12/10/2025
সাংসারিক জীবনে যত বেশি গোপনীয়তা বজায় রাখবেন, গোপন রাখবেন সবকিছু ততই শান্তি পাবেন। আল্লাহর বরকত নাযিল হতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
যত সাংসারিক সমস্যা হয় তার একটা বড় কারণ হলো অনলাইনে প্রকাশ করা বা প্রথম অবস্থাতেই নতুন বিয়ে করে সুন্দর সুন্দর পোস্ট দেওয়া বা নিজেদের সাংসারিক বা ব্যাক্তিগত খুনসুটি ইন্ডাইরেক্টলিভাবে হলেও প্রকাশ করা।
বিশ্বাস করেন বাংলাদেশে এখনো সংখ্যায় অনেক কম হলেও এমনও দম্পত্তি আছে যারা একজন আরেকজনকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা। এক কথায় একজন আরেকজনের জন্য পুরো পাগল, যেটা কিনা আমাদের অনেকের স্বপ্ন যে আমরাও যেন এমন স্বামী বা স্ত্রী পাই।
কিন্তু দেখবেন তাদেরকে সামনাসামনি দেখলে বুঝবেনও না। তাদের ভালোবাসার কথা বা সাংসারিক কোন কথা লোকসমাজে বলে বেড়ায় না, বুঝতেও দেয়না। ফেইসবুক বা অনলাইনে ডাইরেক্টলি-ইনডাইরেক্টলি প্রকাশও করেনা।
এই মোবাইল, অনলাইন বা সোস্যাল মিডিয়ার যেরকম পজিটিভ কিছু দিক আছে তার চেয়েও বেশি নেগেটিভ দিক আছে। এগুলোর কারণে সাংসারিক অশান্তি, পরকীয়া, সবসময় দুশ্চিন্তা, নিজেদের কিছু ব্যাক্তিগত সময়, খুনসুটি সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
এজন্য প্রয়োজন ছাড়া নিজের স্ত্রীকে এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করতে দেওয়াই উচিত না। একইভাবে আপনারও ব্যাবসায়ীক বা জরুরি কাজ ব্যাতীত অতিরিক্ত মোবাইল বা অনলাইন ব্যবহার করা উচিত না, অন্তত বিয়ের পর। যাস্ট ১ সপ্তাহ চেষ্টা করে দেখুন ফলাফল নিজেই দেখতে পাবেন ইনশাআল্লাহ।
কারণ-
১| আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেনঃ
عن ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العين حق
বদ নজর সত্য। (বুখারীঃ ১০/২১৩)
২| আয়েশা সিদ্দীকা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
استعيذوا بالله من العين فإن العين حق
তোমরা বদ নজরের ক্রিয়া (খারাপ প্রভাব) থেকে রক্ষার জন্যে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা কর। কেননা তা সত্য। (ইবনে মাযাহঃ ৩৫০৮)
৩| ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
العين حق ولو كان شيء سابق القدر لسبقته العين ، وإذا استغسلتم فاغسلوا
বদ নজর (এর খারাপ প্রভাব) সত্য এমনকি যদি কোন বস্তু ত্বাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। সুতরাং তোমাদেরকে যখন (এর প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্যে) গোসল করতে বলা হয় তখন তোমরা গোসল কর । (মুসলিমঃ ১৪/১৭১)
৪। আসমা বিনতে উসাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আবেদন করনে যে, জাফরের সন্তানদের নজর লাগে আমি কি তাদের জন্যে ঝাড়ফুঁক করব? উত্তর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
نعم فلو كان شئ سابق القضاء لسبقته العين
অর্থঃ হ্যাঁ! কোন বস্তু যদি তাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। (তিরমিযীঃ ২০৫৯, আহমদঃ ৬/৪৩৮)
৫| আবু যর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
ان العين لتولع بالرجل بإذن الله حتى يصعد حالقا فيتردى منه
ইমাম আহমদ ও আবু ইয়ালা বর্ণনা করেছেন । এই হাদীসের সারমর্ম হল, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তির যখন নজর লাগে তখন এত বেশি প্রভাবিত হয় যে, সে যেন কোন উচু স্থানে চড়ল অতঃপর কোন নজর দ্বারা হঠাৎ করে নীচে পড়ে গেল। (শায়খ আলবানী সহীহ বলেছেনঃ ৮৮৯)
৬| জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
العين تدخل الرجل القبر وتدخل الجمل القدر
অর্থঃ বদ নজর মানুষকে কবর পর্যন্ত পৌছে দেয় এবং উটকে পাতিলে । (সহীহ আল জামেঃ শাইখ আলবানী (রহঃ) সহীহ বলেছেনঃ ১২৪৯)
৭| জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
أكثر من يموت من أمتي بعد قضاء الله وقدره بالعين
অর্থঃ আমার উম্মতের মধ্যে তাকদীরের মৃত্যুর পর সর্বাধিক মৃত্যু বদ নজর লাগার দ্বারা হবে। (মুসনাদে বাযযার)