25/09/2025
🍷“Last Tango in Paris”: মনস্তত্ত্ব ও চলচ্চিত্র-তত্ত্বের আলোকে বিশ্লেষণ🎬
বার্নার্ডো বার্তোলুচ্চির *Last Tango in Paris* সাধারণ প্রেমের গল্প নয়, বরং মানুষের অবচেতন, ক্ষত-বিক্ষত মানসিকতা এবং দেহ-আবেগের সম্পর্ককে এক গভীর দৃষ্টিতে দেখার প্রচেষ্টা। এই চলচ্চিত্রটিকে বোঝার জন্য মনস্তাত্ত্বিক ও চলচ্চিত্র-তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগানো জরুরি।
📖 কাহিনী সংক্ষেপ-
*Last Tango in Paris*-এর গল্প শুরু হয় পল নামের মধ্যবয়সী এক আমেরিকানকে ঘিরে, যে সদ্য স্ত্রীর আত্মহত্যার পর গভীর মানসিক ভাঙনের মধ্যে আছে। অন্যদিকে আছে জ্যান, তরুণী এক প্যারিসিয়ান নারী, যে নিজের প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। ঘটনাচক্রে তারা এক খালি অ্যাপার্টমেন্টে দেখা করে, আর সেখানেই শুরু হয় এক অদ্ভুত সম্পর্ক—যেখানে তারা দু’জনেই ঠিক করে নেয়, কোনো পরিচয়, অতীত বা ভবিষ্যৎ থাকবে না, থাকবে শুধু শরীরের টান। ধীরে ধীরে এই সম্পর্ক আবেগ, ক্ষমতা আর ভাঙনের জালে জড়িয়ে পড়ে। জ্যান যখন বুঝতে পারে যে পল তাকে নিজের দুঃখ, শোক আর অসহায়তার ভরসা হিসেবে ব্যবহার করছে, তখন সে ভয় আর অস্বস্তিতে পিছু হটে। শেষ পর্যন্ত গল্পটি এক করুণ সমাপ্তির দিকে যায়, যেখানে প্রেম, শোক আর হিংসার সীমারেখা মিলেমিশে যায়।
🧠 মনস্তাত্ত্বিক পাঠ-
পলের চরিত্রটিকে ফ্রয়েডিয়ান দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করা যায়। স্ত্রীর আত্মহত্যা তাকে তীব্র ট্রমার মুখে ঠেলে দেয়, যেখানে যৌনতা তার কাছে হয়ে ওঠে শোক মোকাবেলার এক রূপ। এখানে “eros” (জীবন-প্রবৃত্তি) ও “thanatos” (মৃত্যু-প্রবৃত্তি) মুখোমুখি দাঁড়ায়। পল ও জ্যানের সম্পর্ক নিছক আনন্দের নয়, বরং তা ধ্বংস আর পুনর্গঠনের খেলা। জ্যানের কাছে সম্পর্কটি একদিকে মুক্তির স্বাদ দিলেও অন্যদিকে তা ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে।
🎥 চলচ্চিত্র-তত্ত্বের আলোকে-
চলচ্চিত্রটি *Auteur theory* (পরিচালককে মূল শিল্পী হিসেবে দেখা) দিয়ে পড়লে বোঝা যায়—বার্তোলুচ্চি নিজস্ব কণ্ঠে সমাজের ভণ্ডামি, সম্পর্কের অস্থিরতা এবং আধুনিক শহুরে জীবনের নিঃসঙ্গতাকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। সিনেমায় প্যারিসকে কেবল শহর নয়, বরং এক মানসিক গোলকধাঁধার মতো দেখানো হয়েছে। অ্যাপার্টমেন্টের ঘর, জানালা, দেয়াল—সবই চরিত্রদের মানসিক খাঁচার প্রতীক।
ক্যামেরার ব্যবহারও তাৎপর্যপূর্ণ। দীর্ঘ শট, অল্প আলোর দৃশ্য এবং স্থির ক্যামেরা চরিত্রদের আবদ্ধতা ও নীরবতা ফুটিয়ে তোলে। একই সঙ্গে রঙের উষ্ণতা ও ঠান্ডা টোনের খেলা আবেগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ করে।
⚖️ নৈতিকতা ও শিল্পের সীমা-
সবচেয়ে বিতর্কিত প্রশ্ন হলো—শিল্পের নামে কতদূর যাওয়া ন্যায়সঙ্গত? “Butter scene”-এর ঘটনায় মারিয়া শ্নাইডারের অস্বস্তি এবং আঘাত আজ চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক সতর্কবার্তা। এটি স্পষ্ট করে যে, ক্যামেরার সামনে “বাস্তব আবেগ” ধরার নামে কাউকে আঘাত করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে *Last Tango in Paris* শুধু শিল্পের উচ্চতর পরীক্ষা নয়, বরং চলচ্চিত্র জগতে নৈতিকতা ও সম্মতির প্রশ্ন তোলারও এক মাইলফলক।
🌒 এই সিনেমা এখনও আলোচিত হয় দ্বিমুখী কারণে—একদিকে এটি সাহসী ভাষায় মানুষের শূন্যতা ও দেহরাজনীতিকে তুলে ধরে, অন্যদিকে এটি শিল্প-নির্মাণের নামে ক্ষমতার অপব্যবহারের দৃষ্টান্ত। মনস্তাত্ত্বিক ও চলচ্চিত্র-তাত্ত্বিক আলোচনার মিশেলে বলা যায়, *Last Tango in Paris* হলো সৌন্দর্য ও আঘাত, স্বাধীনতা ও শোষণ, প্রেম ও ধ্বংস—সবকিছুর দ্বন্দ্বের এক অনন্য দলিল।