15/05/2025
দা উপরে থাকুক বা নিচে, কাটা পড়ে কুমড়াই!
নারীরা সাধারণত মানসিক ও আবেগিক সংযোগ ছাড়া যৌনসম্পর্ক উপভোগ করতে পারেন না। এটি তাদের প্রকৃতিগত শালীনতাবোধ, লজ্জা ও নিরাপত্তাবোধ থেকে আসে, যা তাদের জন্য একটা রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। কেননা যৌনসম্পর্কের শারীরিক পরিণতি— গর্ভধারণ— নারীকে একাই বহন করতে হয়। এই শালীনতা, লজ্জা ও রক্ষণশীলতা নারীর সৌন্দর্য ও সুরক্ষার ঢাল। এটিই তাদেরকে বৈধ ও টেকসই সম্পর্ক ছাড়া যত্রতত্র অবৈধ শারিরীক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া থেকে দূরে রাখে।
পক্ষান্তরে, পুরুষেরা কোনো বৈধতা, কমিটমেন্ট, আবেগিক সম্পর্ক বা দায়িত্ববোধ ছাড়াও যৌনতাকে শুধু দেহভোগের মাধ্যমে উপভোগ করতে পারে। তারা গর্ভধারণের ঝুঁকির সম্মুখীন না হওয়ায়, বহুক্ষেত্রে দায়িত্বহীন আচরণ করে। পুরুষের মানসিক অবস্থার যে ন্যাচারাল মেইকাপ, এটা তার স্বাভাবিক ফলাফল। ধর্মনৈতিক কারণ ছাড়া পুরুষের জন্য নিজের যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার তেমন আর কোনো প্রণোদনা নেই।
বস্তুত মানব প্রকৃতির গভীরে নিহিত এক অলঙ্ঘনীয় বাস্তবতা হলো— নারী ও পুরুষ শুধু শারীরিকভাবেই নয়, মানসিক, আবেগিক ও যৌন আচরণগত দিক থেকেও ভিন্ন। এই ভিন্নতা মহান আল্লাহর মহাপ্রজ্ঞার অংশ, যেখানে নারী লজ্জাশীলা, সংবেদনশীল ও নিরাপত্তা-প্রবণ আর পুরুষ স্বভাবতই আগ্রাসী, ঝুঁকিপ্রবণ এবং সে ক্ষণিকের আনন্দে লিপ্ত হতে চায়।
Baumeister & Tice (2001) এর গবেষণায় দেখা যায়, পুরুষ নারী অপেক্ষা ২-৪ গুণ বেশি যৌন চিন্তা করে এবং দ্রুত যৌনসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়।
Kinsey Institute-এর তথ্যমতে, ৭১% পুরুষ আবেগিক সম্পর্কহীন যৌনতাও বেশ আগ্রহের সাথে উপভোগ করে থাকে, যেখানে নারীর ক্ষেত্রে এ হার মাত্র ২৫%।
Journal of S*x Research (2015)-এ প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, নারীদের ৮০% যৌনসম্পর্কে মানসিক সংযোগকে প্রধান বলে মনে করে, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি ৩০%-এর নিচে।
মনে রাখুন এই কিছু সংখ্যক নারীর মধ্যে পুরুষালি স্বভাব দেখা যাচ্ছে এটাও কিন্তু এই সেদিনের ঘটনা। নারীস্বাধীনতা ও সম অধিকারের বড়ি কয়েক যুগ ধরে গেলানোর পরেই কিন্তু পরিসংখ্যান এটা দাঁড়িয়েছে। ১০০ বছর আগে এই গবেষণা করা হলে হয়তো এই বৈশিষ্ট্য বিরল দেখা যেত।....
এবার আসুন দেখি সমতার নামে নারীকে যৌনসঙ্গী বানিয়ে করা নারী নির্যাতনের আরেক অধ্যায়।
গর্ভধারণের পর নারী যখন নিজের শরীরে একটি নতুন প্রাণ অনুভব করে, তখন তার অন্তরে এক গভীর মাতৃত্ববোধ জন্ম নেয়।
নারীর শরীরে “Oxytocin” ও “Prolactin” হরমোন নিঃসরণ বাড়ে, যা শিশুর প্রতি গভীর আবেগ ও আত্মত্যাগের মানসিকতা তৈরি করে (Harvard Medical School, 2019)। এ থেকেই বোঝা যায়, মাতৃত্ব নারীর স্বাভাবিক প্রবণতা— এটিকে বিলুপ্ত করতে চাওয়া এক ধরনের সহিংসতা।
অথচ অনেক পুরুষ তখন সন্তানের দায় এড়াতে নারীর উপর গর্ভপাতের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এটি শুধু দায়িত্বহীনতা নয়, এটি এক প্রকার নিষ্ঠুরতা, যেখানে মমতাময়ী মায়ের অনুভূতি ও সন্তানের জীবনকে তুচ্ছ গণ্য করা হয়।
Guttmacher Institute (2023) এর এক গবেষণায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০টি গর্ভপাতের ৬টিতেই পুরুষসঙ্গী গর্ভপাতের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। বাংলাদেশের সমাজের উপর কৃত বিভিন্ন গবেষনায়ও অধিকাংশ গর্ভপাতের ঘটনায় পুরুষের চাপের ব্যাপার উঠে এসেছে।....
আর এখানেই আসে আজকের তথাকথিত 'সমতা' বা 'ইকুয়াল রাইটস' ধারণার প্রশ্ন। পশ্চিমা ভাবধারায় নারীকে 'সমান অধিকার' ‘স্বাধীনতা’ ও ‘ভোগের অধিকার’ নাম দিয়ে আসলে তাকে পুরুষের মতো ‘যৌন আগ্রাসী’ করে তোলার প্রয়াস চলছে। বলা হচ্ছে, নারী-পুরুষ সমান— অর্থাৎ, নারীও চাইলে আবেগহীনভাবে যৌনসম্পর্ক করতে পারবে, সন্তান চাইলে রাখবে, না চাইলে মেরে ফেলবে!
এই সমতার ফলাফল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৬০ লাখ গর্ভপাত হয়, যার সিংহভাগ ঘটে অবিবাহিত নারীর মধ্যে (CDC Report, 2022)। ইউরোপে ৪৫% নারী ৩০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই কমপক্ষে একবার গর্ভপাত করেছে (Eurostat, 2021)।
অথচ বিশ্বব্যাপী ধর্ষণের মামলার বিচার অনুপাতে মাত্র ১% অপরাধীর সাজা হয় (UN Women, 2023)। এর অর্থ দাঁড়ায় — যৌনমুক্তির নামে নারী শুধু দেহগতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, অথচ তার নিরাপত্তা নেই।...
তাহলে সমতা আন্দোলনের এই চক্রান্তে সুবিধাভোগী কারা? — পুরুষরাই। কারণ নারী যদি নিজেকে যৌন বিষয়ে রক্ষণশীলতা ও মাতৃত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, তবে পুরুষের জন্য নারীর শরীর সহজে ভোগের উপযোগী ‘পণ্য’তে পরিণত হবে। কোনো আবেগ, দায়িত্ব বা পারিবারিক বন্ধন ছাড়াই নারীকে ব্যবহার করা যাবে।
এটা কি নারীর মুক্তি? নাকি এক নতুন দাসত্ব?
এবার আসি নারীর অর্থনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে সাম্যের প্রশ্নে। এই মুলাটা হলো বস্তুত কেবলই তাদের বক্তব্যের কনসিস্টেন্সি ধরে রাখার জন্য তারা দেয়। আপনি এখনো ওয়েস্টার্ন কর্পোরেট জগতে গেলে দেখতে পাবেন টপ থেকে নিয়ে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পজিশনগুলো পুরুষদের দখলে। তাই সমান অধিকারের এই বয়ান বস্তুত নারীকে সহজে সহজলভ্য করার পশ্চিমা টোটকা বৈ কিছুই নয়।৷৷ প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা লুকিয়ে আছে তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে — তার লজ্জাশীলতা, রক্ষণশীলতা, মাতৃত্ববোধ, পারিবারিক অঙ্গীকার এবং আত্মমর্যাদায়। তাকে পুরুষের মতো বানানো নয়, বরং তার নিজস্ব মর্যাদা ও ভূমিকা রক্ষা করাই প্রকৃত নারীমুক্তির পথ।
তথাকথিত নারী স্বাধীনতা ও সমান অধিকারের নামে যে যৌনস্বাধীনতা ও জন্মনিয়ন্ত্রণের ‘উপভোগবাদী সংস্কৃতি’ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা নারীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় ষড়যন্ত্র; বস্তুত সমান অধিকারের এই আন্দোলন হলো নারীকে আরও সহজলভ্য করে ইচ্ছেমতো ভোগ্যপণ্য বানানোর আন্দোলন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নারীরাই আজ এই ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার হয়ে পড়ছে, নিজেদের 'স্বাধীন' ভাবছে— অথচ পরিণামে হারাচ্ছে নিজের স্বকীয়তা, আত্মসম্মান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষা।
- আহমাদ রফীক