
15/08/2025
🌸🌸 শেষ ট্রেনের প্রেম 🌸🌸
❤❤ রোমান্টিক বাংলা প্রেমের গল্প ❤❤
প্রথম অধ্যায় – প্রথম দেখা
রাত তখন ৯টা। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ৪, ভিড় ঠেলে ঠেলে মানুষ ট্রেনে উঠছে। শীতের হালকা ঠান্ডা হাওয়া, প্ল্যাটফর্মে চা বিক্রেতার গরম গরম ধোঁয়া, আর দূরের ট্রেনের হুইসেল মিলে এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করছিল।
রাহাত, ২৮ বছরের একজন ফটোগ্রাফার, হাতে ক্যামেরা নিয়ে প্ল্যাটফর্মের এক কোনায় দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ তার ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ল এক মেয়ে—লম্বা খোঁপা, লাল শাল, হাতে ছোট একটা ব্যাগ, যেন চারপাশের ভিড়ের মধ্যে একমাত্র শান্ত মানুষ। তার চোখে ছিল গভীর কোনো গল্পের আভাস।
রাহাত জানত না কেন, কিন্তু ক্যামেরার শাটার চাপতে চাপতে তার মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্তটা চিরদিনের জন্য ধরে রাখতে হবে। মেয়েটির নাম তখনও সে জানত না, কিন্তু মনে হচ্ছিল, এ তো কোনো সিনেমার দৃশ্য!
দ্বিতীয় অধ্যায় – ট্রেনে আলাপ
ট্রেন ছাড়ল রাত ৯টা ২০ মিনিটে। রাহাত কাকতালীয়ভাবে সেই মেয়েটির বিপরীতে সিট পেল। প্রথমে দুজনেই চুপচাপ ছিল। বাইরে কুয়াশা, ট্রেনের টুপটাপ শব্দ, আর মাঝে মাঝে চা-বিক্রেতার হাঁক।
হঠাৎ মেয়েটি নিজেই কথা শুরু করল,
— "আপনি কি ফটোগ্রাফার?"
— "জি, কিভাবে বুঝলেন?"
— "আপনার ক্যামেরা দেখেই। আর… আপনি যখন আমাকে দেখছিলেন তখন বুঝতে পেরেছিলাম।"
রাহাত একটু লজ্জা পেল।
— "দুঃখিত… আমি শুধু মুহূর্তটা সুন্দর মনে হয়েছিল, তাই…"
— "না না, আমি রাগ করিনি। আমি নিশা।"
সেই রাতের ট্রেনযাত্রায় নিশা আর রাহাত ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলল। তাদের আলাপের বিষয় যেন শেষই হচ্ছিল না—স্বপ্ন, শৈশব, হারানো মানুষ, প্রিয় গান… যেন দুজন দুজনকে বহুদিন ধরে চেনে।
তৃতীয় অধ্যায় – অদৃশ্য হয়ে যাওয়া
গন্তব্যে পৌঁছে দুজনেই নামল। রাহাতের মনে হচ্ছিল, এই মানুষটিকে হারাতে চায় না। কিন্তু হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে নিশা হারিয়ে গেল। কোনো ফোন নম্বর, ঠিকানা কিছুই নেই।
দিন কেটে গেল, সপ্তাহ কেটে গেল—কিন্তু রাহাত প্রতিদিন স্টেশনে যেত, হয়তো আবার দেখা হবে ভেবে। কিন্তু দেখা হয়নি। নিশা যেন হাওয়া হয়ে গেল।
চতুর্থ অধ্যায় – ভাগ্যের খেলা
একদিন একটি ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীতে রাহাতের তোলা সেই ট্রেন-প্ল্যাটফর্মের ছবি প্রদর্শিত হয়। ছবিতে লাল শালের সেই মেয়েটি। দর্শকদের মধ্যে একজন মেয়ে ছবির সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল।
রাহাত এগিয়ে গেল। সে নিশা।
— "তুমি…"
— "আমি তোমার ছবির মেয়েটি, তাই না?" নিশা হেসে বলল।
তাদের আবার কথা শুরু হল, এবার ফোন নম্বর বিনিময়ও হল।
পঞ্চম অধ্যায় – প্রেমের শুরু
দিনগুলো ভরে উঠল দীর্ঘ ফোনালাপ, ছোট্ট কফি ডেট, একসাথে শহরের লুকানো জায়গা ঘুরে দেখা—পুরানো ঢাকার সরু গলি, বুড়িগঙ্গার তীরে বসা, বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটা। রাহাত আর নিশা বুঝে ফেলল, তারা একে অপরের জীবনের ফাঁকা জায়গা পূরণ করছে।
একদিন রাহাত নদীর ধারে বলল,
— "নিশা, আমি জানি না ভবিষ্যতে কি হবে, কিন্তু আমি চাই আমার সব ছবি, সব গল্পে তুমি থাকো।"
নিশার চোখে জল চলে এল।
— "আমি চাই আমার সব ট্রেনের টিকিট তোমার কাছে শেষ হোক।"
ষষ্ঠ অধ্যায় – বাধা
কিন্তু সুখ দীর্ঘস্থায়ী হল না। নিশার পরিবার খুব রক্ষণশীল। তারা ইতিমধ্যেই নিশার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে এক ধনী ব্যবসায়ীর সাথে। নিশা বিরোধিতা করলেও কোনো লাভ হয়নি।
রাহাত সব শুনে ভেঙে পড়ল। নিশাকে বোঝানোর চেষ্টা করল পালিয়ে যাওয়ার, কিন্তু নিশা জানাল,
— "রাহাত, আমি চাই না তোমার জীবন নষ্ট হোক আমার জন্য।"
সপ্তম অধ্যায় – শেষ ট্রেন
বিয়ের আগের রাতে নিশা রাহাতকে মেসেজ করল—"প্ল্যাটফর্ম ৪, রাত ৯টা ২০ মিনিট। শেষবারের মতো দেখা হবে?"
রাহাত ছুটে গেল। ট্রেন ছাড়ার আগে তারা দুজন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রইল। কোনো কথা নেই, শুধু চোখে অশ্রু। নিশা রাহাতের হাতে একটা ছোট্ট খাম দিল।
ট্রেন ছাড়ল, নিশা ধীরে ধীরে দূরে মিলিয়ে গেল।
খামের ভেতরে ছিল একটি ট্রেনের টিকিট—দুইজনের নাম লেখা—গন্তব্য “অজানা”। পেছনে লিখা—"কখনো যদি সুযোগ পাও, এই টিকিট নিয়ে চলে এসো… আমি অপেক্ষা করব।"
#প্রেমেরগল্প #ভালবাসা #বাংলাপ্রেমগল্প #প্রেমেরচিঠি #মিষ্টিপ্রেম #প্রেমেরডায়েরি