16/05/2024
রেলগাড়ির কামরায়
শিপ্রা দে
সেদিন রেলগাড়ির কামরায় লাস্ট শান্তিপুর লোকালে তোমাকে খুব কাছে থেকে দেখলাম বছর পাঁচেক পর।ভাবিনি এইভাবে দেখা হয়ে যাবে কোনদিন।তাঁর আগে তোমায় রোজ দেখেছি বছর দুয়েক ধরে ছাপোষা বাঙালিআনায়।
সেদিন যখন দেখলাম তোমার আমূল পরিবর্তন দামী শার্ট, টাই,কোর্ট-প্যান্ট,বুটে।
চোখে বিদেশি চশমায় সাহেবি আদব কায়দায়।
যেদিন তুমি বলেছিলে বিদেশ যেতে চাও
আমি বলেছিলাম "কথা বলব না যাও।"
তুমি অভিমান ভাঙিয়ে হাতের পরে আলতো টোকায় বলেছিলে "আরে ধুর পাগলি মেয়ে আমি তো এমনি বললাম।"
তারপর আমি ভীষণ জ্বরে দু-সপ্তাহ আর আসিনি আটটা সাতের শান্তিপুর লোকালটায়।তখন তেমন করে মোবাইলের চল ছিল না,তোমার বাড়িতে ল্যান্ড ফোন থাকলেও আমার ছিল না। তাই আর খোঁজ নেওয়াও হয়নি আপাততঃ তাই ভেবেছিলাম।
ভুল ভাঙে যখন অফিস জয়েন্ট করি সেই আটটা সাতের শান্তিপুর লোকাল চড়ে রানাঘাট ট্রেন আসতেই উঠলাম সেই নির্দিষ্ট কামরায়। উঠেই এদিক ওদিক আঁতিপাতি করে খুঁজেছিলাম তোমাকে পাইনি। নিত্যযাত্রীদের মধ্যেও কেউ বলতে পারল না তোমার খবর। অস্থির হচ্ছিল মন।ভাবলাম হয়তো কাল আসবে।
তারপর দিন যায়,মাস যায় বছর ঘোরে তুমি আর এলে না।আমি ডুবে গেলাম আমার কর্মজীবনে।
সেদিন আমার কাজের চাপে অফিস থেকে ফিরতে হলো দেরি দৌড়ে তড়িঘড়ি করে ধরলাম লাস্ট শান্তিপুর লোকাল শেষের কামরায়।এখন অবশ্য রোজ লেডিস কামরায় যাতায়াত করি।
যখন তোমায় দেখলাম,এতো পরিবর্তনের মধ্যেও আমার কিন্তু চিনতে একটুও অসুবিধা হয়নি তোমার গালের বাঁদিকে ছোট্ট একটা 'এম' লেখা ট্যাটু,আর চুলের বহরটা সেই একই ঢঙে।
দৌড়ে ছুটে যেতে চেয়েছিলাম,এক পা এগোতেই তুমি এক বিদেশিনীকে ইশারায় ডাকলে "কাম হেয়ার বেবি।" থমকে গেল আমার পা দুটো,মাথাটা কেমন যেন টলমল করছিল। বিশ্বাস করো কবির কথায় আমারও জিজ্ঞেস করতে খুব ইচ্ছে করছিল।
"আমাদের গেছে যে'দিন
একেবারেই কি গেছে
কিছুই কি নেই বাকি?"
কিন্তু নিজেকে সামলে আড়াল করলাম তোমার থেকে।তুমি বিদেশিনীর হাত ধরে নেমে গেলে পরের স্টেশনে।তোমার হাতের লাগেজ দেখে বুঝলাম ইন্টারন্যাশানাল ফ্লাইটে ফিরেছো।
আমি চললাম রেলের কামরায় জানলার বাইরে শূণ্য গগনে চেয়ে আমার গন্তব্যস্থলে হাজার প্রশ্নে বিদ্ধ হতে হতে। তুমি জানতেও পারলেনা মনীষা কেমন আছে এখন!