
09/07/2025
সালটা ২০২৩ আমি ত্রিপুরা থেকে বোলপুর শান্তিনিকেতনে চলে যাই কলাভবনে স্নাতকোত্তর করার জন্য, এই প্রথম আমার পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ। আমার মা বলতো ছাত্র জীবন সুখের জীবন, কতো কিছু দেখবি, কতো কিছু জানবি। আমার ও এটাই ইচ্ছে ছিলো পশ্চিমবঙ্গ ঘুরে দেখবো, পুরোটা তো সম্ভব নয়, যতটুকু হয় আরকি। পড়াশোনার মাঝে সময় বের করে আমি অনেক জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। তবে এই দুবছরে কতো বার চেষ্টা করেছি দক্ষিণেশ্বর আর যেতে পারিনি।
২০২৪ দূর্গা পূজার ছুটি কাটিয়ে শান্তিনিকেতন আসার পর আর বাড়ি যাওয়া হয়নি, স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত বর্ষের প্রচন্ড চাপ। প্রায় নয়মাস বাড়ি যাইনি, মাকে দেখার জন্য মন ছটপট করছিলো, সাথে আমার লাগানো গাছপালা গুলোর জন্য চিন্তা, কতোদিন ওদের যত্ন নেওয়া হয়নি। ১২/০৬/২৫ স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা শেষ হলো। সহপাঠীরা ও যে যার মতো বাড়ি ফিরছে। ২৬/০৬/২০২৫ আমার ও কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস করে ত্রিপুরার উদ্দেশ্য রওনা দেবার কথা। মনে মনে বাড়ি যাবার টান, মাকে বলে রেখেছি আমার পছন্দের খাবার গুলো রান্না করে রাখতে। ২৬/০৬/২০২৫ সকাল ১০ টায় আমি ট্রেনে বসবো আর ২৭/০৬/২০২৫ সন্ধ্যা ৭ টায় বাড়ি পৌঁছাবো, পৌঁছেই স্নান টান করে আগে মায়ের হাতের রান্না খাবো। কতোদিন মায়ের হাতের রান্না খাইনি। সাথে দক্ষিণেশ্বর যাওয়া হলোনা তার আফসোস। হোস্টেলে বসে বসে এই সবকিছু আমার মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে। বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার কাজ, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সবকিছু গুছানো শেষ। ২৫/০৬/২০২৫ জানতে পারি আসাম ত্রিপুরার মধ্যবর্তী পাহাড় লাইনে ধ্বস নেমেছে। প্রায় সপ্তাহ খানেক রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকবে। রেলপথে ত্রিপুরার সাথে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ সহ পুরো ভারতবর্ষে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। খবর পেয়ে সাথে সাথে টিকেট বাতিল করে দেই। সমস্ত প্রস্তুতি নিয়েও যাওয়া হলোনা, ভীষণ মনখারাপ হলো। কিছুক্ষণ নিস্তব্দ হয়ে বসেছিলাম। জিনিসপত্র বেশি, বিমান পথের ভাড়া ও দ্বিগুণ যাওয়া সম্ভব নয় । মনকে বুঝিয়েছি রেল যোগাযোগ ঠিক হলেই বাড়ি ফিরব। পরে বন্ধু একটাকে ফোন করে বলি কাল (২৬ তারিখ) দক্ষিণেশ্বর যাবি, সে বল্লো যাব। মাঝ রাতে দুজনে গল্প করতে করতে পৌঁছাই বোলপুর স্টেশনে, টিকেট করে সকাল সকাল পৌঁছে যাই দক্ষিণেশ্বর। ৬.৩০ মন্দিরের প্রধান ফটক খুলে দিলে মায়ের মুখটা দর্শন করে মনটা কিছুটা শান্ত হয়। মাকে বলেছিলাম তাড়াতাড়ি যেন যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যায়, বাড়ির মিকেও যে দেখতে হবে। এভাবেই দুবছরের শেষে এসে আমার দক্ষিণেশ্বর দর্শন হলো। এবার ০২/০৭)২০২৫ রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু হলো। ০৩/০৭/২০২৫ আমি বাড়ি পৌঁছাই, একটা দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর দুই মায়ের দর্শন হলো।