02/03/2025
আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহ
রমযানুল মোবারকের আজ প্রথম দিন,
আমরা যে শহরে বাস করি সে শহরে আজ রমযানুল মোবারকের প্রথম দিন। মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে লাখো শোকর যে, মহান আল্লাহ আমাদেরকে আরো একটা রমযানুল মোবারক পাওয়ার সুযোগ দান করেছেন। গতবার রমযানের সময় আমরা জানতাম না- আমরা আরো একটা রমযান পাবো কি না! আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা মেহেরবানী করে আমাদেরকে আরো একটা রমযানের সুযোগ দিয়েছেন। যাতে করে আমরা রমযানের মর্যাদা ও ফযীলত থেকে উপকৃত হতে পারি। এটার জন্যে আল্লাহর দরবারে আবারো শোকরিয়া আদায় করা দরকার। গত বছর যারা আমাদের সাথে রমযানুল মোবারকে রোযা রেখেছেন, তাদের অসংখ্য মানুষ আজ এ রমযানে আমাদের সাথে এই দুনিয়াতে নেই। এমনটাও তো হতে পারতো আমরাও চলে যেতে পারতাম, কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা দয়া করে আমাদেরকে আর একটা সুযোগ দিলেন, যাতে করে আমাদের জীবনের অতীতের ছোটোখাটো ছগীরা কবিরা গোনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারি। পৃথিবীর সকল মানুষ- যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা এ রমযানুল মোবারকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তারা যেন রমযানুল মোবারকে গুনাহ্ মাফির সুযোগটা গ্রহণ করে এবং তারা যেন এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারে।
আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমযানুল মোবারক পেলো কিন্তু সে তার গোনাহ মাফ করাতে পারলো না, তার মতো হতভাগ্য ব্যক্তি এই পৃথিবীতে আর নাই।’ রমযানুল মোবারকের প্রথম দিনে আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ যেন সেই হতভাগ্য ব্যক্তিদের দলে আমাদেরকে শামিল না করেন।
রমযানুল মোবারক হচ্ছে কোরআনের মাস, কোরআন নাযিলের মাস। এই কোরআনের কারণেই আল্লাহ তায়ালা রমযানুল মোবারকের এতো মর্যাদা দিয়েছেন। সুতরাং আমাদের এই রমযানে সমস্ত কাজগুলোর মধ্যে সে সমস্ত কাজগুলোকে প্রাধান্য দেয়া দরকার, যে কাজটা কোরআনের সাথে জড়িত এবং কোরআনের সাথে সম্পর্কিত। দীর্ঘদিন থেকে মুসলিম পরিবারে জন্ম হবার কারণে এ কাজগুলো আমরা জানি, কোরআনের সাথে সম্পর্কিত কাজ হলো- প্রধাণত বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। কারণ অন্যান্য মাসের তুলনায় এই মাসে কোরআন তেলাওয়াত করলে আল্লাহ তায়ালা ১০ থেকে ৭০০ গুণ সাওয়াব বেশী দেন এবং আল্লাহ তায়ালা এমনই বিনিময় দেন যে, তখন হিসেব ছাড়াই বিনিময় দেন। সেদিক থেকে বলা যায় রমযানুল মোবারকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে বেশী বেশী করে কোরআন তেলাওয়াত করা এবং তেলাওয়াতের পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াতে যে অংশটা আমরা পড়ি সে অংশটা বুঝার চেষ্টা করা। সারা বছরে সময় না পাওয়া গেলেও এই বছর এই মাসটাতে অন্তত কোরআনটা দৈনিক পড়ি এবং কোরআন পড়ার সাথে সাথে সেটা বোঝার চেষ্টা করি। এরপরের কাজটা হলো মহান আল্লাহ তায়ালা যে কাজটা আদেশ করেছেন এবং যেটা নিষেধ করেছেন সে কথাগুলো যেন আমরা নিজ নিজ জীবনে মেনে চলি। সর্বশেষ হলো যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের কাছে যে কিতাব নাযিল করেছেন, দুনিয়ার মানুষের হেদায়াতের জন্যে এই কিতাবটা যেন আমরা সকল মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দিতে পারি- আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের এ তাওফীক দান করেন। এই কাজগুলো হলো রমযান মাসের সাথে সম্পর্কিত- এই কাজগুলো সবাইকেই করার চেষ্টা করতে হবে।
এরপর রমযানুল মোবারকের অন্যান্য যে ফরয ও সুন্নাত ইবাদত আছে সে কাজগুলো তো আমরা অবশ্যই আদায় করবো। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, নবী কারীম (সা.) এই রমযানুল মোবারকে বেশী বেশী করে দান সদকা করতেন। আমরা আমাদের দান সাদকার হাতটা বেশি করে যেন প্রসারিত করি। আর আল্লাহর যমীনের অসংখ্য দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে আমরা যেন দাঁড়াই।
‘আল কোরআন একাডেমী লন্ডন’-এর পক্ষ থেকে আমি দুনিয়ার সকল মুসলমানদেরকে নিবেদন করবো যে, আসুন আমরা এই রমযানকে কোরআনের জন্যে নিবেদন করি। আমরা যেন বেশী থেকে বেশী পরিমাণ কোরআন মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি। আমরা এ কাজের সাথে যেন থাকতে পারি- আল্লাহ তাওফীক দান করুন।
রমযান মাসে সকলেই দান করেন। কারণ সকলেই জানেন যে, এই মাসে দান করলে বেশী থেকে বেশী সাওয়াব পাওয়া যায়। এ কারণেই আমরা নামাযগুলো গুরুত্বের সাথে আদায় করবো। আল্লাহ তায়ালার আদেশগুলো গুরুত্বের সাথে আদায় করবো।
আল্লাহ তায়ালা যেভাবে এ মাসের মর্যাদা বাড়িয়েছেন। আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ গুলো কেউ যদি পরোয়া না করে- তাহলে গোনাহ ও সাওয়াবের পরিমাণ ঠিক সে একইভাবে বাড়ানো হবে। আদেশের ব্যাপারে যেরকম আমাদের সতর্ক থাকা দরকার, ঠিক নিষেধের ব্যাপারেও আমাদের সতর্ক থাকা দরকার।
আমাদের গোনাহগুলো যেন আমরা আল্লাহর কাছে মাফ করাতে পারি, সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা যেন তাওফীক দান করেন, আমীন।
রমযানুল মোবারকের সবচেয়ে বড়ো কাজ হিসেবে মানব কল্যাণের জন্যে সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সহধর্মিতার হাত আমাদেরকে বাড়িয়ে দিতে হবে। এই কাজটা মুসলিম মিল্লাত যতো বেশী করবে ততো বেশি তারা মর্যাদা পাবে। প্রত্যেক মুসলমানকে আমি অনুরোধ করবো যে, তারা যেন এটাকে জীবনের শেষ সুযোগ মনে করে এই রমযানুল মোবারককে কাজে লাগান। কারণ, আমরা জানি না আগামী বছর আমরা রমযান পাবো কি না? তাই এই রমযানকে আমাদের জীবনের শেষ রমযান মনে করে আল্লাহর কাছে গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়ার শেষ সুযোগ হিসেবে এটা মনে করি। রাতের ইবাদতগুলো এবং দিনের ইবাদতগুলো যেন একমাত্র আল্লাহর জন্যে বেশী বেশী নিদেবন করতে পারি আল্লাহ যেন সে তাওফীক আমাদেরকে দেন।
মনে রাখতে হবে, রমযান প্রতি বছরই আসে- আমার জীবনেও ৭০-৭৫ রমযান এসেছে, কিন্তু এমনটা যেন না হয়- রমযান আসবে আর চলে যাবে, আর আমার জীবন আগের মতোই থেকে যাবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সেরকম বদ নসীব যেন না করেন। এই রমযানে যেন আমরা নতুন একটা জীবন শুরু করতে পারি। এ রমযান যেন আমার জীবনে একটা মাইল ফলক হয়, এই রমাযন যাতে করে আমার জীবনে একটা নতুন দিশা এনে দেয়।
এই রমযান যেন আমাকে কোরআনের সাথে থাকার একটা সুযোগ এনে দেয় এবং বিশেষ করে আল্লাহর বাণী কোরআনকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার একটা সুযোগ যেন এই রমযান আমাদের করে দেয়। গতবারের থেকে এ রমযান যেন আমার জীবনের আরো ভালো রমযান হতে পারে- সেটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এবং দেখতে হবে যে আমার জীবনের প্রতিটি রমযান যেন পূর্বের তুলনায় উন্নত হয়। প্রতিটি রমযানে যেন আমরা এই ফায়দা নিতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফীক দান করুন।
আসলে রমযানটা কোনো বক্তৃতার মাস নয়, আমি যে কথাগুলো বলেছি সেটা আমার জন্যে বলেছি এবং আপনাদের জন্যেও বলেছি। আমরা মনে করি, প্রত্যেকটা মানুষেরই রমযানটাকে একটা মাইল ফলক মনে করা দরকার। আল্লাহ তাবারকা ওয়া তায়ালা আমাদেরকে একটা সুযোগ দিয়েছেন, যেটাকে বলা হয়, ‘নেকির মওসুম’। আল্লাহ তাবারকা ওয়া তায়ালার দেয়া সুযোগগুলো যেন গ্রহণ করতে পারি, আদেশ নিষেধগুলো মেনে চলতে পারি। আল্লাহ তাবারকা ওয়া তায়ালা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।
পুনরায় আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি, দুনিয়ার সমস্ত মানুষের কাছে এ রমযানটা যেন কার্যকর রমযান হয় এবং এই রমযান যেন একটা পথের দিশা হয়, এই রমযানটা যেন আমাদের জীবনে গুনাহ মাফের একটা উসিলা হয় এবং নতুন জীবন তৈরি করার ক্ষেত্রে একটা কার্যকরী ভূমিকা যেন আমরা পালন করতে পারি সে তাওফীকটুকু যেন আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দেন, আমীন!!
হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ
চেয়ারম্যান
আল কোরআন একাডেমী লণ্ডন