10/03/2025
শুভাকাঙ্ক্ষীগণ, কিছু কথা বলার প্রয়োজন মনে করছি।
বিএনপি: ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে
বিএনপি নিশ্চিত ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে এমনটাই ভাবছে দলের নেতাকর্মীরা। দেশব্যাপী চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি করলেও কিংবা তাদের নেতৃত্বে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা কেমন হবে সেটার ভিজুয়ালাইজেশন জনগণকে দেখাতে ব্যর্থ হলেও তা তাদের ক্ষমতায় আসতে বাঁধা হবে না বলেই মনে করছেন নেতাকর্মীরা। "নির্বাচন হলেই বিএনপি ক্ষমতায় আসছে" এমন ধারণা অনুযায়ী পুলিশ, প্রশাসন, ব্যবসায়ী, আমলারা চলছে।
জামাত: একদিকে জামাত মনে করছে আরব অভ্যুত্থানের পর মিশরে মুসলিম brotherহুড যেভাবে ইসলামি আবহ কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় চলে এসেছে সেটার রিপিটেশন বাংলাদেশেও হবে। অভ্যুত্থানের পর জামায়াত নিজেকে আসন্ন ক্ষমতাসীন হিসেবেই ভেবেছে। এখন আবার পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপিকে ক্ষমতাসীন ধরে জামাআত প্রধান বিরোধী দল হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের এই প্রধান বিরোধী দল হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে নাগরিক পার্টিকে দেখছে। আর এটাই স্বাভাবিক।
গণঅধিকার: জুলাই অভ্যুত্থানের পর গণঅধিকার নিজেরা এককভাবে শক্তিশালী হওয়ার পরিবর্তে শুরুতেই বিএনপির ছায়াতলে এসে আসনভিত্তিক রাজনীতি করা শুরু করেছিল। দলটির প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির আসনে বিএনপি তার নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করতে একটা প্রজ্ঞাপনও দিয়েছে। যেই নূর ভাইকে আমরা একসময় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ভাবতাম সেই নূর ভাই কেবল মন্ত্রী হওয়ার জন্য আসনভিত্তিক রাজনীতিতে ঢুকে পড়লো। আবার বিএনপির ছায়াতলে যাওয়ার পর দলটির কাছে মাঝে মাঝে মনে হয় যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা প্রধান বিরোধী দল হওয়ার মতো সম্ভাবনা রাখে। সেজন্য কোন ইস্যুতে তারা স্থির থাকতে পারছেন না বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল হওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিক পার্টিকে হুমকি হিসেবেই দেখছে।
এনসিপি: গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে নতুন একটা দল আসছে। তরুণসমাজ ও রাজনীতি সচেতন এমন মানুষদের প্রত্যাশিত দল হিসেবেই গত মাসের শেষে দলটির আত্মপ্রকাশ। বিএনপি যেভাবে পারছে বিরোধিতা করছে, গণঅধিকার পরিষদের ভাইয়েরা এই দলের পান থেকে চুন খসলেই উঠেপড়ে লাগছেন, জামাআত মনে করছে এই দল উঠে দাঁড়ালে তাদের যে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার স্বপ্ন সেটা ধূলিসাৎ হবে, আওয়ামী লীগ ভাবছে এই দল যত প্রসারিত হতে থাকবে এদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ততটা অপ্রাসঙ্গিক হতে থাকবে। তাই সবাই যেন উঠেপড়ে লেগেছে এই দলকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠিত হওয়ার পর খসড়া ড্রাফটে একজন বিটিকিউ সদস্য আছেন বলে অনেকেই গঠনমূলক সমালোচনা করেছিলেন। আপনাদের সমালোচনার কল্যাণে সেই বিতর্কিত লোককে চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এবং দলের শীর্ষ দুই নেতা নিজস্ব টাইমলাইনে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আবেগ ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা যে কিছু করবো না সেটাও স্পস্ট উল্লেখ করেছেন। তারপর আজ দ্বিতীয় আরেকটি ইস্যু আসছে যে, আমাদের এক সদস্য নাকি এনসিটিবির টাকা লুটের সাথে জড়িত। এই অভিযোগ যদি সত্য প্রমাণিত হয়, আপনারা এতটুকু নিশ্চিত থাকেন যে, নাগরিক পার্টিতে কোন দুর্নীতিবাজের স্থান হবে না।
এই দুটি অভিযোগকে কেন্দ্র করে সদ্য ঘোষিত রাজনৈতিক দল এনসিপিকে যেভাবে মিডিয়া থেকে শুরু করে সবগুলো দল নেতিবাচকভাবে কোনঠাসা করার চেষ্টা করছে সেখানেও যে রাজনীতি আছে এটা যেন আপনারা বুঝতে পারেন, মিলাতে পারেন। নাগরিক পার্টিকে এই দুটি অভিযোগের উপর ভিত্তি করে যদি আপনি আমাদেরকে চোর ডাকেন, চাঁদাবাজ ডাকেন, অসৎ ভাবেন, তাহলে আওয়ামী-বিএনপিকে ডাকার মতো শব্দ তো আপনি ডিকশোনারিতেও খুঁজে পাবেন না! তাদেরকে কী ডাকবেন বলেন? তারা দুর্নীতি করেছে বলে এনসিপির কোন সদস্যও দুর্নীতি করতে পারবে এমন জাস্টিফিকেশন আমি দিচ্ছি না। যে দলই করুক অপরাধ মানে অপরাধ। ১৯৯১ সালের পর রাজনৈতিক দলগুলো যে পরিমাণ টাকা লন্ডনসহ, আমেরিকা, কানাডা, দুবাই, কাতারে পাচার করেছে। যেভাবে দলগুলো দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, ব্যাংক লুট করেছে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে তত্বাবধায়ক সরকার বাতিল থেকে শুরু করে সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতির বয়স পর্যন্ত বাড়িয়েছে, যেভাবে নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি বন্ধ করার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সেগুলো ধামাচাপা দিয়ে সদ্য ঘোষিত একটা দলের পেছনে এভাবে লাগা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সেটা আশাকরি আপনারা বুঝেন।
পরিবারতন্ত্রের বাহিরে প্রথম রাজনৈতিক দল এনসিপি, এক নেতা পুরো দল নিয়ন্ত্রণ করবে সেই রাজনৈতিক কাঠামোর বাহিরে গিয়ে বহুনেতার (Multi- leadership) রাজনৈতিক কাঠামো দাঁড় করিয়েছে এই এনসিপি, বছেরের পর বছর একই ব্যাক্তি দলের প্রধান থাকবেন সেই প্রচলিত মডেলের বাহিরে দুই বছর পরপর কাউন্সিল করে নতুন নেতা উঠে আসার প্রক্রিয়া তই দলে থাকবে। শিক্ষিত তরুণরা যেখানে নিজের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বিদেশ কিংবা প্রফেশনে চলে যায়, সেখানে নিজের টাকায় হাজারো তরুণ এনসিপিতে আসছে দেশ বির্নিমানের স্বপ্ন নিয়ে। বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দল এগুলো পেরেছে?
তাছাড়াও নাগরিক কমিটির সাবেক কিছু নেতৃবৃন্দ ও অন্যরা মিলে নাকি নতুন একটা দল বা সংগঠন নিয়ে আসতে যাচ্ছে, এমনটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাদেরকে আমি সাদুবাদ জানাই। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি সবাই একসাথে থাকলেই বরং সুন্দর হতো। কিন্তু দলের ভেতরকার বিষয়গুলো ইন্টার্নলি সমাধান না করে সেই বিষয়গুলো হুটহাট যেভাবে ফেসবুকে নিয়ে এসে নাগরিক কমিটির সাথে জড়িত সকলের ভাবমূর্তি যেভাবে ক্ষুন্ন করার চেষ্টা হয়েছে সেটা আপনারা দেখেছেন। এরকম ফেসবুকীয় অস্থির চরিত্রের মানুষজন দিয়ে আর যাইহোক রাজনীতি হয় না। নতুন দল বা সংগঠন যে কেউ নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে, তাদের নতুন সংগঠনের লিগাসি তৈরি করতে গিয়ে নাগরিক কমিটিকে যেভাবে অগণতান্ত্রিক, অস্বচ্ছ, ইসলাম বি/ দ্বেষী, বিটিকিউ সমর্থক সহ নানা নেতিবাচক অভিধায় ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে সেটা হীন কাজ।
নাগরিক পার্টিকে একবার বলা হচ্ছে জামাতের বি টিম ও পাকিস্তানপন্থী। আবার একই লোকজন কিছুদিন পর বলছে নাগরিক কমিটি ইসলাম বিরোধী ও বিটিকিউ সমর্থক। সুবিধামত ট্যাগিং চলছে আরকি। এসব কাঁদা ছুড়াছুঁড়ি কিংবা কেবল অন্য দলের বিরোধিতা করার রাজনৈতিক কালচার থেকে বের হয়ে আমরা নিজেদের গুণগত মান দিয়ে আপনাদের মন জয় করতে চাই। আমাদের উপর আপনাদের প্রত্যাশা আকাশসম। জানি আমাদের এসব ছোটখাটো ত্রুটিই আপনাদের অনেক বেশি আশাহত করে। আমরা আমাদের প্রচেষ্টার ঘাটতি স্বীকার করেই আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। একটু সময় দিন। আমাদের এই ঘুণে ধরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি একমাসে পরিবর্তন করার প্রেশারটা আমাদের উপর চাপায় দিয়েন না। সমালোচনা করুন, সহযোগিতা করুন, দোয়া করুন।
Writer:mohammad miraj miah