16/05/2025
ইনকামে বরকত পাচ্ছিনা এই অভিযোগ নিয়ে একদিন এক লোক প্রিয় Mentor এর কাছে গেলো। কোনো কিছু নিয়ে দ্বিধান্বিত -কনফিউজড কিংবা অশান্তিতে থাকলে তার সাথে কথা বললে সে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি পায়। একবার এইরকম একটা ডাউট নিয়ে Mentor- এরসাথে দেখা করলো।
তাকে দুধ এবং চিনি ছাড়া স্রেফ গরম পানিতে ডুবানো একটা টি প্যাক এগিয়ে দিয়ে বললেন- আছো কেমন?
সে কিছুটা আড়ষ্টতা নিয়ে তাকে বললো, কনফিউজড Mentor!
তিনি তার চেহারার দিকে গভীর ভাবে তাকালো, মিনিট খানেক। তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে বললো-কি নিয়া চিন্তায় আছো?
সে আরো একটু সামনে এসে নিচু কন্ঠে বললো- আমার ইনকাম নিয়া আমি দ্বিধায় আছি। আমি সৎ পথে উপার্জন করি। পেশাগত কাজে পারলে ২০০ ভাগ নিবেদন দিয়ে কাজ করি। তারপরও কেন জানি এতো বছর কাজ করার পরও আমার মনে হয়ে যে আমার উপার্জনে কোনো বরকত পাচ্ছিনা।
Mentor মন দিয়ে কথা শুনলেন, তারপর জিজ্ঞেস করলেন -কেন তোমার এমন মনে হচ্ছে?
সে বললো, যে আমার savings হচ্ছেনা। প্রতিবছর যেমন আয় বাড়ছে, তেমনি খরচও বাড়ছে।
Mentor আবার কী মনে করে যেন ডান হাতটা তার হাতে নিলেন। তারপর আবার গভীর ভাবে তার কপাল আর চোখের দিকে তাকালো। প্রশ্ন করলেন -কিসের খরচ বাড়ছে তোমার?
-এই যেমন বাচ্চাদের এডুকেশন-ওদের স্কুলের বেতন, ওদের টিচারদের বেতন, কিছু অস্বচ্ছল আত্নীয় স্বজনদের খরচ।
-কোন স্কুলে পড়ে তোমার বাচ্চারা?
-সে স্কুলের নাম বললো।
তুমি কি মনে করো, শুধু ব্যাংকে জমা বাড়া মানেই আয়ের বরকত?
-এই যে তুমি সেরা একটা স্কুলে তোমার বাচ্চাদের পড়াতে পারছো, এটা কি বরকত নয়? কয়জন বাবা-মা এরকম ভালো স্কুলে তার বাচ্চাদের পড়াতে পারছে?
হ্যাঁ, তা তো ঠিক। সে মাথা নাড়ে।
-তোমার বাচ্চারা কেমন? ওরা কি উচ্ছৃংখল? তোমাদের কথা বার্তা শোনেনা?
-না, না। খুব লক্ষি বাচ্চা ওরা।
-এটা কি বরকত নয়?
-জি, অবশ্যই।
-বিগত ৫/৭ বছরে তোমার পরিবারে কেউ বড় রকম অসুস্থ হইছে? বা তুমি নিজে?
-না, আল্লাহর রহমতে কেউ ওরকম সিরিয়াস অসুস্থ হয়নাই। আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়েছিল, আল্লাহর রহমতে দ্রুত সুস্থ হয়ে গেছে।
-হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিলো?
-না, আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়েছে।
-এই যে তোমরা সুস্থ আছো, এটা কি বরকত না? মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করেন তিনি।
-জি অবশ্যই।
- তোমার স্ত্রী কেমন মানুষ? সে কি তোমার সাথে সদাচারণ করে? তোমার খেয়াল রাখে? সে কী উন্নত চরিত্রের নয়?
-না না। সে অসাধারণ উন্নত চরিত্রের মানুষ। সে শুধু আমাকেই নয়। আমার সন্তাদের, আমার বাবার, আত্নীয় স্বজনেরও যত্ন নেয়।
-আর কী বরকত চাও, তুমি? পরিবারে শান্তির চেয়ে বড় বরকত কী হতে পারে?
-জি, আমি আসলে এভাবে গভীরে গিয়া চিন্তা করিনাই।
-তোমার বাবা-মা আছেন?
-মা নেই, বাবা আছেন?
-বাবা কি তোমার সাথে থাকেন, নাকি আলাদা থাকেন?
-আমার সাথে থাকেন।
-তোমার বাবা তোমার সাথে থাকেন, এ যুগে বাবা-মা সাথে থাকা, কত বড় বরকত তানভীর, তুমি টের পাওনা?
-টেরপাই। আব্বা সাথে আছেন, এইটা
অনেক বড় বারাকা।
তিনি আর কথা বাড়ান না। তাকে বুকে জড়ায় ধরেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। তারপর বলেন, জীবনে টাকা পয়সা-ধনসম্পদ বৃদ্ধিই শুধু বরকত না। জীবনে তুমি সুস্থ আছো, তোমার একটা সুন্দর পরিবার আছে, তুমি তাদের এবং তারা তোমার দেখভাল করতে পারছো- এটাও বরকত। জীবনে তুমি সঠিক জ্ঞানের আলো পাচ্ছো- এটাও বরকত। আত্নীয় স্বজনের খবর নিতে পারছো-এটাও বরকত। প্রতিদিন বাবার চেহারা দেখতে পাচ্ছো- এটাও বরকত।
-তুমি টাকা পয়সা ব্যাংকে জমিয়ে কী এরচেয়ে বেশি বরকত পাবে?
-আপনি ঠিক বলছেন।
তিনি তাকে নিচ তলা পর্যন্ত এগিয়ে দেন। সে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে পড়ে। গাড়ি সার্ট দিয়ে প্যানারমিক সানরুফটা খুলে দে। তারপর গভীর কৃতজ্ঞতায় আকাশের দিকে তাকায়। সেদিন ছিল জোৎস্না…রুপালী আলোয় ভেসে যাচ্ছে আকাশ। সানরুফের খোলা ছাদ দিয়ে দুইহাত উপরে তুলে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর দুচোখ বন্ধ করে অনুভব করে, পৃথিবীর সব বরকত জড়িয়ে আছে!