25/06/2025
আসল প্রেম কাহিনি ——পর্ব ১
তিস্তা নদীর পাড়ে বসে সাইফুল পানির দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।
আজ স্কুল থেকে ফেরার পথে সে ঝর্ণাকে একটা চিঠি দিয়েছে। চিঠি নিয়ে ঝর্ণা যেরকম রাগের সঙ্গে তাকিয়ে ছিল, তাতে করে বেপরোয়া স্বভাবের সাইফুল প্রথমে একটু ভয় পেলেও পরক্ষণে বলেছিল, রাগ করো আর যাই করো, চিঠি টা পড়ার পর করো। চিঠি টা কি সে না পড়েই ছিরে ফেলেছে, নাকি পড়ে ছিরেছে? যদি পড়ে থাকে,তাহলে সে কি করবে, এই কথাই সে ভাবছে। নদীর স্রোতের কুলকুল শব্দ তার কানে প্রবেশ করছে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। রাখাল ছেলেরা নদীর চর থেকে গরু ছাগল নিয়ে বাড়ি ফিরছে। নানা রকম পাখি দল বেধে কিচিরমিচির করতে করতে নিজেদের বাসায় ফিরে যাচ্ছে। সাইফুল প্রতিদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর পাড়ের এই জাইগায় বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আনন্দ উপভোগ করে। আজ কোনোদিক তার খেয়াল নেই গ্রামের মসজিদ থেকে মাগরিবের আযান শুনে নামায পড়ার জন্য মসজিদের দিকে যেতে যেতে ভাবলো, ঝর্ণাকে চিঠি টা দেওয়া মনে হয় ঠিক হয়নি।
উত্তর বাংলার কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদীর পূর্ব দিকে অনন্তপুর গ্রাম। রাক্ষসী তিস্তা এই গ্রামের অনেক লোক কে পথে বসিয়েছে। তবু যেন তার ক্ষুধা মিটছেনা। ঘরবাড়ি গ্রাস করেই চলেছে। গ্রামের মাঝখানে সেমিপাকা হাইস্কুল। তার পাশে সরকারি ফ্রী প্রাইমারি স্কুল। সাইফুলের পূর্ব পুরুষদের বাড়ি ছিল এই গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে। তিস্তা তখন তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যে। হঠাৎ একদিন তিস্তা ক্ষেপে গিয়ে ঘর বাড়ি গ্রাস করতে লাগলো। তখন সাইফুলের দাদাজির আমল। ওর দাদাজির নাম কলিম উদ্দিন। কলিম উদ্দিন এর বাস্ত ভিটা, জমি, পুকুর, বাগান নেহাত কম ছিলনা।তিস্তা সব কিছু কেরে নিয়ে তাকে পথের ভিখারি করে দিল। শেষে কলিম উদ্দিন একই গ্রামের শশুরের একটা পড়ো জমিতে দু'খানা বেরার ঘর উঠিয়ে বাস করতে লাগলেন। বারো মাস যার বাড়িতে কামলারা কাজ করতো, সে এখন অন্যের বারিতে কাজ করে সংসার চালাই।তার একমাত্র ছেলে ওসমান।
সেও বাপের সাথে অন্যের ক্ষেত খামারে কামলাগিরি করছে। যে বছর এক রকম নিস্ব হয়ে কলিম উদ্দিন এই গ্রামে চলে আসেন, সে বছর ওসমান এস,এস,সি তে ভালো ফলাফল করেও আর পড়াশোনা করতে পারেনি। কলিম উদ্দিন নিজের ভাগ্যের দূরাবস্থার কথা চিন্তা করে দিনের পর দিন ভেঙে পরতে লাগলেন। কলিম উদ্দিন ধার্মিক লোক। তিমি ছেলেকে ধার্মিক শিক্ষা দিয়ে মানুষ করেছেন।
ওসমানের মামাদের অবস্থাও তেমন ভালো না। কোনো দিকে আশার আলো দেখতে না পেয়ে ওসমান গ্রামের লোকজনদের ক্ষেত খামারে কাজ করে সংসার চালাতে লাগলো। একবার, রংপুরে বা ঢাকায় এসে চাকরির চেষ্টা করবে বলে তার আম্মাকে বলেছিল।
(তার মা) জেবুন্নেসা তখন বলেছিলেন, তুই আমাদের একমাত্র ছেলে। তোর আব্বা আর খাটাখাটনি করতে পারেনা। তুই শহরে গিয়ে চাকরি করে কবে টাকা পাঠাবি তার কোনো ঠিক আছে..! ততদিন আমাদের চলবে কি করে? এই কথা শোনার পর সে শহরে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে দেশেই কাজ করতে লাগলো। আর রাতে কয়েক ছেলেকে প্রাইভেট পরিয়ে যা আয় করতো, তা থেকে কিছু জমা রাখতো। এভাবে কয়েক বছর কঠোর পরিশ্রম করে সংসারে কিছু স্বচ্ছলতা এনেছিল।
এক সময় আব্বা আম্মার জেদাজেদিতে মামাতো বোন মালেকাকে বিয়ে করে। বিয়ের তিন বছর পর মালেকা একটা কন্যা সন্তান প্রসব করে। কলিম উদ্দিন নাতনির নাম রাখলেন মনিরা বেগম। মনিরা জন্মাবার এক বছর পর দের মাসের ব্যাবধানে কলিম উদ্দিন ও জেবুন্নেসা মারা যান। ওনাদের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর সাইফুলের জন্ম হয়। ওসমান সাইফুলকে প্রথমে ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় আরবি পড়তে দেয়। আর একটু বড় হতে স্কুলে ভর্তি করে। সাইফুল ছোটবেলা থেকে খুব মেধাবী পড়াশোনাতেও খুব ভালো। কিন্তু ভিষন চঞ্চল ও বেপরোয়া। সাইফুল যখন কিশোর বয়সে পড়লো তখন ওসমান ছেলেকে করা শাসনে ধর্মিয় শিক্ষা দিয়ে সেই মতো চালাতেন। হাই স্কুলে ভর্তি হয়ে তার স্বভাবের সব কিছু পরিবর্তন হলো।
কিন্তু বেপরোয়া ভাব রয়ে গেল। সমাজের কেউ কিছু অন্যায় করলে তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাকে ছেরে কথা কয়না।শিশুকাল থেকে সাইফুল একটু রোগা। এখন সে তরুন। মাঝারি ধরনের লম্বা একহারা শরীর। গায়ের রঙ ঠিক ফরসা নয় ঈষৎ চাপা।
উন্নত নাক। মুখের দিকে তাকালে বেপরোয়া ভাব বেশ বোঝা যায়। নিচের ক্লাস থেকে সে ফাস্ট হয়ে আসছে। সেই জন্য তার বেপরোয়া ভাব জেনেও স্কুলের ছাত্র এমনকি স্কুলের শিক্ষকরাও তাকে ভালোবাসতো।এই গ্রামে মেয়েদের জন্য কোনো আলাদা স্কুল না থাকাই ছেলেমেয়েরা এক সাথে ক্লাস করে।
সরকারি ফ্রী প্রাইমারি স্কুল থেকে বৃত্তি নিয়ে পাশ করে হাই স্কুলে ক্লাস সিক্স এ ভর্তি হয়। প্রথম যেদিন সাইফুল স্কুলে আসে, সেদিন সে ঝর্ণার দিকে বার বার তাকিয়ে দেখেছে। ক্লাসের সব মেয়েদের চেয়ে ঝর্ণাকে বেশি সুন্দরী মনে হয়েছে। ছোট বেলা থেকে সে যেকোনো সুন্দর জিনিস কে ভালোবাসে। প্রাকৃতিক দৃশ্য তাকে সব থেকে বেশি মুগ্ধ করে। তাই সে খেলার সময় নদীর পাড়ে বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করে। ঝর্ণাকে দেখার পর থেকে তার সাথে কথা বলার জন্য সাইফুলের মন ছটফট করতো। কয়েকদিন পর একদিন টিফিনের সময় ঝর্ণার কাছে গিয়ে তার নাম জিগ্যেস করেছিলো। ঝর্ণা তার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে চুপ করে ছিল।তখন তার সাথের মেয়েটা ঝর্ণার নাম বলেছিল। আরো অনেক পরে সাইফুল তার বাবার নাম জেনেছিল হামিদ চেয়ারম্যান। ঝর্ণা হাই স্কুলের মনিং সিফটে বেতন দিয়ে ওয়ান থেকে পরে আসছে।
চলবে,
গল্পটা যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই লাইক কমেন্ট শেয়ার করে দ্বিতীয় পর্ব টির জন্য অপেক্ষা করুন।
গল্পের দ্বিতীয় পর্ব -- দেখার জন্য আমার এই পেজ এ ফলো দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন। খুব তারাতাড়ি আমরা গল্পের দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে আসবো।