London Bichitra - লন্ডন বিচিত্রা

London Bichitra - লন্ডন বিচিত্রা মাসিক লন্ডন বিচিত্রা - প্রবাসী বাঙালিদের মুখপত্র

10/04/2025

লন্ডন হাফ ম্যারাথনে সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহানের সফল দৌড়: মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত

৭ এপ্রিল ২০২৫, ঐতিহাসিক লন্ডন হাফ ম্যারাথনে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ দৌড় সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও সামাজিক সংগঠক আনোয়ার শাহজাহান।

তিনি ‘ইভেলিনা চিলড্রেনস হাসপাতাল’-এর জন্য অর্থ সংগ্রহে অংশ নেন এবং ‘JustGiving’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সবাইকে এই মানবিক উদ্যোগে সহায়তার আহ্বান জানান। এ বছর ম্যারাথনের মাধ্যমে প্রায় ১৭ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

দৌড় শেষে আনোয়ার শাহজাহান বলেন,
“আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমতে সুস্থভাবে শেষ করতে পেরেছি। এটি ছিল আমার জীবনের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।”

তাঁর এই প্রয়াস সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেকেই এটিকে সমাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা ও মানবিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। এই অংশগ্রহণ প্রমাণ করে—শারীরিক সীমাবদ্ধতা নয়, মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি তার ইচ্ছাশক্তি।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক আনোয়ার শাহজাহানের গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪: ইতিহাসের কালচিত্র - গ্রন্থটি পাওয়া যাচ্ছে বাংলা একাডেমি ...
18/02/2025

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক আনোয়ার শাহজাহানের গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪: ইতিহাসের কালচিত্র - গ্রন্থটি পাওয়া যাচ্ছে বাংলা একাডেমি বইমেলায় কলি প্রকাশনীর এর স্টলে ।

পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো অভ্যুত্থানই বিনা রক্তপাতে সফল হয়নি। একইভাবে, বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের এই অধ্যায় ছিল বেদনাবিধুর—অনেক প্রাণ ঝরেছে, অনেকেই হয়েছেন চিরতরে পঙ্গু। তারুণ্যের এই আত্মত্যাগ শুধুমাত্র তখনই সার্থক হবে, যখন তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।

এই গ্রন্থ শুধু একটি অভ্যুত্থানের বিবরণ নয়, এটি একটি সংকটময় সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের এক জীবন্ত দলিল।

গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪: ইতিহাসের কালচিত্র

✍ লেখক: আনোয়ার শাহজাহান
📚 প্রকাশনায়: কলি প্রকাশনি
📍 স্টল নম্বর: ৪৮৯, ৪৯০, ৪৯১, ৪৯২

18/02/2025

আনোয়ার শাহজাহান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার শুভ উদ্বোধন

গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি: গোলাপগঞ্জের আনোয়ার শাহজাহান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার দুপুর ১টায় অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতার শুভ উদ্বোধন করেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট ইউকের জেনারেল সেক্রেটারি ও তায়িবা টিভির সিইও তারিক রহমান ছানু।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহান। উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আনোয়ার হুমায়ুন, প্রধান শিক্ষক মিটু কিন্ত দেব, শিক্ষক তামান্না বেগম ও শিক্ষক বুশরা বেগম। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সিনিয়র শিক্ষক মেহেদি হাছান।

প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্টে অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং তাদের সন্তানদের উৎসাহিত করেন।

প্রধান অতিথি তারিক রহমান ছানু বলেন, “একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু পাঠদানের জন্য নয়, বরং ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অপরিহার্য। আনোয়ার শাহজাহান প্রাথমিক বিদ্যালয় সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।”

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ার শাহজাহান বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, তাদের শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চার প্রয়োজন। আমি আশা করি, এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে সমাজ ও দেশের গর্ব হয়ে উঠবে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অতিথিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। এ আয়োজন শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেন।

বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহানের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পগ্রন্থ  #অপেক্ষার_প্রহর এখন পাওয়া যাচ্ছে ইত্যাদি প্রকাশ...
18/02/2025

বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহানের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পগ্রন্থ #অপেক্ষার_প্রহর এখন পাওয়া যাচ্ছে ইত্যাদি প্রকাশনের স্টলে। বইটি মুক্তিযুদ্ধের অজানা কাহিনি, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রাম, অপেক্ষা, ত্যাগ ও বীরত্বের গল্প তুলে ধরেছে, যা পাঠকের হৃদয়ে গভীরভাবে নাড়া দেবে।

"অপেক্ষার প্রহর" শুধু একটি গল্পগ্রন্থ নয়, এটি একাত্তরের স্মৃতিচারণ, বেদনাময় মুহূর্ত ও বীরত্বগাথার এক অনন্য সংকলন। আনোয়ার শাহজাহান তার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছেন, যেখানে দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতার জন্য অক্লান্ত সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।

বইটি সংগ্রহ করতে চলে আসুন ইত্যাদি প্রকাশনের স্টল, প্যাভিলিয়ন ১৯-এ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও গৌরবগাথায় সমৃদ্ধ এই গল্পগ্রন্থটি আপনার সংগ্রহে রাখার মতো একটি মূল্যবান সংযোজন হবে।

Anwar Shahjahan Anwar Shahjahan - আনোয়ার শাহজাহান

গোলাপগঞ্জ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন কল্যাণ সংস্থার ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ সম্পন্নগোলাপগঞ্জ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন কল্যা...
25/01/2025

গোলাপগঞ্জ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন কল্যাণ সংস্থার ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন

গোলাপগঞ্জ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন কল্যাণ সংস্থার আয়োজনে বার্ষিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান গত ২৪ জানুয়ারি, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকাদক্ষিণ সামি প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহান। সংস্থার সভাপতি সালেহ আহমদের সভাপতিত্বে এ সভা পরিচালনা করেন শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের দোভাষী মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।

প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নের শিরোপা অর্জন করে ভাদেশ্বর ইউনিয়ন, আর রানার্সআপ হয় ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়ন। চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ও মেডেল গ্রহণ করেন ভাদেশ্বর ইউনিয়নের টিম ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন, আর রানার্সআপ ট্রফি ও মেডেল গ্রহণ করেন ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের টিম ক্যাপ্টেন লিপু আহমদ। খেলোয়াড়দের দক্ষতা ও মনোবল উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আনোয়ার শাহজাহান বলেন, "প্রতিবন্ধীরা আর সমাজে পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী নয়। তারা যদি সঠিক সহায়তা ও সুযোগ পায়, তবে সমাজের মূলধারায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো, যাতে তারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেদের প্রতিভা বিকশিত করতে পারে।"

তিনি আরও বলেন, "আমাদের সমাজে এখনো অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অবহেলিত। তাদের দক্ষতা ও প্রতিভার সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না। কিন্তু আজকের এই প্রতিযোগিতা প্রমাণ করেছে, তারা অন্যদের মতোই সক্ষম। প্রয়োজন শুধু তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করা।"

আনোয়ার শাহজাহান প্রবাসী ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আমাদের উচিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও খেলাধুলার মতো কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা, যাতে তারা আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে উঠতে পারে। দেশে ও বিদেশে যারা সামর্থ্যবান, তারা যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব।"

তিনি আরও বলেন, "সহানুভূতির পাশাপাশি বাস্তব সহায়তা ও সুযোগ দিতে হবে, যাতে তারা নিজেদের মেধা কাজে লাগিয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে। আমরা যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করি, তবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন সম্ভব, যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।"

আয়োজকরা জানান, প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে সমাজের অন্যান্য শ্রেণির মানুষের সংযোগ স্থাপন, তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটানোই এই টুর্নামেন্টের মূল লক্ষ্য। তারা ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে এ ধরনের আয়োজন আরও বাড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানানো হয়, এবং প্রধান অতিথি আনোয়ার শাহজাহান তাদের উৎসাহিত করতে উপহার ও স্মারক প্রদান করেন।

 #গল্প_হলেও_গল্প_নয়। একটি সত্য কাহিনী!রফিকের কষ্টের জীবন: এক প্রবাসী যুবকের সংগ্রাম #আনোয়ার_শাহজাহানমোহাম্মদ রফিক, সিলে...
16/12/2024

#গল্প_হলেও_গল্প_নয়। একটি সত্য কাহিনী!
রফিকের কষ্টের জীবন: এক প্রবাসী যুবকের সংগ্রাম

#আনোয়ার_শাহজাহান

মোহাম্মদ রফিক, সিলেটের এক ছোট গ্রাম থেকে উঠে আসা এক সাধারণ যুবক, যার জীবন সংগ্রাম ও কষ্টের এক দীর্ঘ ইতিহাস। তার পরিবারের অবস্থা ছিল খুবই দরিদ্র। বাবা ছিলেন একজন কৃষক এবং মা গৃহিণী। ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে রফিক ছিল তৃতীয়। তাদের জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত সাধারণ, কখনো কখনো একবেলার খাবারের জন্যও তারা সংগ্রাম করত। সারা দিন পরিশ্রমের পরেও কখনোই সংসারে পর্যাপ্ত খাবার থাকত না। এমন পরিস্থিতিতে রফিকের ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল একদিন বড় কিছু করবে, পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবে, তবে তা শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সম্ভব হবে।

বাবা, মা এবং ভাই-বোনদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য রফিক জানত, তাকে কোনো এক সময়ে দেশের বাইরে যেতে হবে। যদিও সে জানত, বিদেশে জীবন কেমন হবে, তেমন কোনো ধারণা তার ছিল না, তবে সে একটাই আশা নিয়ে সেখানে পাড়ি জমায়—একদিন সে তার পরিবারের কষ্ট লাঘব করবে।

২০১৪ সালে, রফিক সিলেটের গ্রাম থেকে দুবাই চলে আসে। তার আকাঙ্ক্ষা, একদিন সে পরিবারকে সুখী করবে। কিন্তু দুবাই পৌঁছানোর পর তার জন্য জীবন অনেক কঠিন হয়ে ওঠে। ভাষাগত বাধা, আইনগত সমস্যা, থাকার জায়গার অভাব—সব কিছুই তার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করলেও, তার জীবনটাকে পরিবর্তন করা খুব সহজ ছিল না। প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রমের পরও পকেটে কিছু টাকা জমা হত না, বরং প্রতিদিনের জীবনযাপন ছিল তার জন্য এক বড় সংগ্রাম।

এভাবেই তার দিন গড়িয়ে যায়। কিন্তু রফিক জানত, একদিন তার এই কষ্টের পরিশ্রম সার্থক হবে। তার পরিবারের জন্য কিছু করার এক প্রবল ইচ্ছা তাকে প্রতিদিন আরও বেশি পরিশ্রম করতে অনুপ্রাণিত করত। তবুও, তার জীবনে একটি বড় বিপর্যয় চলে আসে।

একদিন, নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করার সময়, একটি বড় কংক্রিটের পিস তার পায়ে পড়ে যায়। হাসপাতালের চিকিৎসার পর, ডাক্তাররা জানান যে তার পা আর সুস্থ হবে না। রফিকের জীবনে তখন এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি শুরু হয়। তার পুরো দেহ অক্ষম হয়ে পড়ে, তবে তার মনোবল এতটুকু ভাঙেনি। সে জানত, এক পা হারানো জীবনকে সে সহজে হেরে যেতে দিবে না। কিন্তু, যে যাত্রা শুরু হয়েছিল এক পরিবারকে সুখী করার উদ্দেশ্য, সে যাত্রায় এই অঘটন তার পথে এক বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

তবে রফিক একদিন সিদ্ধান্ত নেয়, জীবন থেমে থাকবে না। পা হারিয়েও সে তার জীবনের লড়াই চালিয়ে যাবে। আর কিছু না হোক, ছোট একটি ব্যবসা শুরু করবে, যাতে কিছু হলেও তার পরিবারকে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু তার কষ্টের অধ্যায় এখানেই থেমে ছিল না।

২০১৮ সালের দিকে রফিকের জীবনে আরও এক বড় বিপর্যয় আসে—তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমদিকে, তাকে সাধারণ সর্দি-কাশি মনে হলেও, পরবর্তী সময়ে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। যখন তার মা হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন রফিক নিজের জীবনের সব টাকা খরচ করে তাকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে তার মা যে ধরনের অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছিল, তা ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, মাকে বাঁচানোর জন্য যতটা টাকা দরকার, তার পক্ষে তা জোগাড় করা অসম্ভব। রফিকের তখন একটাই চিন্তা ছিল—সে মা’কে বাঁচাতে চায়, তবে তার পকেটে অর্থের অভাব ছিল। যদিও সে নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে কিছু টাকা পাঠাতো, তবে চিকিৎসার খরচ সঠিকভাবে জোগানো তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

তার মায়ের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে এবং এক সময় ডাক্তাররা বলেন, "আর কোনো আশা নেই, আপনার মাকে বাঁচানো সম্ভব নয়।" এই শোকটিই রফিকের জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখের মুহূর্ত হয়ে দাঁড়ায়। কিছুই সে করতে পারল না। মা’কে বাঁচানোর জন্য যা কিছু দরকার ছিল, তা তার পক্ষে কখনোই পূর্ণ করা সম্ভব ছিল না। রফিক জানতো, তার মা যে কখনোই পুরোপুরি সুস্থ হতে পারবেন না, তা এক চরম যন্ত্রণাদায়ক বাস্তবতা। তার মায়ের মৃত্যুর পর, তার মনে হয়েছিল, "আমি কী করতে পারলাম? কেন আমি আমার মাকে বাঁচাতে পারলাম না?"

এরপর তার মনে হয়েছিল, “একটা ভালো জীবন উপহার দেওয়ার জন্য বিদেশে আসলাম, কিন্তু সেই ভালো জীবন আমি নিজের মায়ের জন্য দিতে পারলাম না। তার চেয়েও বড় ব্যর্থতা আর কী হতে পারে?” রফিক জানত, নিজের মা’কে বাঁচানো তার পক্ষে সম্ভব ছিল না, কিন্তু সে সেই কষ্টের জন্য নিজেকে কখনোই মাফ করবে না। তার মধ্যে এক অদম্য মনোবল ছিল—সে জানতো, জীবনের সংগ্রাম থামবে না।

মায়ের মৃত্যু রফিকের জীবনকে আরও কঠিন করে তোলে, কিন্তু সেই কঠিন পরিস্থিতি থেকেও সে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করে। আজ, দীর্ঘ ১০ বছর পর, তার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। যদিও তার এক পা হারিয়েছে, তবুও তার মনোবল আকাশ ছুঁয়েছে। এখন সে জানে, জীবনের কঠিনতম সময়েও যদি থেমে না যাওয়া যায়, তবে একদিন সফলতা আসবেই।

রফিকের কষ্টের গল্প শুধু তার নিজের নয়, বরং পৃথিবীজুড়ে থাকা লক্ষ লক্ষ প্রবাসী যুবকের কষ্টের গল্প, যারা পরিবারের জন্য তাদের জীবন বিপন্ন করে পরিশ্রম করে, তাদের পরিশ্রমের মূল্য কখনোই সঠিকভাবে মূল্যায়িত হয় না। তবে একদিন সেই সংগ্রাম শেষ হবে, যখন তারা নিজে দাঁড়াবে, নিজেদের জীবনে কিছু অর্জন করবে।

রফিকের মতো মানুষের কষ্টের গল্পগুলো আমাদের শেখায়, থেমে গেলে চলবে না। হারিয়ে যাওয়া কিছু ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, তবে নতুন কিছু তৈরি করতে আমাদের যে শক্তি প্রয়োজন, তা নিজের মধ্যে খুঁজে বের করতে হয়। রফিক জানে, তার কঠোর সংগ্রাম এবং পরিশ্রম একদিন তাকে এবং তার পরিবারকে সেই সুখ এনে দেবে, যা সে তার মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর সময় কখনোই দেখতে পারেনি।

।।

#আমার_নিজের_কথা

রফিকের সাথে আমার দেখা এবং তার সংগ্রামের গল্প শুনে আমি গভীরভাবে অভিভূত। তার সাহস, পরিশ্রম, এবং অটুট মনোবল সত্যিই প্রশংসনীয়। রফিকের মতো প্রবাসী শ্রমিকরা আমাদের শেখায়, জীবনের কঠিন সময়ে কখনো হাল ছাড়লে চলবে না। আমি তাকে স্যালুট করি, কারণ সে নিজের এবং পরিবারের জন্য অবিরাম সংগ্রাম করছে, এবং তার এই সাহসিকতা আমাদের প্রেরণা দেয়।

মোহাম্মদ রফিকের মতো অসংখ্য তরুণ যুবক মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিদিন সংগ্রাম করছে, তাঁদের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে কঠিন পরিস্থিতিতে। সিলেটের গ্রাম থেকে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ যুবকরা, তাঁদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছে। তবে তাঁদের পরিণতি অনেক সময় রফিকের মতোই হয়—একটি অসম্ভব যুদ্ধ, যে যুদ্ধ কখনো শেষ হয় না।

এই যুবকেরা যখন বিদেশে যায়, তখন তাঁদের চোখে একমাত্র লক্ষ্য থাকে—পরিবারের জন্য কিছু করতে হবে, তাঁদের জীবন বদলাতে হবে। তারা জানে, বিদেশের মাটিতে কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে কিছু টাকা জমিয়ে দেশে পাঠানো সম্ভব। কিন্তু তাদের এই সংগ্রাম যে কতটা কষ্টকর, তা বুঝতে গেলে তাদের প্রতিদিনের জীবন, তাদের অভ্যস্ততা, তাদের দিনযাপন দেখা প্রয়োজন।

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করার জন্য যাওয়া মানুষগুলোর মধ্যে অধিকাংশই হয় নির্মাণ শ্রমিক, গাড়ি চালক, অথবা ছোটখাটো শ্রমিকের কাজ করে। রফিকের মতো অনেকেই বিদেশ গিয়ে, শুরুতে নানান সমস্যার মুখোমুখি হয়। ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, সঠিক কাজ না পাওয়া, খাবার ও থাকার জায়গা জোগানো—এই সমস্ত সমস্যার মধ্যে দিয়ে তাদের দিন চলে। তবে, তাদের অন্তরে থাকে এক অদম্য শক্তি—পরিবারকে সুখী করার এবং নিজেদের জীবনে একটু হলেও পরিবর্তন আনার প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা।

এভাবেই প্রবাসী রফিকদের জীবনের গল্প আমাদের চোখে আনে, তাদের সংগ্রাম এবং পরিশ্রমের নীরব কান্না। কিন্তু তাদের জীবনও প্রমাণ করে, যে মানুষের মধ্যে যদি ইচ্ছাশক্তি থাকে, মনোবল দৃঢ় থাকে, তবে কোনো বাধাই তাকে থামাতে পারে না।

Anwar Shahjahan

 #মুক্তিযুদ্ধের_গল্প - প্রতিশোধ #আনোয়ার_শাহজাহান - আফিয়া বেগম সার্কেল এএসপির মুখোমুখি বসে আছেন। হাতে-পায়ে বেশ কয়েকটি ব্য...
16/12/2024

#মুক্তিযুদ্ধের_গল্প - প্রতিশোধ
#আনোয়ার_শাহজাহান

- আফিয়া বেগম সার্কেল এএসপির মুখোমুখি বসে আছেন। হাতে-পায়ে বেশ কয়েকটি ব্যান্ডেজ। তাঁর চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পিনপতন নীরবতা। সবাই হতবাক। কারোরই বিশ্বাস হচ্ছে না যে গ্রামের হতদরিদ্র একজন নারী কীভাবে জনপ্রতিনিধি, ইমাম, ব্যবসায়ীসহ চারজনকে খুন করেছেন। প্রত্যেককেই খুন করা হয়েছে বুকে গুলি করে। সবার শরীরেই পাওয়া গেছে একই পিস্তলের গুলি। সর্বশেষ চেয়ারম্যানকে খুন করতে গিয়েই হাতেনাতে ধরা পড়েছেন তিনি।

এএসপি মুশফিকুর রহিম নীরবতা ভেঙে প্রশ্ন করলেন;

আপা, আপনি এলাকার গুরুত্বপূর্ণ চারজন ব্যক্তিকে পরপর খুন করে ফেললেন! আমরা আধুনিক সব ধরনের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েও খুনিকে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। অথচ ভাগ্যক্রমে ধরা পড়েছেন আপনি। কী এমন কারণ থাকতে পারে যে আপনি তাঁদের খুন করলেন? আর আপনি আগ্নেয়াস্ত্র পেলেন কোথায়?

আফিয়া বেগমের চোখেমুখে আনন্দের হাসি। নিঃসংকোচ আর নির্ভয়ে তিনি বলতে শুরু করলেন;

স্যার, আপনি আবারও ভুল কথা বললেন। আমি চারজনকে খুন করি নাই। খুন করছি সাতজনকে। যে তিনজন অপহৃত হয়েছে বলে পত্রপত্রিকায় প্রচার করা হইছে, সেই তিনজনকেও আমি খুন করেছি। আমি নিজে গর্ত খুঁড়ে তাদের মাটিচাপা দিয়েছি। এখন আমার সবকিছু বলতে কোনো দ্বিধা নেই। আমার মিশন সাকসেস। এখন আমার ফাঁসি হলেও শান্তিতে মরতে পারব। আমি যা-কিছু করেছি, তা দেশের স্বার্থেই করেছি। এই সোনার বাংলাকে কলুষমুক্ত করতে পেরে আমি আনন্দিত। এটা শুধু আমার প্রতিশোধস্পৃহা নয়, এটা ছিল আমার নৈতিক দায়িত্ব।

আজ থেকে প্রায় নয় বছর আগের ঘটনা। আমি তখন ইউনিভার্সিটি পাস করে তিন বছর হলো বাড়ির পাশের সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে জয়েন করেছি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যেদিন দেশ স্বাধীন হয়, তার প্রায় এক মাস আগে অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর রাতে আমার বাড়ি ঘেরাও করে পাকিস্তানি সেনারা। সাথে ছিল এলাকার রহিম ফরাজি, আসলাম মোল্লা, রবিউল ইসলাম ও জোবেদ আলী। রাত তখন তিনটা বাজে। তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে তখন আমি ভাত বেড়ে খেতে দিচ্ছিলাম। ভাতের প্লেটগুলো একে একে তাঁদের সামনে দিয়েছি। আলু ভাজির বাটিটা হাতে নিতেই ধড়াম করে বুটের এক লাথিতে এক পাল্লার দরজাটা ভেঙে গেল। ঘরে ঢুকে পড়ল পাকিস্তানি সেনারা। প্রথমে অস্ত্রের মুখে ওই তিনজনকে পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে। তাঁদের বাঁধতে গিয়ে ভাত-তরকারির থালা-বাটিগুলো জুতা দিয়ে মাড়িয়ে তছনছ করে সেনারা। তারপর ওই তিন যোদ্ধার সাথে আমাকেও চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেল ক্যাম্পে।

ক্যাম্পের মধ্যে একাধিক হ্যাজাকের আলোয় ঝলমল করছে চারদিক। ক্যাম্পটির ভেতরে দক্ষিণ দিকের আমগাছটার সাথে তিনজনকে প্রথমে বাঁধল। তারপর পাকিস্তানি সেনাদের পোষা দুটি হিংস্র কুকুরকে লেলিয়ে দিল তাঁদের ওপর। এর ঠিক দশ হাত দূরেই আমাকে ধরে রেখেছিল দুজন। আধা ঘণ্টার মধ্যে কুকুর দুটি কামড়িয়ে তিনজনের শরীর থেকে খাবলা খাবলা মাংস ছিঁড়ে নিয়েছে। একসময় তিনজনই নিস্তেজ হয়ে পড়লেন। পরে ঠেলাগাড়ির মতো একটি ভ্যানে তুলে তিনজনকে নিয়ে চলে গেল ক্যাম্পের বাইরে। কোথায় নিয়ে গেল তা আর জানতে পারিনি।

এরপর শুরু হলো আমার ওপর নির্যাতন। একটি অন্ধকার রুমে আমাকে নিয়ে গেল। জানালা দিয়ে হ্যাজাকের আলো ঘরটিতে আসছিল সামান্যই। তাতে সবারই মুখ দেখা যাচ্ছিল আবছা আবছা। রুমে আর কেউ নেই। প্রথমে পাকিস্তানি কমান্ডার ভেতরে ঢোকে। হাতে ছিল দুই পাশে ধারালো একটা চাকু। আমার খুব কাছে এসে বলল;

চোখের সামনেই তো দেখলে কীভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ছিঁড়ে খেয়েছে আমার কুকুরগুলো। তোমাকে আমি মারব না। কেননা তুমি আমাদের সুখ দেবে প্রতিদিন।

এ কথা বলেই ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ওপর। বিকৃত যৌনতৃষ্ণা মিটিয়ে চলে যাওয়ার পরপরই এল আরেক পাকিস্তানি অফিসার। সে এসে কোনো কথা বলল না। শুধু হিংস্র দানবের মতো আমাকে ভোগ করে চলে গেল। এরপর একে একে এল চারজন বাঙালি রহিম ফরাজি, আসলাম মোল্লা, রবিউল ইসলাম ও জোবেদ আলী।

প্রথম দিন কখন জ্ঞান হারিয়েছিলাম মনে নেই। পরদিন বেলা এগারোটায় জ্ঞান ফিরলে দেখি, আমি আরেকটি ঘরে বিবস্ত্র অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছি। সেখানে আমার মতো আরও নয়টি মেয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে আমার গ্রামের দুটি মেয়েকে চিনতে পারলাম। তারা সবাই অসুস্থ। প্রতিদিন কয়েকজনের পাশবিক নির্যাতন সইতে সইতে না মরে বেঁচে আছে কোনো রকমে। অনেকের শরীরে আঘাতের চিহ্ন। কারও কারও গায়ের ক্ষতে ইনফেকশন হয়ে গেছে। সেখান থেকে উৎকট গন্ধ বের হচ্ছে। কয়েকজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তারা না পারে বেঁচে থাকতে, না পারে মরে যেতে।

রাতদিন চলত মেয়েদের ওপর নির্যাতন। যখন যাকে মনে ধরত, তাকে নিয়ে যেত পাশের ওই ঘরে। নির্যাতন শেষ হলে নিয়ে আসত কমন রুমে। কখনো কখনো অজ্ঞান অবস্থায় রেখে যেত। এভাবে নির্যাতন সইতে না পেরে যে মারা যেত, তাকে নিয়ে যেত ক্যাম্পের বাইরে। শুনেছিলাম, ক্যাম্পের পশ্চিম পাশের জঙ্গলে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখত তাদের।

৪ ডিসেম্বর তারিখে দেখলাম আমার বড় ভাইয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে আর ভাবিকে ধরে এনেছে। তাদেরও একই শোচনীয় অবস্থা। ভাবির কাছ থেকেই জানলাম, আমার ঘরে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাওয়া গেছে এই অপরাধে আমার ভাই আর ভাইপোকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। সেই সাথে ধরে এনেছে ভাবি ও মেয়েকে। এসব কাজে ইন্ধন জুগিয়েছে এলাকার ওই চারজন রাজাকার। তারা গভীর রাতে আসত আমার কাছে। স্বাধীনতার আগের দিন পর্যন্ত তারা আমাকে ধর্ষণ করেছে। চোখের সামনে ভাতিজিকে নিয়ে যেত পাশের রুমে। অজ্ঞান হয়ে গেলে রেখে যেত। কিছুই করার ছিল না আমার পক্ষে। শুধু চুপচাপ সবকিছু সহ্য করতে হতো। কেননা কোনো মেয়ে প্রতিবাদ করলে কিংবা অপারগতা প্রকাশ করলে ঘরের মধ্যে বাঁশের আড়ার সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখত। যতক্ষণ সে ক্ষমা না চাইত, আর বলত যে আর কখনো কোনো কিছুতে অমত করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত চলত এই শাস্তি।

আমরা জানতাম যে আমাদের সবাইকেই ওদের লালসার শিকার হয়ে একসময় মরতে হবে। অন্ধকার ঘরে বন্দী থেকে মোটেও বুঝতে পারিনি দেশের অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে। ১৫ ডিসেম্বর রাতে আমাদের রুমে কেউ এল না। সবাই খুব অবাক হলাম। যেহেতু বাইরে থেকে ঘরে তালা দেয়া থাকত, তাই জানালা দিয়ে সেদিন দেখলাম পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের চোখেমুখে একধরনের উদ্বিগ্নতা। আতঙ্কের ছাপ। সবাই কেমন যেন কানাকানি করছে। সবাই খুব ব্যস্ত। রাত ভোর হয়ে গেল কিন্তু আমাদের ঘরের তালা কেউ খুলতে আসেনি।

১৬ তারিখ সকালেই দেখি ক্যাম্প দখল করে নিল মুক্তিবাহিনী। পাকিস্তানি সেনারা সবাই আত্মসমর্পণ করল। দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হলো আমাদের। নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলো সবাইকেই। প্রায় দেড় মাস চিকিৎসার পর আমি, ভাবি আর মেয়ে বাড়িতে ফিরলাম।

সেদিন ছিল ১৯৭২ সালের ফেব্রæয়ারি মাসের ২ তারিখ। বাড়িতে ফিরে দেখি ভিটেতে শুধু মাটির দেয়ালগুলো দাঁড়িয়ে আছে। বাকি সব পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে পিশাচরা। যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালেই বাবাকে একদিন ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা। আর ফিরে আসেননি। সেই শোকে মা মারা গেছেন স্ট্রোক করে। ভাবি আর আমি অতি কষ্টে শুরু করলাম জীবনসংগ্রাম। বেঁচে থাকার লড়াই। স্কুলের বেতন হিসেবে যা পেতাম, তা দিয়ে আমাদের তিনজনের চলছিল কোনো রকমে।

অভাবপীড়িত একটি দেশে নয় মাসের যুদ্ধের ছাপ পড়েছে সবখানে। চারদিকে খাবারের জন্য হাহাকার...

আফিয়া বেগমকে থামিয়ে দিয়ে এএসপি বললেন;

হ্যাঁ, বুঝলাম দেশ স্বাধীনের পর আবার নতুন করে বাঁচার সংগ্রাম শুরু করলেন। কিন্তু এর এত দিন পর আপনি কেন এতগুলো মানুষ খুন করলেন? কেন আপনি হাতে অস্ত্র তুলে নিলেন?
সবই বলব স্যার। আমার সব কথা আজ আপনাদের শুনতে হবে। যুদ্ধকবলিত দেশকে যখন নতুন করে সাজানোর কাজটি গুছিয়ে নেয়া হচ্ছে, তখনো পাকিস্তানি দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি।

পাকিস্তানি সেনারা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও তাদের রেখে যাওয়া শান্তি কমিটির লোকজন তাদের বেশ পাল্টিয়ে দেশটাকে অস্থিতিশীল করতে শুরু করে নানাভাবে। দেশজুড়ে নেমে আসে শকুনির থাবা। পাকিস্তান আলাদা হয়ে গেছে, কিন্তু রয়ে গেছে তাদের প্রেতাত্মারা। তাদেরই হাতে চলে যায় দেশের শাসন ক্ষমতা। ফলে যুদ্ধের সময় যারা সরাসরি দেশের বিরোধিতা করে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, নারীদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দিয়েছে, সবকিছু লুটপাট করে বিত্তশালী হয়েছে, তারাই আবার জেগে ওঠে নতুন রূপে। কেউ হয়ে যায় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, কেউ বড় রকমের মজুতদার ব্যবসায়ী, কেউ-বা শুরু করে ডাকাতি ও রাহাজানি।

আমার এলাকার কুখ্যাত সেই চারজন রাজাকার আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসে একসময়। আসলাম মোল্লা এলাকায় ধান-চাল ও তেল-নুনের ব্যবসা শুরু করে। জিনিসপত্র গোডাউনে ভরতি করে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অনবরত দাম বাড়াতে থাকে। বলার কেউ নেই, প্রতিবাদ করার কেউ নেই। এলাকার অধিকাংশই তার পক্ষের লোক। তারা সবাই মিলে যে সিন্ডিকেট তৈরি করে, তাতে এলাকার বহু মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যা করেছে বেশ কয়েকজন। অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে অন্যত্র।

১৯৭১ সালের জুন মাসে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়ার আগে একদিন আমার মামাতো ভাই জসিম উদ্দিন, যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল, সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। মাঝেমধ্যেই রাতে খেতে আসত আমার বাড়িতে। একবার একটি পিস্তল আর বাইশটি গুলি আমার কাছে রাখতে দিয়েছিল। আমি গোয়ালঘরে মাটির কলসির মধ্যে সেটা লুকিয়ে রেখেছিলাম। কলসির ওপরে রেখেছিলাম ধানের তুষ। ভাবিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার দিন বাড়িটা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিলেও পুকুরপাড়ের গোয়ালঘরটি পর্যন্ত আগুন পৌঁছাতে পারেনি। বাড়িতে ফিরে এসে দেখি অস্ত্রটি অক্ষত অবস্থায় আছে। সরকারের কাছে জমা না দিয়ে রেখে দিই ভালোবাসার মানুষের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে।

একদিন ঝড়বৃষ্টির রাতে আকাশে বিদ্যুৎ চমকানোর সময় পরপর চারটি গুলি করে প্র্যাকটিস করলাম। নিজের ভেতরে একধরনের অসীম সাহস সঞ্চারিত হলো। ঝমঝমে বৃষ্টিভেজা এক রাতে তিনটার দিকে বোরকা পরে চলে গেলাম আসলাম মোল্লার বাড়িতে। গিয়ে দেখি জানালা খোলা। আরও দেখলাম হারিকেনের আলোয় বিছানায় বসে টাকা-পয়সা গুনছে আর খাতায় হিসাব লিখছে।

বাইরে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। সাথে টিপটিপ বৃষ্টি। নিশানা করলাম বুক বরাবর। দুটি গুলি করেছি, দুটিই বুকে লেগেছে। চিৎকার করারও সময় পায়নি। খাট থেকে গড়িয়ে পড়ল মেঝেতে। সবাই ভেবেছে বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দ। লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলাম আনন্দে।

এবার আসি আরেকজনের কথায়। দেশ স্বাধীনের পর রবিউল ইসলাম আমাদের ইউনিয়ন বাজারের বড় মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পায়। গ্রামে কোনো সালিস বসলেই তার ফতোয়ায় বিচার করা হতো। বেছে বেছে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে অতি কৌশলে একঘরে করে সে। ফতোয়া দিয়ে বহু নারীকে সে এলাকাছাড়া করেছে। কবে কার বিরুদ্ধে সালিস হবে তা সে নিজেই মসজিদের মাইকে ঘোষণা করত। অনেক সালিসে মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাম্পে আটক থাকা নারীদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলত। একবার সেই সব নারীর একটি লিস্টও করেছিল। তাতে আমাদের তিনজনের নামও ছিল।

ইমামতি ও মুয়াজ্জিনের কাজ দুটোই করত সে। প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে বাড়ি থেকে হেঁটে ভোরে মসজিদে গিয়ে আজান দিত।

কুয়াশাভেজা কোনো এক ভোরে আমি আগে থেকেই মসজিদের পেছনে বসে তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। মসজিদের যে পাশে আমি বসে ছিলাম, সেই পাশ দিয়ে গিয়েই মসজিদে প্রবেশ করবে। আমার কাছাকাছি আসতেই খুব কাছ থেকে বুক বরাবর গুলি করলাম। এক গুলিতেই লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। গলার ওপর পা তুলে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকলাম। এরপর অন্ধকার পথ ধরে বাড়িতে ফিরলাম নির্বিঘ্নে।

এবার বলি জোবেদ আলীর কথা। সে ছিল সবচেয়ে বড় শয়তান। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের ছত্রচ্ছায়ায় তার প্রধান কাজ ছিল মেয়েদের ধর্ষণ করা। দেশ স্বাধীনের পর গা-ঢাকা দেয়, কিন্তু ১৯৭৫ সালে মোশতাকের অবৈধ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই সে আবার ফিরে আসে এলাকায়। প্রচার করতে থাকে ঢাকায় তার গার্মেন্টসের ব্যবসা আছে।

অভাবগ্রস্ত যেসব বাড়িতে যুবতী মেয়ে আছে কিংবা সদ্য বিধবা আছে, সেসব বাড়িতে গিয়ে বোঝাত, ঢাকা শহরে গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি করলে কারও অভাব থাকবে না। প্রথমে এক বছর ট্রেনিং পিরিয়ড। ওই সময় বেতন কম। শুধু থাকা-খাওয়া বাবদ কিছু দেয়া হবে। এরপর মাসে মাসে টাকা আসবে। সংসারে সচ্ছলতা আসবে। কারও কোনো অভাব থাকবে না।

এভাবে কুমন্ত্রণা দিতে দিতে একসময় অভাবের তাড়নায় অনেককে সে রাজধানী শহরে নিয়ে যায়। সেখানে বেশ কয়েকজনকে দেহব্যবসার কাজে লাগায়। আর অনেককেই বিদেশে পাচার করে দেয়। একবার ইন্ডিয়ায় পাচার হওয়ার পর একটি মেয়ে দুই বছর পর পালিয়ে চলে আসে এবং তার কুকর্মের কথা সব প্রকাশ করে দেয়।

জোবেদ আলী ব্যবসায়ী হওয়ায় প্রচুর টাকা তার। এসব টাকা মুক্তিযুদ্ধের সময় লুট করা। ওই সময় তার নেশা ছিল নারী আর টাকার প্রতি। বিপদের আশঙ্কা দেখলেই টাকা দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলত। সেই সাথে টাকা-পয়সা দিয়ে থানাকেও হাত করে রাখত। তাই কেউ তার বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ দিতে পারত না।

একদিন খবর পেলাম, জোবেদ আলী আমার প্রতিবেশী রওশন আরার বাড়িতে এসেছে তাকে ঢাকায় নিয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে। সে জোবেদ আলীর দূরসম্পর্কের বোন হয়। রাতে রওশন আরার বাড়িতেই থাকবে। সকাল ছয়টার মেইল ট্রেন ধরে রওনা হবে ঢাকার উদ্দেশে। এত বড় সুযোগ জীবনে হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। তাই রাত তিনটার দিকে রওশন আরার বাড়ির পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। পাটকাঠির বেড়া। মাঝেমধ্যে ফাঁকা। বেড়ায় চোখ লাগালে বাইরে থেকে ভেতরে সব দেখা যায়। হারিকেনের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম জোবেদ আলী চৌকির ওপর টান হয়ে শুয়ে নাক ডাকছে। বুক বরাবর নিশানা করে মাত্র একটি গুলি করেছি। তাতেই চিরঘুমে চলে গেছে কালপিটটি...

আফিয়া বেগমকে থামিয়ে দিয়ে মুশফিকুর রহিম বললেন;

কিন্তু জোবেদ আলীকে খুনের অপরাধে তো রওশন আরার আগের স্বামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সে এখন জেলে আছে। তাহলে সে কি নির্দোষ?

অবশ্যই নির্দোষ। খুন করলাম আমি আর জেল খাটছে রওশন আরার স্বামী। আজব মিরাকেল। আপনারা না পারবেন সমাজের দুষ্টক্ষত অপরাধীদের নির্মূল করতে, না পারবেন তাদের অন্যায়ের লাগাম টেনে ধরতে, অথচ চেয়ারম্যানের পরামর্শ মতো আপনারা রওশন আরার সাবেক স্বামীকে ধরে নিয়ে জেলে আটকে রাখলেন। আপনারা কি আসলে দেশের সেবক, নাকি সমাজের মানুষরূপী হায়েনাদের বশংবদ?

তাই বলে আপনি আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন?

হ্যাঁ, আইনের মহামূল্যবান পোশাক পরে আপনারা শুধু এই একটি কথাই জনগণকে বলতে পারেন। কিন্তু দেশব্যাপী বহু জোবেদ আলী যে হাজার হাজার মেয়েকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়েছে, বিদেশে পাচার করে দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আপনারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? আর দু-চারজনকে যখন আটক করে মহামান্য আদালতে সোপর্দ করেছেন, তখন আপনাদের আইন তাদের কত দিন আটকে রাখতে পেরেছে? তাই তো বাধ্য হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছি।

আমার কাছে গুলি ছিল বাইশটা। খরচ করেছি মাত্র ছয়টা। তাতেই এলাকায় নেমে এসেছে শান্তির ছায়া। অথচ আপনাদের সবার কাছেই তো বৈধ গুলি রয়েছে হাজার হাজার। সেখান থেকে সমাজের কাজে কয়টা ব্যয় করেন? এই সমাজটাকে রক্ষা করার জন্যই তো সরকার আপনাদের হাতে বৈধ অস্ত্র তুলে দিয়েছে, তাই না?

আপা, আপনি অন্য খুনের ঘটনাগুলো বলুন। রাত প্রায় শেষ হতে চলল।

আফিয়া বেগম আবার বলতে শুরু করলেন;
১৯৭৫ সালে দেশের রাজনৈতিক চিত্রপট পাল্টানোর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রহিম ফরাজি এলাকার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। সে আর তার ছেলের দাপটে এলাকায় বাঘে-মহিষে সবাই এক ঘাটে জল খায়। এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করে না। একবার আমার ভাতিজি ময়না গিয়েছিল চেয়ারম্যানের কাছে চারিত্রিক সনদ আনতে। সে তখন ময়নাকে বলেছিল, “তোমার ফুপুকে পাঠিয়ে দিবা। সে এসে নিয়া যাইব।”

চেয়ারম্যান একসময় তার পক্ষের লোকজনের মাধ্যমে প্রচার করা শুরু করল, মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব নারী পাকিস্তানি সেনাদের বিছানায় শুয়েছে, তাদের এলাকাছাড়া করা হবে। তাদের বিচার করা হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও যদি সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা না থাকে, তাহলে তো পাকিস্তানই ভালো ছিল। স্বাধীন দেশে পরাধীনতার শৃঙ্খল কে চায় বলুন?
তিন দিন রেকি করার পর চেয়ারম্যানকে খুন করার সুযোগ পেলাম, কিন্তু ছোট্ট একটি ভুলের কারণে ধরা পড়ে গেলাম। জানালা দিয়ে তাকে বুক বরাবর গুলি করলাম সফল নিশানায়, কিন্তু যেই দৌড় দিয়েছি আর অমনি তার বাড়ির দুটি কুকুর আমাকে তাড়া করল। জানালার কাছ থেকে কুড়ি হাতও যেতে পারিনি, কুকুর দুটি আমার ওপর চড়াও হয়। তাদের চিৎকারে লোকজন লাইট হাতে ছুটে আসে চারদিক থেকে। কুকুরের কামড় খেয়ে অন্ধকারে রিভলবারটি আমার হাত থেকে পড়ে যায়।

নইলে গুলি করে কুকুরগুলোকেও মেরে ফেলতে পারতাম। চারদিক থেকে লোকজন এসে আমাকে পাকড়াও করে ফেলে। এবার বলেন স্যার, আর কী জানতে চান?
চেয়ারম্যানের ছেলে, ইমামের ছেলে এবং নিশিন্দা গ্রামের আকিবুল ইসলামের ছোট ছেলেকে অপহরণের বিষয়ে আপনার কোনো হাত আছে কি না? আপনি শুরুতে একবার বলেছিলেন তাদের বিষয়ে।

জি স্যার। আমি আগেও বলেছি, ওদের অপহরণ করা হয়নি। ওদের আসলে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেই সবাই বলাবলি করছে যে তাদের অপহরণ করা হয়েছে। কেউ কেউ বলে জিন-পরিতে তুলে নিয়ে গেছে, কিন্তু কোনোটাই সঠিক নয়। নিশিন্দা গ্রামের উত্তর দিকে নদীর পাড়ে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি তারা তিনজন বসে আড্ডা দিত। একদিন আমার ফাঁদে পা দিয়েছিল ওরা তিনজন। কোমল পানীয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রথমে তাদের দুর্বল করি। তারপর গলার ওপর পা তুলে দাঁড়িয়ে থেকে মৃত্যু নিশ্চিত করেছি। নদীর পাড়ে যে শ্মশানঘাট রয়েছে, তার পশ্চিমে যে পুরাতন তেঁতুল গাছটা আছে, ওর নিচে তিনজনকে গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দিয়েছি। যদিও সেদিন ভোর হয়ে গিয়েছিল কাজটি শেষ করতে করতে।

আমার মিশন শেষ। এখন তো জেলে থাকতে হবে। একসময় ফাঁসিতে ঝুলব। এতে আমার কোনো আফসোস নেই। ধরা না পড়লে হয়তো বাকি সতেরোটি গুলিও কাজে লাগাতে পারতাম। আমার রিভলবারের একেকটি গুলি একেকটি স্বাধীনতার স্বপ্নের সমান।

এতক্ষণ ধরে সবাই আফিয়া বেগমের বয়ান শুনছিল। সমস্ত ঘটনা শোনার পর দেখা গেল কয়েকজন পুলিশ অফিসার চোখ মুছছেন। কেননা মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসে কিংবা এর পরের ওই কয়েক বছরে একজন দেশপ্রেমিক যেসব কাজ করতে পারেননি, আফিয়া বেগম একজন নারী হয়ে সেই কাজ করেছেন। এএসপি মুশফিকুর রহিম বললেন;

আপা, আপনি যা করেছেন, তাতে আপনি আইনের চোখে অপরাধী। কিন্তু আপনি মানবতার আদালতে কিংবা বিবেকের আদালতে একজন মহান নারী। প্রকৃত দেশপ্রেমিক। দেশের অকুতোভয় বীর, অতন্দ্র প্রহরী। আপনার সমস্ত বক্তব্য রেকর্ড করে রাখলাম। কাল এগুলো লিপিবদ্ধ করে আপনার সাথে আদালতে দাখিল করা হবে। মহামান্য আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন আপনার বিষয়ে। আমরা আজ এই মুহূর্তে আপনাকে স্যালুট করে সম্মান জানাতে চাই।

এ কথা বলেই সবাই দাঁড়িয়ে আফিয়া বেগমকে একসাথে স্যালুট করলেন।

আফিয়া বেগমের দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোঁটা অশ্রু, আনন্দের অশ্রু। অন্যদিকে বাইরে ভোরের সোনালি আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে স্বাধীন সোনার বাংলা।

#আনোয়ার_শাহজাহান
লন্ডন, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ সাল।
Anwar Shahjahan

সাক্ষাৎকার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে অনলাইন পোর্টাল  #আমার_কণ্ঠ-এ আনোয়ার শাহজাহান এর সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারে তিনি মুক্তিযু...
16/12/2024

সাক্ষাৎকার
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে অনলাইন পোর্টাল #আমার_কণ্ঠ-এ আনোয়ার শাহজাহান এর সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আমাদের সংস্কৃতি, এবং বর্তমান প্রজন্মের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

আমার প্রিয় ফেসবুক বন্ধুদের জন্য পোর্টালের লিংক এবং পুরো সাক্ষাৎকারটি এখানে শেয়ার করলাম। সময় করে পড়ে দেখবেন।

https://amarkantho.com/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A8

■■■□□■

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতেই আমার লেখালেখি: আনোয়ার শাহজাহান

বিজয় দিবসে মু‌ক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক, সাংবা‌দিক ও প্রবাসী ক‌মিউ‌নি‌টি ব‌্যক্তিত্ব আনোয়ার শাহজাহানকে নিয়ে #আমার_কন্ঠ'র এবারের আয়োজন।

আনোয়ার শাহজাহান একজন খ্যাতিমান লেখক, গবেষক এবং মুক্তিযুদ্ধের লেখক। তিনি মুক্তিযুদ্ধের উপর ৪টি বাংলা এবং ২টি ইংরেজি বই লিখেছেন, যার মধ্যে "স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা" বইটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে। তার গবেষণাগুলি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করেছে এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো সবার সামনে তুলে ধরেছে।

১৯৭৩ সালে জন্মগ্রহণ করা আনোয়ার শাহজাহান ১৯৯৫ সাল থেকে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি লন্ডন বিচিত্রা এবং ২০১০ সাল থেকে আমাদের প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সমাজসেবা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ রয়েছে, এবং তিনি মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও বিজয়ের চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল অবদান রেখে চলেছেন।

এখানে তুলে ধরা হলো আনোয়ার শাহজাহানের সাক্ষাৎকার:

#প্রশ্ন_১: আপনি কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী হলেন?

#আনোয়ার_শাহজাহান: আমার মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আগ্রহ জন্মেছে মূলত সাংবাদিকতার মাধ্যমে। আমি যখন সাংবাদিকতা শুরু করি, তখন বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগ পেতাম। তাদের মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গল্প শুনে এক ধরনের অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। তাদের ত্যাগ, সাহসিকতা এবং সংগ্রামের গল্পগুলো আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। আমি তাদের গল্পে মানবিকতা, স্বাধীনতার প্রতি ভালোবাসা এবং দেশপ্রেমের একটি গভীর চিত্র দেখতে পেতাম। অনেক মুক্তিযোদ্ধা তাদের জীবন, পরিবার, এবং সর্বস্ব ত্যাগ করে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। তাদের বীরত্ব, সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের কথা শুনে আমার মনে হচ্ছিল, এই ইতিহাস যেন কখনো ভুলে না যায়। আমি জানতাম, যদি আমরা এই ইতিহাসগুলো সংরক্ষণ না করি, তবে ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়তো জানবে না কীভাবে আমাদের পূর্বপুরুষরা তাদের জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। সেদিন থেকে আমার মনে হয়েছে, এই অমূল্য ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা এবং চিরকাল স্মরণে রাখার জন্য আমাকে কিছু করতে হবে। এই ভাবনা থেকেই আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখি শুরু করি, যাতে এটি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষামূলক উৎস হয়ে ওঠে।

#প্রশ্ন_২: আপনি প্রথম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখি কীভাবে শুরু করলেন? প্রথম বইটির নাম কী?

#আনোয়ার_শাহজাহান: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার লেখালেখির শুরুটি সিলেটের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী নিয়ে। যখন আমি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী হই, তখন সিলেটে মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ পাই। তাদের জীবনযুদ্ধ এবং সাহসিকতার গল্পগুলো আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। একেকটি সাক্ষাৎকার ছিল একেকটি শিক্ষা এবং অনুপ্রেরণা। এসব সাক্ষাৎকারের মধ্যে আমি উপলব্ধি করি, মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা দিক আজও অনেকের কাছে অজানা রয়ে গেছে। বিশেষভাবে সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অনেকটা উপেক্ষিত ছিল। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত সিলেটের মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা নিয়ে একটি বই লিখবো, যাতে তাদের সংগ্রাম এবং ত্যাগের কথা সঠিকভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে যায়।

আমার প্রথম বইটি ছিল সিলেটের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। এটি ২০১৮ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পান্ডুলিপি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়। বইটি সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব এবং সংগ্রামকে চিরকাল স্মরণীয় করে রাখতে একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ ছিল। এটি ছিল আমার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখালেখি যাত্রার প্রথম বই।

---

#প্রশ্ন_৩: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কোন দিকটি আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?

#আনোয়ার_শাহজাহান: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যেসব সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং বীরত্বের পথ পাড়ি দেওয়া হয়েছে, তা। মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটি সময়কাল নয়, এটি আমাদের জাতির ইতিহাসের এক মহাকাব্য, যেখানে স্বাধীনের জন্য অসংখ্য মানুষের ত্যাগ, সংগ্রাম এবং সাহসের গল্প অমর হয়ে আছে। যারা নিজের জীবনের সর্বস্ব ত্যাগ করে, পরিবারের সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়ে দেশের জন্য জীবন বাজি রেখেছেন, তাদের কাহিনীই মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাদের এই বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এ ইতিহাসের গভীরতা এবং গুরুত্ব প্রতিটি প্রজন্মের কাছে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি, যাতে তারা জানে যে স্বাধীনতা সহজে আসে না, এটি অর্জন করতে অনেক ত্যাগ এবং সংগ্রাম প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের এই অনন্য চেতনা আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল উজ্জ্বল থাকবে।

#প্রশ্ন_৪: আপনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কীভাবে সংরক্ষণ করেন?

#আনোয়ার_শাহজাহান: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে আমি দুইটি প্রধান পন্থা অনুসরণ করি। প্রথমত, আমি মুক্তিযুদ্ধের বীরদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি, যাতে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং সংগ্রামের গল্প তুলে ধরা যায়। এই সাক্ষাৎকারগুলো এক ধরনের জীবন্ত ইতিহাস, যা পাঠকদের মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত করিয়ে দেয়। আমি বিশ্বাস করি, সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে যেভাবে মানুষের ব্যক্তিগত অনুভূতি এবং সংগ্রাম উঠে আসে, তা ইতিহাসের একটি অমূল্য অংশ হিসেবে সংরক্ষিত হয়।

দ্বিতীয়ত, আমি বিভিন্ন গবেষণামূলক উৎস, পুরনো ডকুমেন্ট, আর্কাইভ এবং নথিপত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করি। এসব ঐতিহাসিক দলিল ও নথি মুক্তিযুদ্ধের বহু অজানা দিক উন্মোচন করতে সাহায্য করে। এগুলোকে সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে আমি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। এর মাধ্যমে আমি চেষ্টা করি তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরতে, যাতে তারা আমাদের স্বাধীনতার মূল্য এবং এর পেছনের সংগ্রাম বুঝতে পারে।

---

#প্রশ্ন_৫: মুক্তিযুদ্ধের সময়কার আপনার প্রিয় কোনো ঘটনা বা চরিত্র কি?

#আনোয়ার_শাহজাহান: মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প শুনেছি, তবে এক বিশেষ চরিত্র আমার মনকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, যিনি যুদ্ধের সময় তার পরিবারকে হারিয়ে, নিজের জীবনকে বিপদে ফেলে দেশের জন্য লড়াই করেছিলেন। তার গল্পে ছিল না কোনো হীনমন্যতা, ছিল শুধু অদম্য আত্মবিশ্বাস এবং দেশপ্রেমের এক অমোঘ শক্তি। তার সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগের মধ্যে আমি এমন এক অদ্ভুত শক্তি এবং দৃঢ়তা অনুভব করি, যা আমার লেখার প্রতি মনোভাবকে আরও শক্তিশালী করেছে। তার কাছে জীবন এবং দেশপ্রেমের সংজ্ঞা ছিল একেবারে আলাদা; তিনি জানতেন, স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে কিছু একটা ত্যাগ করতে হয়। এই ঘটনা আমার জীবনে বিশাল অনুপ্রেরণা। মুক্তিযোদ্ধার এই আত্মত্যাগ আমাকে শিখিয়েছে যে, মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো নিজের দেশের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা। এমন বীরদের কথা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে জানানো উচিত, যেন তারা বুঝতে পারে, এই স্বাধীনতা আসেনি সহজে। তাদের সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগকে স্মরণ রেখে, আমাদের উচিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা এবং এই অমূল্য সম্পদকে সামনে নিয়ে আসা।

#প্রশ্ন_৬: মুক্তিযুদ্ধের বিষয়বস্তু নিয়ে লেখার সময় আপনার কী ধরনের প্রস্তুতি থাকে?

#আনোয়ার_শাহজাহান: মুক্তিযুদ্ধের বিষয়বস্তু নিয়ে লেখার সময় আমি খুবই মনোযোগ সহকারে প্রস্তুতি গ্রহণ করি। প্রথমত, আমি বিষয়টির ওপর বিস্তারিত গবেষণা শুরু করি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, এবং বিশেষত মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলো জানার জন্য আমি তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। তাদের গল্প আমাকে আরো গভীরভাবে প্রভাবিত করে, কারণ এটি কেবল যুদ্ধের ঘটনা নয়, এটি মানুষের আত্মত্যাগ, সাহসিকতা এবং দেশপ্রেমের একটি বাস্তব চিত্র।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি হলো, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার প্রামাণ্য দলিল, ডকুমেন্ট, ছবি এবং পত্রিকা সংগ্রহ করা। এই ঐতিহাসিক দলিলগুলো আমার লেখায় সত্যনিষ্ঠতা এবং গভীরতা আনতে সাহায্য করে। এসব তথ্য সংগ্রহ করার মাধ্যমে আমি সঠিক ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করি এবং আমার লেখায় কোনও ধরনের বিভ্রান্তি এড়াতে পারি।

তাছাড়া, আমি মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য, কবিতা এবং সাহিত্যিকদের রচনাও পড়ি, যা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মনোভাব এবং সংগ্রামের অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত হতে সহায়তা করে। গবেষণার পাশাপাশি, আমি সময় কাটাই মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামীদের পরিবার এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে, যাতে তাদের অভিজ্ঞতা আরও ভালোভাবে জানতে পারি এবং তা সঠিকভাবে লেখার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারি।

এই ধরনের বিস্তারিত প্রস্তুতির মাধ্যমে আমি নিশ্চিত করি যে, আমার লেখাগুলো মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরবে, যা পাঠকদের জন্য শিক্ষামূলক এবং অনুপ্রেরণাদায়ক হবে।

---

#প্রশ্ন_৭: মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা কীভাবে আপনি মূল্যায়ন করেন?

#আনোয়ার_শাহজাহান: মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা ছিল অবর্ণনীয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও অনেক সময় তাদের অবদান ছিল গোপন, তবুও তাদের সাহস, সংগ্রাম এবং ত্যাগ ছিল অসাধারণ। নারীরা শুধু যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণই করেননি, বরং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের অবদান ছিল নানা দিক থেকে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা, চিকিৎসা, খাদ্য সরবরাহ এবং গুপ্তচরবৃত্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন। তাদের এই নিঃস্বার্থ অবদান মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের অংশ ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীদের এই ভূমিকা সঠিকভাবে তুলে ধরলে, আমরা শুধুমাত্র তাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা পূর্ণ করতে পারব না, বরং তাদের সংগ্রামের শক্তি এবং ত্যাগের গল্পটি ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নারীদের অবদান ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং তাদের এই সাহসিকতা আমাদের সকলের কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

#প্রশ্ন_৮: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

#আনোয়ার_শাহজাহান: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বীরদের আত্মত্যাগ নিয়ে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হল রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী এবং তাদের অবদান নিয়ে আরও বিস্তারিত, গবেষণাধর্মী বই লেখা। আমি সিলেটের জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে তাদের সংগ্রামের ইতিহাস লিখতে চাই, যাতে মুক্তিযুদ্ধের অজানা দিক এবং সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রকাশ করা যায়।

বর্তমানে, আমি খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে ৩টি বাংলা এবং ১টি ইংরেজি বই লিখছি। পাশাপাশি, সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও সৌধ নিয়ে একটি বই লিখেছি, যা পরবর্তীতে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সাহসিকতা ও ত্যাগের গল্প নিয়ে একটি প্রেরণাদায়ক গল্পের বইও লিখেছি, যা নতুন প্রজন্মের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা হতে পারে।

ভবিষ্যতে, আমি এই বইগুলোকে আরও বিস্তৃতভাবে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করার পরিকল্পনা করছি, যাতে প্রবাসী বাঙালি সন্তানরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ইতিহাস সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারে। আমার মূল লক্ষ্য হল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা এবং এটি নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছানো, যাতে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহানত্ব এবং এর বীরদের অবদান সম্পর্কে আরও সচেতন হতে পারে।

---

#প্রশ্ন_৯: তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কীভাবে আরো সচেতন করা যেতে পারে?

#আনোয়ার_শাহজাহান: তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন করার জন্য আমাদের বিভিন্ন উপায়ে কাজ করতে হবে। প্রথমত, তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে, যাতে তারা বুঝতে পারে কীভাবে আমাদের পূর্বপুরুষরা ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। বই পড়া, বিশেষত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বইগুলো পড়তে তাদের উৎসাহিত করতে হবে। এছাড়া, চলচ্চিত্র, নাটক, এবং তথ্যচিত্রের মাধ্যমে ইতিহাসের অমূল্য গল্পগুলো তাদের কাছে পৌঁছানো যেতে পারে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের উপর বিশেষ পাঠ্যক্রম চালু করা, সেমিনার ও আলোচনা আয়োজন করা তরুণদের মধ্যে এই বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে। আমরা যদি তাদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের মহান সাহসিকতা, ত্যাগ এবং দেশপ্রেমের গুরুত্ব তুলে ধরতে পারি, তাহলে তারা নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে গর্বিত হবে এবং ভবিষ্যতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ থাকবে।

#প্রশ্ন_১০: আপনি কী মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের কোন দিকটি সবচেয়ে কম আলোচিত?

#আনোয়ার_শাহজাহান: মুক্তিযুদ্ধের বেশ কিছু দিক এখনও যথাযথভাবে আলোচিত হয়নি। বিশেষত, দেশের ভেতরের গোপন সংগ্রাম এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষিত থাকে। এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন, যারা জনসমক্ষে পরিচিত না হলেও, তাঁদের সংগ্রাম ছিল অমূল্য। এই অজানা যোদ্ধাদের কাহিনী এবং তাদের আত্মত্যাগকে ইতিহাসে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, যাতে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে আসে। এসব দিক নিয়ে আরও গবেষণা ও আলোচনা প্রয়োজন, যা পরবর্তী প্রজন্মকে আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেবে।

---

#প্রশ্ন_১১: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার লেখা বইগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে বেশি পাঠকপ্রিয়?

#আনোয়ার_শাহজাহান: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার লেখা বইগুলোর মধ্যে "স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা" বইটি সবচেয়ে বেশি পাঠকপ্রিয় হয়েছে। বইটি মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধাদের জীবনের সংগ্রাম, ত্যাগ এবং কীর্তির বিস্তারিত বর্ণনা নিয়ে লেখা হয়েছে, যা পাঠকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এ বইটির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অজানা অনেক দিক উন্মোচিত হয়েছে, বিশেষ করে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা ও তাঁদের অবদান। বইটিতে ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধার পরিচিতি রয়েছে, যার মধ্যে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৬৮ জন বীর-উত্তম, ১৭৫ জন বীরবিক্রম এবং ৪২৬ জন বীরপ্রতীক মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত।

বইটি প্রকাশের পর, এটি বিশেষভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আগ্রহী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এটি কেবল মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধাদের কীর্তি তুলে ধরা নয়, বরং তাঁদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রতি জাতি হিসেবে আমাদের কৃতজ্ঞতা এবং শ্রদ্ধা জানাতে সহায়তা করেছে। আমি মনে করি, এই বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য এটি একটি অমূল্য রেফারেন্স হিসেবে থাকবেই।

---

#প্রশ্ন_১২: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

#আনোয়ার_শাহজাহান: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের জাতির এক অমূল্য সম্পদ, যা আমাদের গৌরব এবং আত্মপরিচয়ের প্রতীক। কিন্তু সময়ের সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক হারিয়ে যেতে থাকে, যা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি। আমি বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও প্রচার না করা হয়, তাহলে তা কেবল কাহিনীতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। তাই, আমি মুক্তিযুদ্ধের অজানা দিকগুলো নিয়ে লেখালেখি ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে এই অমূল্য ইতিহাস সকলের কাছে পৌঁছানো যায়।

আমার লক্ষ্য হলো মুক্তিযুদ্ধের গৌরব, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং বিজয়ের চিত্রগুলো ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা, যাতে তারা আমাদের পূর্বপুরুষদের ত্যাগ ও সংগ্রামের মূল্য বুঝতে পারে। আমি চাই, মুক্তিযুদ্ধের এই ইতিহাস যেন কখনো হারিয়ে না যায় এবং আমাদের জাতির ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকে।

ভবিষ্যতে আমি আরও কিছু বই এবং গবেষণার কাজ করতে চাই, যা মুক্তিযুদ্ধের অজানা বা অপ্রকাশিত দিকগুলো উন্মোচন করবে। আমি বিশ্বাস করি, এসব কাজ ইতিহাসের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াবে এবং দেশের জাতীয় ঐক্যের শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের উপর আরও গভীর গবেষণা এবং আর্কাইভ তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে, যা ভবিষ্যতে একটি মূল্যবান সম্পদ হয়ে উঠবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ ও সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া আমার জীবনের প্রধান লক্ষ্য।

বিজয় দিবসে মু‌ক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক, সাংবা‌দিক ও প্রবাসী ক‌মিউ‌নি‌টি ব‌্যক্তিত্ব আনোয়ার শাহজাহানকে নিয়ে `আমার .....

Address

Unit/102 Greatorex Business Centre, 8-10 Greatorex Street
London
E15NF

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when London Bichitra - লন্ডন বিচিত্রা posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share