
15/08/2025
🌸🌸 তোমার চোখের শহর 🌸🌸
❤❤ রোমান্টিক বাংলা প্রেমের গল্প ❤❤
প্রথম অধ্যায় – প্রথম দেখা
ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এক গ্রীষ্মের বিকেল। গরমে বাতাস যেন শুকনো, রাস্তায় সোনালি রোদ পড়ে আছে, দূরে হালকা কুয়াশার মতো ধুলো উড়ছে। রাহুল আজ অনেক দিন পর বাসা থেকে বেরিয়েছে, হাতে ক্যামেরা। সে একজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার, প্রকৃতির ছবি তুলতে ভালোবাসে।
গেট পার হওয়ার সময় তার চোখে পড়ল—রাস্তার কোণে দাঁড়িয়ে এক মেয়ে, পরনে নীল-সাদা সালওয়ার কামিজ, হাতে কয়েকটা বই। মেয়েটা ছাতা ধরে আছে, কিন্তু ছাতার নীচে মুখে যেন এক অদ্ভুত শান্তি।
রাহুলের মনে হল, এ দৃশ্য ফ্রেমে বন্দি না করলে হয়ত সারাজীবন আফসোস থাকবে। কিন্তু অচেনা কাউকে অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা অভদ্রতা—এই দ্বিধায় সে দাঁড়িয়ে গেল।
মেয়েটা তখন হঠাৎ তার দিকে তাকিয়ে হাসল। রাহুল অবাক হয়ে গেল—ও কি ইঙ্গিত করল ছবি তুলতে? সাহস করে রাহুল ক্যামেরা তুলল, আর সেই হাসিটা ধরে রাখল লেন্সে।
— “আপনি কি ফটোগ্রাফার?” মেয়েটা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল।
— “হ্যাঁ… মানে, আমি ছবি তুলি শখে আর পেশায়ও।”
— “আমার ছবি কি পাবেন? আজ আমার লাইব্রেরির শেষ দিন, এই স্মৃতি রাখতে চাই।”
এইভাবেই শুরু হয় তাদের প্রথম কথোপকথন। রাহুল জানল, মেয়েটার নাম নীলাঞ্জনা—সংক্ষেপে নীলা। সে ইংরেজি সাহিত্যে পড়ছে, বই আর কবিতা তার পৃথিবী।
দ্বিতীয় অধ্যায় – ধীরে ধীরে কাছাকাছি
এরপর রাহুল ও নীলার দেখা হতে লাগল প্রায় সপ্তাহে একবার। কখনো লাইব্রেরিতে, কখনো কফি শপে, আবার কখনো লেকের ধারে।
নীলা ছিল খুবই কথাবার্তায় প্রাণবন্ত, আর রাহুল ছিল একটু চুপচাপ স্বভাবের। নীলা যখন কথা বলত, রাহুল শুধু শুনত—তার গলার স্বরে যেন এক ধরনের সংগীত ছিল।
একদিন বৃষ্টির বিকেলে, দুজনেই ছিল ধানমন্ডি লেকের পাশে।
নীলা হঠাৎ বলল,
— “তুমি জানো রাহুল, আমি যখন বৃষ্টি দেখি, মনে হয় আকাশ কাঁদছে। কিন্তু তার অশ্রুতে সব ময়লা ধুয়ে যায়।”
রাহুল মুচকি হেসে বলল,
— “তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, তুমি শুধু আকাশ না, মানুষের মনও বুঝতে পারো।”
বৃষ্টি বাড়তে লাগল, তারা ছাতার নিচে পাশাপাশি হাঁটছিল। রাহুলের মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্ত যদি চিরদিনের জন্য থেমে যেত!
তৃতীয় অধ্যায় – প্রথম স্বীকারোক্তি
শরতের এক সন্ধ্যা। আকাশে সাদা মেঘ, বাতাসে কাশফুলের গন্ধ।
রাহুল ঠিক করল, আজ নীলাকে বলব তার মনের কথা।
সে নীলাকে নিয়ে গেল হাতিরঝিলের ব্রিজে। পানির ওপরে বাতিগুলোর আলো দুলছে, দূরে শহরের শব্দ যেন চাপা।
রাহুল একটু নার্ভাস ছিল।
— “নীলা, আমি একটা কথা বলব… যদি কিছু ভুল লাগে, রাগ করো না।”
— “বলো।”
— “আমি তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম, সেদিন থেকেই মনে হয়েছিল তুমি আলাদা। আমি জানি না প্রেম মানে কী, কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমার দিন অসম্পূর্ণ লাগে।”
নীলা চুপ করে ছিল কিছুক্ষণ, তারপর ধীরে বলল,
— “তুমি জানো রাহুল, আমি এই উত্তরটা অনেকদিন আগে থেকেই জানতাম।”
— “মানে?”
— “মানে… আমিও তোমাকে ভালোবাসি।”
সেই মুহূর্তে শহরের সব আলো যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
চতুর্থ অধ্যায় – সম্পর্কের রঙ
তাদের সম্পর্ক এখন আরও গভীর। রাহুল নীলার জন্য কবিতা লিখত, নীলা রাহুলের জন্য গল্পের বই কিনে আনত। তারা একসাথে রোডট্রিপে যেত, নদীর ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখত, মুভি দেখত রাত জেগে।
কিন্তু জীবনে সবসময়ই সূর্যের সাথে মেঘও থাকে।
পঞ্চম অধ্যায় – ঝড়ের আগমণ
একদিন রাহুল শুনল, নীলার পরিবার বিদেশে চলে যেতে চায়। তার বাবা যুক্তরাষ্ট্রে ভালো চাকরি পেয়েছেন, আর নীলার পড়াশোনাও সেখানেই চালিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা।
রাহুল কিছু বলল না, কিন্তু মনে ভিতরে ভিতরে অস্থিরতা বাড়তে লাগল।
নীলা বলল,
— “আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না, কিন্তু পরিবারকে না বলার ক্ষমতা আমার নেই।”
রাহুল চুপ করে ছিল, কারণ সে জানত, ভালোবাসা মানে কাউকে আটকে রাখা নয়।
ষষ্ঠ অধ্যায় – শেষ দেখা
নীলার ফ্লাইটের আগের দিন, তারা আবার হাতিরঝিলে গেল।
বাতাস ঠাণ্ডা, চাঁদের আলো পানির উপর পড়ছে।
রাহুল বলল,
— “তুমি যদি চলে যাও, আমার শহর ফাঁকা হয়ে যাবে।”
নীলা চোখের পানি লুকিয়ে বলল,
— “তুমি আছো বলেই আমার এই শহর এত সুন্দর ছিল।”
তারা আলিঙ্গন করল, কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, শুধু অনুভূতির বিনিময়।
সপ্তম অধ্যায় – সময়ের দূরত্ব
নীলা চলে গেল বিদেশে। রাহুল আবার তার ফটোগ্রাফির জগতে ডুবে গেল, কিন্তু প্রতিটি ছবিতে কোথাও না কোথাও নীলার ছায়া থাকত।
মাঝে মাঝে তারা ভিডিও কলে কথা বলত, কিন্তু সময়ের ব্যবধান, দূরত্ব, নতুন পরিবেশ—সবকিছুই ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমিয়ে দিল।
অষ্টম অধ্যায় – চিঠি
তিন বছর পর, রাহুল একদিন ডাকযোগে একটি খাম পেল। ভিতরে একটি চিঠি—
“রাহুল,
আমি এখনও সেই শহরটাকে মনে রাখি, যেখানে তোমার চোখ দিয়ে পৃথিবীকে দেখেছিলাম। আমি এখানে নতুন জীবন গড়েছি, কিন্তু মনে হয় হৃদয়ের এক টুকরো এখনও ঢাকায় আছে—তোমার কাছে।
যদি কখনো দেখা হয়, আমি শুধু বলতে চাই, ধন্যবাদ—আমাকে ভালোবাসার জন্য।”
রাহুল চিঠিটা বুকের কাছে চেপে ধরল। সে জানত, কিছু ভালোবাসা থাকে যা সময় বা দূরত্ব মুছে দিতে পারে না।
সমাপ্তি
এই গল্পে তাদের মিল হয়নি, কিন্তু তাদের ভালোবাসা একে অপরের জীবনে রঙ দিয়ে গেছে।
রাহুল এখনও ছবি তোলে, আর মাঝে মাঝে তার ফ্রেমে ধরা পড়ে—একটা মেয়ে, নীল-সাদা পোশাকে, হাতে বই, ছাতার নিচে এক চিরচেনা হাসি।
#প্রেমেরগল্প #ভালবাসা #বাংলাপ্রেমগল্প #প্রেমেরচিঠি #মিষ্টিপ্রেম #প্রেমেরডায়েরি