26/07/2025
পর্ব ১
সকাল থেকেই, চ্যাটার্জী বাড়িতে হৈচৈ। বাড়ির আদরের বড়ো ছেলের আজ বিয়ে।
আরতি দেবী ব্যস্ত হয়ে ছেলেকে ঘুম থেকে তুলতে গিয়ে দেখেন, রণজয় আগে থেকেই ঘুম থেকে উঠে পাজামা পাঞ্জাবীতে নিজেকে সাজিয়ে ফেলেছে।
আরতি দেবী ঘরে ঢুকে বেশ খুশি হলেন।
রণজয় সবসময়ই ভীষণ পাংচুয়াল। যে কোনো কাজ সময়ে করতেই ভালোবাসে। তাই হয়তো আজ সে একজন সাকসেসফুল গাইনোকলজিস্ট। কলকাতার সেরা দশজন ডক্টরের তালিকায় নাম নেওয়া হয় ওর।
আরতি দেবী রণজয়ের কাছে গিয়ে খুশি খুশি হয়ে বললেন, "কিরে বাবু, একা একা উঠে গেলি যে। বিয়ের তাড়া নাকি??"
রণজয় সামান্য লজ্জা পেয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বললো, "এ এ এসব কি বলছো মা? তুমিই তো বলেছিলে যে, আজ ভোরে উঠতে হবে।"
"হুম তা বলেছিলাম, কিন্তু রিম্পিকে দেখার তারা কি নেই??" মুচকি হেসে বললেন আরতি দেবী।
"ধুর! তাকে কোথায় দেখতে পাবো?? তাকে দেখতে দেখতে সেই সন্ধ্যে।" সামান্য বিরক্তি নিয়ে বললো রণজয়।
রণজয় এর হাবভাব দেখে হো হো করে হেসে উঠলেন আরতি দেবী। এতো দিনে ছেলে প্রেমে পড়েছে দেখে বেশ খুশি হলেন উনি। ছেলেকে দেখতে রাজপুত্রের মতো হলে কি হবে, রণজয় বরাবরই মেয়েদের থেকে দূরে থেকেছে। নিজের স্বপ্ন পূরণ করে য্খন সে ডক্টর হলো, তখন নিজের সমস্তটুকু বিলিয়ে দিয়েছে ওই রুগীদের জন্য। বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না ওর। আরতি দেবী নিজে রিম্পিকে পছন্দ করেন তার একমাত্র ছেলের জন্য। তারপর মায়ের কথা রাখতেই দেখা করে সে রিম্পির সাথে। প্রথম দেখাতেই রণজয়ের ভালোলেগে যায় রিম্পিকে। তারপর মেলামেশা আর ধীরে ধীরে সেই ভালোলাগা পরিণত হয় প্রেমে।
মাকে হাসতে দেখে লাজুকভাবে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় রণ। আরতি দেবী নিজের হাসি কোনোরকমে থামিয়ে বললেন , "বাবু! বাবু দাঁড়া! কোথায় যাচ্ছিস??"
***************
অন্যদিকে....
*********************
রণজয় না ডাকতে ঘুম থেকে উঠে পড়লেও রিম্পিকে ঘুম থেকে তুলতে ভীষণ পরিশ্রম করতে হচ্ছে তৃনা দেবীর।
- রিম্পি! এই রিম্পি! কিরে? ওঠ! দধি মঙ্গলার শুভক্ষণ বয়ে যাচ্ছে। ওঠ তাড়াতাড়ি। রিম্পির পাশে বসে বারবার ডাকছেন তৃনা দেবী।
রিম্পি ঘুমের মধ্যে বেশ বিরক্ত হয়ে বললো, "উফফ মম! মাঝ রাতে চিৎকার কেনো করছো??"
- মাঝরাত নয়, এটাকে ভোর বলে। কাল বারবার বারণ করলাম বন্ধুদের সাথে পার্টি করিস না, সেই লেট্ নাইট পার্টি করলি। ভীষণ বিরক্ত হয়ে বললেন তৃনা দেবী।
- বোকার মতো কথা বলো না তো মম! বিয়ের আগে ব্যাচেলর পার্টি না দিলে আমার মান সন্মান থাকতো?? সবাই কি ভাবতো বলোতো আমায়? চোখ না খুলেই বললো রিম্পি।
তৃনা দেবী চুপ করে গেলেন। মেয়েকে এই নিয়ে বলা মানে বেকার। মেয়ে সবসময়েই বন্ধু পার্টি এই নিয়ে থাকতে ভালোবাসে। খুব কষ্টে এই কয় মাস কাটিয়েছে সে। গতরাতে একপ্রকার জেদ করে আর রণজয়কে মিথ্যে বলে বন্ধুদের সাথে লেট্ নাইট পার্টি করে মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফেরে সে।
তৃনা দেবী হতাশ হয়ে উঠে গেলেন মেয়ের পাশ থেকে। রিম্পিকে ডেকে তোলা আর দধি মঙ্গলার অনুষ্ঠান দুটো কোনো ভাবেই সম্ভব নয় তা ভালো করেই বুঝতে পারলেন উনি।
************
*******************
কলাতলায় ধুতি সামলাতে ব্যস্ত রণ। এমন সময় রক্তিম এসে হাল্কা ঠেলা মেরে বললো, "কি ব্যাপার দাভাই? বম্মা বললো, তুই নাকি না ডাকতেই উঠে পড়েছিস?? খুব বিয়ের তাড়া বুঝি??"
রণ তার ভাইকে চেনে, রণ এর লেগপুল করার সুযোগ পেলে, একটা সুযোগ ও ছাড়ে না রক্তিম।
তাই রণ রক্তিমকে পাত্তা না দিয়ে দুদিকে মাথা নেড়ে আবার নিজের ধুতি ঠিক করতে লাগলো।
ওর কথায় রণ পাত্তা দিলো না দেখে, রক্তিম আবার বললো, "হুম! হুম! এখন ভাইকে আর চিনবে কেনো?? ভাইয়ের কোনো কথাই ভালোলাগবে না আর। অমন সুন্দরী বৌ থাকলে ভাইকে কার ভালোলাগে??"
রণ এবার রক্তিমের কানটা ধরে টেনে বললো, "কি বললি? আবার বল দেখি।"
- আ আ আআ.... দাভাই! দাভাই লাগছে ছাড়ো! লাফাতে লাফাতে বলছে রক্তিম।
রণ রক্তিমের কানটা ছেড়ে দিয়ে বললো, "চুপ কর বাবান! অতো জোরেও ধরিনি। এক্ষুনি মা দেখতে পেলে আমাকেই বকবে। আর বিয়ের দিনে আমি অন্ততঃ বকা খেতে চাই না।"
উমা দেবী হলুদের বাটিটা সামনের টেবিলে রেখে বললেন, "আজকে কেন? কোনোদিনও আমার বাবুকে কেউ বকবে না।" তারপর রণের থুতনিটা ধরে বললেন, "এমন হীরের টুকরো ছেলেকে কেউ বকে??"
- দেখোনা কাম্মা তোমার ছেলেটা কি বলছে?? অভিযোগ করে বললো রণ।
- এই কি করেছিস তুই?? চোখ পাকিয়ে রক্তিমকে জিজ্ঞাসা করলেন উমা দেবী।
রক্তিম ভয়ে গুটিয়ে গিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো, "দাভাই!"
- হা.. হা.. হা.. হা! কাম্মা ছেড়ে দাও ভাইকে। খুব ভয় পেয়ে গেছে বেচারা।"জোরে জোরে হাসতে হাসতে বললো রণ। তারপর একটু বিরক্ত হয়ে বললো, "আচ্ছা আর কতক্ষন বলোতো কাম্মা?? আমাকে এই ভাবে সেই কখন থেকে দাঁড় করিয়ে রেখে দিয়েছো?? বলছি, মা কখন আসবে??"
- এই তো এক্ষুনি চলে আসবে বাবু। আমি যাই! বলেই বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন উমা দেবী।
- তুমি কোথায় যাচ্ছ কাম্মা?? আমাকে হলুদ মাখাবে না??
- না বাবা! আমি তোকে হলুদ দিতে পারবো না। আমি যে বিধবা, আমাকে কোনো শুভ অনুষ্ঠানে যে থাকতে নেই। কথাগুলো বলতে বলতে গলাটা ধরে এলো উমা দেবীর।
রণ তার কাম্মার হাত চেপে ধরে বললো, "কে বলে বলোতো এই সব?? আর তুমি থাকলে কি হবে আমার?? শুনি একটু!"
- অমঙ্গল হয় বাবু।
উমা দেবীর মুখটা দুহাতে আলতো করে ধরে রণ বললো, "কাম্মা!! তুমি আমার ছোটো মা, তোমার কাছে মানুষ হয়েছি আমি। তুমি কোনোদিন বাবান আর আমাকে আলাদা করে দেখোনি। বরং বাবানের চেয়ে বেশিই ভালোবেসেছো আমায়। তুমি স্বপ্নেও কোনোদিন আমার ক্ষতি চাইতে পারো?? তোমার স্পর্শে আমার অমঙ্গল নয় মঙ্গলই হবে কাম্মা।"
রণের কথায় দুচোখ বয়ে জল গড়াতে লাগলো উমা দেবীর।
"একদম ঠিক কথা বলেছিস দাভাই।" রণকে সম্মতি জানিয়ে বললো রক্তিম।
রণ রক্তিমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, তারপর উমা দেবীর চোখ দুটো খুব যত্ন করে মুছে দিয়ে বললো, "এবার অমঙ্গল হচ্ছে না?? ছেলের বিয়েতে মা যে কাঁদছে?"
উমা দেবী তাড়াতাড়ি নিজের চোখের জল মুছে বললেন, "বালাই সাট! আমার ছেলের সাথে আমি কোনো খারাপ হতে দোবো না। সবসময় ভালো হবে আমার ছেলের।"
- এই তো আমার কাম্মার মতো কথা। নাও এবার ঝটপট হলুদটা দাও দেখি। আর দাঁড়াতে ভালো লাগছে না।
- কিন্তু দিভাই....
- মা এসে আবার দেবে, তুমি তো দাও।
রক্তিম তাড়াতাড়ি হলুদের বাটিটা এনে দাঁড়ালো উমা দেবীর সামনে। নাও নাও মা! তাড়াতাড়ি মাখাও দাভাইকে। আমিও দেখি, কলকাতার হিরো, মেয়েদের হার্ট থ্রোব মিস্টার রণজয় চ্যাটার্জীকে কেমন লাগে হলুদ মাখলে। জানো মা! ইন্সটা তে দাভাই এর বিয়ের পিক আপলোড হলে কতো মেয়ে সুইসাইড করবে তার ঠিক নেই।
- এই ইন্সটা কি জিনিস? আর সুইসাইড কেন?? উমা দেবী ভয়ার্ত গলায় বললেন।
- ছাড়ো তো কাম্মা। ওর ফালতু কথা।
- এই ফালতু বকছি?? মা কে বল, তোকে কতো মেয়ে ফলো করে, আর তোকে ঠিক কতজন প্রপোস করেছে। বল বল।
রণ বেশ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।
উমা দেবী রণের থুতনি ধরে বললো, করবেই তো। রূপে গুণে আমাদের বাবু যে সবার উপরে।
লাজুক ভাবে রণ বললো, "কাম্মা তুমি ও!"
- হ্যা আমিও তোর প্রশংসা করি। বলেই একটু হলুদ নিয়ে গালে লাগিয়ে দিলো রণের।
রক্তিম তাড়াতাড়ি ডি.এস.এল.আর টা নিজের চোখের সামনে ধরলো, লেন্সটা রণের দিকে।
"মা হলুদ হাতটা দাভাই এর গালে ধরে রাখো। আর আমার দিকে তাকাও, দাভাই একটু হাস প্লিজ!"
- ছোটো!!! একটা গম্ভীর ধমকে চমকে উঠলো তিন জন।
চলবে....
কেমন লাগলো প্রথম পর্ব?? সবার মতামত আশা করছি। 🙏🏻