08/07/2025
#নবীগঞ্জে দফায় দফায় সং'ঘর্ষ, থমথমে পরিস্থিতি:
নবীগঞ্জ শহরে দফায় দফায় সংঘর্ষের জের ধরে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি হাসপাতাল ও যানবাহন ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে ট্রাক, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল ৭ জুলাই সোমবার আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের লোকজন পূর্ব ঘোষণা দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় প্রস্তুতিমূলক সভা করে। এরপর বিকেল ৩টার দিকে উভয় গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সংঘর্ষটি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে রূপ নেয়। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষে আশপাশের কয়েকটি মৎস্যজীবী গ্রাম এবং পূর্ব তিমিরপুর, পশ্চিম তিমিরপুর ও চরগাঁও গ্রামের সহস্রাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।
সংঘর্ষে উভয় পক্ষের শত শত মানুষ আহত ও ২ জন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। শহরের দুই শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। সংঘর্ষকালীন কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ইউনাইটেড হাসপাতাল, মাছ বাজারে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। পশ্চিম বাজারের প্রতিটি মার্কেটর দোকানেও ভাঙচুর- লুটপাট হয়। প্রায় চার-পাঁচ ঘণ্টা ধরে শহরে অরাজকতা চলে।
#স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি বিশেষ মহল গুজব ছড়িয়ে আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করেছে। আনমনু গ্রাম মূলত মৎস্যজীবী অধ্যুষিত এবং তিমিরপুর বাংগাল অধ্যুষিত গ্রাম।
ঘটনার সুত্রপাত:
গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে (নামকরা গুণ্ডা) যুবলীগ নেতা আশাহিদ আলী আশা শিবির ও বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হুংকার ঝংকার দিয়ে আসছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকায় সরাসরি মাঠে নামতে পারে নাই। অতঃপর সে দল পরিবর্তন করে গণঅধিকার পরিষদে যোগদান করে এবং একপর্যায়ে সহসভাপতির দায়িত্ব বুঝে নেয়।
ইনাতগঞ্জ যুবলীগের সভাপতি (পলাতক) ঐ আশাহিদ আলী আশা নিজের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে মৎস্যজীবী অধ্যুষিত আনমনু গ্রামের লোকজনকে নবীগঞ্জের নেতৃস্থানীয় ও শিবির-বিএনপি সমর্থিত জনসাধারণের বিরুদ্ধে গোপনে গোপনে ক্ষেপিয়ে তুলে। একপর্যায়ে বাংগাল ও ননবাংগাল সংঘর্ষের রূপ নেয়। যদিও মৎস্যজীবি অধ্যুষিত রাজাবাদ, নোয়াপাড়া, কানাইপুর, শিবপাশা ও আনমনু গ্রামের লোকজন বিষয়টি অস্বীকার করছেন তবে গত ৪ দিনের সংঘর্ষের প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই বলছেন এটি ছিল বাংগাল ও ননবাংগালদের মধ্যে আশাহিদের ইন্ধনে জুড়ে দেওয়া অঘোষিত পেশিশক্তির প্রভাব বিস্তার।
বাজারের শতাধিক ব্যবসায়ী কুচক্রী ও পলাতক আশাহিদ আলী আশা সহ অপরাধীদেরকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
৪ জুলাই শুক্রবার রাতে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি (বর্তমান গণঅধিকার পরিষদের বর্তমান সহসভাপতি) " #আশাহিদ_আলী_আশা" ও পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের খরছু তালুকদারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সূত্রপাত হয়।
এরই জের ধরে ৫ জুলাই শনিবার উপজেলার (৬ নম্বর কুর্শি ইউনিয়নের) বাংলাবাজার এলাকায় আনমনু গ্রামের লোকজন বাংগাল টার্গেট করে একজন গাড়িচালকের উপর হামলা করে ও তারা ঐ গাড়ি ভাঙচুর করে।
শ্রমিকরা জানান, হামলাকারীরা গাড়ির চাবি, কাগজপত্র, দুটি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে যায়। এতে নবীগঞ্জ বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এবং এই সুযোগে একটি সংঘবদ্ধ চক্র বাজারে প্রবেশ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে হামলা ও লুটপাট শুরু করে।
গত চার দিনে বাজারের অন্তত ৫০ টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাটারিচালিত মিশুক ভাঙচুর আবার কেউ কেউ ব্যাটারি খোলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। কয়েকটি মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।
তারা আরো জানান, ২০২৪ সালে ঐ একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে আনমনু গ্রামের লোকজন বিভিন্ন দোকান থেকে মালামাল লুটপাট করেছিল, যা পরবর্তীতে সালিসের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী মোঃ শাহজাহান আলী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরফরাজ আহমদ চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের নেতা আবুল হোসেন জীবন প্রমুখ সালিসের উদ্যোগ নিয়েছেন।
নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন এবং সংঘর্ষ ও লুটপাটের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।