19/06/2024
#ঘুরে_এলাম_ইংল্যান্ডের_প্রথম_মসজিদ
এবার ঈদের নামাযের ইমামতি করছিলাম North London এর একটি মসজিদে, আর সেই সুবাদে দেখে আসলাম #শাহ_জাহান_মসজিদ
ইংল্যান্ডের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ— শাহ জাহান খান মসজিদ। বর্তমানে ওকিং মসিজদ হিসেবে সমধিক পরিচিত। ধারণা করা হয়, নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে স্থাপিত ইংল্যান্ডের প্রথম মসজিদ এটিই। লন্ডনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরত্বে এর অবস্থান। আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি প্রসারে পারষ্পরিক বোঝাপড়া, শান্তি ও সম্প্রীতি তৈরিতে এ মসজিদে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়।
১৮৮৯ সালে ওকিং শহরের ওরিয়েন্টাল কলেজ শিক্ষার্থীদের নামাজের স্থান তৈরিতে ভুপালের সম্রাজ্ঞী শাহ জাহান বেগম অর্থদান করেন। পরবর্তীতে শাহ জাহানের নামেই এ মসজিদের নামকরণ করা হয়। হাঙ্গেরি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রাচ্যবিদ ড. গটলিব উইলহেম লেটনার তা স্থাপন করেন।
শিক্ষার্থীদের জন্য স্থাপিত মসজিদটির নকশা করেন বিখ্যাত স্থপতি উইলিয়াম আইজ্যাক চেম্বার। ফারসি-সারাসেন্স শৈলীতে এর নকশা করা হয়। মসজিদে একটি গম্বুজ, মিনার ও প্রশস্ত প্রাঙ্গণ আছে। এছাড়াও মসজিদের দেয়াল আরবি ক্যালিগ্রাফিতে সুসজ্জিত। এতে একটি ব্রিটিশ গ্রন্থাগারও আছে।
উইন্ডসর কাসলে অবস্থানকালে রানী ভিক্টোরিয়ার ভারতীয় সহকারি আবদুল করিম দাসদের নিয়ে মসজিদে এসেছিলেন। ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষার্থী ও অতিথিরা আসলে তা মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হত। ড. লেটনারের মৃত্যুর পর বেশ কয়েক বছর তা বন্ধ থাকে।
১৯১২ সাল পর্যন্ত মসজিদটি অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত হিসেবে থাকে। ড. লেটনারের ছেলে স্থানটি বিক্রি করার ইচ্ছা করেন। তখন কাশ্মীর বংশোদ্ভূত আইনবিদ খাজা কামাল উদ্দিন আদালতের শরণাপন্ন হয়ে মসজিদ বিক্রয়ে বাধা দেন। ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবে তা পৈত্রিক সম্পত্তি হবে না বলে— তিনি যুক্তি দেখালে মসজিদটি রক্ষা পায়।
১৯১৩ সালে লেটনারের পুত্রকে কিছু অর্থ প্রদান করে খাজা কামাল উদ্দিন মসজিদ পুনরায় চালু করেন। কিন্তু তিনি লাহোরভিত্তিক আহমদিয়া আন্দোলনের কর্মী হওয়ায় মসজিদটি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত আহমদিয়া সম্প্রদায় কর্তৃক পরিচালিত হয়। অবশ্য পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনে মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে তাদের প্রভাব কমতে থাকে। অবশেষে ১৯৭০ সালে ব্রিটেনের সুন্নি মুসলিম জনগোষ্ঠী মসজিদের পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
বিংশ শতকের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরা ব্রিটেনের ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি পরিদর্শন করেন। সৌদি বাদশাহ ফয়সাল, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ, ইথিওপিয়ার সম্রাট হেইল সেলেসি, মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রপতি টুনকু আবদুর রহমান, হায়দারাবাদের প্রধানমন্ত্রী মির ইউসুফ আলী খান, অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগের প্রথম স্থায়ী সভাপতি স্যার সুলতান মুহাম্মদ শাহ আগা খানসহ আরো অনেকে মসজিদ পরিদর্শনে আসেন। এছাড়াও ব্রিটিশ রাজ পরিবার ও লর্ড হেডলি ও মারমাদুকে পিকথল এবং ব্রিটেনের বিখ্যাত নও মুসলিমরা মসজিদটি পরিদর্শন করেন।