12/11/2025
প্রাক্তন কারারক্ষী ও গির্জার যাজকের মুখোশের আড়ালে এক দানব!
একজন প্রাক্তন কারারক্ষী ও গির্জার যাজক - নেভিল হাজব্যান্ড, এখন ব্রিটিশ অপরাধ ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যৌন অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।
রবিবার স্কুলের শিক্ষক এবং স্কাউট দলের নেতা এই ব্যক্তি ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে একটি আটক কেন্দ্রে শত শত কিশোরকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করেন— কমপক্ষে ৩৮৮টি অপরাধে জড়িত ছিলেন তিনি।
আজ প্রকাশিত কারাগার ও প্রবেশন ওম্বাডসম্যানের (Prison and Probation Ombudsman) প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, হাজব্যান্ড সম্ভবত এর আগে এবং পরে আরও বহু তরুণকে নির্যাতন করেছিলেন।
এর ফলে তিনি সম্ভবত জিমি স্যাভিলের ৪৫০ অপরাধের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছেন।
২০১০ সালে মারা যাওয়া হাজব্যান্ড ছিলেন মেডমসলি ডিটেনশন সেন্টারের এক রাঁধুনি।
কিন্তু তার রান্নাঘর ছিল তরুণ বন্দিদের জন্য এক নরকযন্ত্রণা— যেখানে ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সী কিশোররা প্রতিদিনই যৌন নির্যাতনের শিকার হতো।
হাজব্যান্ডের একচ্ছত্র আধিপত্যে রান্নাঘরটি তার ব্যক্তিগত রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। তিনি ভয় দেখিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে বা জোরপূর্বক তরুণদের নিপীড়ন করতেন, আর সহকর্মীরাও তার ভয়ে চুপ থাকতেন।
“আমি তোমাদের গায়েব করে দিতে পারি” — এভাবে তিনি হুমকি দিতেন!
কারাগার ও প্রবেশন ওম্বাডসম্যান আড্রিয়ান আশার-এর নেতৃত্বে দুই বছরের তদন্তে বেরিয়ে আসে, হাজব্যান্ড কেবল মেডমসলিতেই নয়, বরং
ডরসেটের পোর্টল্যান্ড বোরস্টল, কাউন্টি ডারহামের ডিয়ারবোল্ট যুব কারাগার এবং এইচএমপি ফ্র্যাঙ্কল্যান্ড-এও কিশোরদের ওপর একইভাবে নির্যাতন চালাতেন।
আশার বলেন,
“নেভিল হাজব্যান্ড সম্ভবত ব্রিটিশ ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যৌন অপরাধী।
তিনি ছিলেন এক শক্তিশালী গড়নের মানুষ এবং চরমভাবে চালাক এক প্রভাবক। তিনি বন্দিদের পাশাপাশি সহকর্মীদেরও ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতেন।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,
“নিউক্যাসল বা ডারহামের আদালত থেকে ডিটেনশন সেন্টার পর্যন্ত যে নির্জন পাহাড়ি পথ দিয়ে বন্দিদের নিয়ে যাওয়া হতো, তা তাদের মনে গভীর ভয়ের জন্ম দিত।
হাজব্যান্ড যখন বলত— ‘তোমরা যদি মুখ খোলো, আমি তোমাদের গায়েব করে দিতে পারি’, তখন তারা সেটি সত্যিই বিশ্বাস করত।”
অনেক বন্দি নির্যাতনের অভিযোগ করেও বিশ্বাস পায়নি— বরং তাদের অভিযোগের বিষয়েই নির্যাতক হাজব্যান্ডের কাছে পাঠানো হতো।
বছরের পর বছর নীরবতা ভেঙে প্রকাশ পায় ভয়াবহতা
দীর্ঘ সময় পর, ২০০২ সালে ডারহাম পুলিশ মেডমসলির নির্যাতন নিয়ে ব্যাপক তদন্ত শুরু করলে প্রকাশ পায় হাজব্যান্ডের দুঃসহ অপরাধচক্র।
২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি পাঁচজন কিশোরের ওপর ১০টি অশালীন আচরণ ও ১টি ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন এবং আট বছরের কারাদণ্ড পান।
২০০৫ সালে আরও ভুক্তভোগীরা সামনে আসায় তিনি অতিরিক্ত চারটি অপরাধ স্বীকার করেন, ফলে তার সাজা বেড়ে ১০ বছরে দাঁড়ায়।
পরবর্তী তদন্তে জানা যায়, মেডমসলিতে মোট ৫৪৯টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৩৮৮টির জন্য একাই দায়ী ছিলেন হাজব্যান্ড— কখনও কখনও একজন সহযোগীর সঙ্গে।
হাজব্যান্ডের অপরাধের সময়রেখা
১৯৬৩: প্রিজন সার্ভিসে যোগ দেন এবং এইচএমপি ডারহামে কাজ শুরু করেন।
১৯৬৪: পোর্টল্যান্ড বোরস্টলে পোস্টিং পান। এখানে তিনি সমকামী পর্নোগ্রাফিক ছবি রাখার অভিযোগে ধরা পড়েন, কিন্তু দাবি করেন, “বই লেখার গবেষণার” জন্য সেগুলো রেখেছিলেন— ফলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
১৯৬৯: মেডমসলি ডিটেনশন সেন্টারে ক্যাটারিং অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এখানেই তিনি তার অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।
১৯৮৫: স্থানান্তরিত হন এইচএমপি ফ্র্যাঙ্কল্যান্ডে।
১৯৮৭: অল্প সময়ের জন্য ডিয়ারবোল্ট যুব কারাগারে কাজ করেন, পরে আবার ফ্র্যাঙ্কল্যান্ডে ফেরেন।
ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্যে জানা গেছে, তিনি ডিয়ারবোল্ট ও ফ্র্যাঙ্কল্যান্ডে কর্মরত অবস্থাতেও যৌন নির্যাতন চালিয়ে গেছেন।
অবশেষে প্রকাশ পেল এক অন্ধকার অধ্যায়