21/01/2025
সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ ও উত্তরণের পথ
সাম্প্রতিককালে সিলেটের রিজেন্ট পার্কে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের করুণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। যুবসমাজের বিপথগামিতা, অভিভাবকদের দায়িত্বহীনতা এবং সামাজিক অবকাঠামোর দুর্বলতা এই অবস্থার জন্য অনেকাংশে দায়ী। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে আত্মহত্যা, পার্কে অগ্নিসংযোগ এবং সামাজিক উত্তেজনা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গভীর উদ্বেগের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সমাজ এবং রাষ্ট্রের সম্মিলিত পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।
---
সামাজিক অবক্ষয়ের মূল কারণ
১. পরিবারের দায়িত্বহীনতা:
সন্তানদের গতিবিধি সম্পর্কে অভিভাবকদের উদাসীনতা। কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে—এসব বিষয়ে খেয়াল না রাখা বিপথগামিতার মূল কারণগুলোর একটি।
২. সহশিক্ষার অপব্যবহার:
বিদ্যালয় এবং কলেজ পর্যায়ে ছেলে-মেয়ের সহশিক্ষা প্রাকৃতিক চাহিদাকে অস্থির করে তুলতে পারে। বয়সসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনকে সঠিকভাবে পরিচালিত না করলে তা বিপর্যয় ডেকে আনে।
3. নীতিহীন ব্যবসা:
পার্ক, রিসোর্ট, আবাসিক হোটেল এবং ক্যাফেগুলোতে নৈতিকতা বিবর্জিত কার্যকলাপ ঘটে, যা তরুণ সমাজের অবক্ষয়ে বড় ভূমিকা রাখছে।
4. অপসংস্কৃতির প্রসার:
সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট এবং বিনোদনমাধ্যমে অশ্লীলতার সহজলভ্যতা যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ।
5. বিয়েকে কঠিন করা:
যৌতুক, বিলাসবহুল আয়োজন এবং আর্থিক চাহিদা বিয়েকে কঠিন করেছে। ফলে যুবসমাজের অনেকেই নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে অসামাজিক পথে পা বাড়াচ্ছে।
---
সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ
১. পরিবারের ভূমিকা:
সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের নজরদারি বাড়াতে হবে।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্তানদের চলাফেরা এবং কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।
পরিবারে ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
২. সহশিক্ষার পুনর্বিন্যাস:
মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
যৌন শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার পাঠ্যক্রম চালু করা জরুরি।
৩. নীতিহীন ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা:
রিসোর্ট, পার্ক, আবাসিক হোটেল, এবং কেবিন ব্যবস্থা যেগুলো অসামাজিক কার্যকলাপে ব্যবহৃত হয়, সেগুলো সিলগালা করতে হবে।
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেওয়ার সময় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এসব স্থানের উপর নিয়মিত গোয়েন্দা নজরদারি করতে হবে।
৪. অপসংস্কৃতির লাগাম টানা:
সামাজিক মাধ্যম ও বিনোদনমাধ্যমে অশ্লীল কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়ন করা।
তরুণ প্রজন্মকে সুস্থ বিনোদনের বিকল্প ব্যবস্থা দেওয়া।
৫. বিয়ে সহজ ও ফেতনামুক্ত করা:
বিয়ের দেনমোহর সীমিত (৫০,০০০-১,০০,০০০ টাকা) করার জন্য সামাজিক প্রচারণা চালানো।
যৌতুক প্রথা নিষিদ্ধ করতে কড়াকড়ি আইন প্রণয়ন এবং কার্যকর করা।
বিলাসবহুল বিয়ের আয়োজনের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা।
শরীয়াহ মোতাবেক বহুবিবাহের প্রচলন করা, যা যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় কমাতে ভূমিকা রাখবে।
---
প্রশাসনের দায়িত্ব:
1. নিরীক্ষা ও তদারকি:
প্রশাসনকে নিয়মিতভাবে পার্ক, রিসোর্ট, এবং অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রের কার্যক্রম মনিটর করতে হবে।
2. আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ:
অসামাজিক কার্যকলাপ রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং দোষীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
3. জরুরি ব্যবস্থা:
সমাজের প্রতিটি এলাকায় যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম চালু করা।
স্থানীয় জনগণকে সুশৃঙ্খল রাখতে প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান করা।
---
উপসংহার:
সামাজিক অবক্ষয় রোধে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। পরিবার, সমাজ এবং প্রশাসন একযোগে কাজ করলে যুবসমাজকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আসুন, আমরা বিয়েকে সহজ করি, যুবসমাজকে নৈতিক শিক্ষা দেই এবং অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে সচেষ্ট হই।
পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর এবং নিরাপদ সমাজ গড়তে আমাদের আজ থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন।