15/08/2025
🌸🌸 শীতের শেষ বিকেল 🌸🌸
❤❤ রোমান্টিক বাংলা প্রেমের গল্প ❤❤
প্রথম অধ্যায় — পুরনো চেনা রাস্তা
শীতের বিকেল।
আকাশে সূর্যটা যেন হালকা কমলা গাল মেখে ধীরে ধীরে পশ্চিমে হেলে পড়ছে। বাতাসে ঠান্ডার সঙ্গে একধরনের নীরবতা মিশে আছে, যা কেবল শীতের বিকেলেই সম্ভব।
রাস্তার পাশে শুকনো পাতা পড়ে আছে এলোমেলো, আর মাঝে মাঝে হালকা বাতাস এসে সেগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে।
নীরা ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছে এই রাস্তায়—রাস্তা যার প্রতিটি ইট-পাথর তার কাছে স্মৃতির মতো।
সে জানে, এই পথের প্রতিটি মোড়ে আছে আরিয়ানের সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত।
বুকের ভেতরে কোথাও হালকা ব্যথা, আবার অদ্ভুত এক উষ্ণতা।
নিজের গলা নিচু করে ফিসফিস করে বলল,
— "কেন জানি আজ মনে হচ্ছে, তুমি আসবে…"
দ্বিতীয় অধ্যায় — প্রথম শীতের বিকেল
পাঁচ বছর আগের শীত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ। লাইব্রেরির সামনে ছাত্রছাত্রীদের ভিড়, সবার গায়ে রঙিন শাল, সোয়েটার।
নীরার হাতে বই, আর কাঁধে ব্যাগ।
গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে এক ছেলে—ধূসর সোয়েটার, গলায় কালো মাফলার, হাতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ।
ছেলেটা তাকিয়ে হেসে বলল—
— "আপনি নীরা তো? আমি আরিয়ান। নতুন সদস্যদের মিটআপে আজ দেখা হওয়ার কথা ছিল।"
নীরা একটু অবাক হয়ে বলল—
— "ও… হ্যাঁ, মনে আছে।"
— "চা খাবেন? শীতের বিকেল চা ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না কিন্তু।"
সেদিনই প্রথম তাদের একসঙ্গে চা খাওয়া, আর সেই চা যেন কোনোভাবে বন্ধুত্বের প্রথম সেতু হয়ে গেল।
তৃতীয় অধ্যায় — গল্পের ভেতর প্রেম
পরের দিনগুলোতে তাদের দেখা বাড়ল।
লাইব্রেরির জানালার ধারে বসে বই পড়া, ক্যান্টিনে তর্ক, শহরের পুরনো রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো—সবকিছু যেন সহজ, স্বাভাবিক, অথচ ভেতরে ভেতরে খুব বিশেষ।
একদিন নীরা বলল—
— "তুমি সবসময় শুনে যাও, নিজের কথা তো বলো না কেন?"
আরিয়ান হেসে উত্তর দিল—
— "তুমি যখন বলো, তখন মনে হয় আমার কথা বলার দরকার নেই।"
তাদের মধ্যে কোনো ঘোষণা ছিল না, কোনো প্রেমপত্র ছিল না—তবুও নীরা জানত, সে প্রেমে পড়ছে।
আরিয়ানও হয়তো বুঝেছিল, কিন্তু বলার তাড়া ছিল না।
চতুর্থ অধ্যায় — দূরত্বের শুরু
তৃতীয় বর্ষের শেষ দিকে খবর এলো—আরিয়ান এক বিরল স্কলারশিপ পেয়েছে। বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ।
সবার মুখে আনন্দ, কিন্তু নীরার মনটা হঠাৎ ভারী হয়ে গেল।
বিদায়ের দিন স্টেশনে ঠান্ডা বাতাস বইছিল। প্ল্যাটফর্মের আলোয় বাষ্প আর কুয়াশা মিশে এক অদ্ভুত দৃশ্য তৈরি করেছিল।
নীরা বলল—
— "তুমি ফিরবে তো?"
আরিয়ান মুচকি হেসে বলল—
— "শীতের শেষ বিকেলে যদি আমি না ফিরি, তবে কারো গল্পই শেষ হবে না।"
ট্রেন ছেড়ে দিল, আর নীরার চোখের জল গড়িয়ে পড়ল।
পঞ্চম অধ্যায় — অপেক্ষার দিনগুলি
প্রথম কিছু মাস নীরা প্রায় প্রতিদিন মেসেজ পেত, ভিডিও কল হতো, হাসি-ঠাট্টা চলত।
কিন্তু ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমে গেল।
সময়ের পার্থক্য, কাজের চাপ—সব মিলিয়ে দূরত্ব যেন আরও গভীর হলো।
রাতের বেলা নীরা জানলার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকাত, ভাবত, “ও কি এখন একই চাঁদ দেখছে?”
দুই বছর পর হঠাৎ খবর এল—আরিয়ান দেশে ফিরেছে, কিন্তু সে অন্য শহরে চাকরি করছে।
তাদের মধ্যে কেবল সামাজিক মাধ্যমে নীরব শুভেচ্ছা বিনিময় চলতে লাগল।
ষষ্ঠ অধ্যায় — শীতের শেষ বিকেল
আজকের বিকেলটা আলাদা লাগছে।
নীরা অকারণে এই রাস্তায় ফিরে এসেছে। সে জানে না কেন—হয়তো শুধু দেখতে চেয়েছে, সবকিছু আগের মতো আছে কি না।
হঠাৎ পেছন থেকে ভেসে এল পরিচিত কণ্ঠ—
— "নীরা…"
নীরা ফিরে তাকাল।
আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে, হাতে ধোঁয়া ওঠা চা, ধূসর সোয়েটার, চোখে সেই চেনা উষ্ণ হাসি।
— "শীতের শেষ বিকেলে আমি না ফিরলে গল্পটা অসম্পূর্ণ রয়ে যেত।"
নীরার চোখ ভিজে উঠল।
— "তুমি… সত্যিই ফিরেছ?"
— "হ্যাঁ, আর এবার কোথাও যাচ্ছি না।"
তারা হাঁটতে হাঁটতে পুরনো দিনের গল্প করল।
রাস্তার ধারে বসে চা খেল, আর সূর্য ডোবার আগেই নীরা মনে মনে প্রতিশ্রুতি দিল—
“এইবার আর দূরে যাবে না কেউ।”
শেষ। ❤️
#প্রেমেরগল্প #ভালবাসা #বাংলাপ্রেমগল্প #প্রেমেরচিঠি #মিষ্টিপ্রেম #প্রেমেরডায়েরি