
17/08/2025
দেশ ভালো না বিদেশ ভালো এই বিষয়ে কিছু বলবোনা।নিজের দুঃখের কথা বলি।
৪-৫ দিন ধরে জরে ভুগে সেরে উঠতেই ছেলের হলো ডায়েরিয়া।তার মধ্যেই আমার হলো ফুড পয়জন॥
১৩ তারিখ সকাল থেকে এরিয়নের ডায়েরিয়া,দুপুরের দিকে আমার কেমন যেন পেট ব্যথা করছিল কিন্তু আমি তেমন গুরুত্ব দিইনি।বিকেলে আমার জিপি এপয়নমেন্ট ছিলো।মনে মনে একটু ভালো লাগলো ভেবে যে,ডক্টর কে এরিয়নের ব্যাপারটা বলা যাবে।যারা বাইরে থাকেন তারা জানেন,এখানে ডাক্তারের এপয়ন্টমেন্ট পাওয়া কতটা কঠিন।দেখা যায়,আপনার রোগ হয়েছে, কিন্তু ডাক্তার দেখার আগে আপনার রোগ শেষ বা আপনি শেষ॥ইমার্জেন্সি চিকিৎসা তো আরেক যুদ্ধ।যতো সিলি রোগ ই হোক না কেন যেদিন যাবেন,ধরে রাখুন আজ থেকে কাল পর্যন্ত আপনি এখানেই আছেন।তাই আলাদা ইমার্জেন্সি ব্যাগ ও রেডি রাখতে হয়,নিজের পরিবারের জন্য।
যাই হোক,জিপি তে যাওয়ার মূহুর্তে এরিয়নের বাবা বাসায় এলো।যেহেতু বাইরে অনেক রোদ আর আমার মাইগ্রেনের ব্যথা হয়,তাই সে আমাকে আর একা ছাড়েনি আমাদের নিয়ে যায়।এদিকে এই বেচারা কিন্তু মাত্র কাজ করে বাসায় এসেছিলো।
জিপি থেকে বল্লো আপাতত ওরাল সেলাইন দিয়ে হবে,বেশি দুর্বল হলে হসপিটালে যেতে বলে আমাদের বিদায় করলো।এতেই ২-৩ ঘন্টা টাইম পার হয়ে গেছে ।
আমরাও সেলাইন নিয়ে বাড়ি ফিরি।আমার পেট ব্যথা কিন্তু বাড়ছে এবং আমি তখনো ভাবছি ঠিক হয়ে যাবে।
বাড়ি ফিরে কয়েক ঘন্টা পর আমার মনে হয় এবার সিরিয়াস লাগছে আমি মেডিসিন নেই।কিন্তু মাঝরাতে যেয়ে ব্যথা এত তিব্র হয়ে যায় যে আমাকে হসপিটালে নিতে হয় আর যুদ্ধ শুরু॥
আমার কান্নাকাটি তে আমাকে ট্রয়াজে নিয়ে যায় কিন্তু সেখানে বেবি এলাউড না,সো আমার হাজবেন্ড বেবি নিয়ে বাইরে ওয়েটিং রুমে আর আমি ভিতরে একা॥একদিকে আমার অসুস্থ বাচ্চা তার মায়ের জন্য কাঁদছে।রাত বাড়ছে।আমার হাজবেন্ড কি করবে?কার কাছে যাবে?ব্রে-স্টফিডিং বেবি ও!যাই করে তার কান্না থামেনা,তার মাকে চাই।তারা বাসায় আসে॥ততক্ষণে রাত শেষ হয়ে এসেছে॥তারা দুজনেই নির্ঘুম।আমার হাজবেন্ড কিন্তু এর আগেরদিন ভোর চারটা থেকে সজাগ॥
অন্যদিকে আমাকে নার্সিং স্টেশনে একটা চেয়ারে বসিয়ে সেলাইন দিচ্ছে একটার পর একটা।ওদের আবার রোগীর ক্রয়টেরিয়া থাকে।আপনি মরে যাচ্ছেন আপনি ভিআইপি।আমার যেহেতু সামান্য ফুড পয়জন আমার গুরুত্ব খুব কম,চিৎকার চেঁচামেচি করলে একটা নার্স আসছে আর সেলাইন পাল্টে দিচ্ছে।আমি সিট চাইলে দিবেনা,কোন কমফোরটেবল চেয়ার ও না।একজন একবার একটা দিলেও পরে বল্লো এটা আরেক পেশেন্টের।আমি সারারাত সেটা খালিই দেখলাম,তারা কোন সেমি ভিআইপির জন্য রেখে দিয়েছে সেটা।
ভোররাতের দিকে একটা ডক্টর পেশেন্ট ফাইল চেক করতে আসে নার্সিং স্টেশনে,আমি তাকে বলি আমার অবস্থা।তখন সে নার্স কে হাই ডোসেজ প্রেসক্রাইব করলে তার আধাঘন্টা পরে আমার চেঁচামেচিতে সেটা দেয় আমাকে!!এতক্ষন কেন দেয়নি ডক্টর?আরে আমি তো কোন প্রায়র কেটাগরিতেই পরিনা,আমার ফাইল কে দিবে ডাক্তার কে!!
তো সকাল ৬টার দিকে আমার ব্যথা কমলে আমাকে বাইরে ওয়েটিং রুমে পাঠিয়ে দেয় কারন আমার জন্য নার্সিং রুম ব্যবহারে বেঘাত ঘটছে!
তখন আমি আমার হাজবেন্ড কে কল দিয়ে বলি আমার ছেলে কে নিয়ে আসতে।আমাকে ডক্টর এসেস করে পরে ছাড়বে আর এতে যে সারাদিন লাগবে সেটা অজানা নয়।বাকি এক্সপেরিয়েন্স দুধভাত।ডাক্তার ডাকলো,টেস্ট করলো,ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দিলো।ব্যহবার ১০০/১০০। সারাদিন এভাবে চলে গেলো এই যা।মন্দের ভালো মাঝেমধ্যে বের হয়ে ছেলেকে দেখতে পেরেছি।
এইযে এতকিছু হলো আমাদের সাথে আমরা কিন্তু একা।দেশে কেউ জানেওনা!আমার ছোটবোনকে একফাকে বলতে পেরেছিল দেটস ইট!আর জেনেই বা কি? এখানে কে আসতে পারবে!!
অনেকদিন আগে একটা ছবি দেখেছিলাম এফবিতে,কারো অসুস্থতায় পুরো গুষ্টি হসপিটালে বসে বিরিয়ানি খাচ্ছে॥জানি এটা ঠিকনা,কিন্তু এই মোরাল সাপোর্ট টা….এটা যে কতটা শান্তির!
আমরা এখনো পুরো পুরি সুস্থ না,কিন্তু আমাদের জীবন চারপাশ থেমে নেই॥আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন এই কামনাই করছি শুধু॥