করতে পারে। এখন একটু তাকে কল করো প্লিজ! না হলে এই মূহুর্তে শান্ত হবে না।"
এটা শুনে আমার একটু দয়া হলো। আমি ফোন দিলাম। প্রাক্তনের স্ত্রী আবারও সেই একই কায়দায় বলতে শুরু করল, "কী ভেবেছেন কী আপনি? ম'রে গেছি আমি? ম'রলে তো খুব খুশী তাই না? আবার আমার হাসবেন্ডের গলায় ঝুলে যেতে পারবেন। শোনেন! এতো সহজে আমি ম'রছি না। ভুলেও আমার মৃ'ত্যু কামনা করবেন না।"
আমি হতাশ হয়ে ফোন রেখে দিলাম। মনে মনে ভাবলাম, "আমি তোমার মৃত্যু কামনা করি না। জনম জনম বেঁচে থাকো মা! আমার জীবন এখনো বাকি আছে না? ভাজা ভাজা করে খেতে হবে না?" জানি না কী পাপ করছিলাম।
ঠিক তখনি একটা মেসেজ আসলো, "আমাকে হসপিটাল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আপনি এখন কী ফন্দি আটছেন বলেন তো? আমি কিন্তু এতো সহজে যাব না।"
আর সহ্য হলো না। একটা কাগজে তাদের নাম লিখে একগাদা ঘুমের ঔষধ খেয়ে নিলাম। পরেরদিন চোখ খুলল হাসপাতালে। মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে। সবকিছু বুঝতে ও মনে করতে কয়েক মূহুর্ত লাগত।
মাথার কাছে একজন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি আমাকে আশ্বাস দেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, "চিন্তা করবেন না! আপনার এ সিদ্ধান্তের জন্য যারা দায়ী তাদেরকে আমরা দ্রুত গ্রেফতার করব। আমি আমার টিম পাঠিয়ে দিয়েছি।" শুনে আমার খুব ভালো লাগল।
একটু পরে আমি থানা অফিসে বসে আছি। প্রাক্তন ও তার স্ত্রীকে পুলিশ গ্রেফতার করে এনেছে। প্রাক্তনের স্ত্রী আমাকে দেখেই ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠল, "ছি ছি আপনি এতটা নিচ? একজন বিবাহিত পুরুষের জন্য ম'রতে বসেছেন? সেল্ফ রেসপেক্ট কি হজম করে ফেলেছেন? শরম করল না আপনার?"
আমি হতভম্ব দৃষ্টিতে অফিসারের দিকে তাকিয়ে আছি। তিনিও হয়তো এমনটা আশা করেন নি। আমি খুব হতবিহ্বল হয়ে উঠে দাঁড়ালাম।
জরুরী ভিত্তিতে এখন একটি কূপ তালাশ করা প্রয়োজন। আমার এখন কূপে ঝাঁপ দেওয়া ছাড়া আর কোনো গতি নাই।😆😆😆
cp